ছিন্নমূল বাঙালীর স্পর্ধার শতবর্ষ

সায়ন নন্দী

হ্যাঁ, যে মানুষগুলো ভিটে মাটি ছেড়ে চলে এসছিল এক টুকরো জীবনকে হাতে নিয়ে; সম্বল ছিল শুধু ওই রিফিউজি ক্যাম্প, সেই বাঙালীর স্পর্ধার শতর্বষ।দামাল পদধ্বনীতে শতবর্ষে পা রাখল হাজার হাজার উদবাস্তুর লড়াইয়ের রসদ জোগানো প্রতিষ্ঠান  ইস্টবেঙ্গল ক্লাব। সেই শতর্বষকে কেন্দ্র করেই ক্লাবের প্রতিষ্ঠা দিবসে বেলঘড়িয়ার শ্যাম ভিলার মাঠে অনুষ্ঠিত হল এক অসাধারন অনুষ্ঠান।


অনুষ্ঠানের মূল উদ্যোক্তা বিভাগে ছিলাম না আমি। তবে পৃষ্টপোষকতার খাতিরে সমস্ত ইস্টবেঙ্গলীয়ানদের সাথেই ছিল এক নিবিড় হৃদয়তার সম্পর্ক। সুদীপ্ত বাবু যখন আমাকে  ফোনটি করে বলেন যে চল শতবর্ষটা এবার উদযাপন করি, মনের ভেতরে এক অদ্ভুত শিহরন হয়। ধীরে ধীরে এগিয়ে চলে অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা। এক রাত্তিরে হঠাৎ মাথায় এলো যদি কিছু দুস্থ শিশুদের সাহায্য করা যায়। কালবিলম্ব করিনি খুব একটা। সঙ্গে সঙ্গে ফোনটাকে সাহস করে তুলে খুঁজে নিলাম সুদীপ্ত বাবুকে। সন্ধ্যে বেলায় ডাক পড়লো, সর্ব সম্মুখে দাড়িয়ে নিজের ভাবনা চিন্তার কথা জানানোর জন্য তলব হলো আমার। সমীরন বাবু সহ অন্যান্য সিনিয়রদের সামনে পেশ করলাম প্রস্তাব। সবাই এক কথায় রাজি। যদিও তার সাথে দায়িত্বও পড়লো বাচ্চাদের অনুষ্ঠানের ছোট থেকে বড় প্রতিটি বিভাগের দায়িত্ব। বাঙাল হৃদয় নিয়ে নিল আরো এক কঠিন চ্যালেঞ্জ। ওই যে বলে না "বাঙাল রা হারতে শেখেনি "...


আমার সাথে পেলাম আরেক টগবগে তরুণ রক্ত অর্পনকে। দুজনের অন্বেষনে ছাত্রছাত্রীদের জন্য বন্দোবস্ত হল খাতা, পেন, পেন্সিল, পরীক্ষার বোর্ড থেকে শুরু করে ছাত্র ছাত্রীদের জন্য স্কুলের ব্যাগ সহ বিভিন্ন পাঠ্য সামগ্রী। তাও যেন কোথায় একটা খামতি। আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপের জীনের মতো উদয় হলেন একজন। অনুষ্ঠানের আগের রাত্রে হাতে জোর করে ধরিয়ে দিলেন সাহায্য। খামতিটা মেটানো গেলো। প্রতিটি শিশুর জন্য আনা হল লাল হলুদ জার্সী। যা কিনা ভবিষ্যতের লড়াইয়ের ময়দানে তাদের সাহস জোগাবে আর মনে করাবে "বাঙালরা হারতে শেখেনি"।


অনুষ্ঠানের মঞ্চ আলোকিত করল সুদীপ্ত বাবু, সমীরণ বাবু, সৌমেন বাবুদের মতো অক্লান্ত পরিশ্রম ও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার দৃঢ় সংকল্প। লাল হলুদ পতাকায় মুড়লো বেলঘড়িয়ার শ্যাম ভিলার মাঠ। লাল হলুদ আলোয় চিক চিক করে উঠলো অনুষ্ঠান প্রাঙ্গন ও প্রতিটি বাঙাল হৃদয়। শিশুদের পাঠ্য সামগ্রী দান দিয়ে শুরু হলো অনুষ্ঠান, শিশুদের মধ্যে লাল হলুদ জার্সি বিতড়নের পর শিশুদের মিষ্টি হাসি মন কাড়ছিল প্রতিটি বাঙাল হৃদয়ের। সুদীপ্ত বাবু থেকে সৌমেন বাবু, সমীড়ন বাবু কিংবা তরুণ প্রজন্মের আমি, অর্পন, শুভ, রোহিতদের মতো নব্য বাঙালদের মন যেন কোথাও বলে উঠছিল হ্যাঁ সত্যি বাঙালরা পারে, শুধু বাঙালরাই পারে ছিন্নমূল উদবাস্তু হয়েও লড়াই জিতে দেখিয়ে দিতে। অনুষ্ঠানে  পরিসমাপ্তিতে হল লাল হলুদ মিষ্টি বিতড়ন ও শতর্বষের কেক কাটা। বয়সের ভেদাভেদ থেকে ঘটি বাঙালের মিষ্টি লড়াই ভুলে দাপিয়ে বেড়ালো ও মন জয় করল কিছু লড়াকু বাঙাল।


সত্যি আজ আর কষ্ট পাই না যখন কেউ বলে তোরা তো উদবাস্তু কিংবা কেউ যখন বলে রিফিউজির দল। তাকে গিয়ে বলতে ইচ্ছা করে এই উদবাস্তু রিফিউজি কাটাঁতারের দাগগুলোই পারে বাজিমাত করতে ওরাই এক সুরে গেয়ে ওঠে
' *উদবাস্তু মোরা ইস্টবেঙ্গল* '

Comments

Popular posts from this blog

বর্তমান সময়ে বাম ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা

Polemics on 'Fractured Freedom': C Sekhar responds to Kobad Ghandy's views

আম্বেদকরের চোখে - কেন ব্রাহ্মণ্যবাদ শাকাহারী পথ গ্রহণ করল? গো ভক্ষণ নিষিদ্ধকরণের সাথে অস্পৃশ্যতার কি সম্পর্ক রয়েছে?