আন্দামানে সেজ আইন জারী করে আদিবাসী উচ্ছেদের পথে কেন্দ্র সরকার

সায়ন নন্দী

সমগ্র বিশ্বের প্রতিটি স্হান যখন অর্থনৈতিকভাবে ভাটার টানে বইছে, ঠিক সেই সময়ে ভারতবর্ষে মোদী সরকার আবার একটি নতুন চাল চালছে লোকচক্ষুর আড়ালে। কেন্দ্রীয় সরকারের একটি পরিকল্পনা "সাসটেনবল লিটল আন্দামান আইল্যান্ড ভিশন ডকুমেন্ট" দ্বারা নীতি আয়োগ ৬৮০ কিমি আন্দামানের একটি দ্বীপকে একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (স্পেশাল ইকোনমিক জোন বা সেজ) হিসাবে গণ্য করতে চাইছে। আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের একটি দ্বীপকে কার্যত বিক্রী করে দেওয়া হচ্ছে। তাও আবার সেই চীনের অর্থনৈতিক লাইন অবলম্বন করে, যার বিরুদ্ধে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা এ দেশের লেগেই রয়েছে। বলা হচ্ছে এর মাধ্যমে আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের বিকাশ ঘটবে! কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা অনুযায়ী একটি নতুন গ্রিনফিল্ড উপকূলীয় শহর গড়ে তোলা হবে, যা একটি মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল হিসেবে বিকশিত হবে এবং সিঙ্গাপুর ও হংকংয়ের সাথে প্রতিযোগীতা করবে। সমগ্র দ্বীপটিকে তিনটি অঞ্চলে ভাগ করা হবে। প্রথমে ১০২ বর্গ কিমি মহানগর হবে। এটিতে পর্যটন স্থল এবং হাসপাতাল গড়ে তোলা হবে। দ্বিতীয় ৮৫ কিমি একটি আবাসিক জেলা যাকে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে গণ্য করা হবে এবং তৃতীয় ৫২ কিমি প্রাকৃতিক অঞ্চল যা একটি থেরাপিউটিক জেলা হিসেবে গড়ে তোলা হবে। 

কেন্দ্রীয় তথ্যাদি অনুযায়ী একটি বিশ্বব্যাপী বিমানবন্দর তৈরী করা হবে। তাছাড়াও ১০০ কিমি গ্রীনফিল্ড রিং মহাসড়কটির পূর্ব থেকে পশ্চিমে আরো বিস্তৃত করা হবে। সমগ্র কর্মকান্ডে প্রধানভাবে যেটি ব্যাহত হবে তা হল সেখানকার আদিবাসী এবং বিভিন্ন উপজাতির জনজীবন। তাদের রোজকার জীবনধারনের নিয়ম এবং অভ্যাসের ক্ষুন্নতা ঘটবে। সেখানকার প্রচুর পরিমানে থাকা প্রাকৃতিক সম্পদ লুঠ হবে এবং কালোবাজারী ঘটতে থাকবে। সুপ্রিম কোর্ট থেকে সমগ্র কর্মকান্ডের ওপর কিছু বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। উপজাতি এবং আদিবাসীদের জীবনধারনের বিপত্তির কারনগুলি কোর্টের সামনে এসেছে। এর মোকাবিলায় কেন্দ্র সরকার বলছে যে আদিবাসীরা যদি বাধা হয়ে দাঁড়ায় তাহলে তাদেরকে অন্য স্থানে স্থানান্তরিত করার ব্যবস্থা তারা হবে। সেজ আইনের ইতিহাস বলে যে কর্মসংস্থানের পরিপন্থী পুঁজি নিবিড় শিল্পের বাড়বাড়ন্ত, শ্রমিকদের অধিকার বিনষ্ট করা, নির্বিচারে প্রাকৃতিক সম্পদ লুঠ, অনুমতি এবং ক্ষতিপূরণ ছাড়াই ভূমিপুত্রদের উচ্ছেদই 'স্পেশাল ইকোনমিক জোন"-এর বৈশিষ্ট্য। ফলে লাভ যে একপেশেভাবে মুনাফাখোর কর্পোরেট গোষ্ঠীর, দেশের বেকার যুবকদের মুখে শুধুই যে লাড্ডু, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। মাঝখান থেকে ভূমিহারা হবে কেবল আদিবাসীরা। 

উল্লেখ্য, বর্তমানে 'সেজ'কে নিয়ে সিপিআই(এম)-এর যে স্ববিরোধী বক্তব্য তা জনমানসে হাস্যকর হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ২০০৫ সালে বামফ্রন্ট সরকারের দুটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা ছিল সিঙুড় এবং নন্দীগ্রাম। সে সময় সিপিআই(এম) নন্দীগ্রামে সেজ আইন জারী করে। বাকিটা ইতিহাস। কিন্তু নিজেদের অর্থনৈতিক লাইন থেকে একবিন্দু না সরে আজকে তাদের সেজ বিরোধিতা তাই কুম্ভীরাশ্রু বলেই মনে হচ্ছে। 

Comments

Popular posts from this blog

ফ্যাসিবাদের উত্থানের যুগে সুবিধাবাদের রমরমা

কমিউনিস্ট পার্টি ও তেলেঙ্গানা আন্দোলনের মহিলা কর্মীরা : কমঃ শর্মিষ্ঠা চৌধুরীর কলমে

কেন্দ্র সরকারের ‘জাতীয় শিক্ষা নীতি’ – একটি শিক্ষা বিরোধী ইস্তেহার