প্রমাণ লোপাটের পুনরাবৃত্তি

 মঞ্জুশ্রী সামন্ত

আরেকবার পুনরাবৃত্তি হল হাথরাসের ঘটনার, রেশ কাটতে না কাটতেই।

যদি হাথরাসের কথা ভুলে গিয়ে থাকেন, তাহলে আরেকবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখানো যাক।

১৪ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ উত্তরপ্রদেশের হাথরাসে একটি দলিত মেয়ে ধর্ষিত হয়েছিল চার জন উচ্চবর্ণের পুরুষ দ্বারা। মেরুদণ্ড ভেঙ্গেচুরে, অপরিসীম ঘৃণায় জিভটাও শরীর থেকে খুলে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। গলায় ফাঁস লাগিয়ে হত্যার চেষ্টাও চলেছিল। এরপরে যা হয় আর কি! পুলিশি ব্যবস্থা প্রথমে গুরুত্ব প্রকাশ করার মতো মনেই করলোনা। উল্টে এক্ষেত্রে দেখা গেল, ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেটই সদ্য ধর্ষণ হওয়া একটি পরিবারের পাশে না থেকে তাদের বাড়ি এসেই মেয়েটির বাবাকে হুমকি দিলো, "মিডিয়া থাকবেনা কিছুদিন পর, ভেবে নিন আপনি রিপোর্ট করা প্রস্তাব বদলাবেন কিনা?"

উল্টে মানুষকে দেখিয়ে দেওয়া হল যে কিভাবে তাদের সামান্য ফোনটুকুও ছিনিয়ে নেওয়া যায়, বাইরের কারো সাথে যাতে যোগাযোগটুকু সম্ভব না হয়। ধর্ষিতার পরিবারকেই ঘর বন্দী করে রাখা হল। গ্রাম ঘেরাও করা হল কড়া প্রশাসনিক ব্যবস্থার দ্বারা। সাংবাদিকদের প্রবেশ পথে বাধার সৃষ্টি করা হল, ভয় দেখানো হল। দেখা গেল কিভাবে উচ্চ বর্ণের লোকেরা রামরাজ্যের সুরক্ষিত গদিতে বসে হুমকি দিচ্ছে। দেখা গেল, ধর্ষকের সমর্থনেও মিছিল! 

আর সবশেষে প্রমাণ ধ্বংস করতে মেয়েটির মৃতদেহ'কে পরিবারের কাছে না নিয়ে গিয়ে, পুলিশের সুরক্ষায় রাতারাতি গ্যাসোলিন ঢেলে সৎকার (!) করে ফেলা হল ।


ঠিক একইভাবে, ২১শে জানুয়ারী, ২০২১-এ বিহারের পূর্ব চম্পারণ জেলায় একটি বারো বছরের মেয়েকে বাড়িতে একা থাকা অবস্থায় চারজন পুরুষ মিলে ধর্ষণ করল। হ্যাঁ ঠিকই শুনেছেন, এই সেই চম্পারণ যা আপনি আমি ইতিহাস বইতে পড়েছি, ১৯১৭ সালের চম্পারণ সত্যাগ্রহ আন্দোলন প্রসঙ্গে। একটি ভিডিও কিছুদিন আগেই ভাইরাল হয়, যেখানে দেখা যায় ধর্ষকরাই বারো বছরের মেয়েটির মৃতদেহ সৎকার করছে, আর মেয়েটির মায়ের কান্নার শব্দ ভেসে আসছে। তার পরেই আরেকটি অডিও ক্লিপ পাওয়া যায়,যেখানে শোনা যায় পুলিশ স্টেশনের এসএইচও সঞ্জীব রঞ্জন ফোনেতে দোষীদেরই বলছেন, মেয়েটির দেহ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পুড়িয়ে ফেলতে যাতে কোনো প্রমাণ না বেঁচে থাকে, অন্তত মেয়েটির পরিবার পুলিশ স্টেশনে পৌঁছোবার পূর্বেই। ধর্ষকরাই মেয়েটির পরিবারকে হুমকি দেয়, তারা যেন কোনো প্রকারেই পুলিশ স্টেশনে না যায়। এক্ষেত্রেও, মেয়েটির মৃতদেহ রাতের অন্ধকারে সৎকার করা হয় প্রমাণ ধ্বংস করতে। এই মৃতদেহ পোড়ানোর কাজে সাতজন ব্যাক্তিকে বুক করাও হয়েছিল বলে জানা গিয়েছে। একই ভাবে, ধর্ষিতার পরিবার পুলিশ স্টেশনে পৌঁছালে প্রথমে তাদের এফআইআর নেওয়া হয়নি।

দুই ক্ষেত্রেই প্রমাণ লোপাট করার চেষ্টায় ধর্ষিতার মৃতদেহ, পরিবারের অসম্মতিতে সৎকার করা হয়েছে জোরপূর্বক। দুটি রাজ্যই বিজেপি শাসিত। তাহলে কি এই ভীতু বিজেপি প্রশাসন ধর্ষকদের সমর্থক? নিশ্চই তাই, যারা ধর্ষকের পক্ষে মিছিল বার করে, তাদের আর কিই বা বলা যায়!

বিজেপি শাসিত রাজ্যে মেয়েদের মেরুদন্ড ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় বাড়ির বাইরে পা দিলে। বাড়ির বাইরে পা না দিয়ে থাকলে, এরা বাড়ির ভিতরে এসে পৌরুষত্ব প্রমাণ করে আগুনে পুড়িয়ে দেয় ধর্ষিতার দেহ, প্রমাণ মুছে ফেলতে। এই বারংবার প্রমাণ লোপাট করতে করতে বিজেপি প্রশাসন নিজেরাই প্রমাণ দিচ্ছে নিজেদের ধর্ষক রূপী চরিত্র। এর পরেও যারা ভাবছেন, বাংলায় বিজেপি আসা উচিত, তারাও কি তাহলে ধর্ষকের পক্ষে মিছিলে সামিল হবেন? 

Picture Courtesy: timesnownews.com

Comments

Popular posts from this blog

ফ্যাসিবাদের উত্থানের যুগে সুবিধাবাদের রমরমা

কমিউনিস্ট পার্টি ও তেলেঙ্গানা আন্দোলনের মহিলা কর্মীরা : কমঃ শর্মিষ্ঠা চৌধুরীর কলমে

কেন্দ্র সরকারের ‘জাতীয় শিক্ষা নীতি’ – একটি শিক্ষা বিরোধী ইস্তেহার