২৭শে এপ্রিলের আহ্বান
ঋচীক আশ
১৯৪৯ সাল...
দুবছর আগে দেশ সদ্য স্বাধীন হয়েছে (বিদেশী শক্তির হাত থেকে ক্ষমতা হস্তান্তর হয়েছে বুর্জোয়া কংগ্রেসের হাতে, যারা দেশেরই অত্যাচারী ভূস্বামী এবং ধনী সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি ছাড়া আর কিছুই নয়)।
বাংলাতেও তখন বিধান রায়ের মুখ্যমন্ত্রীত্বে কংগ্রেস সরকার ক্ষমতায়। কংগ্রেস সরকার দুবছরেই নিজের শ্রেণীচরিত্র তুলে ধরেছে সবার সামনে। দেশের খেটে খাওয়া মানুষের উপর তার অত্যাচারের বিরুদ্ধে মানুষ ফেটে পড়ছে তেভাগা, তেলেঙ্গানা, বাংলা এবং অন্যান্য স্থানের কৃষকরা এবং তাদের সঙ্গে শ্রমিকরাও। মানুষ যত বেশি নিজের অধিকার বুঝে নিতে চায়, বুর্জোয়া রাষ্ট্র তত বেশি করে দমন পীড়ন চালাতে থাকে।
স্বাধীনতা পরবর্তী কৃষক আন্দোলন, খাদ্য আন্দোলন ও অন্যান্য গণআন্দোলনে অংশ নিয়ে কৃষক রমণীরা এবং শহরের মধ্যবিত্ত মহিলারা পথে নামেন, শহীদ হন প্রচুর মানুষ। এ রাজ্যেই এসময়ে গ্রামাঞ্চলে কংগ্রেসি পুলিশের হাতে খুন হন অন্তত পঁচিশজন মহিলা।
পশ্চিমবঙ্গে কমিউনিস্ট পার্টি এবং গণসংগঠনগুলির অজস্র নেতা ও কর্মীদের বিনা বিচারে অমানবিকভাবে কারাগারে বন্দী করে রাখে কংগ্রেস সরকার। রাজবন্দীদের অধিকার ও দাবী আদায়ের জন্য কারাগারে তীব্র আন্দোলন শুরু হয়। সরকারী জুলুমের বিরুদ্ধে অনশন শুরু করেন তাঁরা। দমদমে পুলিশের গুলিতে জেলের মধ্যেই শহীদ হন কৃষককর্মী প্রভাত কুন্ডু এবং ছাত্রকর্মী সুশীল চক্রবর্তী।
জেলের বাইরে রাজবন্দীদের দাবী নিয়ে কথা বলার জন্য, রাজবন্দীদের মা এবং বোনেরা গড়ে তোলেন "মায়েদের সমিতি"। ১৯৪৯ সালের ২৭শে এপ্রিল এই মায়েদের সমিতি এবং নিখিলবঙ্গ মহিলা আত্মরক্ষা সমিতি কলকাতার ভারতসভা হল-এ একটি মহিলা সমাবেশের আহ্বান করেন। কলকাতার বস্তিবাসী ও মধ্যবিত্ত মহিলাদের পাশাপাশি হাওড়া, হুগলী, চব্বিশ পরগনার সুদুর পল্লিগ্রাম থেকে মহিলারা জমায়েত হন সমাবেশে। সমাবেশের পর, ১৪৪ ধারা অমান্য করে শোভাযাত্রা শুরু হয় এবং মায়েদের শ্লোগানে শ্লোগানে উঠে আসে রাজবন্দীদের মুক্তির দাবি। কংগ্রেসের পুলিশ এই নিরস্ত্র মিছিলের উপরেও গুলি চালায়, লুটিয়ে পড়েন লতিকা-প্রতিভা-অমিয়া-গীতা এবং বিমান নামের এক ব্যক্তি।
গুলি ও কাঁদানে গ্যাসে মিছিল ছত্রভঙ্গ হয়ে পরে, সাধারণ মানুষ এগিয়ে আসেন তাঁদের সাহায্যে।
২৭শে এপ্রিল, সকল রাজবন্দিদের মুক্তির জন্য বিমলা দেবীকে সভানেত্রী করে 'রাজবন্দিদের মায়েদের কমিটি' গঠিত হয়।
পর্বরতীকালে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি বিভিন্ন ঘাত-প্রতিঘাতের মাধ্যমে ভেঙ্গে যায়, সিপিআই এবং সিপিআই(এম) তৈরি হয়। আজ উভয় দলই বর্তমান লোকসভা নির্বাচনে সেই কংগ্রেসের সাথে হাত মেলানোর চেষ্টা করে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে! তবুও অধীর চৌধুরীর সমর্থনে বহরমপুরে চলছে বামপন্থীদের মিছিল!
এই কমিউনিস্ট দলগুলি সংগ্রামী নারী আন্দোলন, শ্রমিক-কৃষক আন্দোলন এবং অন্যান্য গণআন্দোলনের ঐতিহ্য ও আদর্শকে ধুলোয় মিশিয়ে দিয়ে বুর্জোয়া কংগ্রেসের সাথে হাত মিলিয়ে আদতে সাধারণ মানুষকেই প্রতারণা করছে - আমাদের এটা বুঝে নিতে, প্রতারকদের চিনে নিতে এবং নিজেদের প্রাপ্য বুঝে নিতে এই ২৭শে এপ্রিলের আহ্বানে এক জোট হওয়া উচিৎ।
১৯৪৯ সাল...
দুবছর আগে দেশ সদ্য স্বাধীন হয়েছে (বিদেশী শক্তির হাত থেকে ক্ষমতা হস্তান্তর হয়েছে বুর্জোয়া কংগ্রেসের হাতে, যারা দেশেরই অত্যাচারী ভূস্বামী এবং ধনী সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি ছাড়া আর কিছুই নয়)।
বাংলাতেও তখন বিধান রায়ের মুখ্যমন্ত্রীত্বে কংগ্রেস সরকার ক্ষমতায়। কংগ্রেস সরকার দুবছরেই নিজের শ্রেণীচরিত্র তুলে ধরেছে সবার সামনে। দেশের খেটে খাওয়া মানুষের উপর তার অত্যাচারের বিরুদ্ধে মানুষ ফেটে পড়ছে তেভাগা, তেলেঙ্গানা, বাংলা এবং অন্যান্য স্থানের কৃষকরা এবং তাদের সঙ্গে শ্রমিকরাও। মানুষ যত বেশি নিজের অধিকার বুঝে নিতে চায়, বুর্জোয়া রাষ্ট্র তত বেশি করে দমন পীড়ন চালাতে থাকে।
স্বাধীনতা পরবর্তী কৃষক আন্দোলন, খাদ্য আন্দোলন ও অন্যান্য গণআন্দোলনে অংশ নিয়ে কৃষক রমণীরা এবং শহরের মধ্যবিত্ত মহিলারা পথে নামেন, শহীদ হন প্রচুর মানুষ। এ রাজ্যেই এসময়ে গ্রামাঞ্চলে কংগ্রেসি পুলিশের হাতে খুন হন অন্তত পঁচিশজন মহিলা।
পশ্চিমবঙ্গে কমিউনিস্ট পার্টি এবং গণসংগঠনগুলির অজস্র নেতা ও কর্মীদের বিনা বিচারে অমানবিকভাবে কারাগারে বন্দী করে রাখে কংগ্রেস সরকার। রাজবন্দীদের অধিকার ও দাবী আদায়ের জন্য কারাগারে তীব্র আন্দোলন শুরু হয়। সরকারী জুলুমের বিরুদ্ধে অনশন শুরু করেন তাঁরা। দমদমে পুলিশের গুলিতে জেলের মধ্যেই শহীদ হন কৃষককর্মী প্রভাত কুন্ডু এবং ছাত্রকর্মী সুশীল চক্রবর্তী।
জেলের বাইরে রাজবন্দীদের দাবী নিয়ে কথা বলার জন্য, রাজবন্দীদের মা এবং বোনেরা গড়ে তোলেন "মায়েদের সমিতি"। ১৯৪৯ সালের ২৭শে এপ্রিল এই মায়েদের সমিতি এবং নিখিলবঙ্গ মহিলা আত্মরক্ষা সমিতি কলকাতার ভারতসভা হল-এ একটি মহিলা সমাবেশের আহ্বান করেন। কলকাতার বস্তিবাসী ও মধ্যবিত্ত মহিলাদের পাশাপাশি হাওড়া, হুগলী, চব্বিশ পরগনার সুদুর পল্লিগ্রাম থেকে মহিলারা জমায়েত হন সমাবেশে। সমাবেশের পর, ১৪৪ ধারা অমান্য করে শোভাযাত্রা শুরু হয় এবং মায়েদের শ্লোগানে শ্লোগানে উঠে আসে রাজবন্দীদের মুক্তির দাবি। কংগ্রেসের পুলিশ এই নিরস্ত্র মিছিলের উপরেও গুলি চালায়, লুটিয়ে পড়েন লতিকা-প্রতিভা-অমিয়া-গীতা এবং বিমান নামের এক ব্যক্তি।
গুলি ও কাঁদানে গ্যাসে মিছিল ছত্রভঙ্গ হয়ে পরে, সাধারণ মানুষ এগিয়ে আসেন তাঁদের সাহায্যে।
২৭শে এপ্রিল, সকল রাজবন্দিদের মুক্তির জন্য বিমলা দেবীকে সভানেত্রী করে 'রাজবন্দিদের মায়েদের কমিটি' গঠিত হয়।
পর্বরতীকালে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি বিভিন্ন ঘাত-প্রতিঘাতের মাধ্যমে ভেঙ্গে যায়, সিপিআই এবং সিপিআই(এম) তৈরি হয়। আজ উভয় দলই বর্তমান লোকসভা নির্বাচনে সেই কংগ্রেসের সাথে হাত মেলানোর চেষ্টা করে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে! তবুও অধীর চৌধুরীর সমর্থনে বহরমপুরে চলছে বামপন্থীদের মিছিল!
এই কমিউনিস্ট দলগুলি সংগ্রামী নারী আন্দোলন, শ্রমিক-কৃষক আন্দোলন এবং অন্যান্য গণআন্দোলনের ঐতিহ্য ও আদর্শকে ধুলোয় মিশিয়ে দিয়ে বুর্জোয়া কংগ্রেসের সাথে হাত মিলিয়ে আদতে সাধারণ মানুষকেই প্রতারণা করছে - আমাদের এটা বুঝে নিতে, প্রতারকদের চিনে নিতে এবং নিজেদের প্রাপ্য বুঝে নিতে এই ২৭শে এপ্রিলের আহ্বানে এক জোট হওয়া উচিৎ।
Comments
Post a Comment