Posts

Showing posts from December, 2022

সোমনাথ লাহিড়ী ও তৎকালীন কমিউনিস্ট সমাজ: প্রেক্ষাপট ৪৬-এর অন্য কলকাতা

Image
রক্তিম ঘোষ ইতিহাস মাঝেমাঝে প্রেডিকশনের বাইরে চলে যায়। কী হচ্ছে-কেন হচ্ছে হিসাব কষার বিশেষ উপায় থাকে না। নভেম্বর ১৯৪৫ সালের কলকাতার কমিউনিস্ট নেতা ও কর্মীদের হাল হয়েছিল অনেকটা সেইরকমই। অনেকটা বিষম খাওয়ার মতো। ২১ নভেম্বর ১৯৪৫-এর ঘটনা দিয়েই শুরু করি। আজাদ হিন্দ ফৌজের বিচার চলছে আর সেই নিয়ে একটা সভা ডেকেছে গান্ধিবাদী ছাত্র সংগঠন। দিলীপ কুমার বিশ্বাসদের এই ছাত্র কংগ্রেসের সভায় যাওয়ার কোনও কারণ ছিল না কমিউনিস্ট নৃপেনের। তিনি গিয়েছিলেন ইডেন গার্ডেনে টেস্ট খেলা দেখতে। ফিরবার পথে খবর পান ধর্মতলায় ছাত্ররা নাকি পথ জুড়ে বসে রয়েছেন। আর পুলিশের সঙ্গে তাঁদের গণ্ডগোলও বেধেছে। নিছক কৌতূহল মেটাতে সেখানে গিয়ে পৌঁছন নৃপেন। গিয়ে দেখেন এক প্রস্থ লাঠিচার্জ হয়ে গিয়েছে। ছাত্ররা আবার ছত্রভঙ্গ অবস্থা থেকে একত্রিত হচ্ছেন আর অফিস যাত্রীদের ভিড়ও উপচে পড়ছে। এদিকে ভিড় সরাতে ব্যস্ত ঘোড় সওয়ার পুলিশ। খানিক বাদে খাকসাররা এসে পুলিশের ব্যারিকেডে ধাক্কা মারলেন। শুরু হল আবার লাঠিচার্জ। কলকাতার রাস্তার আলো ভেঙে নিভিয়ে দিলেন সাধারণ জনতা। এই দৃশ্য অভূতপূর্ব। তাঁরা পালিয়ে না গিয়ে লড়ছেন গোরাদের চোখে চোখ রেখে। নৃপেন দেখলেন

বুর্জোয়া পার্লামেন্টে যোগ দেওয়া কি আমাদের উচিৎ?

Image
ভি আই লেনিন জার্মানীর “বামপন্থী” কমিউনিস্টরা নিতান্ত ঘৃণাভরে এবং চরম চপলতার সঙ্গে এ প্রশ্নের জবাবে জানিয়ে দিয়েছেন – না। তাঁদের যুক্তি? উপরের উদ্ধৃতিতে আমরা দেখতে পাইঃ “পার্লামেন্টারী সংগ্রাম পদ্ধতিতে ফিরে যাবার সমস্ত চেষ্টাকে আমাদের প্রত্যাখ্যান করতে হবে সজোরে – এই পদ্ধতি ঐতিহাসিক এবং রাজনৈতিক দিক থেকে অচল হয়ে গেছে।” উদ্ভট বিজ্ঞতা ফলিয়ে বলা হয়েছে এ কথা। নিঃসন্দেহে এটা ভুল। পার্লামেন্টারী রাজনীতিতে “ফিরে যাওয়া”। জার্মানীতে বুঝি ইতোমধ্যেই একটা সোভিয়েত সাধারণতন্ত্র কায়েম হয়েছে? অন্তত দেখে তো তা বোঝবার জো নেই। কেমন করে তবে “ফিরে যাবার” কথা ওঠে? এটা নেহাতই একটা ফাঁকা বুলি নয় কি? পার্লামেন্টারী রাজনীতি “ঐতিহাসিক দিক থেকে অচল” হয়ে গেছে। প্রচারের পক্ষে এটা ঠিক। কিন্তু সকলেই জানে যে, কার্যক্ষেত্রে একে ঘায়েল করার এখনো অনেক বাকি। অনেক কাল আগেই অন্তত ন্যায়সঙ্গতভাবেই পুঁজিবাদকে “ঐতিহাসিক দিক থেকে অচল” বলে ঘোষণা করা চলত। কিন্তু তাতে পুঁজিবাদদের মাটিতেই দীর্ঘকাল ধরে ধারাবাহিকভাবে লড়াই চালানো প্রয়োজন   মোটেই ফুরায় না। বিশ্ব-ইতিহাসের দৃষ্টিকোণ থেকে বলা চলে যে, পার্লামেন্টারী রাজনীতি “ঐতিহাসি

কোন আপস নয়?

Image
ভি আই লেনিন ফ্রাঙ্কফুর্ট পুস্তিকার উদ্ধৃতি থেকে দেখা যায় “ বামপন্থীরা ” কত জোর দিয়ে এই স্লোগান তুলেছেন। দুঃখের বিষয় যেসব লোকেরা নিঃসন্দেহে নিজেদের মার্কসবাদী বলে মনে করেন, বা মার্কসবাদী হতে চান তাঁরাও মার্কসবাদের মূল সত্যিটি ভুলে যান। মার্কসের মতো এঙ্গেলস হচ্ছেন সেই অতি অল্প সংখ্যক লেখকদের একজন যাঁর মহৎ রচনার প্রত্যেকটি কথার একটা সুগভীর তাৎপর্য রয়েছে; তেত্রিশ জন ব্লাঁকিপন্থী কমিউনার্ডের [১] ঘোষণাপত্রের বিরোধিতা করে ১৮৭৪ সালে সেই এঙ্গেলস লিখেছিলেনঃ “ব্লাঁকিপন্থী কমিউনার্ডরা তাঁদের ঘোষণাপত্রে লিখেছেন, ‘আমরা কমিউনিস্ট,   কারণ আমরা মাঝপথে কোথাও না থেমে, কোনো আপস না করে – আমাদের লক্ষে পৌঁছতে চাই। এসব আপস বিজয়ের দিনটিকেই শুধু স্থগিত রাখে, প্রলম্বিত করে দাসত্বের যুগ’। “ জার্মান কমিউনিস্টরা কমিউনিস্ট কারণ প্রত্যেকটি মাঝপথের অবস্থিতি, প্রত্যেকটি আপসের মধ্য দিয়ে তাঁরা সুস্পষ্টভাবে তাঁদের চরম লক্ষ্য অনুধাবন করে এবং সে দিকে নিরবিচ্ছিন্নভাবে এগিয়ে চলেন। সে লক্ষ্য হলো, শ্রেণীসমূহের বিলোপ এবং এমন একটা সমাজব্যবস্থার পত্তন করা যেখানে জমি বা উৎপাদন যন্ত্রের ব্যক্তিগত মালিকানা থাকিবে না। ঐ সব আপস –