আন্দোলনরত সুইগির ফুড ডেলিভারি কর্মীরা

রিপোর্টঃ রূপক গায়েন 

শহরের বুকে এক নয়া ভাঁওতাবাজির পরিসর তৈরি হয়েছে। ফুড ডেলিভারি কর্মীদের সকলেই প্রতিদিনের রেস্তোরাঁ আর কাস্টোমার বা পরিষেবা উপভোক্তার মধ্যে অসংখ্য যাতায়াতের মাধ্যমে বাস্তব অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করছেন। এবং এই সহজ সত্যটুকু উপলব্ধি করছেন যে মোবাইলের বিশেষ অ্যাপটি অন করলেই ডেলিভারির জোগান দেওয়া তথাকথিত পরিষেবা ক্ষেত্রটি, বলা ভালো, কোম্পানীটি কর্মীদের যে ডেলিভারি ‘পার্টনার’ হিসেবে অভিহিত করছে, সেটাই আজকের দিনে সবচেয়ে বড় ভাঁওতা। ‘জব সিকিউরিটি’, ‘ফিক্সড স্যালারি’, ‘স্বাস্থ্য বীমা’ ইত্যাদি- আলাদা আলাদা কোম্পানীর ক্ষেত্রে কিছু সামান্য তারতম্য বাদ দিলে কিছুই মেলে না কর্মীদের। অথচ সময়ে খাবার পৌঁছানোর তাড়া এবং রাস্তায় ট্র্যাফিক পুলিশের দাদাগিরি সহ্য করার ঝক্কি পোহাতে হয় তাঁদেরই। তাছাড়া, গাড়ি  কর্মীদের, তেল কর্মীদের, এমনকি ইন্টারনেটের পয়সার জোগানও কর্মীদের নিজেদেরই করতে হয়। কিন্তু, কোম্পানীর হাজারো কারচুপির বেড়াজাল পেরিয়ে ডেলিভারি করে যেটুকু পকেটে ঢোকে তাতে পুরো মাস চালানোই দায়। মহামারীর কারণে প্রতিদিন কমতে থাকা দৈনিক ডেলিভারির জোগান মাসিক আয়তে আরও থাবা বসাচ্ছে। কিন্তু কোম্পানী কি ধুঁকছে? না, বরং কিছুদিন আগেই একটি সংবাদপত্রে প্রকাশিত হওয়া ‘সুইগি’র সি.ই.ও-র সাক্ষাৎকারে তাঁদের নতুন নতুন ভেঞ্চারের বাণী উঠে আসছে। অত্যাধিক ডেলিভারি কর্মী রেক্রুট করে তারা তাদের পরিষেবা একদিকে যেমন অক্ষুণ্ণ রাখতে চেষ্টা করছে, তেমনই অন্যদিকে শেয়ার মার্কেটে নিজেদের অ্যাসেট দেখিয়ে কোটি কোটি টাকার ফাটকা খেলছে। কিন্তু ডেলিভারি ‘পার্টনার’দের জন্য কেবল বরাদ্দ রয়েছে অ্যাপের কিলোমিটার কারচুপি, কোম্পানি কেয়ার সেন্টারের দাদাগিরি, পরিষেবা উপভোক্তার দুর্ব্যবহার... লিস্ট বেড়েই চলবে। আর এই ভাঁওতাবাজির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলেই উপহার হিসেবে জুটছে ‘ছাঁটাই’ বা ‘অ্যাপ ব্লক’।

দেশের এই দুর্দিনেও খেটে খাওয়া কর্মচারীদের প্রতি করপোরেট মালিকদের চোখ রাঙানো ঘটনা অব্যাহত। জনপ্রিয় ফুড ডেলিভারি সংস্থা *সুইগি* তাদের কর্মচারীদের প্রতি দায়িত্বজ্ঞানহীন মনোভাব উঠে আসছে। এই ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতেও যে ডেলিভারি বয়রা আমার, আপনার বাড়িতে ফুড ডেলিভারি করে চলেছে তাদের জবসিকিউরিটি, স্বাহ্য বিমা তো নেই-ই, ন্যূনতম যে পারিশ্রমিক তারা পেতেন তাতেও কাটছাঁট করা শুরু করেছে সংশ্লিষ্ট সংস্থা। প্রায় ৩ কিলোমিটার ডেলিভারির জন্য মাত্র ১৫ টাকা মজুরি পাচ্ছেন তারা, লকডাউনকালীন সময়ে কমতে থাকা দৈনিক ডেলিভারি মাসিক আয়ে আরও থাবা বসাচ্ছে, ফলত ডেলিভারি করে সংসার চালানো কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়ছে তাদের পক্ষে, প্রতিবাদ করলে জুটছে ছাঁটাই-এর হুমকিও, এরই বিরুদ্ধে সাউথ দিল্লিতে তারা একত্রিত হয়ে আন্দোলনের পথে নেমেছেন ২০শে অগাস্ট থেকে। হায়দ্রাবাদ ও চেন্নাইতেও আন্দোলন শুরু হয়েছে। অন্যদিকে উপভোক্তারা জানাচ্ছেন খাদ্যমূল্যের প্রায় তিরিশ শতাংশ ডেলিভারি চার্জ হিসেবে দিতে হচ্ছে তাদের। বিগত চার মাসে প্রায় দু কোটি মানুষ ভারতে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। ধর্মের নামে দেশকে মাতোয়ারা করে দেওয়া কেন্দ্রীয় সরকারের প্রচ্ছন্ন মদতে করপোরেট সংস্থাগুলোর দায়িত্বজ্ঞানহীন সিদ্ধান্তে কর্মসংস্থানের এক কঙ্কালসার চিত্র ফুটে উঠছে।

Comments

Popular posts from this blog

ফ্যাসিবাদের উত্থানের যুগে সুবিধাবাদের রমরমা

কমিউনিস্ট পার্টি ও তেলেঙ্গানা আন্দোলনের মহিলা কর্মীরা : কমঃ শর্মিষ্ঠা চৌধুরীর কলমে

কেন্দ্র সরকারের ‘জাতীয় শিক্ষা নীতি’ – একটি শিক্ষা বিরোধী ইস্তেহার