লকডাউনের ভরপাইয়ের দাবীতে পিপল'স ব্রিগেডের গণকনভেনশন
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ ৩রা এপ্রিল মৌলালীর যুব কেন্দ্রে পিপল’স ব্রিগেডের আহ্বানে ‘লকডাউনের ভরপাই’-এর দাবীতে গণকনভেনশনের আয়োজন করা হয়। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের লকডাউনে ক্ষতিগ্রস্থ, সরকারি সাহায্য থেকে বঞ্চিত এবং কাজের অভাবে দেনার দায়ে জর্জরিত প্রান্তিক খেটে খাওয়া মানুষ এই কনভেনশনে অংশগ্রহণ করেন। গত ৯ই মার্চ মৌলালী থেকে মিছিল শুরু করতে গেলে পুলিশি অত্যাচারের সম্মুখীন হন আন্দোলনকারীরা। একইভাবে গণকনভেনশনের জন্য যুব কেন্দ্র ভাড়া নেওয়ার ক্ষেত্রেও যথেষ্ট টালবাহানা সহ্য করতে হয় আন্দোলনকারীদের। মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক, পুলিশ কমিশনার প্রমুখ আইনের রক্ষক(?)-দের দীর্ঘ ঝামেলা পের হয়ে অবশেষে অনুমতি মেলে এই কনভেনশনের। বোঝাই যাচ্ছে যে পুলিশ ও প্রশাসন আন্দোলনকারীদের কন্ঠরোধ করতে বদ্ধপরিকর। পুলিশ এবং আঞ্চলিক গুন্ডারা লকডাউনে ক্ষতিগ্রস্থ আন্দোলনকারীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দিয়ে আসে। কিন্তু সমস্ত প্রতিকূলতাকে উপেক্ষা করে তাঁদের উপস্থিতিই কনভেনশন সফল করেছে।
এই গণকনভেনশনে উত্থাপিত দাবীগুলি ছিলঃ
১. আর্থিকভাবে দুর্বল সব পরিবারকে ১লক্ষ টাকা দিতে হবে। ২. অন্তত এক বছর সকল ক্ষুদ্র ঋণ মুকুব করতে হবে। ৩. ওয়ার্ক-ফ্রম-হোম সহ কোথাও দিনে ৮ঘন্টার বেশী কাজ করানো চলবে না। ৪. লকডাউনে ছাঁটাই হওয়া সকলকে পুনর্বহাল করতে হবে। ৫. ধসে যাওয়া স্বাস্থ্য ব্যবস্থা পুনর্গঠন করতে হবে।
এই গণকনভেনশনের সভাপতিত্ব করেন সাথী অরিত্র বসু এবং প্রস্তাবনা পাঠ করেন সাথী শেখর ঘোষ। বক্তব্য রাখেন পিপল'স ব্রিগেডের কনভেনর সাথী বাসুদেব নাগ চৌধুরী, মণিমোহন পাত্র, দেবপ্রিয়া চক্রবর্তী এবং আজাদ মজদুর সংঘের তরফে সাথী অগ্নিশ্বর চক্রবর্তী।
আজাদ মজদুর সংঘের সাথী অগ্নিশ্বর চক্রবর্তী বলেন যে লকডাউন শুরু হওয়ার সময়ে সরকারের তরফ থেকে মালিকদের আগাম বকেয়া মজুরী প্রদানের নির্দেশ দেওয়া হলেও দেশের অধিকাংশ কারখানার শ্রমিক তা পাননি। এমনকি মাসিক মজুরী থেকেও তাঁরা বঞ্চিত হয়েছেন। উপরন্তু ৫ কেজি চালের জন্য লম্বা লাইনে হত্যে দিয়ে পড়ে থাকতে হয়েছে তাঁদের। দেশের কোনও সরকার শ্রমিকদের ন্যুনতম মজুরী দিয়ে মালিকদের বাধ্য করতে পারেনি। হুগলি জেলার কারখানাগুলোতে এমনিতেই বছরে দুই থেকে চার মাস লকডাউন চলে। শ্রমিকদের মজুরী বাড়ানোর আন্দোলন, তাঁদের কাজ করতে গিয়ে শারীরিক ক্ষতি ইত্যাদির ছুঁতো খুঁজে মালিকরা কারখানা বন্ধ রাখে! রাজ্যের ৭২টা জুটমিলের মধ্যে ২৩টা বন্ধ থাকলেও ভোট আবহে তা ইস্যু হয়ে ওঠেনি। আনলক ঘোষণার পরেও বহু কারখানা বন্ধ এবং কিছু খুললেও আবার বন্ধ হয়েছে...
সাথী শশাঙ্ক পাল একটি প্যারোডি পরিবেশনার মাধ্যমে উপস্থিত আন্দোলনকারীদের উজ্জীবিত করেন।
পিপল'স ব্রিগেডের আহ্বায়ক বাসুদেব নাগচৌধুরী বলেন যে বিধানসভা নির্বাচনের আবহে দ্বিতীয় একটা নির্বাচনের সম্মুখীন হয়েছেন সাধারণ মানুষ, তা হল 'ভোটের লড়াই না পেটের লড়াই'। নির্বাচনের ইস্যুগুলোতে কার্যত লকডাউন শব্দটিই ব্যবহার করা হচ্ছে না। এই লকডাউন আদতে আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সংকটের বোঝা ধনীদের থেকে দরিদ্রদের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়েছে। লকডাউনের মাঝে কোটিপতিদের সম্পদ বেড়েছে ৩৫% (যা দিয়ে গোটা দেশে ১০ বছর ১০০ দিনের কাজ চালানো যাবে) এবং ২০,০০০ টাকার কম আয়ের শ্রমজীবী মানুষের সম্পদ কমেছে ৩৭%। লকডাউনের মাঝে মুখেশ আম্বানী এক ঘন্টায় যত টাকা আয় করেছে তা রোজগার করতে দেশের শ্রমজীবী মানুষের ১০,০০০ বছর লাগবে! ফলে এই কর্পোরেট ভাইরাসের প্রকোপে নেকড়েরা রক্তের স্বাদ পেয়ে গিয়ে আবার লকডাউনের চেষ্টা করছে। এমনিতে হাসপাতালে চিকিৎসা কার্যত স্তব্ধ আর ফ্রিতে ভ্যাকসিন দেওয়ার নামে জনগণের ট্যাক্সের টাকা ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারী প্রাইভেট কোম্পানীগুলোর মুনাফা নিশ্চিত করতে ব্যবহার করা হচ্ছে। সরকারী উদ্যোগে ভ্যাকসিন প্রস্তুত করার পলিসি এখন ঠান্ডা ঘরে। সারা দেশে প্রতি বছর ৫ লক্ষ মানুষ অপুষ্টির কারণে যক্ষ্মারোগে মারা যান কিন্তু করোনা থেকে বাঁচাতে গিয়ে প্রতি বছরের তুলনায় ৮৬,০০০ মানুষকে যক্ষ্মারোগে মেরেছে এই লকডাউন। অক্সফোর্ডের সমীক্ষা অনুয়ায়ী সারা পৃথিবীতে সবচেয়ে কড়া লকডাউন হয়েছে ভারতে এবং লকডাউনের সময়ে সবচেয়ে কম সরকারী ব্যয় (জিডিপি-র ১%-এরও কম) হয়েছে এই দেশেই। সাথী বাসুদেব বলেন যে রাষ্ট্র বলছে "আমরা তোমাদের আটকাবো, তোমরা কি করবে?" আর আন্দোলনকারীদের স্লোগান "হয় সংগ্রাম, নয় মৃত্যু"।
Picture Courtesy: https://www.facebook.com/1069215693126914/posts/3821890417859414/
Comments
Post a Comment