Posts

স্তালিন

Image
বিমল কান্তি দাশ গুপ্ত দরিদ্রদের আবাস এক বস্তি। সেই বস্তিতে এক মুচির ঘরে জন্ম। মুচির সংসারকে জাপটে ধরে আছে দারিদ্র্য। আর আছে নিত্য রোগের পাকাপাকি বাসা। মুচি স্বভাবে মদ্যপ। মাতাল হলে চলে স্ত্রীর উপর নিত্য অত্যাচার। স্ত্রীকে মারধর করা তার নিত্যদিনের ঘটনা। ছেলেটা দেখে। আর তার মনের আধারে জমতে থাকে ক্রোধ ক্ষোভ প্রতিহিংসা প্রতিশোধের ইচ্ছার মত সভ্য দুনিয়ার বর্জ্য যত আবর্জনা। চোখের জলের অন্তক্ষরণে ভিজে যা আকার নেয় জমাট কংক্রিটের। স্বভাব থেকে আবেগের ছিটেফোঁটা সিক্ততাও শুকিয়ে কাঠ। এর মাঝে হামলা মারী বসন্তের। রোগের সাথে লড়াই জীবন বাজি রেখে। শেষ পর্যন্ত হেরো মরণ বিদেয় হল। তবে যাবার আগে বসন্তকে দিয়ে খামচানো আঁচড়ের চিহ্ন রেখে গেল সারা মুখে।  লড়াইয়ের সাক্ষী তারা। এখানেই শেষ হল না।   ঘটল এক দুর্ঘটনা। হাতে জখম। চিকিৎসা হল। গরিবের যেমন হয়। জখম হাত সেরেও গেল। তবে দৈর্ঘ্যে খানিক ছোট হয়ে রইল। যা আর কোনো দিন সমান হতে পারল না সঙ্গী হাতের।  বস্তিঘরের মানুষের জন্য এ কিছু নতুন কথা নয়। সারা দুনিয়া জুড়ে এমন দৃশ্য আর ঘটনার দেখা মিলবে সকল দেশে। মানুষের সমাজে এ দৃশ্য খুব বেশি দিনের পুরোনো নয়। যুদ্ধ...

বাংলাদেশের জুলাই অভ্যুত্থানকে হিন্দু বিরোধী রঙ চড়ানোর রাজনীতি

Image
নাবিল জাহাঙ্গীর সাংবাদিক, বাংলাদেশ জুলাই আন্দোলনের সময় রাজপথে যখন অকাতরে স্বৈরাচারের গুলির সামনে বুক পেতে দাঁড়াচ্ছে বাংলাদেশের দামাল ছেলেরা, তখন পশ্চিমবঙ্গেও এই জনহত্যার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হয়েছে, শেখ হাসিনার পদত্যাগ চাওয়া হয়েছে। সেটা কোলকাতা হোক কিংবা ঢাকা, শোষিতের পক্ষে শোষিত দাঁড়াবে এটাই বাস্তবতা।  অপরদিকে বাংলাদেশে সংগঠিত এই জনহত্যা প্রচারে এক প্রকার নিরবতা পালন করেছিল ভারতীয় গণমাধ্যম। অথচ ৫ই আগস্ট স্বৈরাচার পতনের পর থেকে আমরা অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম এই অভ্যুত্থানকে হিন্দু বিরোধী মুসলিম জাতীয়তাবাদীদের অভ্যুত্থান প্রমাণের নির্লজ্জ প্রোপাগান্ডা চালাতে কোমর বেঁধে নেমেছে পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতের হিন্দুত্ববাদী শাসক শ্রেণীর পোষ্য গণমাধ্যম বা গদি মিডিয়া। তাদের দাবি অনেকটা এমন যে, হাসিনার পতনের পর থেকে বাংলাদেশী হিন্দুদের বিরুদ্ধে ধর্ম যুদ্ধ শুরু করেছে অভ্যুত্থানে বিজয়ী শক্তি! তাহলে কি তারা বলতে চাইছে হাসিনাই বাংলাদেশী হিন্দুদের একমাত্র রক্ষাকর্তা, তার পতন মানে হিন্দু সমাজের পতন?  বাস্তবতা হলো, একটি রক্তাক্ত গণঅভ্যুত্থানের পর ফ্যাসিস্টরা যখন পালায় তখন তাদের ঠিকাদারদের দিয়ে সা...

বেসরকারি কলেজে টেকনিক্যাল কোর্স করেও কাজ নেই!

Image
বেসরকারি কলেজে টেকনিক্যাল কোর্সের এক শিক্ষার্থীর প্রতিবেদন [নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক] বর্তমানে দেশে বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বহু ছাত্রছাত্রী টেকনিক্যাল কোর্স করে চাকরি পাওয়ার আশায় সেই কলেজগুলোতে ভর্তিও হচ্ছে। এই কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়তে গেলে অত্যাধিক মাত্রায় টিউশন ফি দিতে হয় যা সাধারণ খেটে খাওয়া পরিবারের পক্ষে খুবই কষ্টদায়ক। তবুও ছেলেমেয়ে চাকরি পাবে এই আশা রেখে বহু অভিভাবক নিজের সারা জীবনের কষ্টার্জিত টাকা ব্যয় করে বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থার মত চড়া সুদে লোন নিয়ে নিজের সন্তানকে এই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে ভর্তি করান। এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলির বিজ্ঞাপন ও মার্কেটিং স্ট্র‍্যাটেজিও এই স্বপ্ন দেখার ইন্ধন জোগায়। LiveMint-এর একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে AICTE আরও ৪৪টি নতুন প্রাইভেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ প্রতিষ্ঠার অনুমোদন দিয়েছে। কিন্তু The Economic Times-এর একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০২৩ সালে প্রাইভেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের placement ৫০-৭০% কমে গেছে। ফলে বোঝাই যাচ্ছে যে হাজার হাজার টাকা ব্যয় করে প্রাইভেট কলেজে পড়েও শিক্ষার্থীরা চা...

কাল

Image
বিমল কান্তি দাশ গুপ্ত কাল অনন্ত। তার দুই ভাগ। ইহকাল আর পরকাল। সব মিলে তিন কালের ধারণা। মানুষের জন্য আছে দুটো কাল। ইহকাল আর পরকাল। যতদিন মানুষ অরণ্যচারি, জীবন তার ইহকালের সীমানাতে বদ্ধ। জন্ম আর মৃত্যুর সীমানাতেই আটকে থাকা। কিন্তু আটকে থাকা তো জীবনের স্বাভাবিক নিয়ম হতে পারে না। আর সে কারণে মানুষের ব্যবহারিক জীবনের ধারার বদলের সঙ্গে বদল ঘটতে থাকে কালের ধারণাতেও। আর আপাত সেই স্থির ধারণা বিশ্বাসের রূপ নিয়ে সামাজিক মানুষের মনে থিতু হয়ে বসত করছে আদি কাল থেকে। শ্রম আর ধারণার কে আগে আর কে পরে বিবাদে না গিয়েও আটক হয়ে আছে পরকালের ধারণা। যে ধারণা রূপ বদল করে বিশ্বাসের রূপ ধরে শক্ত পোক্ত হয়ে বাস করছে মানুষের মনের জগতে। জীবনের প্রবহমানতাকে আপাত স্বীকার না করেই।   এই ধারণার আদি ধরা আছে সেই কালে, যখন মানুষ তার সংগঠিত পরিবারের প্রাকৃতিক জীবন থেকে সামাজিক জীবনে প্রবেশ করল। সমাজের মানুষের মাঝে কর্মের বিভাজন ঘটল। যার বিকাশ ঘটল অবশেষে শ্রেণি বিভাজনের আকারে। ভাগ্যবান আর বঞ্চিতের বেশ ধরে। যার উৎস নির্দেশ করা হল যার-যার   সামাজিক কর্মফলের নিরিখে। সামাজিক কর্মের অবমূল্যায়ন ঘটিয়ে ব্যক্তি মানুষের দায় ...

সি পি আই (এম)

Image
বিমল কান্তি দাশ গুপ্ত সি পি আই ( এম ) । ভারতে মার্ক্সবাদীদের সব চেয়ে প্রভাবশালী সংগঠিত দল । ভারতে মার্ক্সবাদের ভালো - মন্দ - র দায় তাদের সব থেকে বেশি । কার্ল মার্ক্সকে তারা দুমড়ে মুচড়ে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির দফতরের আয়তনে প্রতিষ্ঠা করে রেখেছে । মার্ক্সকে সাধারণের বোধগম্য করতে তাদের প্রধান হাতিয়ার লেনিন । সে কারণে এঁদের যেকোন রচনা লেনিনের উদ্ধৃতিতে মুখর । বাংলায়   একটা শব্দবন্ধ আছে ‘ কর্তা ভজা ’ । এদের একটা সংগঠিত ধর্মীয় গোষ্ঠীও আছে । তবে দলের বাইরেও এদের   অস্তিত্ত্ব চোখ এড়ায় না । বাংলাতে সি পি আই এম - এর এমন অনেক ভক্ত আছেন । এঁরা দলের জন্য অর্থ আর সাংস্কৃতিক কাজকর্মের যোগানদারের কাজ করে থাকেন । উকিল মোক্তার পেশকার । বিচিত্র ধরণের কর্মজীবী । উজ্জ্বল আলোয় আলোকিত মাননীয় তর্কবিদেরা । আর কৃতী শিল্পী সাহিত্যিকদের ভিড় এড়িয়ে কোনও প্রকারে একবার যদি খোদ মার্ক্স - এর কাছে পৌঁছনো যায় তা হলে যা পাওয়া যাবে সে অতি সংক্ষিপ্ত আর সরল বিষয় । তাঁর উপদেশ অক্ষরজ্ঞানহীন হত দরিদ্র মানুষের বোধের বাইরে আদৌ নয় । হবেই বা কেন । মার্ক্স হলেন আমাদের কালের ঋষি । আবার ঋষিরা তো জ্ঞানীদের উপদ...

ক্ষুদ্র ঋণ ও এনজিও প্রসঙ্গে আনু মহম্মদ (পূর্বতন একটি প্রবন্ধের অনুবাদ)

Image
  বাংলাদেশ - নয়াউদারনীতির একটি মডেল ক্ষুদ্রঋণ এবং এনজিওর কাহিনী আনু মহম্মদ [মহম্মদ ইউনুস বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী হওয়ায় দেখে নেওয়া যাক তাঁর গ্রামীণ ব্যাংকের মডেল সম্পর্কে কমঃ আনু মহম্মদের বক্তব্য। মূল রচনা ২০১৫ সালে 'মান্থলি রিভিউ' পত্রিকায় প্রকাশিত। মূল ইংরেজি রচনা থেকে বঙ্গানুবাদঃ ডিলিজেন্ট পত্রিকা। মূল রচনার লিংকঃ https://monthlyreview.org/2015/03/01/bangladesh-a-model-of-neoliberalism/ ] ২০০৬ সালে মহম্মদ ইউনুসকে গ্রামীণ ব্যাংকের জন্য নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণার কয়েক মাস পরে আমি জার্মানি সফরে যাই। স্বাভাবিকভাবেই আমি প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে এই পুরস্কার নিয়ে আনন্দ ও গর্ববোধ দেখতে পেয়েছি। বাম শিক্ষাবিদ এবং কর্মী সহ অনেক জার্মানরা এটিকে নয়াউদারবাদের বিজয় হিসাবে দেখেছিল। একটি জার্মান অ্যাক্টিভিস্ট থিয়েটার গ্রুপ আমাকে তাদের সাম্প্রতিক নাটক ‘তসলিমা অ্যান্ড দ্য মাইক্রোক্রেডিট’ দেখার আমন্ত্রণ জানায়। এই অনুষ্ঠান আমার চোখ খুলে দিয়েছিল: আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে গ্রামীণ ব্যাংক সম্পর্কে পশ্চিমে কতটা ভুল বোঝানো হয়েছিল এবং কিভাবে মিডিয়া প্রচারাভিযান...