অশোকনগরে ONGC-র জমি অধিগ্রহণের প্রেক্ষিতে ক্ষতিপূরণের দাবীতে আন্দোলনরত কৃষক কল্যাণ সমিতি
রিপোর্টঃ রূপক গায়েন
পত্রিকার তরফে তথ্য সংগ্রহেঃ কিথ রোদ্দুর
বেশ কয়েকদিন যাবৎ উত্তর চব্বিশ পরগনার অশোকনগরের নাম খবরের শিরোনামে; ওখানে ওএনজিসি-র খনিজ সম্পদ (গ্যাস ও তেল) উত্তোলন এবং সেটিকে ভিত্তি করে বিভিন্ন রাজনৈতিক মহলের ভূমিকাকে কেন্দ্র করে। প্রসঙ্গত, বলে রাখা ভালো, অশোকনগর মূলত একটি উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসন এলাকা। জীবিকার টানে তারা ঊর্বর জমিতে খেশারী, পালংশাক, মটর, ভেন্ডি, ধনেপাতা, সরষে ইত্যাদি চাষ করে। স্বাধীনতার পর পূর্ব পাকিস্তান থেকে উদ্বাস্তু মানুষেরা হাবড়া অঞ্চলে এলে সরকার থাকার জন্য জমির পাট্টা দেয় এবং পরবর্তীতে পরিবার পিছু ১-২ বিঘা জমি চাষের জন্য ‘অনুমতি দখল’-এর অধিকার দেয়। জমির স্ট্যাম্প ডিউটি সমেত সরকারী কাগজপত্র থাকলেও বিগত বন্যায় অনেকের তা নষ্ট হয়ে গেছে। কিন্তু অনেক কৃষকদের কাছে সেই সরকারী প্রদানপত্র এখনও রয়েছে।
ONGC-র ঘাঁটি
বক্তব্যে তপন দাস, আন্দোলনকারী, কৃষক কল্যাণ সমিতি
২০১৮ সালে বিদ্যাধরী নদীর অববাহিকার নিকট মাটির নীচে গ্যাস ও তেল পাওয়া যায়। কেন্দ্রীয় সংস্থা ওএনজিসি ইতিমধ্যে তাদের পরীক্ষামূলক প্রকল্পের স্বার্থে ১১-১২ বিঘা জমি একপ্রকার গা জোয়ারি করেই নিকটস্থ শ্রমলক্ষ্মী কলোনীতে বসবাসকারী কৃষকদের থেকে নিয়ে নেয়। পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান এই অঞ্চলটিকে বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক সংস্থা হিসেবে চিহ্নিত করলে আরও বড় আকারে অর্থাৎ প্রায় ৩০০ বিঘা জমি অধিগ্রহণের পরিকল্পনা করে স্থানীয় তৃণমূল শাসিত প্রশাসন এবং ওএনজিসি-র কর্তারা। স্থানীয় কৃষক এনামুল হক আমাদের বলেন, ‘বর্তমান সাইট থেকে তিন কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যেকার সমস্ত জমি নিয়ে নেওয়ার হুমকি দিয়েছে কোম্পানি’। উল্লেখ্য, এই অধিগ্রহণ বাস্তবায়িত হলে শ্রমলক্ষ্মী কলোনীর বাসিন্দাদেরও উচ্ছেদ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলত, উপায়ন্তর না দেখে এই প্রকল্প সংলগ্ন এলাকার কৃষকরা নিজেদের প্রয়োজনের তাগিদেই ‘কৃষক কল্যাণ সমিতি’ নামে একটি সংগঠন তৈরী করেছে। এই প্রকল্প প্রতিদিন ১ লাখ কিউবিক টন তেল ও গ্যাস উভয় উত্তোলনের ক্ষমতা রাখে তাই তারা এই প্রকল্পকে সাধুবাদ জানিয়েই, নিজেদের চাষযোগ্য জমি ছেড়ে দেওয়ার যে দুটি শর্ত রেখেছে তা হলঃ (১) চাষযোগ্য জমির যথাযথ মূল্য তাদেরকে দিতে হবে, (২) তাদের পরিবারের একজনকে চাকরি দিতে হবে।
সাথে রয়েছে রাহুল মন্ডল
কৃষকদের সাথে আলোচনা না করেই ওএনজিসি তিন ফসলী জমি দখল করলে কৃষকরা প্রতিবাদ করে। কোম্পানি ঝামেলা এড়াতে তাদের পাঠায় অশোকনগর কল্যাণগড় পৌরসভার তৃণমূলের চেয়ারম্যান প্রবোধ সরকারের কাছে। তিনি বারংবার কৃষকদের দাবী এড়িয়ে যেতে থাকলে স্থানীয় ডিএম-এর দ্বারস্থ হন কৃষকরা। ডিএম অন্তরা আচার্য অধিগৃহীত অঞ্চল সরকারের খাস জমি হিসেবে চিহ্নিত করে কৃষকদের সাথে দুর্ব্যবহার করেন। বর্তমানে কৃষকরা এই জুয়াচুরির নিষ্পত্তির জন্য আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে।
তপন দাসের তিন ফসলী জমি
স্থানীয় সিপিআই(এম) নেতৃত্ব কৃষকদের ক্ষতিপূরণের দাবী করলেও “অশোকনগরকে সিঙ্গুর হতে দেব না’’ স্লোগান দিয়েছে! প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ২০০৮ সালে তৎকালীন সিপিআই(এম)-এর বিধায়ক সত্যসেবী কর ওই এলাকায় বিনোদন পার্ক ও পিকনিক স্পট করার নামে জমি দখলের চেষ্টা করলে স্থানীয় কৃষকরা তীব্র আন্দোলনের মাধ্যমে সেই প্রচেষ্টা বানচাল করে দেয়।
জীবন প্রসান সিকদারের সরষে ক্ষেত; কিছুটা অংশ ক্ষতিপূরণ ছাড়াই ONGC-র দ্বারা অধিগৃহীত
ওএনজিসি-র মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রত্যক্ষ ও সংস্থাভিত্তিক মালিকানার ভাগ প্রায় ৮০%! ফলে বিজেপি সরকারের মনোভাব এখানেই স্পষ্ট। রাজ্য বিজেপিও এবিষয়ে টুঁ শব্দটিও না করে নিজেদের কৃষক বিরোধী অবস্থান ফুটিয়ে তুলেছে।
আন্দোলনই যে কৃষকদের অধিকার অর্জনের একমাত্র পথ তা বলার অপেক্ষা রাখেনা।
আলোচনায় তপন দাস, জীবনপ্রসাদ সিকদার, দেবু কর্মকার, কিথ রোদ্দুর, অনির্বাণ দাস
Comments
Post a Comment