Posts

Showing posts from November, 2023

সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির বুনিয়াদ নির্মাণ

Image
['অক্টোবর সমাজতান্ত্রিক মহাবিপ্লব' গ্রন্থের দ্বাদশ অধ্যায়; প্রগতি প্রকাশন, মস্কো, ১৯৮২]  জার্মানির সঙ্গে শান্তি সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রকে অর্থনৈতিক পুনর্বাসনে প্রবৃত্ত হওয়ার এবং সমাজতান্ত্রিক নির্মাণ কর্ম আরম্ভ করার সুযোগ দিয়েছিল। সমাজতন্ত্রের পথের দিশা দেখানো দরকার হয়েছিল। বৈজ্ঞানিক কমিউনিজমের প্রতিষ্ঠাতা কার্ল মার্কস ও ফ্রিডরিখ এঙ্গেলস পুঁজিবাদ থেকে কমিউনিজমে উত্তরণ কার্যকর করার মূল উপায়গুলির রূপরেখা উপস্থিত করেছিলেন। মার্কসবাদীরা জানত এই পথের সাধারন দিশা ও প্রধান প্রধান শ্রেণী শক্তির কথা, কিন্তু নির্মাণ কর্মের মূর্ত পথ ও উপায় তারা জানতে পারেনি। একথা পরিষ্কার ছিল এই সমস্ত পথ ও উপায় অনেকখানি নির্ভর করবে বিদ্যমান অবস্থার উপরে, বিশেষ বিশেষ বিকাশের সুনির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যের উপরে, আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি, প্রভৃতির উপরে। ১৯১৭ সালে লেনিন বলেছিলেন, ‘আমরা দাবি করি না যে সর্বশেষতম অনুপুঙ্খ পর্যন্ত সমাজতন্ত্রের পথ মার্কস জানেন। এধরণের কিছু দাবী করাটা অর্থহীন। আমরা যেটা জানি তা হল এই পথের গতিমুখ এবং সেই পথের অনুসারী শ্রেণী শক্তিগুলিকে; সুনির্দিষ্ট ব্যবহারিক অনুপুঙ্খগুলি প্রকট হয়ে উঠবে এক

ইতিহাস ফিস ফিস কথা কয়

Image
সুমিত গঙ্গোপাধ্যায় ভারতবর্ষে ইতিহাস চর্চা এক অত্যন্ত সমৃদ্ধশালী তথা যুগপৎভাবে জটিল ও সমস্যাবহুল একটি ধারা। সবথেকে বড় সমস্যা হল প্রাচীন ভারতে ইতিহাস ও পুরানকে একীভূত করে দেখার ফলে মৌখিক ইতিহাস ও নির্ভূল দলিল সহকারে ইতিহাস রচনা বেশ সমস্যা বহুল। একে তো মৌখিক ইতিহাসের কোনও মাথামুন্ডু থাকে না, তায় দলিল রচনাকারী নিজের শিক্ষা, সমাজ, পরিবার, গোষ্ঠীর দৃষ্টিভঙ্গির উর্দ্ধে উঠতে পারে না। ফলস্বরূপ ইতিহাস তার দ্বান্দ্বিক চরিত্র নিয়ে চলন কোনোভাবেই স্বাভাবিক পথে এগিয়ে যেতে পারেনি; যতই চেষ্টা হোক, সমস্যা রয়ে গেছে। প্রাচীন ভারতে দলিল ধরে ইতিহাস রচনার সূত্রপাত ঘটে রাজতরঙ্গিনির লেখক কলহনের দ্বারা। সেই সময় অজস্র জীবনী গ্রন্থ রচিত হলেও তেমনভাবে নিরপেক্ষ রচনা সেগুলি ছিল না। অথচ বানভট্টের হর্ষচরিত, বিলহনের বিক্রমাঙ্কদেব চরিত, সন্ধাকর নন্দীর রামচরিত, বৌদ্ধ, জৈন, বৈদিক সাহিত্য এমনকি পুরান ইতিহাসের উপাদান হলেও এগুলি সম্পূর্ন সমর্থনযোগ্য নয়। কারণ, এর একটা বড় অংশই রূপকার্থে লেখা, তাই এইসব গ্রন্থের টীকাগুলির প্রায় সবটাই কিন্তু পরবর্তীকালের ফলে প্রকৃত অর্থ উদ্ধার করা প্রায় অসম্ভব। বৈদেশিক বিবরণী, প্

মণিপুর: পাহাড় ও উপত্যকার বিরোধ - তৃতীয় দ্বন্দ্বের খোঁজ!

Image
অধীর রায় ঔরঙ্গজেবের পুত্র প্রথম বাহাদুর শাহ তখন দিল্লির মসনদে। সময়টা ১৭১০। অন্যদিকে, বার্মায় আরাকানদের আধিপত্য। মোগলদের সঙ্গে পেরে না উঠলেও তাদের প্রতাপ কিছু কম নয়। মোগল ভারত আর বার্মার মধ্যখানে পাহাড় ঘেরা ছোট্ট এক দেশ, স্থানীয় ভাষায় যার নাম কাংলইপাক বা মেইতেই। মেইতেইরা ছিলেন সানামাহি ধর্মাবলম্বী। প্রাচীনকালে মণিপুরি বেশিরভাগ মানুষ বিশ্বাস করতেন পূর্বপুরুষ ও প্রকৃতির আরাধনায়। এই ধর্মবিশ্বাসকে পরবর্তীকালে নৃতত্ববিদরা এই ধর্মের একজন মূল দেবতার নাম অনুসরণ করে নাম দিয়েছেন ‘সানামাহি’। সানামাহি ধর্মের একটি মূল বৈশিষ্ট্য হল সমস্ত প্রকৃতির মধ্যে নিহিত জীবনে বিশ্বাস। মূর্তিপূজার কোন চল একেবারেই নেই, কোনকালেই ছিল না। পূর্বপুরুষের উপাসক এই ধর্মের সঙ্গে প্রাচীন চৈনিক ধর্মের মিল আছে। আঠারো শতকে কাংলইপাকের ব্রাহ্মণ্যবাদী রাজা পেমহেইবা (১৬৯০-১৭৫১) এবং ভাগ্যচন্দ্র (১৭৬৩-১৭৯৮) মেইতেই সংস্কৃতি ধ্বংসের অভিযানে নামেন। রাজশক্তিকে ব্যবহার করে জবরদস্তি ব্রাহ্মণ্যবাদী ধর্মীয় সংস্কৃতি চাপিয়ে দিতে চেষ্টা করেন। ব্রাহ্মণ্যবাদী ধর্মের দেব-দেবীর আরাধনা বাধ্যতামূলক করেন। মেইতেইদের বৈষ্ণবীকরণ এই সময় থেকে শুরু হয়