পার্ক স্ট্রীট, কামদুনি, হাসখালির পথ পেরিয়ে...

রূপক গায়েন 


ইদানীং দেখা যাচ্ছে বেশ সাউথের মুভি'গুলোতে চ্যাপ্টার 1, 2 করে সিকোয়েল প্রিকোয়েল বেরোচ্ছে।পশ্চিমবঙ্গে রেপ বিষয়ক এই রিপোর্টটিও দুটি চ্যাপ্টারে বিভক্ত করে সাজানো হলো। তবে ঘটনাগুলো সাজানো নয়, বেহদ সত্যি... 

চ্যাপ্টার 1

মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে প্রায় সদ্য উনি এসেছেন, চারিদিকে 'মা-মাটি-মানুষ' করে বেড়াচ্ছেন... 

পার্কস্ট্রিটের বুকে সুজেট নামের একটি অ্যাংলো ইন্ডিয়ান মেয়েকে লিফ্ট দেওয়ার নাম করে গাড়িতে তুলে করা হলো গণধর্ষণ; ফেলে দেওয়া হলো রবীন্দ্র সদনের কাছে... মহানগর দেখলো এই নতুন মুখ্যমন্ত্রীর জমানার প্রথম নৃশংস গণধর্ষণ... নৃশংসতার পারদ আরও চড়লো যখন পুলিশ FIR নিতেও অস্বীকার করলো এবং ঘটনাটিতে সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদারের উক্তি ছিলঃ 'খোদ্দেরের সাথে বচসা'! এই নৃশংস ঘটনায় অভিযুক্তদের একজন তৎকালীন রাজ্য সরকারের কাছের লোক এক অভিনেত্রীর (বর্তমানে শাসক দলের সাংসদও বটে) কাছের লোক ছিল। কাছের লোক + কাছের লোক = আরোও কাছের লোক। অতয়েব সব সাজানো ঘটনা!!!  

ঠিক একবছর পর আবারও গণধর্ষণ; ঘটনার শিরোনামে কামদুনি। কলেজ পড়ুয়া একটি মেয়েকে গণধর্ষণ করে তার গলা কেটে নিকটবর্তী মাছের ভেড়িতে ফেলে দেওয়া হয়। এক্ষেত্রেও চার্জশিট তৈরি করতে দেরী করানো হয় এবং দুজন ছাড়াও পেয়ে যায় উপযুক্ত প্রমাণের অভাবে।

এবার আসি চ্যাপ্টার 2-তে: পূর্ব পাঠের পুনরালোচনা

রেপকে সাজানো ঘটনা বলা নিজের এই মেয়েকেই কি বাংলা চেয়েছে? দিদি তৃতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় এসেছেন। আমতার আনিশের নৃশংস খুন বা বগটুই-এর গণহত্যা; এছাড়াও আমরা দেখলাম নদীয়ায় তৃণমূলেরই এক নেতার ছেলের দ্ধারা চোদ্দ বছরের একটি নাবালিকা মেয়ের ধর্ষণ। মাননীয়া ভোটের আগে হাতরাসের ঘটনায় বেশ লোক দেখানো নিন্দা করেছিলেন কিন্তু নিজের রাজ্যের এই ঘটনা সম্পর্কে বললেন: হয়তো আগে থেকেই মেয়েটির সাথে ছেলেটির কোনো সম্পর্ক ছিল এবং সেই সূত্রেই এই ঘটনা ঘটেছে। অর্থাৎ মহিলা মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যে থাকলেই যে মহিলারা ন্যুনতম সুরক্ষা সম্মান পাবেন, এর কোনো নিশ্চয়তা নেই বরং সেই মহিলাদের প্রতিই আঙুল তোলায় তার জুড়ি মেলা ভার। তাই সরকার পরিবর্তনের দাবীর পাশাপাশি সময় এসেছে সমাজ পরিবর্তনেরও কথা বলার। ধর্ষণ নিয়ে যে ছুৎমার্গতা আমাদের সমাজে রয়েছে সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। কিভাবে দেখবো আমরা ধর্ষণের ঘটনাকে? সময় এসেছে মহিলাদের আরোও বেশি করে স্বাবলম্বী (অর্থনৈতিক এবং শারীরিক দুভাবেই) করে তোলার। ক্যারাটে, জুডো জাতীয় খেলাই হোক বা কিছু ব্যাক্তিগত সুরক্ষা প্রদানকারী জিনিস সঙ্গে রাখা। এবং ধর্ষণ সম্পর্কে যে সামাজিক স্টিগমা, সেখান থেকেও বেরিয়ে আসতে হবে অর্থাৎ কোনো মহিলার শরীর ধর্ষণের ফলে অপবিত্র বা অচ্ছুৎ হয়ে গেছে এই ধারণা থেকে যেমন সমাজকে বেরিয়ে আসতে হবে তেমনি যিনি ধর্ষিতা হয়েছেন তাকেও বেরিয়ে আসতে হবে। সমাজ পুরুষতান্ত্রিক তবে দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোর লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। গানে, কথায়, পথে, প্রতিরোধে, এগিয়ে আসুক প্রত্যেকে। ন্যায়বিচারের আন্দোলন আরও জোরদার হোক। বদল হোক সমাজের... 

Comments

Popular posts from this blog

ফ্যাসিবাদের উত্থানের যুগে সুবিধাবাদের রমরমা

কমিউনিস্ট পার্টি ও তেলেঙ্গানা আন্দোলনের মহিলা কর্মীরা : কমঃ শর্মিষ্ঠা চৌধুরীর কলমে

কেন্দ্র সরকারের ‘জাতীয় শিক্ষা নীতি’ – একটি শিক্ষা বিরোধী ইস্তেহার