ভারতের রাজনীতি ও চলচ্চিত্র
সুমিত গাঙ্গুলি
ভারতের রাজনীতির সঙ্গে চলচ্চিত্রের মেলবন্ধন- মেইনস্ট্রিম জাতীয়তাবাদী বনাম প্রতিষ্ঠান বিরোধী, উভয় ধারার মতবাদের মধ্যেকার লড়াই ফুটে উঠেছে এই প্রবন্ধে। নিম্নোক্ত অংশ দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহেরুর সময়কালের ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত সীমাবদ্ধ। এই আলোচনা ধারাবাহিক হিসেবে চলবে। দেশের ৭১তম স্বাধীনতা দিবসে 'দা ডিলিজেন্ট'-এর প্রয়াস...
ভারতের রাজনীতির ইতিহাসে গণমাধ্যম চিরকালই এক বিরাট ভুমিকা পালন করে এসেছে। এই গণমাধ্যমের ক্ষেত্রে সব থেকে বড় ভূমিকা নিয়েছে ফিল্ম। এর মধ্যে হিন্দি / উর্দু ভাষার ফিল্ম সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ। জাতীয়তাবাদী রাজনীতির বলিষ্ঠ প্রচার যন্ত্র হিসেবে তার ভূমিকা কোনো ভাবেই ছোট করে দেখা উচিত নয়। প্রথমেই বলি আমি ফিল্ম কম বুঝি। তাই আমার আলোচনায় গান ও কথা সবথেকে বেশি উঠে আসবে।
ভারতের রাজনীতির সঙ্গে চলচ্চিত্রের মেলবন্ধন- মেইনস্ট্রিম জাতীয়তাবাদী বনাম প্রতিষ্ঠান বিরোধী, উভয় ধারার মতবাদের মধ্যেকার লড়াই ফুটে উঠেছে এই প্রবন্ধে। নিম্নোক্ত অংশ দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহেরুর সময়কালের ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত সীমাবদ্ধ। এই আলোচনা ধারাবাহিক হিসেবে চলবে। দেশের ৭১তম স্বাধীনতা দিবসে 'দা ডিলিজেন্ট'-এর প্রয়াস...
ভারতের রাজনীতির ইতিহাসে গণমাধ্যম চিরকালই এক বিরাট ভুমিকা পালন করে এসেছে। এই গণমাধ্যমের ক্ষেত্রে সব থেকে বড় ভূমিকা নিয়েছে ফিল্ম। এর মধ্যে হিন্দি / উর্দু ভাষার ফিল্ম সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ। জাতীয়তাবাদী রাজনীতির বলিষ্ঠ প্রচার যন্ত্র হিসেবে তার ভূমিকা কোনো ভাবেই ছোট করে দেখা উচিত নয়। প্রথমেই বলি আমি ফিল্ম কম বুঝি। তাই আমার আলোচনায় গান ও কথা সবথেকে বেশি উঠে আসবে।
১৯২০ বা ১৯৩০ এর দশকে যে এই ধরণের ছবি তৈরী হয়নি তা নয়। তবে তা অধিকাংশ দেখে উঠতে পারিনি। নাম শুনে কিছুটা আন্দাজ করা যায় যেমন 'ফাদার অফ ইন্ডিয়া ' বা 'হামারা হিন্দুস্তান ' (১৯৩০), 'গ্লোরী অফ ইন্ডিয়া ' বা 'নূর-এ -ওয়াতন ' (১৯৩০), 'হিন্দুস্তান'(১৯৩২), 'বীর ভারত' (১৯৩৪) , 'আজাদী' (১৯৩৫)...
১৯৪৭ সালের আগে এই ধরণের কোনো গান বা ফিল্ম চরমভাবে রাষ্ট্রদ্রোহিতার সামনে পড়তো। তাহলেও এধরণের গান বা ফিল্ম যে তৈরী হয়নি তা নয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন প্রকাশিত হয়েছিল ''বোম্বেটকি'জ'' প্রযোজিত ও জ্ঞান মুখার্জি পরিচালিত ভারতের প্রথম হিট ব্লক বাস্টার ফিল্ম 'কিসমত'। অশোক কুমার, দেবিকা রানী অভিনীত ছায়াছবিটি কোনো ভাবেই গল্পের দিক থেকে জাতীয়তাবাদী না থাকলেও একটি গান পুরোপুরি জাতীয়তাবাদী ছিল। আমিরবাই কর্ণাটকি ও খান মস্তানার গাওয়া সেই গান লিখেছিলেন পি প্রদীপ। সুরকার ছিলেন অনিল বিশ্বাস। গানের লাইন ছিল : "আজ হিমালয় কি চোটি সে ফিরে হামনে ললকারা হ্যায় / দূর হটো আয় দুনিয়াবালো হিন্দুস্তান হামারা হ্যায়" ......... নিশ্চিতভাবে এই গান ব্রিটিশ সরকার পাস্ করতো না। কিন্তু দ্বিতীয় অন্তরার জন্য তারা এটা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। "শুরু হুয়া হ্যায় জং তুমহারা জাগ্ উঠো হিন্দুস্তানী / তুমনা কিসিকে আগে ঝুকনা জর্মন হো ইয়া জাপানি"....... এই লাইনের জন্যই গানটি ব্রিটিশের ছাড়পত্র পায় ও প্রবল জনপ্রিয় হয়। গানটির চিত্রায়নে মিয়ানমার (তৎকালীন বর্মা) সমেত ভারতে দেখানো হয় যেখানে ১৯৩৭ সালেই তা ভারতের বাইরে চলে গেছে।
১৯৪৪ সালে প্রকাশিত আর একটি গানেও একই রক্ষণ জাতীয়তাবাদী ছাপ লক্ষ্য করা যায়। 'পহলে আপ ' ছায়াছবিতে দিননাথ মাধক-এর লেখা ও নৌশাদ আলীর সুর করা মহম্মদ রফির প্রথম প্রকাশিত হিন্দি/উর্দু গান "হিন্দুস্তান কে হাম হ্যায় / হিন্দুস্তান হামারা / হিন্দু মুসলিম দোনো কে আঁখোঁ কে প্যারা"। ছায়াছবিটি কিন্তু একেবারেই জাতীয়তাবাদী নয়।
স্বাধীন ভারতে সেই অর্থে প্রথম জনপ্রিয় বোম্বের জাতীয়তাবাদী ছবি হলো 'শহীদ '(১৯৪৮)। ওয়াজাদ মির্জার লেখা ও রমেশ সায়গলের পরিচালনায় এই ছবিতে অভিনয় করেন দিলীপ কুমার, কামিনী কৌশল, লীলা চিটনিস, চন্দ্র মোহন প্রভৃতি। ছায়াছবিটির বিষয়বস্তু ছিল ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রাম। এই ছায়াছবিতে রাজা মেহেদী আলী খানের লেখা ও গুলাম হায়দারের সুর করা এবং মহম্মদ রফির গাওয়া 'ওয়াতন কি রাহো মে ওয়াতন কে নওজোয়া শহীদ হো / পুকারতা হ্যায় য়ে জমিন আশমা শহীদ হো" গানটি প্রবল জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। আজ সেই বিখ্যাত লাইন কোথাও কোথাও শোনা যায় 'পাহাড় তক কাঁপনে লগে তেরে জুনুন সে / তু আশমা পে ইনকিলাব লিখ দে আপনা খুন সে'।
১৯৪৯ সালে দেশভাগের ঘটনার ওপর ভিত্তি করে তৈরী হয়েছিল 'আপনা দেশ'। রাজকমল কলামন্দিরের প্রযোজনায় ও ভি শান্তারাম -এর পরিচালনায় গোটা ছায়াছবিতে পার্টিশনের দগদগে ঘা ও কালোবাজারিকে তুলে ধরা হয়েছিল। দিওয়ান শারার -এর লেখা দুটি গান নিশ্চিত জাতীয়তাবাদকে তুলে ধরে। একটি হলো 'আপনা দেশ হ্যায় আপনা দেশ ' (কণ্ঠ : মনমোহন কৃষ্ণ ) এবং অপরটি 'জয় হিন্দ কহ / জয় হিন্দ দেখো / আপনা তিরঙ্গে মে ' (কণ্ঠ: উমেশ শর্মা) ...... মির্জা গালিবের দুটি রচনাও এতে গান হিসেবে ব্যবহৃত হয় 'দিল-এ-নাদা তুঝে হুয়া ক্যা হ্যায়' এবং 'কোই উম্মীদ বড় নেহি আতা'।
১৯৪৯ সালে দেশভাগের ঘটনার ওপর ভিত্তি করে তৈরী হয়েছিল 'আপনা দেশ'। রাজকমল কলামন্দিরের প্রযোজনায় ও ভি শান্তারাম -এর পরিচালনায় গোটা ছায়াছবিতে পার্টিশনের দগদগে ঘা ও কালোবাজারিকে তুলে ধরা হয়েছিল। দিওয়ান শারার -এর লেখা দুটি গান নিশ্চিত জাতীয়তাবাদকে তুলে ধরে। একটি হলো 'আপনা দেশ হ্যায় আপনা দেশ ' (কণ্ঠ : মনমোহন কৃষ্ণ ) এবং অপরটি 'জয় হিন্দ কহ / জয় হিন্দ দেখো / আপনা তিরঙ্গে মে ' (কণ্ঠ: উমেশ শর্মা) ...... মির্জা গালিবের দুটি রচনাও এতে গান হিসেবে ব্যবহৃত হয় 'দিল-এ-নাদা তুঝে হুয়া ক্যা হ্যায়' এবং 'কোই উম্মীদ বড় নেহি আতা'।
১৯৫০ এর দশক থেকে বদলে যেতে থাকে জাতীয়তাবাদের চরিত্র (খুবই স্বাভাবিক)এবং তার সাথে সাথে তাল মিলিয়ে বদলায় বলিউডি ছবি ও গান ও। ১৯৫০ সালেই পৃথ্বীরাজ কাপুর ও দেব আনন্দ অভিনীত 'হিন্দুস্তান হামারা ' প্রকাশ পায়। এতে 'সারে জাহান সে আচ্ছা ' গানটি ছিল। ফিল্মটি 'ডকুমেন্টারি ইউনিট অফ ইন্ডিয়া'র ব্যানারে তৈরী হয়। ইতিমধ্যে ১৯৫১ সালে ভারতে 'প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা ' শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রী তখন, সবাই জানেন জহরলাল নেহেরু। ফলত তার প্রভাব পড়তে শুরু করে ছায়াছবিতে, বিশেষত; হিন্দি ছায়াছবিতে। যদিও পাল্টা পথ চলা এখন থেকেই শুরু হয়। ১৯৫৩ সালেই বিমল রায় তৈরী করেন ' দো বিঘা জমিন ' যার কাহিনীকার ও সুরকার ছিলেন সলিল চৌধুরী। স্বভাবতই গোটা ছবি জুড়ে বামপন্থী দৃষ্টিভঙ্গি দেখা যায়। বিশেষ করে বলতে হবে আই পি টি এ (বাংলা শাখা) -এর জনপ্রিয় গান 'উর তাক তাক তাক তাক তাঘিনা তাঘিনা গিন গিন রে ' গানটি হিন্দিতে করা হয়। বাংলায় ছিল 'গুরু গুরু মেঘের মাদল বাজে ' যা হিন্দিতে হয় ' মতওয়ালা শাওন ঢোল বাজাতা আয়া' .... এদিকে সোহরাব মোদী ওই বছর তৈরী করেন 'ঝাঁসি কি রানী ' যাতে জাতীয়তাবাদের বিপুল ছোয়া আছে। তাছাড়া ওই বছর প্রকাশ হয় 'জালিয়ানওয়ালা বাগ কি জ্যোতি' ছায়াছবি।
আমার মনে হয় ১৯৫৪ সালটা জাতীয়তাবাদ ঘরানার ছায়াছবির ক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই বছর নানাভাই ভট্টের 'ওয়াতন ' বেরোয়। জগদীশ গৌতমের 'শহীদ- এ- আজম ভগৎ সিং' (ভগৎ সিং সিরিজের প্রথম ছবি, পি জয়রাজ অভিনীত ,লচ্ছিরাম সুরারোপিত) বেরোয়। সাথে বেরোয় 'বুট পালিশ' আর 'জাগৃতি'। শংকর জয়কৃষ্ণের সুরে রাজ্ কাপুর-এর প্রযোজনায় 'বুট পালিশ' প্রবল জনপ্রিয় হয়। গোটা ফিল্ম জুড়ে তথাকথিত 'নেহেরুভিয়ান সোশ্যালিজম' এর জয়গান পাওয়া যায়। এর বিখ্যাত গান হলো ' নানহে -মুননে বাচ্চে তেরি মুঠঠি মে ক্যা হ্যায়।' যেখানে একদিকে প্রশ্ন করা হচ্ছে 'ভিখ মে যো মোতি মিলে লোগে যা না লোগে ? জিন্দেগী কি আঁসুও কি বোলো ক্যা করোগে ?", তখন উত্তর আসছে 'ভিখ মে যো মোতি মিলে ও ভি হ্যাম না লেঙ্গে / জিন্দেগী কি আঁসুও কি মালা পেহনেঙ্গে ' ...... আবার আগামী দুনিয়া কেমন হবে জিজ্ঞাসা করলে উত্তর আসছে (সবটাই এক বয়স্ক চরিত্র জিজ্ঞাসা করছেন অনাথ শিশুদের ..... যিনি তাদের স্বাবলম্বী করতে চান , আর উত্তর দিচ্ছে অনাথ শিশুরা ) 'আনেওয়ালে দুনিয়া পে সব কে শর পে তাজ হোগা'।
১৯৪৮ সালে বাংলা ছায়াছবি 'পরিবর্তন' ( সুরকার :সলিল চৌধুরী ) এর হিন্দি রিমেক ছিল 'জাগৃতি' যার সুরকার ছিলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। প্রবল জাতিয়তাবাদী ভাবাবেগে আক্রান্ত এই ছায়াছবির প্রতিটি গান জাতিয়তাবাদী। লেখক পি প্রদীপ। যার 'এয় মেরে ওয়াতান কে লোগো ' ততদিনে প্রবল জনপ্রিয়। সোভিয়েত নেতারা নাকি সেই গান শুনে কেঁদে ফেলেছিলেন। যাই হোক জাগৃতি ছায়াছবির প্রথম গান ' চলো চলে মা / স্বপ্ন কে গাও মে' নি:সন্দেহে গান্ধীজির মতবাদ দ্বারা প্রভাবিত। এছাড়া ছিল 'আও বাচ্চ্চো তুম্হে দিখায়ে' বিশাল জনপ্রিয়, এমনকি আজও। এই গানটিতে বাংলা , মারাঠা , পাঞ্জাব , রাজপুতানা এবং উত্তর থেকে দক্ষিণের বর্ণনা আছে। বাংলাকে সুভাষচন্দ্র , মারাঠা কে শিবাজী, রাজপুতানা কে রানা প্রতাপ আর পাঞ্জাব কে জালিয়ানবালা বাগ দিয়ে দেখানো হয়েছে। আর আছে ' হাম লায়ে হ্যায় তুফান সে কাস্তি নিকাল কে ' গানটি। যেখানে যথারীতি পারমাণবিক বোমার কথা আছে। পরের বছর এর একটা পাকিস্তানী সংস্করণ পাকিস্তানে বেরোয় সেখানেও এর 'মিরর ভার্সান' ছিল। মজার কথা যে রতন কুমার ওরফে সৈয়দ নাজির আলী এখানে মূল চরিত্রে অভিনয় করেন , তিনিই আবার পাকিস্তানে উদ্বাস্তু হয়ে চলে গিয়ে উর্দু সংস্করণে অভিনয় করেন একই চরিত্রে। পরে এনিয়ে আলোচলা করা যাবে, এই কথা জানিয়ে শুধু বলি আর একটা গান ছিল গান্ধীজিকে নিয়ে আর তা হলো 'দে দি হমে আজাদী বিনা খড়গ বিনা ঢাল / সবরমতি কে সন্ত তুনে কর দিয়ে কমাল'। গোটা ফিল্মে গান্ধীবাদের প্রবল প্রভাব আছে।
কিন্তু অন্যধারা তার লড়াই ছাড়েনি। স্বাধীনতাত্তোর বেকারত্বের জ্বালা দেখিয়ে তৈরী হয় কিশোর কুমার অভিনীত , সলিল চৌধুরী সুরারোপিত (পোষ্টার : সত্যজিৎ রায়) বিমলরায়ের 'নকরি' ...... সেই 'এক ছোটি সি নকৰি কে তলবগার হু ম্যায়/ তুমসে কুছ ওর যে মাঙ্গু তো গুনাহেগর্ হু ম্যায়' ।
১৯৫৫ সালে প্রকাশিত 'শ্রী ৪২০' পুরোপুরি চার্লি চ্যাপলিন এর 'মর্ডার্ন টাইমসের' অনুসরণে বানানো। পরিচালক ও প্রযোজক রাজ্ কাপুর , গল্প খ্বাজা আহমদ আব্বাসীর। সুরকার শংকর জয়কিশান। এতে যেমন একদিকে পাশ্চাত্যের সংস্কৃতি ও ভারতীয় সংস্কৃতির তুলনা আছে গানে (রামাইয়া ওয়াস্তবাইয়া গানের সেই লাইন : উস দেশ মে তেরে পরদেশ মে সোনে চান্দি কে বদলে মে বিকতে হ্যায় দিল/ ইস গাও মে দর্দ কি ছাও মে প্যার কে হয় নাম পর ধরকতে দিল ) তেমনি একেবারে সর্বহারার কথা কাছে ( দিল কে হাল শুনে দিলওয়ালা গানে আছে : গম সে অভি আজাদ নেহি ম্যায় / খুশ হু মগর আবাদ নেহি ম্যায় / মঞ্জিল মেরে সামনে পরে হ্যায়/ পাও মে ফিরবি বেড়ি পরে হ্যায় / টাং আড়াতা হ্যায় দৌলতওয়ালা ) ....... গান দুটিই শৈলেন্দ্রর লেখা।
১৯৫৬ সালে বেরিয়েছিল '২৬ জানুয়ারি' ছবি। তেমন জনপ্রিয়তা পায়নি। 'ইনকিলাব' নামের ফিল্মটি কেমন তাও বিশেষ কিছু জানি না। পাঠক জানলে উপকৃত হবো। কিন্তু নি: সন্দেহে বলতে হবে 'জগতে রহ ' নামক ফিল্মের কথা। অমিত মৈত্র ও শম্ভু মিত্রের পরিচালনায় রাজ্ কাপুর নার্গিসের এই সামাজিক ছবি ব্যাপক প্রভাব ফেলে। এর বাংলা ভার্শন 'একদিন রাত্রে' ও জনপ্রিয় । সলিল চৌধুরীর সুরে ' জিন্দেগী খোয়াব হ্যায় ' বা ' এবে দুনিয়া দেবে দুহাই ' এর বক্তব্য যথেষ্ট প্রগতিশীল। একটা নমুনা দিয়ে দি : - ' ওয়ে হক দুজে দা মার্ মার্ কে / বন্দে লোগ আমির / ম্যায় এনু কেন্দা চোরি / দুনিয়া কেন্দি তকদির / তে কি ম্যায় ঝুট বোলেয়া'।
১৯৫৭ সালে বেরোয় 'মাদার ইন্ডিয়া ' , ' নয়া দৌর', 'প্যাসা','অব দিল্লি দুর নেহি' । 'মাদার ইন্ডিয়া' ভারতের সর্বাধিক বিখ্যাত সিনেমার মধ্যে অন্যতম। এই ফিল্মের অন্যতম অভিনেতা সুনীল দত্ত পরে ভারতীয় জাতীয়তাবাদী ঘরানার অন্যতম প্রধান মুখ , বিশেষত নেহেরুর দেখানো পথের যুব সমাজের মুখ হয়ে ওঠেন। এই ফিল্মের গোটা বিষয়টি ভারতীয় নারীর লড়াইকে দেখানো হয়েছে যার মূল কথা হলো ' দুনিয়া হাম আয়ে হ্যায় তো জিনা হি পরেগা / জীবন হ্যায় আগর জহর তো পিনা হি পড়েগা'।
মনে রাখতে হবে এই বছর থেকে শুরু হলো দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা। 'নয়া দৌর ' ফিল্মে অভিনেতা দিলীপকুমার ও বৈজয়ন্তীমালা। নতুন যুগের মোটর গাড়ির সাথে পাল্লা দিয়ে ভারতের ঘোড়া গাড়ির লড়াই এর মুখ্য বিষয় এবং জিতে গিয়েও যুগের প্রয়োজনে মোটর গাড়িকে রাস্তা ছেড়ে দেওয়া দেখানো হয়। কিন্তু একটি গান একেবারেই শ্রমজীবীদের গান আর তা হলো ' সাথী হাত বাড়ানা/ এক অকেলা থক জায়গা / মিল কর বোঝ উঠানা / সাথী হাত বাড়ানা সাথী রে। ' এই গানের এক অংশে আছে ' মেহনত আপনি লেখ কি রেখা / মেহনত সে ক্যা ডরনা / কাল গ্যায়রো কি খাতির কি / আজ আপনি খাতির করনা'।'নয়া দৌর' ফিল্মে একটি উগ্র জাতীয়তাবাদী গান খুব জনপ্রিয় হয়। বলবীর ও মহম্মদ রফির গাওয়া গান ' য়হ দেশ হ্যায় বীর জওয়ানো কা অলবেলোকা মস্তানো কা' ।
ন্যায়ের সন্ধান রত এক শিশুর কাহিনী হলো 'অব দিল্লি দূর নেহি' ..... একটি গানই কেবল জাতীয়তাবাদের কাছাকাছি। তবে 'পিয়াসা ' একেবারে রন্ধ্রে রন্ধ্রে জাতীয়তাবাদকে প্রশ্ন তোলা ফিল্ম। সাহির লুধিয়ানভি তার জীবনের সেরা গান গুলি এই ফিল্মে লেখেন। আসলে এখানে যে গান গুলি ব্যবহৃত হয় তা সাহিরের কাব্যগ্রন্থ ' তল্খীয়া' ( কড়া ) থেকে নেওয়া। তার মধ্যে 'য়ে মহলো / যে তখতো / যে তাজো কি দুনিয়া ' আর ' জিনহে নাজ হ্যায় হিন্দ পর ও কাঁহা হ্যায় ' সব থেকে বিখ্যাত ( মূল কবিতাতে ছিল ' সনাখ্বানে তকদীস-এ-মশরীক কাঁহা হ্যায়')।
১৯৫৮ সালে বেরোয় আর এক বিখ্যাত ছবি 'ফির সুবহ হোগি' প্রকাশিত হয়। এই ছায়াছবিতেও সাহির তার অনবদ্য প্রগতিশীল কলমের জোর দেখান। একটি মাত্র উদাহরণ দিলেই হবে: 'বিতেঙে কভি তো দিন আখির / ইস ভূখ কে ওর বেকারি কে / টুটেঙে কভি তো বুত আখির দৌলত কে ইজারাদারী কে/ জব এক আনোখি দুনিয়া কে / বুনিয়াদ উঠাই জায়েগি / ওহ সুবহ কভি তো আয়েগী' ।
চলবে...
সুমিত গাঙ্গুলি 'পিপ্ল্স্ ব্রিগেড' সংগঠনের সদস্য।
চলবে...
সুমিত গাঙ্গুলি 'পিপ্ল্স্ ব্রিগেড' সংগঠনের সদস্য।
Comments
Post a Comment