বাবরি মসজিদ, আদালত ও ন্যায় বিচার: তথ্য থেকে সত্যে

সুমিত ঘোষ 


১. বাবরি মসজিদকে কেন্দ্র করে কিছু বিশেষ ঘটনার কালপঞ্জিঃ [১, ২, ৩, ৪, ৫]   

সাল

ঘটনা

১৫২৮

বাবরি মসজিদের প্রতিষ্ঠা

১৯৪৯

মসজিদের ভেতর রাম লালার মূর্তি প্রতিষ্ঠা

১৯৯২, ৬ই ডিসেম্বর

বাবরি মসজিদ ধ্বংস

১৯৯২, ১৬ই ডিসেম্বর

লিবেরহান কমিশন গঠন

২০০৯

কমিশনের রিপোর্ট প্রকাশ

২০১৪

কোবরা পোস্ট স্টিং অপারেশান ‘জন্মভূমি’-তে প্রমাণিত ১৯৯২-এর ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত

২০২০

অভিযুক্ত নৃত্য গোপাল দাস এবং চম্পত রাই রাম মন্দির ট্রাস্টের দায়িত্বে। নৃত্য গোপাল দাসের উপস্থিতিতে রাম মন্দিরের ভূমি পূজন। 

 

২. ৬ই ডিসেম্বর, ১৯৯২-এর ঘটনাক্রমঃ [৬]    

সময়

ঘটনা

২৭শে নভেম্বর, ১৯৯২

কারসেবকরা অযোধ্যায় আসতে শুরু করে।

৫ই ডিসেম্বর, ১৯৯২

বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সিদ্ধান্ত যে সরযূ নদী থেকে জল ও বালি এনে মসজিদের সামনে কারসেবা করা হবে।

৬ই ডিসেম্বর, ১৯৯২

বেলা ১১:৫৫

একজন ব্যাক্তি মসজিদের গম্বুজে উঠে ভাগুয়া ঝাণ্ডা লাগিয়ে দেয়।

৬ই ডিসেম্বর, ১৯৯২ বেলা ১২:১৫

কারসেবকরা মসজিদের গম্বুজে উঠে ভাঙতে শুরু করে।

৬ই ডিসেম্বর, ১৯৯২, দুপুর

মাঝের দেওয়াল ভেঙে সমস্ত ধাঁচা ধ্বংস করার পরিকল্পনা করা হয়।

৬ই ডিসেম্বর, ১৯৯২, বিকেল

অস্থায়ী মন্দির নির্মাণ শুরু।

৬ই ডিসেম্বর, ১৯৯২, সন্ধ্যা

১২জন স্থানীয় মুসলমানকে হত্যা। ২৬৭টি দোকানে লুটপাট করার পর আগুন লাগানো হয়।

 

৩. বাবরি মসজিদকে কেন্দ্র করে আইনী প্রক্রিয়ার কালপঞ্জিঃ [১, ২]

সাল

আইনী প্রক্রিয়া

১৮৮৫

মোহন্ত রঘুবীর দাস ফৈজাবাদ আদালতে বাবরি মসজিদ সংলগ্ন জমিতে ফুলের বাগান তৈরির আর্জি জানায়। আদালত আর্জি খারিজ করে দেয়।

১৯৫০

গোপাল শিমলা বিশারদ এবং পরমহংস রামচন্দ্র দাস ফৈজাবাদ আদালতে বাবরি মসজিদের ভেতর স্থাপিত রাম লালার মূর্তির পূজার অধিকার দাবী করে। 

১৯৫৯

নির্মোহী আখড়া মসজিদ সংলগ্ন বিতর্কিত জমির মালিকানা স্বত্ব দাবী করে। 

১৯৬১

সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড মসজিদের মালিকানা স্বত্বের দাবী জানায়।

১৯৮৬

স্থানীয় আদালত বিতর্কিত মন্দির তীর্থ যাত্রীদের জন্য খুলে দেওয়ার নির্দেশ দেয়।

১৯৮৯

আলাহাবাদ হাই কোর্ট বিতর্কিত ধাঁচার প্রশ্নে স্থিতাবস্থা বজায় রাখে।

১৯৯২

অজানা কারসেবক দুষ্কৃতি ও দাঙ্গার প্ররোচক রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে দুটি এফ.আই.আর দায়ের করা হয়।

১৯৯৩

সিবিআই লালকৃষ্ণ আডবাণী, মুরলী মনোহর যোশী সহ মোট ৪৯জন দাঙ্গা প্ররোচক রাজনৈতিক নেতাদের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে চার্জশিট ফাইল করে।

২০০১

বিশেষ সিবিআই কোর্ট বালা সাহেব ঠাকড়ে সহ সকল অভিযুক্ত নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা খারিজ করে দেয়।

২০০৪

সিবিআই কোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে আলাহাবাদ হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়।

মে, ২০১০

হাই কোর্ট সিবিআই-এর আর্জি খারিজ করে দেয়।

সেপ্টেম্বর, ২০১০

হাই কোর্ট বিতর্কিত জমি সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড, নির্মোহী আখড়া এবং রাম লালা (!!!)-র মধ্যে বিভাজন করার রায় দেয়।

ফেব্রুয়ারি, ২০১১

সিবিআই হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়।

মে, ২০১১

সুপ্রিম কোর্ট হাই কোর্টের রায়ের উপর স্থগিতাদেশ দেয়।

২০১৭

সুপ্রিম কোর্ট লালকৃষ্ণ আডবাণীর মত দাঙ্গায় প্ররোচক নেতাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ পুনর্বহাল করে। লখনউ ও রায়বারেলীর পৃথক আদালতে চলতে থাকা সাধারণ কারসেবক ও রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে সকল মামলা সুপ্রিম কোর্ট একসঙ্গে লখনউ আদালতে পাঠিয়ে দেয় নিষ্পত্তির জন্য।

২০১৯

সুপ্রিম কোর্ট বিতর্কিত বাবরি মসজিদ এবং সংলগ্ন জমি ভগবান রামকে দান করে এবং মসজিদ তৈরির জন্য অন্যত্র ৫ একর জমি ধার্য করে। 

২০২০

বিশেষ আদালতের বিচারপতি এস.কে. যাদব বাবরি মসজিদ মামলায় ৩২জন অভিযুক্তদের (বাকি ১৭জন মৃত) বেকসুর খালাস করে দেয়।

 

৪. এই কালপঞ্জির নির্যাস থেকে কিছু প্রবণতার অনুসন্ধানঃ

ক. আঞ্চলিক কোর্ট শুরু থেকেই গেরুয়া রাজনীতির প্রতি সহানুভূতিশীল।

খ. ১৯৮৬ সালে তীর্থ যাত্রীদের অনুপ্রবেশের রায় থেকেই রাম মন্দির প্রতিষ্ঠার প্রতি কোর্টগত আত্মসমর্পণ শুরু।

গ. ২০০১ এবং ২০২০-র বিশেষ সিবিআই আদালতের রায় প্রায় একই; উভয় রায় দানই কেন্দ্রে বিজেপি সরকারের আমলে।

ঘ. ২০১০ এবং ২০১৯-এর যথাক্রমে হাই কোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের রায় দানেই রাষ্ট্রীয় ধর্মনিরপেক্ষতা রক্ষার ইস্যুকে জমি বিবাদ হিসেবে পরিগণিত করা এবং মহাকাব্যের চরিত্র ‘রাম লালা’-কে জমি দানের প্রবণতা লক্ষণীয়।

৫. বিশেষ সিবিআই আদালতের বিচারপতি এস. কে. যাদব কি কি বলেছেন? [৭]

ক. কারুর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের প্রমাণ মেলেনি। কিছু দুষ্কৃতি মসজিদের গম্বুজে উঠে তা ধ্বংস করেছে।

খ. আরএসএস ও বিশ্ব হিন্দু পরিষদ মসজিদ ধ্বংসের ঘটনায় যুক্ত ছিল না।

গ. সিবিআই-এর দেওয়া ভিডিও অস্পষ্ট এবং অডিও শ্রবণযোগ্য নয়।

ঘ. সংবাদমাধ্যমের তথ্য গ্রহণযোগ্য নয়।

৬. ফ্যাসিবাদী অক্ষে বিচার ব্যবস্থার চরিত্রঃ 

ক. জার্মানীর বিচার ব্যবস্থার একটি পর্যবেক্ষণঃ [৮, ৯]

ক.১ জার্মানীর বিচার ব্যবস্থার মূল ধারার বিবর্তনের রূপরেখাঃ

যুগ

চরিত্র

রাজতন্ত্রের অন্তিম পর্যায়

ডানপন্থী পার্টিদের প্রতি রাজতন্ত্রী বিচারকদের নরম মনোভাব। বামপন্থীদের বিরুদ্ধে রায় দানের প্রবণতা।

ওয়াইমার প্রজাতন্ত্র

ডানপন্থী পার্টিদের প্রতি সদর্থক পক্ষপাতিত্ব। কমিউনিস্ট ও স্পার্টাকাসপন্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান। উগ্র ডানপন্থীদের প্রতি নরম মনোভাব।

নাৎসি শাসন

নাৎসিপন্থার প্রতি পক্ষপাতিত্ব। অতিরিক্ত ইহুদী বিদ্বেষ। রায় দানের ক্ষেত্রে অভব্য ভাষার প্রয়োগ। যুদ্ধ পরবর্তীকালে কারারুদ্ধ হওয়া এড়াতে বিচারকদের মিলিত আর্তনাদ যে নাৎসি অত্যাচার থেকে বাঁচতেই তাঁদের মানবতা বিরোধী অবস্থান! (যদিও নাৎসিদের বিরুদ্ধে রায় দিলে কেবল  জোড় করে অবসর গ্রহণের উদাহরণই রয়েছে ইতিহাসের পাতায়)  

 

ক.২ জার্মানীর বিচার ব্যবস্থার ব্যাতিক্রমী ধারার বিরুদ্ধে ফ্যাসিবাদের টোটকাঃ

১৯৩৩ সালে জার্মান সংসদ রাইখস্ট্যাগে আগুন লাগানোর ষড়যন্ত্র মামলায় সর্বোচ্চ ন্যায়ালয় একজন বাদে বাকি সকল কমিউনিস্টদের বেকসুর খালাস করে দেয়। এর মোকাবিলায় বিচার ব্যবস্থাকে কুক্ষিগত করতে ১৯৩৪ সালে হিটলার ভোক্সগেরিকহফ বা জনগণের আদালত তৈরির নির্দেশ দেয়। এই আঞ্চলিক আদালতগুলি নাৎসি সন্ত্রাসের যন্ত্র হিসেবে কাজ করতে থাকে। ১৯৪৪ সালে হিটলারকে হত্যা করার জুলাই ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্তদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়েই মৃত্যু দণ্ডাদেশ দেয় রোল্যান্ড ফ্রেইস্লারের আদালত।

খ. জার্মান বিচার ব্যবস্থার বিবর্তনের সাথে ভারতীয় বিচার ব্যবস্থার সাদৃশ্য আছে কি?

তৃতীয় লিঙ্গের অধিকার স্বীকৃতির মত ব্যতিক্রমী রায় দানের সাথে সাথে প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে অন্যান্য সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের প্রকাশ্য উষ্মা প্রকাশ দেখা গেছে। অন্যদিকে, আধার, এনআরসি, রাম মন্দিরের প্রশ্নে সুপ্রিম কোর্টের গেরুয়া রাজনীতির কাছে আত্মসমর্পনও লক্ষণীয়। মানুষের ‘বিশ্বাস’কে স্বীকৃতি দেওয়ার মত বিপজ্জনক প্রবণতা দেখিয়ে, বাবরি মসজিদ ধ্বংসের নিন্দা করে, সেই ধ্বংসলীলার মদতদাতাদেরই দাবী মেনে, ধর্মীয় বিভাজনের ইস্যুকে জমি বিবাদের প্রশ্নে পরিণত করেছে সুপ্রিম কোর্ট। এর বাইরে, আঞ্চলিক হাইকোর্টগুলির অবস্থান আরও নঞর্থক। বিশেষ আদালতগুলি দীর্ঘদিন ধরেই কেন্দ্র সরকারের স্বার্থের অনুঘটক। সাম্প্রতিক সংসদে পাশ হওয়া সমস্ত বিলগুলিতেই কেন্দ্র সরকার আঞ্চলিক আদালতগুলিতেই বিবাদ মেটানোর ধারা যুক্ত করে চলেছে; কিছু কিছু আইনে উচ্চ আদালতে যাওয়ার অধিকারও খর্ব করা হয়েছে!

৭. লিবারহান কমিশন কি কি বলেছিল? [১০]  

ক. অনুচ্ছেদ ১৫৮.৫: ১৯৯২-র ৬ই ডিসেম্বরের জন সমাবেশের জন্য আগত কারসেবক এবং তাদের নেতাদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল ‘রাম কথা কুঞ্জ’-এর (রাজনৈতিক বক্তৃতা প্রদানের বেদী) সংলগ্ন এলাকায়।

. অনুচ্ছেদ ১৫৮.৭: ভারত কল্যাণ প্রতিষ্ঠান, রাম জন্মভূমি ন্যাস পাদুকা পূজন নিধি, সীতারাম আগরওয়াল, অশোক সিঙ্ঘল, মোহন্ত পরমহংস রামচন্দ্র দাস প্রভৃতি সংগঠন ও ব্যাক্তি বিশেষের অ্যাকাউন্টে আন্দোলনের জন্য জোগাড় করা অর্থ গচ্ছিত হয়েছিল।

. অনুচ্ছেদ ১৫৮.৯: আন্দোলনকারীদের থাকা খাওয়ার সংস্থান, ধ্বংসলীলার পর্যায়ক্রমিক চরিত্র এবং অর্থ সংগ্রহের রূপরেখা থেকেই স্পষ্ট যে বাবরি মসজিদ ধ্বংস কিছু উন্মত্ত দুষ্কৃতির আবেগ প্রসূত কুকীর্তি নয় বরং পূর্ব পরিকল্পিত রাজনৈতিক পদক্ষেপ।

. অনুচ্ছেদ ১৫৮.১০: যেভাবে মসজিদের ধাঁচা ধ্বংস করা হয়েছে এবং যেভাবে নতুন মন্দির অল্প সময়ের মধ্যেই তৈরি করা হয়েছে তা থেকে স্পষ্ট যে ৬ই ডিসেম্বরের ঘটনা ছিল পূর্ব পরিকল্পিত। ঝামেলার সময় বহু আরএসএস ও বজরং দলের কর্মী এবং অশোক সিঙ্ঘল ও বিনয় কাটিয়ারের মত স্থানীয় নেতৃত্ব উপস্থিত ছিল।

. অনুচ্ছেদ ১৬০.৪: উত্তর প্রদেশের কল্যাণ সিং-এর গেরুয়া সরকারের প্রত্যক্ষ মদতের বদলে পরোক্ষ মদত বুঝিয়ে দেয় যে তারা নিজেদের কাজের বেআইনী স্বরূপ সম্পর্কে অবগত ছিল।

. অনুচ্ছেদ ১৬০.৬: উত্তর প্রদেশে আরএসএস সমান্তরাল সরকার চালাচ্ছিল। কল্যাণ সিং-এর সরকারে বিষ্ণু হরি ডালমিয়া, লালজী টন্ডন, অশোক সিঙ্ঘল, বিনয় কাটিয়ার, পরমহংস রামচন্ত্র দাসের মত বিভিন্ন দাঙ্গা প্ররোচকরা ছিল। এই দুষ্ট চক্রের প্রতি লালকৃষ্ণ আডবাণী, অটল বিহারী বাজপেয়ী, মুরলী মনোহর যোশীদের সমর্থন ছিল।

. অনুচ্ছেদ ৫১.৬: উত্তর প্রদেশের রাজ্য সরকার যখন বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পক্ষে তখন আমলা বা পুলিশের পক্ষে বিরোধী অবস্থান গ্রহণ করা সম্ভব ছিল না।

. অনুচ্ছেদ ৫১.৮: ২৬শে নভেম্বর, ১৯৯২ মুখ্যমন্ত্রী একটি বৈঠকে তার পার্টির সকল বিধায়কদের প্রত্যেক পঞ্চায়েত থেকে ৬ই ডিসেম্বরের সভায় ১০জন করে সদস্য আনার সীমারেখা বেঁধে দেন।

. অনুচ্ছেদ ১০৭.৬: বাবরি মসজিদ ধ্বংসের সময়ে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, বজরং দল, আরএসএস এবং বিজেপির চিহ্নিত কর্মীরা উপস্থিত ছিল। পরমহংস রামচন্দ্র দাস বজরং দলকে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের যুব ইউনিট হিসেবে চিহ্নিত করে।

. অনুচ্ছেদ ১২২.৯: পরমহংস রামচন্দ্র দাসঃ “মুসলমান রাজা বাবর যেমন রাম মন্দির ধ্বংসের কোনো তারিখ আগে থেকে জানায়নি, আমরাও বাবরি মসজিদ ধ্বংসের তারিখ আগে থেকে জানাব না। ৬ই ডিসেম্বর ভজন কীর্তনের বাইরে আরও অনেক কিছু হবে-কারসেবা শুধু কীর্তনে সীমাবদ্ধ থাকতে পারে না”।  

. অনুচ্ছেদ ১২২.১০: চম্পত রাই, আচার্য গিরিরাজ কিশোরদের মত নেতারা প্রতীকী কারসেবায় নিজেদের কার্যকলাপ সীমাবদ্ধ রাখার পক্ষপাতি ছিল না। কানপুর রেল স্টেশনের সভায় লালকৃষ্ণ আডবাণীঃ “কারসেবা হবেই-প্রকৃত কারসেবার পথে কোনও বাধা আসতে দেওয়া হবে না। কারসেবা মানে কেবল ভজন ও কীর্তন নয়; আমরা ইট ও কোদাল দিয়ে উত্তর প্রদেশ সরকার অধিগৃহীত ২.৭৭ একর জমিতে কারসেবা করব”

. অনুচ্ছেদ ১২২.১১: চম্পত রাইঃ “কারসেবায় গেরিলা শৈলী গ্রহণ করা হবে” (২৪শে নভেম্বর, ১৯৯২)।

. অনুচ্ছেদ ১২৪.১৭: বিনয় কাটিয়ারঃ “৬ই ডিসেম্বর কারসেবা করা হবে এবং তাতে কোর্টের নির্দেশ অমান্য হলে কোনও চিন্তা নেই”। বিষ্ণু হরি ডালমিয়াঃ “বাবর মন্দির ধ্বংস করেছিল, আমরা মসজিদ ধ্বংস করব”  

. অনুচ্ছেদ ১২৬.৩: ৬ই ডিসেম্বরের সভার একটি উস্কানিমূলক স্লোগানঃ “মিট্টি নাহি খিচকায়েঙ্গে, ধাঁচা তোড়কার যায়েঙ্গে’, “জো হিন্দু হিত কি বাত কারেগা, ওয়াহি দেশ পার রাজ কারেগা”    

. অনুচ্ছেদ ১২৬.৭: ৬ই ডিসেম্বরের একটি স্লোগানঃ “বাড়ি খুশী কি বাত হ্যায়, পুলিশ হামারে সাথ হ্যায়”।

. অনুচ্ছেদ ৫২.৪: ১৯৯১ সালে কল্যাণ সিং উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর পুলিশের বিভিন্ন পদে সংঘ ঘনিষ্ঠদের বসিয়ে দেন।

. অনুচ্ছেদ ৭৬.১৮ ও ৭৬.১৯: পুলিশি পাহাড়া দুর্বল থাকার দরুণই দুষ্কৃতিরা মসজিদে প্রবেশ করতে সফল হয়।

. অনুচ্ছেদ ১৫৮.৯: পর্যটন ব্যবস্থার উন্নতির নাম করে ২.৭৭ একর জমি অধিগ্রহণ করে কল্যাণ সিং সরকার তা বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সংগঠন ‘রাম জন্মভূমি ন্যাস’-কে প্রদান করে মন্দির তৈরির উদ্দেশ্যে।

. অটল বিহারী বাজপেয়ী সমেত মোট ৬৮জনকে দোষী সাব্যস্ত করে লিবেরহান কমিশন।

৮. লিবেরহান কমিশনের দুটি গলতিঃ

. নিজ বক্তব্যের দিক থেকে ধর্মীয় গোষ্ঠীগত ভারসাম্য রক্ষার্থে মুসলিম সংগঠনগুলির সমালোচনা করে বলা হয় যে এই দলগুলির নেতারা গরীব সাধারণ মুসলমানদের প্রতিনিধি নয় কিন্তু এই একই অভিযোগ তথাকথিত সেকুলার আঞ্চলিক পার্টি ও কংগ্রেসের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হলেও সে সম্পর্ক মুখে কুলুপ এই কমিশন।

. অনুচ্ছেদ ১৬০.৯-এ গোয়েন্দা রিপোর্টের ব্যর্থতার নামে নরসিংহ রাও-এর কেন্দ্রীয় সরকারের পরিস্থিতি মোকাবিলায় উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অসফলতাকে খারিজ করা হয়েছে। কিন্তু ২০০৫ সালে প্রকাশিত একদা গোয়েন্দা মলয় কৃষ্ণ ধরের “ওপেন সিক্রেটসঃ ইন্ডিয়াস ইন্টেলিজেন্স আনভেইল্ড” বইতে তিনি বলেছেন যে ১৯৯২-র ফেব্রুয়ারি মাসে গেরুয়া সংগঠনগুলির একটি গোপন বৈঠকে ৬ই ডিসেম্বরের নীল নকশা তৈরির কথা গোয়েন্দারা জেনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে রিপোর্ট পাঠিয়েছিলেন [১১]। তাও নরসিংহ রাও কিছু করেননি, সবকিছু হতে দিয়েছেন। কংগ্রেসের নরম হিন্দুত্ব ও সাম্প্রদায়িকতা বান্ধব চরিত্র এখানেই স্পষ্ট।

৯. লিবেরহান কমিশন নিয়ে বিজেপির গুসসাঃ [১২]

রাজনাথ সিং, সংসদ, ২০০৯: কেউ ইচ্ছে করে মসজিদ ধ্বংস করেনি। কিছু সাধারণ মানুষ আবেগবসত মসজিদের ধাঁচা ভেঙে ফেলেছে। অযোধ্যায় রাম লালার জন্মস্থানকে কেন্দ্র করে সমগ্র ভারতবাসীর বিশ্বাস ও আবেগ জড়িয়ে রয়েছে। লিবেরহান কমিশনের সব অভিযোগ মিথ্যা।

১০. কিছু খ্যাতনামা অভিযুক্তদের কিসসাঃ

নাম

কি বলেছে বা করেছে

মুরলী মনোহর যোশী

১৯৯২-এর ঘটনার সময়ে বিজেপি সভাপতি এবং পার্শ্ববর্তী মঞ্চে উপস্থিত। তার পার্টি ক্যাডারদের উচ্ছৃঙ্খলতার দায় তাই তারই [১০]

লাল কৃষ্ণ আডবাণী

সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার মূল প্ররোচক [১০]  

অটল বিহারী বাজপেয়ী

৫ই ডিসেম্বর, ১৯৯২, লখনউঃ “সুপ্রিম কোর্টের রায়ই আমাদের অধিকার দিয়েছে যে আমরা কারসবা করতে পারি। থামার তো প্রশ্নই ওঠে না। কাল অযোধ্যায় কারসেবা করে সর্বোচ্চ ন্যায়ালয়ের নির্ণয়ের সম্মান করা হবে। সুপ্রিম কোর্ট বলেছে যে ফয়শালা না হওয়া পর্যন্ত নির্মাণ কাজ করা যাবে না। কিন্তু আমাদের ভজন ও কীর্তন করার অধিকার দেওয়া হয়েছে। ভজন একা একা করা যায় না। কীর্তনে তো আরও লোক হয়। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভজন হয় না। মাটি থেকে কাঁকড় উঠলে তার উপর তো কেউ বসতে পারবে না। তাই জমিকে সমতল করতে হবে বসার উপযুক্ত করার জন্য। যজ্ঞের আয়োজন হলে কিছু নির্মাণও হবে। অন্তত বেদী তো তৈরি হবে...” [১৩]

অশোক সিঙ্ঘল

বাবর একবার মন্দির ভেঙে ধাঁচা তৈরি করেছিল। প্রধানমন্ত্রী যদি মনে করেন আবার মসজিদ তৈরি করবেন, তো ভারতে দ্বিতীয় বাবরকে বরদাস্ত করা হবে না[১৪]

উমা ভারতী

আপনারা যখন ৩০শে অক্টোবর এখানে এসছিলেন তখন কি এই ইমারত ধ্বংস করতে পারতেন না? পারতেন। যখন ২রা নভেম্বর আপনারা এখানে এসছিলেন তখন কি এই ইমারত ধ্বংস করতে পারতেন না? পারতেন। গুলির ভয় ইমারত ভাঙা হয়নি এমন ধারণা কারুর হলে জেনে রাখুন যে গুলি কম পড়ে যাবে বুক চিতিয়ে এগিয়ে আসা লোকের সংখ্যার থেকে[১৪]

সাধ্বী ঋতম্ভরা

মসজিদ ধ্বংসের সময়ে স্লোগান দিচ্ছিলঃ “এক ধাক্কা আউর দো, বাবরি মাসজিদ তোড় দো” [১৫]

মোহন্ত ধর্মদাস

আমি তো ওই জমির মালিক। ১৯৪৯-এ আমার গুরু ওখানে মূর্তি রেখেছিল। ১৯৯২ সালে ধাঁচা ধ্বংসের পর ওখানে মূর্তি আমি রেখেছিলাম[১৬]

রাম বিলাস বেদান্তি

আমি ধাঁচা ভেঙেছি। আমরা লাখ লাখ কারসেবকরা মিলে ধাঁচা ভেঙেছি” [১৭]

বালা সাহেব ঠাকড়ে

১৯৯৩, ‘আপকি আদালতঅনুষ্ঠানে:

প্রশ্নঃ শিবসেনা বলেছিল যে ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ভাঙার সময়ে তাদের লোকজনও ছিল। আপনার কি মত?

ঠাকড়ের উত্তরঃ এ তো গৌরবের কথা [১৮] 

 

রামের লীলায় বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে হাসে...

তথ্য নির্দেশঃ

Babri Masjid Demolition: Timeline Of The 28-Year-Old Case; NDTV; 30th September, 2020; (https://www.ndtv.com/india-news/babri-masjid-case-verdict-timeline-of-babri-masjid-demolition-case-2303206)

. Babri Masjid Demolition: A Timeline; PTI, The Hindu; 30th September, 2020; (https://www.thehindu.com/news/national/babri-masjid-demolition-case-a-timeline/article32732622.ece)

. Liberhan Commission; Wikipedia; (https://en.m.wikipedia.org/wiki/Liberhan_Commission)

. Babri Masjid demolition was well-planned in ahead: Cobrapost sting; Bihar Prabha; 4th April, 2014; (https://news.biharprabha.com/2014/04/babri-masjid-demolition-was-well-planned-in-ahead-cobrapost-sting/)

2 Accused of Babri Masjid Demolition Now Part of Ram Mandir Trust; Aishwarya Iyer; The Quint; 21st February, 2020; (https://www.thequint.com/news/politics/nritya-gopal-das-champat-rai-ram-mandir-trust-babri-masjid-demolition))

'How can you believe Advani?'; Syed Firdaus Ashraf; rediff.com; (https://www.rediff.com/news/interview/how-can-you-believe-advani/20170420.htm)

. Babri Masjid demolition verdict: 'Act was not pre-planned' says CBI Special Judge SK Yadav; Times Now News; 30th September, 2020; (https://www.timesnownews.com/videos/mirror-now/society/babri-masjid-demolition-verdict-act-was-not-pre-planned-says-cbi-special-judge-sk-yadav/76304)

. LAW AND JUSTICE IN THE THIRD REICH; Holocaust Encyclopaedia; (https://encyclopedia.ushmm.org/content/en/article/law-and-justice-in-the-third-reich)

. Hitler's Justice-The Courts of the Third Reich; lngo Muller; Alternative Law Journal; (http://138.25.65.17/au/journals/AltLawJl/2000/20.html)

১০LIBERHAN AYODHYA COMMISSION REPORT (https://www.mha.gov.in/about-us/commissions-committees/liberhan-ayodhya-commission)

১১. Open Secrets: India’s Intelligence Unveiled; Malay Krishna Dhar; Manas Publications, 2005

১২. Liberhan commission reached bizarre conclusions, says BJP; PTI; rediff.com; 7th December, 2009; (https://news.rediff.com/report/2009/dec/07/liberhan-report-is-biased-reaches-bizzare-conclusions-bjp.htm)

১৩. Pradhanmantri - Episode 16: Babri Mosque Demolition; ABP News; 22nd October, 2013; (https://www.youtube.com/watch?v=MQaV2cWL1D4&feature=youtu.be)

১৪अशोक सिंघलउमा भारती और विनय कटियार के इस भाषण ने गिरा दिया बाबरी !; UP Tak; (https://www.youtube.com/watch?v=FGHRwwnX61M&feature=youtu.be)

১৫. Protestors confront Sadhvi Rithambara in New York; Aseem Chabra; rediff.com; 27th July, 2002; (https://www.rediff.com/us/2002/jul/27us.htm)

১৬बाबरी मस्जिद को लेकर कुछ ये बोले महंत धर्मदास; Zee News; 30th May, 2017; (https://www.youtube.com/watch?v=78h_h94qnnI&feature=youtu.be

১৭. Ram Vilas Vedanti says I ordered Babri demolition; Oneindia Hindi; 22nd April, 2017; (https://www.youtube.com/watch?v=7YznbE408AE&feature=youtu.be)

১৮. 1993 Balasaheb Bal Thackeray praising Babri masjid demolition; Voter Giri; 3rd November, 2017; (https://www.youtube.com/watch?v=qlIozsYD2Dk&feature=youtu.be)

 

 

 

 

 

 

 

 

Comments

Popular posts from this blog

বর্তমান সময়ে বাম ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা

Polemics on 'Fractured Freedom': C Sekhar responds to Kobad Ghandy's views

আম্বেদকরের চোখে - কেন ব্রাহ্মণ্যবাদ শাকাহারী পথ গ্রহণ করল? গো ভক্ষণ নিষিদ্ধকরণের সাথে অস্পৃশ্যতার কি সম্পর্ক রয়েছে?