লকডাউনের মধ্যেই মধ্যপ্রদেশের রিলায়েন্স পাওয়ার প্লান্ট দুর্ঘটনায় মৃত ২ নিখোঁজ ৪ঃ ঠুঁটো জগন্নাথ সরকার
রিপোর্টঃ সায়ন
করোনার থাবা থেকে যখন সমগ্র দেশ মুক্তির পথ খুঁজছে, ঠিক সেই সময়তেই মধ্যপ্রদেশে ঘটে গেল ভোপাল দুর্ঘটনার মতোই আরেকটি রাসায়নিক দুর্ঘটনা; গত ১০ই এপ্রিল মধ্যপ্রদেশের সিংরাউলী জেলাতে রিলায়েন্স-এর তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে। 'রিলায়েন্স পাওয়ার প্লান্ট'-এর বর্জ্য নিকটবর্তী হারোয়া গ্রামের 'শাসন মেগা পাওয়ার প্রোজেক্ট'-এর অন্তর্গত একটি কৃত্রিম পুকুরে ফেলা হয়। সেই পুকুরের রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে শক্তিহীন মাটির দেওয়াল ভেঙে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটে। আদিবাসি গ্রামগুলির প্রচুর ঘর বাড়ি ভেসে যায় রাসায়নিক বর্জ্য মিশ্রীত জলের স্রোতে। ২৫ একর চাষযোগ্য জমির ক্ষতি হয়। সমগ্র ঘটনাতে দুজন মানুষের মৃত্যু ঘটে এবং চারজন মানুষ বর্তমানে নিখোঁজ। আট বছর বয়সের অভিষেক কুমার শাহ এবং ৩৫ বছর বয়স্ক দীনেশ কুমারের মৃতদেহকে ছাইয়ের গাদা থেকে বের করা হয়েছে। সমগ্র ঘটনাতে "রিলায়েন্স"-এর কর্তৃপক্ষকে তাদের গাফিলতির জন্য অভিযুক্ত করা হচ্ছে।
যদিও এ ঘটনা প্রথম নয়। এ নিয়ে প্রায় তিনবার দুর্ঘটনা ঘটল সিংরাউলীতে। গত বছর অগাস্ট মাসে এসসারের মাহান পাওয়ার প্লান্টের ফ্লাই অ্যাশ জাতীয় বর্জ্যের পুকুরের দেওয়াল ভেঙে ৫০০ জন চাষীর ফসলের ক্ষতি হয়। অক্টোবরে ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার প্লান্ট (এনটিপিসি)-র বর্জ্যের পুকুর উপচে ৩০ একর জমি নষ্ট হয়। বিগত বছরে দুর্ঘটনা পরবর্তী প্রতিবাদের ফলে তৎকালীন ডিস্ট্রীক্ট ম্যাজিস্ট্রেট সম্পূর্ণ স্হানটির পরিদর্শন করেন এবং জানান যে এলাকা বিপদমুক্ত কিন্তু তারপরেও এধরণের অবনতী এবং কৃষক ও আদিবাসীদের প্রাণহানীর দায় কে নেবে সেটা নিয়েই ধন্দে কেন্দ্রীয় গ্রিন ট্রাইব্যুনাল। বোঝাই যাচ্ছে যে সরকারী আমলাদের সাথে রিলায়েন্স চালিত কোম্পানিটির একটি মধুর সম্পর্ক রয়েছে। কমল নাথের কংগ্রেস কিংবা শিবরাজ চৌহানের বিজেপি সরকার, কেউই এই দায় এড়াতে অপারগ। এ দুর্ঘটনার কারনে প্রচুর চাষের জমির ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। যদিও এ নিয়ে সরকারপক্ষীয় মিডিয়াতে কোনো রকম প্রচার হয়নি। এত মানুষের ক্ষয়ক্ষতিতে সরকার নিশ্চুপ কারন রিলায়েন্স কোম্পানীর সাথে সরকারের সখ্যতা। সিংরাউলীতে এরকম দশটি কয়লা চালিত বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র আছে যার প্রায় ২১,০০০ মেগাওয়াট শক্তি রয়েছে যা দেশের মোট উৎপাদিত শক্তির ১১%। সুতরাং এক্ষেত্রে সরকার কেন প্রয়োজনীয় সর্তকতামূলক ব্যবস্হা খতিয়ে দেখেনি সেটাই প্রশ্নের। সিংরাউলি সমগ্র দেশের তাপ উৎপাদন কেন্দ্রের মধ্যে অন্যতম বৃহৎ কিন্তু সরকারের তরফে কোনো রকম ব্যবস্হা বা ক্ষয়ক্ষতিতে অসহায় মানুষগুলির পাশে দাঁড়ানোর কোনো উচ্চবাচ্য করা হয়না। অত্যন্ত নিম্নমানের সীমানা দেওয়াল এবং অব্যবস্হাকেই দায়ী করছে সাধারণ মানুষ। প্রচুর আদিবাসী মানুষের বসতি ক্ষয়ক্ষতির খতিয়ান সরকার যে ফিরেও দেখবে না তা যেন অলিখিত ভাবেই স্হির। যে সরকার করোনা মোকাবিলাতেই হিমশিম খাচ্ছে, সেই সরকার খেটে খাওয়া মানুষের পাশে কখনোই সহযোগিতার হাত বাড়াবেনা তা নিশ্চিত।
সিংরাউলী গাজিয়াবাদের পরে সবচেয়ে দূষিত অঞ্চল। সেন্ট্রাল পলিউশান কন্ট্রোল বোর্ড (সিপিসিবি)-এর কিউমুলেটিভ এনভাইরন্মেন্টাল পলিউশান ইন্ডেক্সে সিংরাউলীর মান ৬২.৫৯। সিপিসিবি মধ্যপ্রদেশ পলিউশন কন্ট্রোল বোর্ডকে সম্পূর্ণ বিষয়টির ওপর তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছে কিন্তু এতেও কৃষক ও দারিদ্র সীমার নীচে থাকা আদিবাসী মানুষগুলির কতটা সহায়তা হবে সেটাই প্রশ্নের মুখে কারণ সিপিসিবি থেকে ওই অঞ্চলের সবচেয়ে দূষিত অংশগুলির লিস্ট কেন্দ্রীয় পরিবেশ, বন ও আবহাওয়া পরিবর্তন দপ্তরকে পাঠালেও তারা সেই লিস্ট প্রকাশ করতেই রাজি নয়।
Picture courtesy: tv9bharatvarsh.com
Comments
Post a Comment