সল্টলেকের বস্তিবাসী শ্রমজীবী অধিকার রক্ষা কমিটির প্রথম অধিবেশন
ঋচীক আশ, 'দা ডিলিজেন্ট'
কলকাতার বিত্তবান জনগোষ্ঠী অস্বীকার করলেও শহরের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ এখানের বস্তি। প্রচুর গরীব, শ্রমজীবী মানুষ, মনুষ্যেতর অবস্থায় এই দেশের বস্তিগুলিতে থাকেন। মুম্বাইয়ের ধারাভি ছিল একদা বিশ্বের সর্ববৃহৎ বস্তি! বস্তির সকল বাসিন্দাদের জীবনযাত্রার সার্বিক মানোন্নয়নের দায়িত্ব সরকারের হলেও মহান সরকার বাহাদুর তাতে সচেষ্ট হওয়া তো দূর, তারা বরং চান যাতে এই বস্তি এবং বস্তিবাসীদের শহরের বুক থেকে কিভাবে তুলে দেওয়া যায়। তাই, স্বাধীনতার পর থেকে সব সরকারই বস্তি এবং বস্তিবাসীদের জীবিকা উচ্ছেদ করার চেষ্টা চালিয়েছে। সে তুর্কমেন গেটই হোক, কিংবা 'অপারেশান সানশাইন' বা নোনাডাঙা... বর্তমান রাজ্য সরকারও পিছিয়ে নেই। ২০১৭-তে যুব ফুটবল বিশ্বকাপের প্রাক্কালে সল্ট লেকে সৌন্দর্য্যায়নের নামে বস্তি উচ্ছেদ এই সরকারের করপোরেট স্কোর বেশ বাড়িয়ে তুলেছে। বস্তিবাসীদের প্রয়োজনীয়তা একমাত্র ভোটের সময়ে।
মানবেতর অবস্থায় রেখে দেওয়া শ্রমজীবী মানুষদের এই অংশটাকে বিভিন্ন ভোটবাজ পার্টিগুলো নিজেদের মিটিং-মিছিল ভর্তি করতে কাজে লাগিয়েছে আর পুঁজিপতিদের প্রয়োজনমতো যখন-তখন উপড়ে ফেলেছে তাদের বসতি বা কাজের জায়গা থেকে। তাই, বস্তি উচ্ছেদ আটকানো এবং একই সাথে বাসস্থানের স্বাস্থ্যকর পরিবেশসহ পানীয় জল, বিদ্যুৎ, শৌচালয় ইত্যাদি নাগরিক অধিকার আর নিজেদের শ্রমের সুরক্ষা, নিরাপত্তা, প্রাপ্য মজুরী ইত্যাদি শ্রম অধিকার বুঝে নিতে সল্টলেকের বস্তিবাসী শ্রমজীবী মানুষ গড়ে তুলেছেন নিজেদের লড়াইয়ের এক সংগঠন - বস্তিবাসী শ্রমজীবী অধিকার রক্ষা কমিটি, সল্টলেক। গত ৫ই মে কার্ল মার্ক্সের জন্মদিবসে এই সংগঠনের প্রথম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয় প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডের সুর্য সেন হলে, ৩০০ জন প্রতিনিধি নিয়ে। সভাপতিত্ব করেন বিভিন্ন বস্তির প্রতিনিধি সহ কমিটির মূল লোকজন। পুরো সম্মেলনজুড়ে ৬টা বস্তির প্রতিটা থেকে প্রতিনিধিরা, ও বস্তির প্রতিটা পেশার মানুষ নিজেদের সংগ্রামের কাহিনী তুলে ধরেন এবং সভা পরিচালনা করেন। প্রত্যেকের বক্তব্যে লড়াইয়ের প্রত্যয় ঝরে পড়ছিল। বস্তি সম্পর্কিত আইনের দিকগুলোতেও আলোকপাত করা হয়। ৪ ঘণ্টার সম্মেলন শেষে ৩৫ জনের নতুন কমিটি নির্বাচিত হয় - বস্তিবাসী শ্রমজীবী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রশ্নে আগামী দিনে ময়দানের এবং আইনি লড়াই লড়তে যে কমিটি অঙ্গীকারবদ্ধ।
Comments
Post a Comment