যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই

সৌগত দত্ত
 
লোকসভা ভোটের ঠিক প্রাকক্ষণেই পুলওয়ামায় হওয়া আত্মঘাতী জঙ্গিহানাকে কেন্দ্র করে সমগ্র দেশজুড়ে ভণ্ড দেশপ্রেমের হুজুগ তুলে যুদ্ধের বাতাবরণ তৈরি করার রাজনীতিতে যখন ব্যাপক মনোনিবেশ করেছে আর.এস.এস.-বিজেপি, ঠিক তখনই যুদ্ধের আহ্বানকে খারিজ করে শান্তির ডাক দিয়ে পথে নেমেছেন খেটে খাওয়া মানুষের দল। গত ২৪শে ফেব্রুয়ারি সি.পি.আই.এম.এল.(রেডস্টার) এবং পিপ্ল্'স্  ব্রিগেড আয়োজিত রামলীলা ময়দান থেকে ধর্মতলা অবধি যুদ্ধবিরোধী মিছিলে এমনই দৃশ্য চোখে পড়েছে।


দীর্ঘদিনের বেকারত্ব, কাজের অনিশ্চয়তা, শ্রমিকদের মজুরিহীনতা, ফসলের অন্যায্য দাম, ঋণে জর্জরিত কৃষকদের লাগাতার আত্মহত্যার বাস্তব চিত্রকে মুছে ফেলে এবং বোফর্স-রাফায়েল কেলেঙ্কারিকে কেন্দ্র করে সাধারণ জনমানসে বিজেপির প্রতি উদ্ভুত সন্দেহকে সমূলে উচ্ছেদ করে ফেলার মাধ্যমে লোকসভা ভোটের মানচিত্রের চালচিত্রকে সম্পূর্ণ নিজের দিকে ঘুরিয়ে নেওয়ার যে ছক কষেছে বিজেপি-আরএসএস, তার প্রভাবে ভণ্ড দেশপ্রেমের জিগির ছড়িয়ে পড়েছে অলিগলিতে এবং যুদ্ধবাজদের প্রকাশ্য নেতৃত্বে পুলওয়ামার ঘটনাকে ঘিরে কেন্দ্রীয় সরকারের দিকে সওয়াল তোলা সাধারণ মানুষ, বুদ্ধিজীবী ও রাজনৈতিক কর্মীদের ওপর নেমে এসেছে ব্যাপক শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার এবং এই লাগাতার ঘটনাবলী নিয়ে শুধু মুখে বিবৃতি দিয়ে কার্যত ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে আছে রাজ্য সরকার তথা খোদ পুলিশমন্ত্রীও। এছাড়াও প্রতিবেশী দেশের সাথে যুদ্ধের মানসিকতার ব্যাপক প্রসার ঘটিয়ে মানুষকে তার বাস্তব শোষণ থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখার তুমুল চেষ্টা চালাচ্ছে কেন্দ্র সরকার।
এরই বিরুদ্ধে শান্তির বাতাবরণ প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়ে এবং সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের অধিকারের দাবীতে রাস্তায় নামে ওই দুই দল, এবং তাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে যোগদান করে ভাঙ্গরের জমি, জীবিকা, বাস্তুতন্ত্র ও পরিবেশরক্ষা কমিটি।



মিছিলের দাবী ছিলঃ 
যুদ্ধবাজদের বিরুদ্ধে শান্তির পক্ষে মানব-বন্ধন গড়ে তুলুন
যুদ্ধজিগির নয়, পুলওয়ামার ঘৃণ্য ঘটনার তদন্ত করে দোষীদের শাস্তির ব্যবস্থা কর
আলোচনার মাধ্যমে কাশ্মীর সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান করতে হবে
মতপ্রকাশের অধিকারের ওপর স্বার্থান্বেষী আক্রমণ বন্ধ কর 
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় সমস্ত মানুষ এক হোন




সিপি আই এম এল(রেডস্টার)-এর তরফ থেকে প্রদীপ সিং ঠাকুর জানান "কাশ্মীর সমস্যার সমাধান যুদ্ধের মাধ্যমে সম্ভব নয়, এটি একটি রাজনৈতিক সমস্যা, সেনার আত্মীয়রাও যুদ্ধ চান না। কারণ একটা যুদ্ধের ফলে একাধিক প্রাণ হারায়।" তিনি আরও বলেন, "কোন পরিস্থিতিতে কাশ্মীরের যুবকেরা এই ধরণের মানসিকতার দিকে প্ররোচিত হচ্ছে তা খতিয়ে দেখা দরকার।"
পিপ্ল্'স্ ব্রিগেডের কনভেনর বাসুদেব নাগ চৌধুরী সেনাদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তোলার পাশাপাশি বলেন, "সেনাদের মৃত্যুতে যেভাবে দেশপ্রেমের জিগির তোলা হচ্ছে, গত পঁচিশ বছর ধরে প্রতিদিন গড়ে ৪৮জন কৃষক যে আত্মহত্যা করছেন তা নিয়ে সেই দেশপ্রেমের একাংশও চোখে পড়েনা। কৃষক-শ্রমিকদের দুরাবস্থার খবরকে ধামাচাপা দেওয়ার এই চেষ্টাকে ব্যর্থ করে মেহনতি মানুষের অধিকারের লড়াইকে এগিয়ে নিয়ে যেতে আমরা আমাদের সর্বশক্তি প্রয়োগ করবো।"

ক্ষমতার আস্ফালন, ভণ্ড দেশপ্রেম, কেন্দ্র ও রাজ্যের ক্রমাগত অর্থনৈতিক ও সামাজিক শোষণ এবং সকলপ্রকার সুবিধাবাদী, মেহনতিস্বার্থবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে বিকল্প বামপন্থী সংগ্রামের লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার নিয়ে বৃহত্তর সংগ্রামের আহ্বান জানিয়েছে উভয় রাজনৈতিক দল।

আজ যুদ্ধবাজের দামামা বেজে উঠল এই মিছিলের দু'দিনের মাথায়। মিছিলের তাৎপর্য যারা আজও বোঝেনি, তারা আজ যুদ্ধের এই সূচনাধ্বনিতে উচ্ছ্বসিত। পুঁজির আস্ফালনে আবার যেতে চলেছে হাজার হাজার প্রাণ। গত পাঁচ বছরে গড়ে ভারত ৪০ হাজার কোটি ও পাকিস্তান ১০ হাজার কোটি টাকার অস্ত্র আমদানি করেছে । তারা যুদ্ধ না করে যাবে কোথায়?... 

সৌগত দত্ত পিপল'স্‌ ব্রিগেড-এর যুব ইউনিটের সদস্য। 

Comments

Popular posts from this blog

ফ্যাসিবাদের উত্থানের যুগে সুবিধাবাদের রমরমা

ঘটনার বিবরণ নয়, উপলব্ধি জরুরী; প্রসঙ্গ আর.জি.কর

কর্পোরেট হাঙরদের হাত থেকে লাদাখকে বাঁচাও!