কেন্দ্রের শ্রমিক বিরোধী পদক্ষেপের বিরুদ্ধে ফের একজোট বামপন্থী ট্রেড ইউনিয়নগুলি

রিপোর্টঃ সায়ন 

রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ভাঁড়ারে ঘাটতির প্রভাব স্পষ্ট হওয়ার মুহুর্তেই শ্রমিকদের মজুরীর আশায় কালো মেঘের ঘনঘটা। লকডাউনের আবহে পুঁজিপতিদের হাত শক্ত করার জন্য শ্রম আইন এবং কর্মদিবসের নিয়মাবলীতে কেন্দ্র সরকার আনতে চলেছে বিরাট রদবদল।


শ্রমিকদের যেখানে বর্তমান নিয়মানুসারে সাপ্তাহিক শ্রমের নির্ঘন্ট অনুযায়ী ৪৮ ঘন্টার শ্রমদিবস পালন করতে হত, সরকার সেই নিয়মের বদল করে সাপ্তাহিক ৭২ ঘন্টার শ্রমদিবস পালন করার ইঙ্গিত দিচ্ছে, যার ফলস্বরূপ বিগত দিনে দৈনিক শ্রমসময় যেখানে পালিত হত ৮ ঘন্টা করে, সেখানে বর্তমানে সরকার চাইছে দৈনিক শ্রমসময় পালিত হোক ১২ ঘন্টা করে। ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশানের স্বীকৃত নিয়মানুসারে যেখানে উল্লিখিত আছে শ্রমিকদের ৮ ঘন্টার অতিরিক্ত সময় কর্মদিবস পালিত হলে দৈনিক মজুরীর ৫০ শতাংশ প্রদান করতে হবে সেখানে কেন্দ্র সরকার সেই নিয়মকে কার্যত বুড়ো আঙুল দেখিয়ে মুনাফাখোরদের হাতকে শক্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছে।বর্তমানে সরকারী ও বেসরকারী অফিসগুলোতে পিএফ এবং ইএসআই-এর ব্যবস্হা প্রচলিত আছে কিন্তু বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকার তাও বাতিল করতে উদ্যোগি। সরকার থেকে শ্রমিকদেরকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে যে তাঁদের সবরকমের সামাজিক সুরক্ষা দেওয়া হবে যদিও সরকার থেকে বিভিন্ন ক্ষেত্রের আনুষ্ঠানিক প্রতিটি প্রতিশ্রুতি যে ব্যর্থ হয়েছে তা যথারীতি প্রমানীত। লকডাউনের মধ্যে সরকারের তরফ থেকে শ্রমিকরা যেটুকু সামাজিক, স্বাস্হ্য ও অন্যান্য বিষয়ে সুযোগ সুবিধা পেত তা থেকেও বঞ্চিত। করোনা মোকাবিলাতে সরকার এখন ব্যয়ভার সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে কিন্তু প্রতি বছর স্বাস্হ্য খাতে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ করা হয় না কেন তার উত্তর দিতে গিয়েও হাবুডুবু খেতে হচ্ছে তাদের। মজুরীদের বেলায় মালিকপক্ষের রাজি না হওয়াকে সমর্থন করছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা। এই বিশেষ পরিস্থিতিতেও তাদের ধনীদের উপর সম্পত্তি কর বসাতে হাত কাঁপছে, পার্টি ফান্ড লাটে উঠবে যে।



সরকার প্রতিটি কলকারখানা সংঘঠিত ট্রেড ইউনিয়নগুলির শক্তি শিথীল করে দিচ্ছে। শ্রমিকদের হয়ে বিভিন্ন দাবী তুলে ধরা ট্রেড ইউনিয়নগুলিকে নিয়মের বেড়াজালে আবদ্ধ করে কোণঠাসা করা হচ্ছে। নিয়োগকারী এজেন্সি এবং নিয়োগকর্তাদের স্বার্থ রক্ষা করা হচ্ছে। কন্ট্রাক্ট ভিত্তিতে ক্যাজুয়াল লেবার দিয়ে কাজ চালানোকেও স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে। ইন্ডাস্ট্রিয়াল কোড, কোড অন সোশ্যাল সিকিউরিটি, অকুপেশনাল হেলথ, সেফটি অ্যান্ড ওয়ার্কিং কন্ডিশান্স কোড, ২০১৯ বলবত করে কেন্দ্র শ্রমিকদের সর্বনাশ করতে চাইছে।

বামপন্হী সংগঠনগুলি একত্রিত হয়ে ট্রেড ইউনিয়নগুলিকে এক মঞ্চের তলায় এনে লড়াই করার চেষ্টা করছে ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে। আন্দোলনের পথে রয়েছে TUCI, IFTU, IFTU (SARVAHARA), SWCC (WB) সহ অন্যান্যরা।

Comments

Popular posts from this blog

ঘটনার বিবরণ নয়, উপলব্ধি জরুরী; প্রসঙ্গ আর.জি.কর

ফ্যাসিবাদের উত্থানের যুগে সুবিধাবাদের রমরমা

কর্পোরেট হাঙরদের হাত থেকে লাদাখকে বাঁচাও!