এক নজরে কৃষি বিল...

রিপোর্টঃ সায়ন 

দেশের বেকারত্বকে নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার চিন্তিত না হলেও, খেটে খাওয়া গরীব মানুষের উপর কিভাবে শোষণ প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখা যায় সে সম্পর্কে তারা যথেষ্ট ওয়াকিবহাল এবং চিন্তিত। দেশের প্রতিটা মানুষ করোনার মরু ঝড়কে কাটিয়ে ওঠার যখন প্রবল চেষ্টা করছে, বিশেষত খেটে খাওয়া মানুষেরা, সে সময়তেই তিনটি কৃষি বিল পাশ করিয়ে কর্পোরেটদের হাত শক্ত করছে মোদী সরকার। এই কৃষি বিলগুলিকে অর্থমন্ত্রী সীতারমন যতই কৃষকদের স্বার্থে গঠিত বলে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করুক, সারা দেশে কৃষকদের ব্যাপক আন্দোলন বুঝিয়ে দিচ্ছে যে মোদী সরকার মিথ্যাচার ছাড়া দেশের মানুষকে আর কিছুই দিচ্ছে না।

রাজনৈতিক চাপানউতোর এবং কথা চালাচালির মধ্যেই হরিয়ানা, পাঞ্জাব সহ বিভিন্ন রাজ্যে এ বিলের প্রতিবাদে কৃষকরা রাস্তায় নেমেছ। করোনা সংক্রমনের শঙ্কা যে ক্ষুধার জ্বালা নিরাময়ের কাছে এভাবে পরাজিত হবে এবং মানুষ আন্দোলন এবং দাবী আদায়ের কারনে রাস্তায় নেমে আসবে সেটা হয়তো মোদী সরকার আন্দাজ করতে পারেনি।

একনজরে দেখে নেওয়া যাক প্রধান দুটি অধ্যাদেশ যা বর্তমানে আইনে পরিবর্তিত হল:


  • অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আইনের সংশোধন অনুযায়ী শস্য, ডাল, ভোজ্য তেল, চিনির মত সমস্ত অত্যাবশকীয় পণ্যকে বিনিয়ন্ত্রিত করা হয়েছে। এর ফলে এগুলি এখন যত খুশি হিমঘরে জমা করা যাবে এবং অন্যত্র পাঠানো যাবে। কেবলমাত্র প্রাকৃতিক বির্পযয়ের পরিস্হিতিতে সরকার একে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। এর ফলে ফলন বাড়লেও বাজারে শাক-সবজির দাম ঊর্ধ্বগামী থাকবে এবং জোগানও হবে হিমঘর মালিকদের ফাটকা বাজারে বিনিয়োগ অনুযায়ী।


  • কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যের ব্যবসা বাণিজ্য অধ্যাদেশ অনুযায়ী, মান্ডির বাইরে রাজ্যের অন্যত্র কৃষি পণ্য নিয়ে যাওয়া যাবে। এছাড়া এই অধ্যাদেশ অনুযায়ী তালিকাভুক্ত কৃষকরা বাণিজ্যিক এলাকায় ডিজিটাল মাধ্যমেও পণ্য বিক্রি করতে পারবে। বাণিজ্যিক এলাকার সংজ্ঞায় অধ্যাদেশে বলা হয়েছে যে কোনো উৎপাদন স্হল, শস্য সংগ্রহ ও মজুত করার জায়গা যার মধ্যে থাকবে খামারে ঢোকার দরজা, কারখানা চত্বর, মজুতঘর, কোল্ড স্টোরেজ অথবা অন্য কোনো জায়গা যেখান থেকে কৃষকদের উৎপাদিত পণ্য কেনাবেচা করা যায়। কৃষিপণ্যের বাজার এলাকার মান্ডি এবং বেসরকারী বাজারগুলিকে এই তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে ।

মোদী সরকার অধ্যাদেশগুলির মাধ্যমে বন্যা খরার মতো প্রাকৃতিক বির্পযয়ে চাষিদের সাহায্য করার থেকে প্রায় স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধুইয়ে নিয়েছে। অত্যাবশকীয় পণ্যের বিক্রির আইনের পরিবর্তনের মাধ্যমে কর্পোরেট সংস্হাগুলির হাত শক্ত করা হয়েছে। কর্পোরেট সংস্হাগুলি যাতে কৃষকদের ওপর শোষণ প্রক্রিয়াকে জারি রেখে কালোবাজারিতে মনোনিবেশ করে তার মাত্রা বাড়াতে পারে সেদিকে কেন্দ্রীয় সরকার পূর্ণাঙ্গ নজর রেখেছে। জনসাধারনের চোখে সরষে ফুলের মতো বেঁধে দেওয়া হয়েছে কৃষকদের যে কোনো স্হানে পণ্য বিক্রির সুযোগ, যা অধ্যাদেশের পূর্ববর্তী সময়তেও বলবৎ ছিল এবং জনস্বার্থে সরকারী হস্তক্ষেপের সংস্থানকে বাতিল করে দেশ বিক্রীর পথে আরো একধাপ এগিয়েছে সীতারামনরা। মূলত সমগ্র অধ্যাদেশগুলির অধ্যয়ন করে যেটি পরিলক্ষিত হচ্ছে, কৃষিপণ্যের বাজার কমিটির একচেটিয়া ক্ষমতা লোপ করা হয়েছে কিন্তু ডিজিটাল মাধ্যমের মালিক এবং বেসরকারি সংস্থার আধিপত্য বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ ছোট হাঙরদের বদলে বড় হাঙরদের হাতে কৃষকদের মেহনতের ফসলের অর্থনৈতিক ভাগ্য নির্ধারণের ব্যবস্থা করেছে মোদী সরকার। রাজ্য সরকারগুলির ক্রাইসিসের সময়ের হস্তক্ষেপের ক্ষমতাও হ্রাস করা হয়েছে। অন্যদিকে, সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের ক্ষুধার জ্বালাকে নিয়ে এহেন খেলা করাকে যে দেশের মানুষ প্রশ্রয় দেবে না তা সারা দেশে আন্দোলনের মাধ্যমেই বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

তিনটি কৃষি বিল নিয়ে বিষদে আলোচনা শীঘ্রই প্রকাশিত হবে। 

 


 

Comments

Popular posts from this blog

ফ্যাসিবাদের উত্থানের যুগে সুবিধাবাদের রমরমা

কমিউনিস্ট পার্টি ও তেলেঙ্গানা আন্দোলনের মহিলা কর্মীরা : কমঃ শর্মিষ্ঠা চৌধুরীর কলমে

কেন্দ্র সরকারের ‘জাতীয় শিক্ষা নীতি’ – একটি শিক্ষা বিরোধী ইস্তেহার