স্তালিন
বিমল কান্তি দাশ গুপ্ত
দরিদ্রদের আবাস এক বস্তি। সেই বস্তিতে এক মুচির ঘরে জন্ম। মুচির সংসারকে জাপটে ধরে আছে দারিদ্র্য। আর আছে নিত্য রোগের পাকাপাকি বাসা। মুচি স্বভাবে মদ্যপ। মাতাল হলে চলে স্ত্রীর উপর নিত্য অত্যাচার। স্ত্রীকে মারধর করা তার নিত্যদিনের ঘটনা। ছেলেটা দেখে। আর তার মনের আধারে জমতে থাকে ক্রোধ ক্ষোভ প্রতিহিংসা প্রতিশোধের ইচ্ছার মত সভ্য দুনিয়ার বর্জ্য যত আবর্জনা। চোখের জলের অন্তক্ষরণে ভিজে যা আকার নেয় জমাট কংক্রিটের। স্বভাব থেকে আবেগের ছিটেফোঁটা সিক্ততাও শুকিয়ে কাঠ।
এর মাঝে হামলা মারী বসন্তের। রোগের সাথে লড়াই জীবন বাজি রেখে। শেষ পর্যন্ত হেরো মরণ বিদেয় হল। তবে যাবার আগে বসন্তকে দিয়ে খামচানো আঁচড়ের চিহ্ন রেখে গেল সারা মুখে। লড়াইয়ের সাক্ষী তারা। এখানেই শেষ হল না। ঘটল এক দুর্ঘটনা। হাতে জখম। চিকিৎসা হল। গরিবের যেমন হয়। জখম হাত সেরেও গেল। তবে দৈর্ঘ্যে খানিক ছোট হয়ে রইল। যা আর কোনো দিন সমান হতে পারল না সঙ্গী হাতের।
বস্তিঘরের মানুষের জন্য এ কিছু নতুন কথা নয়। সারা দুনিয়া জুড়ে এমন দৃশ্য আর ঘটনার দেখা মিলবে সকল দেশে। মানুষের সমাজে এ দৃশ্য খুব বেশি দিনের পুরোনো নয়। যুদ্ধ করে দুর্বল রাজাকে হারিয়ে দিগবিজয়ী রাজার গৌরব অর্জনের যুগের অবসান ঘটে গেছে তত দিনে। এ যুগ হচ্ছে পরের রাজ্য দখল করে সে রাজ্যের প্রাকৃতিক সম্পদ আর মানুষের শ্রম লুঠের যুগ। আর সেই লুন্ঠিত সম্পদে নিজের দেশ আর জাতিকে সমৃদ্ধ করার যুগ। এই যুগ হল নিজের জাতকে শ্রেষ্ঠ প্রমাণ করবার যুগ। এ কাজে যারা যত সফল তারা তত বীর। এটাই মানুষের সভ্যতার আধুনিক রূপ। আর তার-ই দৃশ্যরূপ হল দেশে দেশে বাণিজ্যবন্দর। জাহাজ। ধোঁয়া ওগলানো কারখানার চিমনি। আর পৃথিবীতে বাসের অধিকার হারানো শ্রমনির্ভর মানুষের বস্তি। এ যুগ উপনিবেশ স্থাপনের যুগ।
যুগ যেমন বদলেছে বদলেছে মানুষের জীবন জীবিকার ধারাও। এই যুগের একটা শক্তিশালী রপ্তানিপণ্য হল খ্রিষ্ট ধর্ম। ধর্মের পসরা নিয়ে প্রচারকের দল ছড়িয়ে পড়ল আফ্রিকা আর এশিয়ার দেশে দেশে। তাদের লক্ষ্য দারিদ্র্য জর্জরিত মানুষের বস্তি এলাকা। প্রথম কাজ নিজের থাকা আর উপাসনার জন্য একটি স্থাযী আবাস গড়া। পরের কাজ সেবার আড়ালে ধর্মের প্রচার। প্রকাশ্যে শিক্ষা স্বাস্থ্য আর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে স্বাবলম্বী করে তোলা সমাজের একেবারে নীচে থাকা দরিদ্র মানুষদের। এই বিপুল ব্যবস্থার খরচের যোগান আসে রাজার প্রশ্রয় পুঁজিপতির পরোক্ষ বিনিয়োগ আর পরকালের সুখের বাসনায় সাধারণ গৃহস্থের দান থেকে।
আমাদের গল্পের এলাকাতেও চার্চ আর তার শিক্ষা ব্যবস্থা চালু হয়ে গেছে আগে থেকেই। আমাদের আলোচনার ছেলেটিকেও ভর্তি করে দেওয়া হয়েছে গ্রামের চার্চ মিশনের বিদ্যালয়ে। উদ্দেশ্য-- ভবিষ্যতে পাদ্রী অথবা ধর্ম প্রচারকের জীবিকায় প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে। খাওয়া পরার চিন্তা থাকবে না। উপরি পাওনা সামজিক মর্যাদা। সেখানে ছেলেটি কিছু দিন পড়ল বটে কিন্তু থিতু হল না।
এদিকে সামাজিক অমর্যাদা। চার্চ মিশনে নিয়মের কড়াকড়ি। পরিবারে বাবার নিষ্ঠুরতা। মায়ের প্রতি প্রতিদিনের হিংস্র আচরণ। আর্থিক অনটন। বারে বারে অসুখের যন্ত্রণা সব মিলে মিশে তার ভেতরে এক কঠোর নির্দয় গুণের প্রতিষ্ঠা হতে থাকল। বল প্রয়োগে প্রতিপক্ষকে জিতে নেওয়া। অপমানের প্রতিশোধ নেওয়া এমন সব গুণের বিকাশ হতে থাকল। এমনি করে এক জেদি মানুষ গড়ে উঠল তার মাঝে।
এদিকে সময়টা ছিল সে যুগের সমাজে ব্রাত্য করে রাখা ছোট লোকদের উত্থানের যুগ। আমাদের আলোচ্য এলাকাতেও রাজার বিরুদ্ধে রাজবিচারের বিরুদ্ধে ক্ষমতাবানদের বিরুদ্ধে ইতর মানুষের বিক্ষোভ বিদ্রোহ ক্রমেই বেড়ে চলেছে। এমন সময় মা-কে পেটানো মাতাল মুচি বাপের বয়ে যাওয়া মারকুটে ছেলে ওই সব প্রতিবাদী দলের সঙ্গে জুতে গেল।
দলে দিন দিন তার মর্যাদা বাড়ছে। দুর্বৃত্তকে দু’ঘা মেরে দিচ্ছে অনায়াসে। পুলিসে ধরছে। জেলে যাচ্ছে। পালিয়ে বেড়াচ্ছে। কাগজ বিলি করছে দলের কথা প্রচার করতে। সরকারি টাকা ডাকাতি করে দলের তহবিলে ভরছে। প্রতিপক্ষকে পিষে দেবার মেজাজ তার চেহারাতে ফুটে উঠছে। অত্যাচারির প্রতি নির্দয় হতে তার মুহূর্ত সময় লাগে না। এ যেমন পোড় খাওয়া ছেলে এর তুলনা হতে পারে একমাত্র লোহার সঙ্গে। তাই তো সাথিরা স্তল বা লোহার তুল্য বিবেচনা করে একদিন নাম রাখল স্তালিন অর্থাৎ লোহার মানুষ। এই হল যোশেফ জুগসভিলি ভিসারিয়োভিচ স্তালিনের আরম্ভ কালের কথা। জন্ম তার ১৮ ডিসেম্বর ১৮৭৮ সাল। স্থানঃ রাশিয়ার জারের রাজ্য জর্জিয়ার গোরি নামে শহরের বস্তিতে।
এর মাঝে পরিচয় হল কার্ল মার্ক্স-এর রচনার সঙ্গে। যোগ দিয়েছেন কমিউনিস্ট দের বলশেভিক দলে। যোগাযোগ ঘটেছে ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিনের সঙ্গে। হয়েছেন লেনিনের ঘনিষ্ঠ অনুগামী। সহযোগী। ঘটে গেছে উনিশ শ’ সতেরর রুশ বলশেভিক বিপ্লব। প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বিশ্বের প্রথম সমাজতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা। স্তালিন হলেন কমিউনিস্ট পার্টির সর্বোচ্চ নেতাদের অন্যতম। লেনিনের মৃত্যুর পর ১৯২৪ থেকে পার্টি আর দেশ পরিচালনার দায়িত্বে ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত। একটানা উনত্রিশ বছর তাঁর মৃত্যুর দিন তক।
বিপ্লবের পর দেশ গড়ার কাজ। লেনিন নেই। লেনিন ছিলেন অবিসংবাদী নেতা। কিন্তু তাঁর ছিল বিসংবাদ। লেনিনকে মধ্যমণি করে যে সকল বুদ্ধিজীবী বিপ্লবের কাজে যুক্ত হয়ে ছিলেন তারা ছিলেন এক একজন নিজ নিজ ক্ষেত্রে কৃতি পুরুষ। কী সামাজিক মর্যাদা কী জ্ঞান গরিমা অথবা আর্থিক সামর্থ্যে। অনেকের ছিল আন্তর্জাতিক যোগাযোগ আর স্বীকৃতি। সাধারণ মানুষের মাঝে এদের প্রত্যেকের একটা প্রভাব আছে। বিপ্লব আর তার পরের করণীয় সম্পর্কে প্রত্যেকের নিজস্ব মতধারা আছে। লেনিনের অবর্তমানে এরাই ছিলেন স্তালিনের সব চেয়ে কাছের প্রতিদ্বন্দ্বী। পরিস্থিতি এই ছিল বস্তি থেকে উঠে আসা অল্প শিক্ষিত এক গেঁয়ো গোঁয়ারকে নেতার স্বীকৃতি দেবার পক্ষে। এই বাধা পার হতে হয়েছে। স্থির লক্ষ্য আর নিষ্ঠুর জেদ সম্বল করে। তার সম্বল পুঁজিবাদের প্রতি আন্তরিক ঘৃণা। তাঁর আকাঙ্ক্ষা পুঁজিবাদেকে খতম করা। আর যুগ যুগের নির্যাতণের প্রতিশোধ নেওয়া। শ্রমজীবীদের শাসন প্রতিষ্ঠা করা। এই ছিল তাঁর সারা জীবনের লড়াই।
পরের বাধা। দেশ গঠন। কৃষকের অতিকায় অংশকে জমির অধিকার দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিপ্লবের সাথি করা হয়ে ছিল। বিপ্লবের পরে ভারি শিল্প গঠনের তাগিদে জমি ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে। বিপ্লবের পরে কৃষিতে যৌথ খামারের প্রতিষ্ঠা আর ভারি শিল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। বিপ্লবে সাহায্য করা কৃষকের মাঝে ক্ষোভ আর বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ছে। অভ্যাসের পরম্পরায় মান্য মহাশয়দের নির্দেশে সে বিদ্রোহ পরিচালিত হচ্ছে। পার্টির অন্য রকমের তাত্বিকেরা মদত দিচ্ছেন তাতে। দেশের অভ্যন্তরে প্রতিবিপ্লব ঘটে চলেছে। দুঃসাধ্য এই বাধা অতিক্রম করতে হয়েছে তাঁকে। বিদ্যুৎ আর ভারি শিল্পে ভর করে পিছিয়ে পড়া একটা দেশকে আধুনিক যুগের মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করেছেন। অন্য দিকে প্রচলিত ধ্যান ধারণা কুসংস্কারের বিরোধিতা করে সাধারণ মানুষের ছোট ছোট চাহিদাগুলোকে সংকলিত করে একত্রে সকলের মঙ্গলে বিকশিত করা সম্ভব করতে হয়েছে। সাফল্য এসেছে। কারণ তাঁর ছিল পুরাতন প্রচলিত সংকীর্ণ বিভেদকারী ব্যবস্থার প্রতি আন্তরিক ঘৃণা। আর ছিল নিজের লক্ষ্য পুরণের অদম্য জেদ। লৌহ যবনিকার আড়ালে ঘটে যাওয়া এই উন্নয়নের প্রথম স্বীকৃতি বাইরের বিশ্ব জানতে পারল ভারতের কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জবানিতে। প্রত্যক্ষ দ্রষ্টা কবি লিখলেন এরা ধনবৈষম্য ঘুচিয়েছে। এখানে না এলে তা দেখা হত না।
এর পরের ঘটনা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। যা স্থায়ী হয়ে ছিল ছয় বছর। ১ সেপ্টেম্বর ১৯৩৯ সাল থেকে ২ সেপ্টেম্বর ১৯৪৫ সাল। এলোমেলো ছন্দকে নিয়ন্ত্রণ করে প্রকৃতি নিজেই। ভারসাম্য বজায় রাখতে নিজেকে ঢেলে সাজায়। কখনো বন্যা কখনো ঝড়। কখনো তাপে দগ্ধ করে অথবা তুষারে ঢেকে দিয়ে। পুরাতন গ্লানি মুছে দিয়ে নতুন করে চলা শুরু করে প্রকৃতি। প্রকৃতির অধীনে থাকা মানুষের সমাজেরও একই নিয়ম। আদিম কাল থেকে বদল হতে হতে তবেই না আজকের আধুনিক সমাজ। যে সমাজ নিয়ে আমাদের অহংকার। আনেক যত্নে নির্মাণ মানুষের যে সমাজ সেখানেও বদল ঘটে। সমাজ কলুষিত হয়। যখন বেশি অংশের মানুষের জীবন যাপনের স্বাভাবিক ছন্দে বিঘ্ন ঘটে। আর সে বিঘ্নের দায় থাকে মানুষের নিজের হাতে। আর এটা ঘটে থাকে এক একটা সমাজ বিপ্লবের মধ্য দিয়ে। ভারতে একে বলা হয় মন্বন্তর । অর্থাৎ এক মনুর ব্যবস্থা থেকে অন্য মনুর ব্যবস্থায় উত্তরণ। আর এই মন্বন্তর ঘটে ব্যাপক এক সামাজিক সংঘর্ষ আর রক্ত ক্ষরণের মধ্য দিয়ে।
যে কথা দিয়ে শুরু করে ছিলাম। সে ছিল সমাজের বদল। গোষ্ঠীপতি দলপতি হয়ে এল রাজা। সে কাল শেষ করে এল সাম্রাজ্য আর সম্রাটের যুগ। সে যুগের অবসান ঘটিয়ে এল উপনিবেশের যুগ। তারই অবসানকালের এই যুদ্ধ। ভারতের সংস্কারে মন্বন্তর। এই যুদ্ধে সমাজের দু’টি রূপ প্রকট হবে। এক পুঁজিবাদ অন্যটি সমাজবাদ। এই দুই সমাজের দ্বন্দ্ব নিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরু। এ-ও এক মন্বন্তর ভারতীয় ভাবনায়। এই যুদ্ধে পুঁজিবাদের হিংস্র আক্রমণের প্রতিপক্ষে লড়াইয়ে সফল নেতা ছিলেন যোশেফ জুগসভিলি ভিসারিওভিচ স্তালিন। জন্ম যার বস্তিতে। সামাজিক মর্যাদায় খাটো। বিদগ্ধসমাজে ব্রাত্য। সম্পদ বলতে পুঁজিবাদের প্রতি আন্তরিক ঘৃণা। আকাঙ্ক্ষা যার অত্যাচারির প্রতি নির্দয় হিংসা। লক্ষ্য যার সমাজের নিপীড়িত মানুষকে আত্ম মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করা। আদর্শ তাঁর কার্ল মার্ক্সের সাম্যবাদের দর্শন। আর হাতিয়ার তাঁর কমরেড লেনিনের পথনির্দেশিকা। সম্বল অথবা সঙ্গী তাঁর অগণিত খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষের সমর্থন। যে মানুষেরা আদর করে শ্রদ্ধা করে তাঁকে স্তালিন নামে সম্বোধন করেন। স্তালিন ছিলেন সর্বহারা শ্রেণিতে জন্মানো সর্বহারার নেতা। মানুষের সভ্যতার ইতিহাসে যোশেফ স্তালিন ছিলেন এক ব্যতিক্রমী জনতার নেতা।
স্তালিনের কাজের মেয়াদ উনত্রিশ বছর। প্রথম পনর বছর ( ১৯২৪ থেকে ১৯৩৯ ) বিপ্লবের পরে দেশ গড়ার কাজ। পরের ছয় বছর ( ১৯৩৯ থেকে ১৯৪৫ ) বিশ্বযুদ্ধের বছর। পুঁজিবাদের নৃশংস প্রকাশ ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে দেশ আর বিশ্বের প্রথম সমাজ তান্ত্রিক রাষ্ট্রকে রক্ষার কাজ। পরের আট বছর (১৯৪৫ থেকে ১৯৫৩ ) যুদ্ধ পরবর্তী পরিবেশে দেশের উন্নয়নের কাজ। সমাজতন্ত্রের ভাবনার বাস্তবায়নের কাজ। বিজ্ঞান প্রযুক্তি শিক্ষা সংস্কৃতি শিল্প মানুষের জীবনের সকল স্তরের সকল ধারার উন্নয়নের এক অবিশ্বাস্য রকমের নজির সৃষ্টিতে নেতৃত্ব দিলেন। মানুষের ইতিহাসে যার নজির দ্বিতীয় আর নেই।
লেনিনের ঘনিষ্ঠ যে সকল নেতা স্তালিনের প্রতিপক্ষ ছিলেন নানা ধরণের বিরূপ মন্তব্যে স্তালিনের ভাবমূর্তিকে বিকৃত করতে থাকেন প্রথম। সে তথ্য সত্য অনুমান করে ছড়ায় তাঁদের অনুগত সাধারণ সমর্থকদের মাঝে। আর সেই তথ্য নিশ্ছিদ্র লোহার বেড়ার গা চুঁইয়ে আগ্রহী বুর্জুয়াদের হাতিয়ার হয়ে ওঠে। সেখানে স্তালিনের যে চিত্র আঁকা হতে থাকে তা হল—ভয়ংকর বীভৎস নরখাদক এক রাক্ষসের ছবি। সেখানে দেখানো হয়েছে যারাই স্তালিনের বিরোধিতা করেছেন তারাই স্তালিনের আক্রোশের শিকার হয়েছেন। তাদের জন্য জুটেছে ক্ষমতা থেকে অপসারণ জেল নির্বাসন অথবা মৃত্যু। শ্রমজীবী মানুষের মন থেকে স্তালিনের স্মৃতি মুছে দেবার জন্য প্রথম পদক্ষেপ – সংরক্ষণশালায় রাখা তাঁর মরদেহ সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে সাধারণ দর্শকদের চোখের আড়ালে। যুক্তি দেখানো হয়েছে কমিউনিস্টরা ব্যক্তিপূজায় বিশ্বাস করেন না। লেনিনের মূর্তি কিন্তু যথারীতি আছে। এখানেই শেষ নয়। এর পর সেই দেহ কবরে সমাহিত করা হয়েছে। স্তালিনের দেহকে চিরতরে শ্রমজীবী মানুষের চোখের আড়ালে পাঠিয়ে তবে নিশ্চিন্ত। বুর্জুয়ারা নিশ্চয় স্তালিনের মতো নিষ্ঠুর আর প্রতিহিংসা পরায়ণ হ’ন না।
লেনিনের একটা উক্তি, আক্ষরিক নয়। স্মরণ থেকে উদ্ধৃত করছি -- বিদ্রোহী নেতাদের বুর্জুয়ারা জীবিতকালে হত্যা করবার চেষ্টা করে। আবার মৃত্যুর পর সেই নেতাকেই আইকন বানিয়ে পূজা করে। এটা জনতাকে বিভ্রান্ত করবার একটা বুর্জুয়া কৌশল। স্তালিনের ক্ষেত্রে কিন্তু ব্যতিক্রম। কারণ বুর্জুয়ারা আর যত উদারই হোক না কেন বস্তিতে জন্মানো এক সর্বহারার নেতাকে সমান মর্যাদার আসনে বসার অধিকার দেবার মতো উদার হতে পারে না। আমাদের পুরাণ কাহিনিতে এমন অনেক অন্ত্যজ বীরের কথা বলা আছে। বাংলায় মনসাকে চাঁদ সদাগরের বাম হাতে ফুল দেবার কথা মনে আসে কি।
Photo Courtesy: PNG Images
Comments
Post a Comment