সাত্যকি দত্ত
জাতীয় নাগরিকপঞ্জী আর নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ যেখানে তীব্র হচ্ছে, সেখানেই নেমে আসছে আঘাত। রবিবারের সন্ধ্যাও তার ব্যতিক্রম হলো না, আলিগড়ের পরে এবার আক্রমনের লক্ষ্য জেএনইউ। মুখোশধারী কিছু দুষ্কৃতীর হাতে আক্রান্ত হয়ে রক্তাক্ত হলেন ছাত্রছাত্রীরা, আর তাঁদের বাঁচাতে গিয়ে মার খেলেন অধ্যাপক অধ্যাপিকারাও। এআইআইএমএস-এর ট্রমা সেন্টারে উপস্থিত এক ডাক্তারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, জেএনইউয়ের ১৫ জন ছাত্র-ছাত্রীর মাথায় গুরুতর আঘাত নিয়ে এই মুহূর্তে সেখানে ভর্তি আছেন, যার মধ্যে আছেন ছাত্র সংসদের সভাপতি ঐশী ঘোষও। প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য অনুযায়ী, গতকাল সন্ধ্যা ৬:৩০ নাগাদ মুখোশধারী প্রায় ৫০জন দুষ্কৃতীর একটি দল জেএনইউ-এর মধ্যে ঢুকে পড়ে। লাঠি ও পাথর নিয়ে তারা হোস্টেলে তান্ডব চালাতে থাকে, আক্রমণ করে পড়ুয়াদের। সবরমতি, মাহি মান্ডবি এবং পেরিয়ার হোস্টেল ছিল এদের প্রাথমিক লক্ষ্য । বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া ভিডিও ফুটেজেও দেখা গিয়েছে মুখোশধারীদের তাড়ায় আতঙ্কিত ছাত্র-ছাত্রীরা দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করছেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা এই ঘটনার জন্য সরাসরি আঙ্গুল তুলছেন এবিভিপির দিকে, তাদের কথা অনুযায়ী আক্রমণকারীদের মুখে "জয় শ্রী রাম" স্লোগান শোনা গিয়েছে। তাঁদের আরো অভিযোগ, পুরো ঘটনা চলাকালীন পুলিশ সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় দর্শকের ভূমিকায় দাঁড়িয়ে ছিল। এবিভিপি এর উত্তরে এক হাস্যকর বক্তব্য রেখেছে, তারা বলে যে ছাত্র ও বামপন্থীরাই নিজেদের হস্টেলে এ দিন তান্ডব চালিয়েছে, আর তাদের সমর্থকদের ওপরও অত্যাচার চালিয়েছে। জেএনইউ-এর এক অধ্যাপক অতুল সুদ সংবাদমাধ্যমের কাছে জানান যে লাঠি আর পাথর নিয়ে একের পর এক হস্টেলে ঢুকে ভাঙচুর চালিয়েছে। এই অবস্থায় ও গন্ডগোলের মধ্যে তিনি এক বার পড়ে যান। এর পর বাইরে বার হয়ে তিনি দেখেন তাঁর গাড়ি সহ সমস্ত গাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। জেএনইউ-এর এক অধ্যাপিকা সুচরিতা সেনের মাথায় গুরুতর আঘাত লেগেছে, তাঁকে এই মুহূর্তে এআইআইএমএসে ভর্তি করা হয়েছে। ঐশী ঘোষ বলেন, "একদল মুখোশধারী গুন্ডা আমায় নির্মমভাবে আক্রমণ করে মেরেছে।" ছাত্র সংসদের টুইটে লেখা হয়েছে যে ঐশী ঘোষকে খুঁজে বের করে মাথায় মারা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা এই ঘটনায় ক্যাম্পাসের মধ্যে তাঁদের সুরক্ষা আদৌ আছে কিনা এই প্রশ্ন তুলেছেন। ঘটনাটি ঘটে যাওয়ার পরেও পুলিশকে কোন ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি, আর এই দাবীও উঠছে যে আক্রমণকারিরা রাত ৯:৩০ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হোস্টেলেই ছিল। এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল, সীতারাম ইয়েচুরি, অখিলেশ যাদব সহ সকল বিরোধী নেতারাই।
এই তান্ডব একদিকে জেএনইউ-তে ফি বৃদ্ধি, কেন্দ্রীয় সরকারের ক্যা ও এনআরসি নীতির বিরুদ্ধে চলতে থাকা আন্দোলনকেই চ্যালেঞ্জ করছে এবং অন্যদিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তার প্রশ্নকে সামনে এনে পুলিশি উপস্থিতি ও রাষ্ট্রের নজরদারি বাড়ানোর পথ প্রশস্ত
করছে।
Comments
Post a Comment