টালা ব্রিজ সংলগ্ন বস্তি উচ্ছেদের বিরুদ্ধে ১৮ই নভেম্বর কনভেনশন বাগবাজারে

সংবাদ পরিবেশনেঃ সায়ন

"নেই-এর রাজ্য" বলে যদি কোনো প্রতিযোগীতা শুরু করা হয় তাহলে হয়তো পশ্চিমবঙ্গের নাম তালিকায় প্রথম দিকেই থাকবে। পশ্চিমবঙ্গে এখন সত্যি পরিকল্পনা মাফিক কি কিছু হয়? নাকি সমগ্রটাই তুঘলকী সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করে চলে?



টালা ব্রিজে বিধি নিষেধের জেরে এখন সমগ্র কলকাতাবাসীর প্রাণ ওষ্ঠাগত। টালা ব্রিজের নীচে যে সমস্ত স্হায়ী ও অস্হায়ী গৃহগুলি ছিল সেগুলি নির্দ্ধিধায় ভাঙ্গা হচ্ছে। কিন্তু সেখানকার বাসিন্দারা পেলো না কোনো নিরাপদ আশ্রয়। ২৪শে সেপ্টেম্বর রাত ৯টার সময় স্হানীয় কাউন্সিলর তরুণ সাহা এসে হাজির হন এলাকাতে। তিনি সর্বসম্মুখে দাড়িয়ে ঘোষনা করেন টালা ব্রিজ সারানোর দরুন  সেখানকার মানুষরা যেন অন্যত্র চলে যান। তাঁদের ঘরের আসবাবপত্র নিয়ে যাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই, শুধুমাত্র নিরাপত্তার স্বার্থে অনত্র যাওয়ার কথা বলা হচ্ছে। ব্রিজের মেরামতি হয়ে গেলেই তাঁরা ফিরে আসতে পারবেন। এলাকাবাসিকে আশ্বস্ত করে যান তিনি। কিন্তু তুঘলকী সিদ্ধান্তের পরিচয় পাওয়া যায় ঠিক ২৪ঘন্টার অন্তরেই যখন ২৫শে সেপ্টেম্বর তিনি এলাকাতে এসে নির্দেশ দেন ঘরের সমস্ত জিনিসপত্র সব বার করতে কারণ মানিকতলা সাহিত্য পরিষদের বিপরীতে একটি বাড়িতে তাদের অস্হায়ী ভাবে বসবাসের ব্যবস্হা করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্তে সমগ্র এলাকাবাসি স্তম্ভিত হন। যদিও তুঘলকী সিদ্ধান্তের শেষ এখানেই হয় না। হয়তো সবচেয়ে বড় চমকটাই বাকি ছিল বইকি। তরুন বাবু কিছুক্ষন বাদেই ফিরে আসেন এবং সর্বসম্মুখে বলে যান যে মানিকতলায় নয়, তাঁদের থাকার ব্যবস্হা করা হয়েছে ক্যানাল রোড সংলগ্ন পাড়ে এবং চিৎপুর রেল ইয়ার্ডে। সেই সিদ্ধান্ত শোনার পরেই সমগ্র এলাকায় ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। অতিরিক্ত আর্বজনা স্তূপাকার অঞ্চল ক্যানাল রোড। যেখানে সরকারের তরফ থেকে উন্নয়নের কোনো রকম চিহ্ন পাওয়া যায় না সেখানে পূর্নবাসনের সিদ্ধান্ত নেয় তৃণমূল সরকার। পুর্নবাসনের নাম করে তাঁদেরকে দেওয়া হয় কিছু বাশ ও প্লাস্টিক এবং তার সাথে ফ্রি অস্বাস্হ্যকর পরিবেশ। সেখানকার বাসিন্দাদের অধিকাংশ অংশই "দিন আনি দিন খাই" পর্যায়ের। সেখানকার মহিলারা বেশীরভাগই গৃহ পরিচারিকার কাজ করে থাকেন এবং পুরুষরা কেউ ড্রাইভার তো কেউ শ্রমিক অথবা কেউ ছাতু বিক্রেতা। তাঁদের প্রত্যেকের কাছে আধার বা ভোটার কার্ড থাকা সত্ত্বেও তাঁদের বলা হচ্ছে তাঁরা নাকি বেআইনিভাবে সেখানে বসবাস করেন। প্রশ্নটা হয়তো খুব সহজেই আসে যে তাঁরা যদি বেআইনিভাবেই বসবাস করেন তাহলে তাঁদের বাড়ির ঠিকানা উল্লিখিত বৈধ রেশন কার্ড, ভোটার কার্ড, আধার কার্ড হয় কিভাবে? নাকি এখানেও আছে ভোট জটিলতার পূর্ণ কুটিল হিসাব?
     
ক্যানাল রোড সংলগ্ন এলাকা এবং চিৎপুর রেল ইয়ার্ড সংলগ্ন এলাকা পরিদর্শনে গেলে আতঁকে উঠতে হচ্ছে রীতিমতো। নর্দমা থেকে হয়তো ২ থেকে ৩ ফুট ব্যবধানে বেড়ে উঠেছে প্লাসটিকের ছাউনিগুলো। প্রথম দর্শনে হয়তো মনে হতেই পারে কোনো শরনার্থী ক্যাম্প। নেই কোনো বিদ্যুৎ সংযোগ , নেই কোনো পানীয় জলের ব্যবস্হা। শৌচালয় বলতে জনসাধারনের জন্য ২ টাকার বিনিময়ে থাকা শৌচালয় যা রাত ৮টার পর বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। অনেক অনুরোধ করা সত্ত্বেও কর্তৃপক্ষ কোনো আমলই দিচ্ছেনা। জমা জলের জেরে তিন জন এখনই ডেঙ্গু আক্রান্ত। সেই স্হানেই বসবাস করছে তিন ক্যানসার পেসেন্ট। প্রায় ৭০জনেরও বেশী শিশু ও কিশোর বসবাস করছে এই  অস্বাস্হ্যকর পরিবেশে এবং আছে ৫০জন বয়স্ক মানুষ, যাদের বয়স ৬০-এর অধিক। বৃষ্টির জল ঘরে ঢুকে আসছে অহরহ এবং নেই রান্নার কোনো উপযুক্ত ব্যবস্হা। এই ঘরেই প্রস্তুতি নিচ্ছে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের ছাত্রছাত্রীরা। সত্যি কি এখন আর তাদের জীবনের সবচেয়ে বড় পরীক্ষা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক  নাকি সরকার দ্বারা পরিচালিত বর্তমানে তাদের পরিস্হিতি? তাঁদের স্হায়ী বাসস্হানকে ৬ই অক্টোবরের মধ্যে ফাঁকা না করলে উপযুক্ত ব্যবস্হা নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছিল।

সরকারী পুর্নবাসনের নামে এই চলতে থাকা প্রহসনে ঠাঁই পেয়েছে ৫৬টি পরিবার। কিন্তু এখনো গৃহহীন ভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে ৪০টি পরিবার যাদের টালা ব্রিজ সংলগ্ন বাড়িগুলি গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বুলডোজারের ধাক্কায়। গৃহহীন সেই মানুষগুলি এখন চেয়ে রয়েছে সরকারের মুখাপেক্ষী হয়ে। তরুণ সাহাকে এই সমস্ত বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি জানান যে তিনি কিছু জানেন না। সেই সমস্ত মানুষগুলো যারা আজ গৃহহীন, তাঁরা ব্রিজ পুর্ননির্মানের পর তাঁদের বাসস্হান ফিরে পাবেন কিনা সম্পর্কিত প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান যে এই সম্পর্কিত বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। তাঁর স্পষ্ট উক্তি, মানুষজন মারপিট, দাঙ্গা করে ফেললেও তাঁর কিছু করার নেই। তিনি নাকি নিরুপায়। তৃণমূল সরকারের কাছ থেকে হয়তো এর থেকে বেশী আশা করা যায় না।
     
শ্রমিকের রক্ত শোষন করে এরা ছুটবে কর্পোরেট সংস্হার কাছে ব্রিজ মেরামতের টেন্ডার পেপার নিয়ে। সমগ্র উপেক্ষিত মানুষের দল তাই তৈরি করেছেন "বস্তিবাসি শ্রমজীবী অধিকার রক্ষা কমিটি"। ১৮ই নভেম্বর বিকেল ৫টা ৩০মিনিটে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে কনভেনশন বাগবাজার রিডিং লাইব্রেরীতে কারন এখন এই অধিকার রক্ষার লড়াই রাস্তাতে নেমেই করতে হবে। রাস্তার লড়াই রাস্তাতেই বুঝে নিতে হবে খেটে খাওয়া মানুষকে। 

Comments

Popular posts from this blog

ফ্যাসিবাদের উত্থানের যুগে সুবিধাবাদের রমরমা

কমিউনিস্ট পার্টি ও তেলেঙ্গানা আন্দোলনের মহিলা কর্মীরা : কমঃ শর্মিষ্ঠা চৌধুরীর কলমে

কেন্দ্র সরকারের ‘জাতীয় শিক্ষা নীতি’ – একটি শিক্ষা বিরোধী ইস্তেহার