লকডাউনের মাঝেই কেন্দ্রের শ্রমিক স্বার্থবিরোধী আইন প্রণয়নের ইচ্ছার বিরুদ্ধে সোচ্চার বামপন্থী ট্রেড ইউনিয়নগুলি
রিপোর্টঃ সায়ন
সারা বিশ্ব যখন করোনা মহামারী থেকে অব্যাহতি চাইছে, অর্থনীতি তখন জীর্ণকায় দশায় রূপান্তরিত হয়েছে। এই সময় ভারত সরকার সবার চোখের অন্তরালে শ্রমিকদের নতুন বিধির বিধানের সামনে দাঁড় করাচ্ছে। ১৯৪৮ সালের 'ফ্যাক্টিরি অ্যাক্ট'-এ পরিবর্তন আনতে চাইছে তারা যা পুঁজিপতিদের হাত শক্ত করে দেওয়ার অন্যতম ফিকির। শ্রমিকদের এই আইনে উল্লেখ করা ছিল যে শ্রমিকরা সপ্তাহের ৬ দিনে মোট ৪৮ ঘন্টা শ্রমসময় পালন করবে অর্থাৎ প্রতিদিনের হিসাবে ৮ ঘন্টা শ্রমশক্তি ব্যয় করবে। কিন্তু সেখানে বর্তমানে সরকার চাইছে শ্রমসময়কে ৭২ ঘন্টাতে ত্বরান্বীত করতে যাতে শ্রমিকদের দিনপ্রতি কায়িক শ্রমের সময় হবে ১২ ঘন্টার হিসেবে। ওভারটাইম কাজের ক্ষেত্রে ঘন্টা প্রতি মজুরীর ৫০ শতাংশ অধিক দেওয়ারও বিধান রয়েছে এই আইনে যদিও কতটা তা মানা হয় তা আলাদা করে বলবার অপেক্ষা রাখে না। ইন্টারন্যাশনাল লেবার ওর্গানাইজেশান (আইএলও) দ্বারা এই শ্রমসময় ও মজুরীর শর্ত সুরক্ষিত হলেও কেন্দ্রের আইন বদলের ফলে তা বিঘ্নিত হবে এবং শ্রমিক স্বার্থকে আবারো পর্যদমিত করা হবে। যেখানে সমগ্র দেশ করোনার মতো মহামারীর সাথে লড়াই করার জন্য শ্রমিকদের অবদানের দিকে চেয়ে আছে সেখানে সরকার তাদের স্বার্থ বিঘ্নিত করে পুঁজিপতিদের হাতকে শক্ত করার জন্য ব্যস্ত।
১৮৮৬ সালের হে মার্কেট সংলগ্ন শ্রমিক আন্দোলন, পুলিশের সাথে শ্রমিকদের খন্ডযুদ্ধ এবং শ্রমিক নেতাদের আত্মবলিদান শ্রমিকদের দৈনিক ৮ ঘন্টা শ্রমশক্তি প্রদান, ৮ ঘন্টা বিশ্রাম এবং ৮ ঘন্টা সাংস্কৃতিক চর্চা আইনগতভাবে বরাদ্দ করতে সফল হয়েছিল। বর্তমানে এই অধিকার কার্যত লুন্ঠিত। অতিরিক্ত কর্ম দিবসের বিনিময়েও অতিরিক্ত মজুরীর প্রাপ্তি ঘটে না শ্রমিকদের। বর্তমানে কেন্দ্র যে সাপ্তাহিক ৭২ ঘন্টা শ্রমসময়ের দাবী করে আইন বলবৎ করতে চাইছে এবং ওভারটাইমের বিনিময়ে যে ঘন্টা প্রতি ৫০% অতিরিক্ত মজুরী প্রদানের কথা বলছে তা যে নিছকই মরুভুমীতে মরীচিকা এবং শ্রমিকদের ১৫ ঘন্টার উপর অমানবিকভাবে খাটিয়ে নেওয়া হবে তা বলাই বাহুল্য।
বামপন্থী ট্রেড ইউনিয়নগুলি এহেন কার্যকলাপের প্রতিবাদ করে পিটিশন জমা দিয়েছে কেন্দ্রীয় শ্রমমন্ত্রীর দপ্তরেঃ IFTU, NDLF, TUCI , IFTU (SARVAHARA), AIFTU (NEW), ECLTSAU , IMK, JSM সহ আরো কয়েকটি ট্রেড ইউনিয়ন। CITU-র নেতৃত্বের বক্তব্য হল, এই লকডাউনের সময় অত্যাবশকীয় পণ্যের উৎপাদনের তাগিদে কম সংখ্যক শ্রমিকদের ব্যবহার করে (অনেক শ্রমিক বাড়ি ফিরতে বাধ্য হয়েছে) উৎপাদনের সময় ১২ ঘন্টাতে ত্বরান্বীত করার অর্থ হচ্ছে সরকার বেলাগাম ছাঁটাইকে মান্যতা দিচ্ছে এবং শ্রমিকদের ৮ ঘন্টা শ্রমের ঐতিহাসিক গুরুত্ব ও তাৎপর্যকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নয়াউদারবাদকে উপাধীষ্ট করছে। এর মধ্যে দিয়েই স্বৈরাতান্ত্রীক শাসন ব্যবস্হা ও ফ্যাসিবাদী চিন্তভাবনা প্রকট হচ্ছে। বিঘ্নিত হচ্ছে শ্রমিক স্বার্থ।
মহামারীর সময় সরকার যখন পরিযায়ী শ্রমিকদের ন্যূনতম ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করতে পারছে না সেখানে সবার চোখের অন্তরালে চলছে চরম শোষণ ও রাষ্ট্রের নিপীড়ণের নীল নকশার বাস্তবায়ন।
Comments
Post a Comment