লকডাউনের মাঝে খোলা চা বাগানঃ চলছে ছাঁটাই; শ্রমিকদের রেশন, মজুরী বকেয়া
রিপোর্টঃ সায়ন
'লকডাউন', যে কথাটির অর্থ সমস্ত উৎপাদন ও ক্রয় বিক্রয় সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা, শুধুমাত্র অত্যাবশকীয় পণ্য ব্যাতিত, সেই নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে চলছে আইন অমান্য আন্দোলন। পশ্চিমবঙ্গের চা বাগানগুলিতে মালিক পক্ষের তরফ থেকে চলছে তারই সলতে পাকানোর কাজ।
সরকারের পক্ষ থেকে ২২শে মার্চ জনতা কার্ফু জারি করা হলেও, সেই কার্ফুকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে চলছে অবাধে চা পাতা তোলার কাজ। চা বাগানের মালিকরা শ্রমিকদের প্রশ্নে চাপে পড়ে ২৫শে মার্চ অফিসিয়াল নোটিস দেয় চা বাগান বন্ধের। সেখানেও সমস্যার সৃষ্টি হয়।শ্রমিকদের বকেয়া এবং ওভারটাইমের মজুরী দিতে অস্বীকার করে মালিক পক্ষ। কিছুদিন লকডাউনকে মান্য করার পরেই টী বোর্ডগুলির পক্ষ থেকে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা শুরু হয়ে যায়। চা ব্যবসায়ীরা চা পাতা তোলার পিক্ সিজনে ফার্স্ট ফ্লাস চা পাতা তুলতে না পারলে বিশাল ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে বলে সরকারের ওপর শুরু করা হয় নিরন্তন চাপ সৃষ্টির কাজ। রাজ্য সরকার থেকেও প্রথমে ১৫% এবং পরে ২৫% ও সর্বশেষ ৫০% শ্রমিক নিয়ে চা বাগানগুলি খোলার অনুমতি দেয়। এই অনুমতি বা "ছাড়" শুধু উৎপাদনের জন্যই "ছাড়" নয়, একে গণ্য করা যেতেই পারে এইভাবে যে ছাঁটাই-এর ক্ষেত্রেও চা বাগানের মালিকরা পেয়ে গেল সরকারী শিলমোহর।
বর্তমানে এই ৫০% শ্রমিকদের মধ্যে বিশাল পরিমাণে পা গলানোর ভিড় কারণ তাদের জীবনে দৈনিক মজুরীর বিনিময়তেই চলে ক্ষুধা নিবারণ। চা বাগানের মালিকেরা কোথাও কোথাও কম মজুরীর শ্রমিক অর্থাৎ যারা অনিয়মিত শ্রমিক হিসেবে কাজে নিযুক্ত তাদেরকে দিয়ে করিয়ে নিচ্ছে সমস্ত রকম কাজ; অন্যথা কোথাও আবার কোনো রকম শতাংশের হিসাবকে তোয়াক্কা না করেই চলছে শ্রমিকদের দিয়ে উৎপাদন। শ্রমিকদের ন্যূনতম স্বাস্হ্যবিধি অনুযায়ী না দেওয়া হচ্ছে কোনো রকম মাস্ক, না তারা পাচ্ছে কোনো রকম স্যানিটাইজার বা সাবান। অর্থনৈতিক মন্দার যুগে সরকারের পক্ষ থেকে শ্রমিকদের প্রতি ন্যায্য মজুরী এবং রোটেশন প্রথা অনুযায়ী শ্রমদিবস বন্টন জারি না করে, হঠকারীভাবে চা বাগান খোলার নির্দেশেরই এটা অনিবার্য পরিণতি।
চা বাগানের শ্রমিকদেরকে রেশন দেওয়া হচ্ছে না। প্রতিটি লকডাউনের সময়ের সরকারী সুযোগ সুবিধা থেকে তাদের বঞ্চিত করে রাখা হয়েছে। তার সাথে কোনো রকম আর্থিক সুরক্ষা যথা ইএসআই কিংবা পিএফ-ও তাঁরা পান না। কিন্তু ২৫শে মার্চ থেকে ২৯শে মার্চ পর্যন্ত ১৪৫৫ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণের দাবি করে মালিকপক্ষ সরকারের দারস্হ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই খুলে দেওয়া হল চা বাগানগুলিকে!
তথ্য ও ছবি ঋণঃ Chaaybagan Sangram Samiti
Comments
Post a Comment