কোন ধরণের আন্দোলন আমাদের প্রয়োজন?

রিপোর্টঃ সায়ন

৯ই আগস্ট নাগাসাকি দিবস এবং ভারত ছাড়ো আন্দোলনের প্রারম্ভিক সূচনা দিবসকে বামফ্রন্ট এবং বিভিন্ন নকশাল সংগঠনগুলি পালন করলো একগুচ্ছ গণদাবীকে সামনে রেখে প্রতীকী আন্দোলনের রূপে।

বামফ্রন্ট এবং অন্যান্য বাম মনস্ক দলগুলি এই ৯ই আগস্টকে 'ভারত বাঁচাও'-এর দাবীর চাদরে রেখে পালন করল। এ ধরণের নিষ্ফলা আয়োজন বাম তথা কমিউনিস্ট পত্রপত্রিকা ব্যাতিত সমগ্র দেশের মেইনস্ট্রীম গণমাধ্যমে কোনো সাড়া ফেলতে পারলো না। 

কিন্তু সমগ্র অনুষ্ঠানের কর্মসূচীতে প্রশ্ন উঠছে, যেখানে একগুচ্ছ দাবীর ভান্ডার, তার মধ্যে সর্ব্বোচ্চ প্রয়োজনীয় জণগনের দাবী কোনগুলি এবং এই কো-অর্ডিনেশানের অভাবে এই আন্দোলনে ঠিকমত জনসংযোগই গড়ে উঠল না। জনগণের কাছে এতসব দাবীগুলির মধ্যে কোনো একটি প্রয়োজনীয় দাবীকে সামনে এনে বা একগুচ্ছ মহামারী ও অর্থনৈতিক মন্দার প্রেক্ষাপটে বাস্তব জীবনের সাথে সম্পর্কিত দাবীর সংযুক্তি সম্ভব হল না, যার ফলে অঞ্চল, সংগঠন ও পার্টি ভেদে দাবীর বৈচিত্রের মাঝে আমজনতার থেকে অনেক মাইল দূরে থেকেই শুধুমাত্র প্রতীকী উপায়ে বামপন্হীরা দিল্লীতে গান্ধী মূর্তীর পাদদেশে কিংবা আঞ্চলিক স্তরে প্ল্যাকার্ড হাতে সময় কাটালো।

বামপন্হীরা হঠাৎ করে ভারত ছাড়ো আন্দোলনকে উদযাপন করলেও, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়তেই অহিংসার বাণীকে ব্র্যান্ডে পরিণত করে ফেলে রাউন্ড টেবিলের তলা দিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মতো সহিংস এবং রক্তক্ষরণের ময়দানে ভারতীয় সেনা পাঠানোর পক্ষে মহাত্মা গান্ধী ব্রিটিশদের সাথে সহাবস্হান করে এবং ভিক্ষাবৃত্তির মাধ্যমে আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের অধিকারে প্রচেষ্ট হয়ে ওঠেন। ব্রিটিশ সরকারের থেকে দাবীগুলি আদায়তে কার্যত ব্যর্থ হওয়ার পর তিনি ভারত ছাড়ো আন্দোলনের ডাক দেন এবং যে সময় ভারত ছাড়ো আন্দোলন একটি বৈপ্লবীক মাত্রা নিয়েছে বিপ্লবীদের অংশগ্রহণে, ঠিক সে সময়তে গান্ধীজী ভারত ছাড়ো আন্দোলনকে প্রত্যাহার করে নেন এবং অহিংসার বাণীকে ছড়াতে থাকেন। গান্ধী সহ কংগ্রেসের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সৈন্য প্রেরনের মাধ্যমে সহিংস পথকে সর্মথন এবং ভারত ছাড়ো আন্দোলনকে সাফ্যলের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া বৈপ্লবীক শক্তির উত্থানের সময় আন্দোলনকে প্রত্যাহারের মাধ্যমে তাদের দ্বিচারীতার মনোভাবের প্রকাশ ঘটে। সেই ইতিহাস বিস্মৃতির অতলে কি আজ?

গেরুয়াদের বিরুদ্ধে এই প্রতীকী আয়োজন কি তাদেরই শক্তিবৃদ্ধি করছে না? 

খয়রাতির রাজনীতি পাড়ার অলিতে গলিতে ঘুরছে ।আম্ফানের আস্ফালনের দাপটের রেশ শহর কাটিয়ে উঠতে পারলেও গ্রামাঞ্চলে বহাল তবিয়তে রয়ে গেছে তার অত্যাচারের চিহ্ন। 

করোনার দরুন করুণ পরিস্হিতির বিপরীতে এবং আম্ফানের আস্ফালনের মুখোমুখি দাড়িয়ে খয়রাতির রাজনীতিতে অংশগ্রহন না করে পিপলস্ ব্রিগেড হাসনাবাদ অঞ্চলের বোয়ালমারী, মনোহরপুর, জয়গ্রাম, ঠাকুরানীয়াবাদ, ঘুনি, বেলিয়াডাঙা, আমরুলগাছা এবং পাটলীখানপুরে প্রায় একমাস বিস্তীর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের কাছে রান্না করা খাওয়ার পৌঁছে ত্রাণশিবির চালাচ্ছিল এবং সরকারের চুরির রাজনীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনের জন্য দীক্ষিত করে তুলছিল। পাটলীখানপুর অঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ নির্মানের জন্য শয়ে শয়ে গ্রামবাসী বিক্ষোভ করে বিডিও অফিসে। বিপুল জনরোষ এবং আন্দোলনের সামনে বিডিও প্রতিটি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার পিছু ২০ হাজার টাকা প্রাথমিক পর্যায়ে ক্ষতিপূরন দিতে রাজি হয় কিন্তু পরর্বতীকালে কিছু হাতে গোনা গ্রামবাসীকে ৫ হাজার টাকা পাঠিয়ে সেটিং-এর রাজনীতি শুরু করেন। কিন্তু আখেরে লাভের লাভ কিছুই হয় না। পিপলস্ ব্রিগেডের নেতৃত্বে বিপুল গ্রামবাসী অধিকার আদায়ের দাবিতে এককাট্টা হয়ে ফের ৩০শে জুলাই বিডিও অফিস ঘেরাও করে এবং ক্ষতিপূরনের টাকা প্রাপ্তি না ঘটা পর্যন্ত ধর্নাতে যোগদান করে পিপলস্ ব্রিগেডের নেতৃত্বে। খেটে খাওয়া মেহনতি মানুষদেরকে নিয়ে এই নোংরা রাজনীতির প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে পিপলস্ ব্রিগেড বর্তমানে জনগণের চাহিদার সাযুজ্যপূর্ণ আন্দোলনের পথনির্দেশ করতে সক্ষম হয়েছে। যেখানে অন্যান্য বামদলগুলি প্রতীকী আন্দোলন এবং ওয়েবিনারের মাধ্যমেই নিজেদেরকে সীমাবদ্ধ রেখে চলেছে, সেখানে পিপলস্ ব্রিগেড খেটে খাওয়া মানুষের লড়াইকে রাস্তায় নেমে লড়ে বিকল্প পথ দেখাচ্ছে।


Comments

Popular posts from this blog

ঘটনার বিবরণ নয়, উপলব্ধি জরুরী; প্রসঙ্গ আর.জি.কর

বর্তমান সময়ে বাম ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা

আম্বেদকরের চোখে - কেন ব্রাহ্মণ্যবাদ শাকাহারী পথ গ্রহণ করল? গো ভক্ষণ নিষিদ্ধকরণের সাথে অস্পৃশ্যতার কি সম্পর্ক রয়েছে?