আগুন জ্বালো, আগুন জ্বালো

সায়ন নন্দী

হ্যাঁ, আরেকবার আগুনটা জ্বালাতে হবে বন্ধু। কারন সময়টা এসে গেছে কাধে কাধ চোখে চোখ রেখে কথা বলার। আজ আপনি অবাক কারন আপনার চোখের সামনে ভুলন্ঠিত হলো বিদ্যাসাগর। কিন্তু এই ভয়ানক রোগটা যে আজকের নয় বন্ধু। ত্রিপুরাতে যখন লেনিন মূর্তি ভাঙা হলো কিংবা যখন কবি সুকান্তকে ভেঙে পড়তে হলো এই নৈরাজ্যের বাংলা তখন কেন চুপ ছিলে? তারা বামপন্থী বলে? নাকি  হিংসার পোড়া গন্ধটা অনেক দূরে ওঠায় নাকে আসছিলো না? আজ নিশ্চই বুঝছো যে আমি তুমি কেউই ভালো নেই। কারন আমরা সেই যুগের মানুষ যারা নিজেদের পতনকে এত স্পষ্ট ভাবে চোখের সামনে জ্বলজ্বল করে এগিয়ে আসতে দেখছি?

বসিরহাটের দাঙ্গার খবর কজন জানে? কিংবা পিসি ভাইপোর সাধের ডায়মন্ড হারবারে ঘটে যাওয়া দাঙ্গার খবর? না জানে না। কেন বলতো জানে না, কারন আমাদের হীরকের দেশে শুধু হীরার চমক আছে, খনিতে কাজ করা শ্রমিকের জন্য চমক নয় আছে শুধু ধমক। বাংলার তথাকথিত প্রথম সারির সংবাদমাধ্যম সেই খবর দেয় না কারন চাটুকারিতা দিয়ে পাওয়া যায় বন্ধ খামের ভেতরের গন্ধ।
আর বন্ধু আমি তুমি হলাম ওই ঘোড়ায় টানা গাড়ির ঘোড়ার মতো। দেশের রাজনৈতিক গোষ্ঠী আমাদের চোখের দুপাশে দুটো কাঠের তক্তা বেধে দিয়েছে ওই ঘোড়ার মতো। যাতে তারা তাদের পোষ্য সংবাদ মাধ্যমে যে খবর পেশ করবে শুধু সেই টুকু দেখে বিনা প্রশ্নে ঘোড়ায় টানা গাড়ির মতো পুরো দেশটাকে শ্রম দিয়ে টেনে নিয়ে যেতে পারি আমরা।
কিন্তু আজকে আর কোনো তক্তা কাজে এলোনা কারন ঘটনাটা ঘটলো একদম চোখের সামনে। আচ্ছা, একবার ভেবেই দেখুন না যদি প্রতিবাদের এতই তাড়না থাকতো তাহলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভেতরে ঢুকে কেনো প্রতিবাদ? বিক্ষোভ প্রতিবাদ তো রাস্তায় হয়। বিদ্যাসাগর কলেজের ভেতর থেকে উড়ে এল পাথর, রড, বোতল। কেনো বিদ্যাসাগর কলেজের ভেতরেও কি সিন্ডিকেটের ব্যবসা চালু হলো? নাকি তারাও প্রতিবাদ করছিলেন? শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আজ কি গুন্ডাগিরির মঞ্চ হয়ে গেছে বর্তমানে? যদিও অসম্ভব নয় কারন কেন্দ্রের রির্পোট অনুযায়ী ৩৬টি রাজ্যের মধ্যে আমরা আজ পঞ্চম গ্রেডে। বলে রাখা ভালো, সিকিম মিজোরাম আমাদের থেকে এগিয়ে। রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্হায় আমরা দেশের ৩৬টি রাজ্যের মধ্যে ৩৫নং স্হানে। সেই রাজ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে যে এখন রাজনৈতিক গুন্দাগিরির মঞ্চ হিসেবে গড়ে তোলা হবে তাই কাম্য।
আর যে সমস্ত মানুষগুলো বিদ্যাসাগরকে ভুলন্ঠিত করে গেলি তাদের বলছিঃ তোদের যে সমস্ত শিক্ষাগুরুরা রাজনৈতিক পাঠ দিয়েছে তারা যদি জীবনে একবারও 'বর্ণপরিচয়' বা 'গীতবীতান' হাতে নিয়ে দেখতো তাহলে আজকের এই কদর্য দিন হয়তো বাংলাকে দেখতে হতো না।
তাই তো বলি বন্ধু, আগুন জ্বালো, আগুন জ্বালো। হাতে মশাল নিয়ে বিপ্লবের আগুন জ্বালো। লড়াইটা এবার পথে হবে, কাপুরুষতার মোড়কে ঢেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভেতরে থেকে বা বাইরে অগ্নিসংযোগ কিংবা মনীষির মূর্তি ভেঙে নয়। বাংলাকে যদি এবার আবার শান্তির চাদরে রাখতে চাও তাহলে আসো আরো একবার বিপ্লবের আগুনটা জ্বালি।

Picture Courtesy: Kanu Mondal & Krishnendu Mondal

Comments

Popular posts from this blog

ফ্যাসিবাদের উত্থানের যুগে সুবিধাবাদের রমরমা

কমিউনিস্ট পার্টি ও তেলেঙ্গানা আন্দোলনের মহিলা কর্মীরা : কমঃ শর্মিষ্ঠা চৌধুরীর কলমে

কেন্দ্র সরকারের ‘জাতীয় শিক্ষা নীতি’ – একটি শিক্ষা বিরোধী ইস্তেহার