আইএসআই বিল, ২০২৫: এক ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানের স্বায়ত্তশাসনের ওপর হুমকি
অদ্রিরাজ তালুকদার
প্রশান্তচন্দ্র মহলানবীশ প্রতিষ্ঠিত ভারতীয় পরিসংখ্যান প্রতিষ্ঠান (আইএসআই) শুধুমাত্র একটি শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান নয়; এটি স্বাধীন ভারতের বিজ্ঞানচিন্তার এক উজ্জ্বল প্রতীক। প্রায় এক শতক ধরে আইএসআই তার স্বতন্ত্র শাসনব্যবস্থা ও একাডেমিক স্বাধীনতার মাধ্যমে বিশ্বমানের গবেষণা, শিক্ষাদান ও জাতীয় সেবার এক অসাধারণ ঐতিহ্য গড়ে তুলেছে।এই প্রতিষ্ঠানের পরিচালনাকারী কাউন্সিল এতদিন ধরে এমনভাবে গঠিত ছিল যে, সেখানে অভ্যন্তরীণভাবে নির্বাচিত সদস্যদের সঙ্গে সরকার-মনোনীত সদস্যদের একটি ভারসাম্যপূর্ণ অংশগ্রহণ ছিল। এই ভারসাম্যই আইএসআইকে দিয়েছে একদিকে গভীর একাডেমিক স্বাধীনতা, অন্যদিকে জনদায়বদ্ধতা ও স্বচ্ছতা।
কিন্তু সম্প্রতি প্রস্তাবিত “ঈন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইন্সটিটিউট বিল, ২০২৫” এই ঐতিহ্যের ওপর এক গুরুতর হুমকি হয়ে উঠেছে। এই বিলের মাধ্যমে আইএসআইকে একটি সরকার-নিয়ন্ত্রিত কর্পোরেট সংস্থাতে রূপান্তরিত করার প্রস্তাব আনা হয়েছে। নতুন আইনে বিদ্যমান কাউন্সিলকে ভেঙে দিয়ে তার জায়গায় একটি বোর্ড অফ গভর্ন্যান্স গঠন করার কথা বলা হয়েছে, যার অধিকাংশ সদস্যই হবেন সরকারের মনোনীত প্রতিনিধি। এর ফলে শিক্ষকমণ্ডলী ও গবেষকদের নির্বাচিত অংশগ্রহণ প্রায় বিলুপ্ত হবে।
আরও উদ্বেগজনক হলো, বিলটি প্রতিষ্ঠানের ওপর আর্থিক স্বনির্ভরতার নামে রাজস্ব অর্জনের জন্য চাপ সৃষ্টি করবে — যেমন স্টার্ট-আপ, কনসালটেন্সি, এবং বাণিজ্যিক প্রকল্পের মাধ্যমে আয় বৃদ্ধি। এক সময় যে প্রতিষ্ঠান “জাতীয় সেবা” ও “জ্ঞানচর্চা”-কে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল, সেটি এখন কর্পোরেট চিন্তাধারার পথে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।
এই বিল কার্যকর হলে আইএসআই তার একাডেমিক স্বাধীনতা, অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র এবং গবেষণার উদার পরিবেশ হারাবে। ভারতের মতো একটি গণতান্ত্রিক দেশে জ্ঞানচর্চার প্রতিষ্ঠানগুলিকে স্বাধীন ও মুক্ত চিন্তার ক্ষেত্র হিসেবেই রক্ষা করা জরুরি।
অতএব, আইএসআই বিল, ২০২৫ প্রত্যাহার বা পুনর্বিবেচনার জন্য জোর দাবি জানানো শিক্ষার্থী, গবেষকসহ সকল বিজ্ঞানমনস্ক মানুষের কর্তব্য। একটি ঐতিহাসিক, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত প্রতিষ্ঠানকে কর্পোরেট-আমলাতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত রেখে, তার স্বাধীনতা ও গৌরবকে সংরক্ষণ করার স্বার্থে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।

Comments
Post a Comment