গেরুয়া ব্রিগেডের জনবিরোধী বার্তা

০৭.০৩.২০২১: বিজেপির রাজনীতি সম্পর্কে এ রাজ্যের মানুষ ওয়াকিবহাল, তাই আজকের ব্রিগেডের কয়েকটি প্রধান বৈশিষ্ট্যতেই কেবল আলোকপাত করা হচ্ছেঃ 

১. প্রচারে অতিরিক্ত তারকা নির্ভরশীলতাঃ

সকাল থেকেই প্রচারের মুখ ছিল টলি পাড়ার তারকারা। বাংলার রাজনীতিতে তারকাদের এনে মমতা ব্যানার্জী প্রথম মানুষের দাবিদাওয়াকে গ্ল্যামারের আলোয় ঢেকে দিতে চেয়েছিল; বিজেপি সেই ধারাকেই এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। চলছে তৃণমূলের অরূপ বিশ্বাসের মাফিয়ারাজের বিরোধিতার নামে তার অনুগ্রহ বঞ্চিতদের গেরুয়া ছায়ায় গিয়ে আখের গোছানোর মিছিল। আজ সকাল থেকেই অঞ্জনা বসু থেকে রিমঝিম মিত্র, যশ দাশগুপ্ত থেকে অনিন্দ্য ব্যানার্জী সকলেই ‘পরিবর্তনের পরিবর্তন চাই’ স্লোগান দিয়ে নিজেদের পেশার স্থায়িত্ব রক্ষা করতে ব্যস্ত; বলা ভালো, আগামীদিনে ইন্ডাস্ট্রিতে ভালো কাজের সুযোগ পেতে আগে থেকে টিকিট কেটে রাখার চেষ্টা আর কি! অঞ্জনা বসু যে কতবার বিক্ষুব্ধ হয়ে দল ছেড়েছে, আবার ফিরে এসছে তার হিসেব কষা কঠিন। রিমঝিম নিজের প্রার্থী হওয়ার আকাঙ্ক্ষা ঢেকে রাখেনি। যশ বিজেপির সাথে নিজের আদর্শের মিলের কথা বললেও সেই আদর্শের স্বরূপ কিরকম তা সে কখনই খুলে বলতে অপারগ; বিজেপির সাথে মিলের কারণে তাই ধরে নিতে হয় যে নারী নির্যাতন, ধর্মীয় সংকীর্ণতা, কর্পোরেট তোষণই তার আদর্শের মূল ভিত্তি। অন্যদিকে, অনিন্দ্য ব্যানার্জী নিজের ‘চারু আর কারুর মিলন’ বক্তব্যকে জাস্টিফাই করতে যা দাঁড় করালো তার অন্তঃসার হল ‘কৃষি আমাদের ভিত্তি, শিল্প আমাদের ভবিষ্যৎ’!!!

ব্রিগেডের মূল মঞ্চে ছিল রুদ্রাক্ষশোভিতা রূপা গাঙ্গুলি যে প্রাক্তন বিজেপির মহিলা মোর্চার সভানেত্রী জুহী চৌধুরী ও কৈলাস বিজয়বর্গীয়ের সাথে নারী ও শিশু পাচার কান্ডে নিজের নাম জড়িয়ে যাওয়ার পর কিছুটা ব্যাকফুটে চলে গিয়েছিল, যদিও রাজ্যের ছাত্রছাত্রীদের বিরুদ্ধে পার্টি মিছিলের নেতৃত্ব দিয়ে আর রাজ্য সভায় প্রান্তিক লিঙ্গের মানুষের বিরুদ্ধে কুরুচিকর মন্তব্য করে ‘ট্রান্সজেন্ডার বিল’-এর সপক্ষে বক্তব্য রেখে নিজের দলীয় আনুগত্যের পরিচয় সে নিরন্তর দিয়ে চলেছে।   

ছিল বাবুল সুপ্রিয়। ভিড় কন্ট্রোল করার নাটক করা ছাড়া আর বিশেষ ভাষণবাজি সে আজ করেনি। আজকের সভায় বহু বক্তাই তৃণমূলের অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কয়লা খনি অঞ্চলের তোলাবাজির বিরুদ্ধে সরব হলেও নিজের দলের এই ছুপা রুস্তমের আসানসোলের কয়লা খনি অঞ্চলে কান্ডকারখানা সম্পর্কে নীরব থেকেছে।

আর ছিল লকেট চ্যাটার্জী ও মিঠুন চক্রবর্তী।

২. ব্রিগেডের আলিশান মঞ্চের কিছু বৈশিষ্ট্যঃ

দুটো মঞ্চ তৈরি হয়েছিল। একটা ছোট আর একটা বড়; বলা ভালো ভিআইপিদের গুরুত্ব বিশেষে ঠাঁই মিলেছে দুটির মধ্যে একটিতে। মঞ্চে ছিল বড় বড় কুলার আর উপরে ছিল বিরাট আচ্ছাদন অর্থাৎ সাধারণ সমর্থকরা দুপুরের প্রখর রোদে এবং প্রচন্ড গরমে দাঁড়িয়ে থাকলেও নেতা নেত্রীরা বসল শীততাপ নিয়ন্ত্রিত মঞ্চে। বাংলায় ব্রিগেডের মিটিং-এর ইতিহাসে এ এক নতুন সংযোজন।

৩. মধ্যমণি মিঠুনঃ   

রাজ্যের সাধারণ মানুষের মিঠুন চক্রবর্তীর প্রতি ভাবাবেগকে পুরোদস্তুর কাজে লাগিয়েছে বিজেপি। প্রত্যেক বক্তা, এমনকি মোদীও মিঠুনকে নিজের বক্তব্যে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। মিঠুনও মঞ্চে ভাষণ দিতে উঠে নিজেকে গরীবের মাসিহা হিসেবে তুলে ধরতে ছাড়েনি। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ, রাণী রাসমণি, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মত মনীষীদের কথা তুলে ধরলেও মিঠুন বোধহয় ভুলে গেছে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন তার স্বরাজিস্ট পার্টিতে হিন্দু ও মুসলমানদের সমানুপাতে প্রার্থীপদ ভাগ করতেন, পণ্ডিত বিদ্যাসাগর বেদান্ত দর্শনকে ভ্রান্ত দর্শন বলে চিহ্নিত করেছিলেন এবং লোকমাতা রাসমণি জেলেদের উপর ব্রিটিশদের জল কর চাপানোর বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন। মুসলমান বিদ্বেষী, বেদান্তবাদী এবং ব্রিটিশ তোষণকারী হিন্দু মহাসভার বর্তমান উত্তরসূরি বিজেপির রাজনীতির সাথে এই মনীষীদের কীর্তি কতটা সাযুজ্যপূর্ণ তা খুঁজে বের করা কঠিন। নিখাদ কিছু হিন্দু মনীষীদের নাম ব্যবহার করে হাততালি কুড়োনোই বোধহয় বাস্তবের ফাটাকেষ্টর উদ্দেশ্য ছিল। বিজেপির গোবলয়ের সংস্কৃতির নির্ভরশীলতা এবং তৃণমূলের একাংশের হিন্দীভাষীদের প্রতি বিদ্বেষের দরুণ তাদের বিরুদ্ধে ‘বহিরাগত’-এর তকমা ঘোচাতে মিঠুন বলে বসল ‘যারা এই মাটিতে জন্মেছে, সবাই বাঙালী’ কিন্তু সমস্যা এখানেই যে ডিফেন্সে খেলতে গিয়ে সে বিজেপি-র এনআরসি নীতির বিরুদ্ধেই বক্তব্য রেখে বসল। হায় রে, নকশাল-সুভাষ চক্রবর্তী-তৃণমূল হয়ে বিজেপিতে আসতে গিয়ে ঘেঁটে ঘ করে ফেলেছে বোধহয়। নিজের বক্তব্যের শেষে ‘দাদা কখনও মুখ লুকিয়ে থাকেনি’ বলে এই স্বঘোষিত জাত গোখরো বুঝিয়ে দিল যে তার বিষের তেজ ঝিমিয়ে গেছে কারণ এটা সকলেরই জানা যে সারদা কান্ডে নাম জড়াতেই মিঠুন রাজনৈতিক সন্ন্যাস নিয়ে উটি পালিয়েছিল এবং ইডির তদন্ত থেকে বাঁচতেই এই প্রাক্তন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ বর্তমানে মোহন ভাগবতের সাথে দেখা করে এসেছে...

৪. বক্তাদের আক্রমণের অভিমুখঃ  

বক্তারা মূলত তৃণমূলকেই আক্রমণ করে মমতা-অভিষেককেই নিজের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে তুলে ধরেছে। সকলে মূল বক্তব্যের মোট ১০% সময়ে খরচ করেছে বাম-কংগ্রেস-সিদ্দিকীর সংযুক্ত মোর্চার উপর। উল্লেখযোগ্যভাবে হিন্দুত্ব টিকে থেকেছে বক্তাদের ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনিতে (মোদী এই স্লোগান একবারও ব্যবহার করেনি) আর মূল বক্তব্যের ১০% সময়ে। বাকি ৯০% সময়ই তারা ব্যয় করেছে অর্থনৈতিক প্রশ্নে। ফলে, বামেরা বিজেপি বিরোধিতার ক্ষেত্রে ধর্মীয় সংকীর্ণতার বিরুদ্ধেই নিজেদের আন্দোলনকে কেন্দ্রীভূত করলেও বিজেপি ক্ষমতায় এলে সাধারণ মানুষের দাবিদাওয়ার বাস্তবায়নের গল্প ফেঁদে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে ব্যস্ত।

৫. উগ্র হিন্দুত্বের কথাঃ  

সায়ন্তন বসু বলেছে যে মমতা বহিরাগত রোহিঙ্গাদের এ রাজ্যের ভোটার লিস্টে স্থান পাইয়ে দিয়ে পশ্চিমবঙ্গকে পাকিস্তান বানাতে চাইছে। বাংলাদেশী মুসলমান অনুপ্রবেশকারীদের প্রসঙ্গ টেনে সে পক্ষান্তরে ক্ষমতায় এলে বিজেপির এনআরসি প্রণয়ন করার উদ্দেশ্যের কথা তুলে ধরেছে।

অর্জুন সিং-ও বাংলার দ্বিতীয় পাকিস্তান হয়ে ওঠার কথা বলে নিজের সংখ্যালঘু বিদ্বেষ ফুটিয়ে তুলেছে।

শমীক ভট্টাচার্য্য বাম ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে জঙ্গি জামাতিদের তোল্লাই দেওয়ার কথা বলে নিজের মুসলমান বিদ্বেষ ফুটিয়ে তুলেছে।

শুভেন্দু অধিকারী তৃণমূল কিংবা বামেদেরকে ক্ষমতায় ফেরালে বাংলা কাশ্মীর হয়ে যাওয়ার কথা বলে কাশ্মীরি পন্ডিতদের বিতাড়নের কাহিনী তুলে ধরলেও ওর বোধহয় জানা নেই (কিংবা সব জেনেও মিথ্যাচার করছে) যে কাশ্মীরের মুসলমানরা কাশ্মীরি পন্ডিতদের বিতাড়ন করেননি, বরং বিজেপি প্রেরিত জম্মু ও কাশ্মীরের রাজ্যপাল জগমোহনের প্ররোচনায় কাশ্মীরি পণ্ডিতরা আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে উপত্যকা ত্যাগ করেছিলেন। শুভেন্দুর মুখে কুসংস্কারের আখড়া এবং নারী ক্ষমতায়নের পরিপন্থী অনুকূল ঠাকুরের গুণকীর্তনও শোনা যায়।


মোদীর মুখে একবার ‘ঘুষপেটিয়া’ প্রসঙ্গ উঠে এসেছে।

৬. শ্যামা পোকার প্রসঙ্গঃ

দেবশ্রী চৌধুরী তার বক্তব্যে একবার উল্লেখ করেছে যে শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী না থাকলে পশ্চিমবঙ্গ পাকিস্তান ভুক্ত হত। কিন্তু ইতিহাস বলে যে শ্যামাপ্রসাদ বেঙ্গল প্রেসিডেন্সিতে ব্রিটিশ সৈন্যের প্রাবল্য বাড়ানোর আবেদন করেছিল বড়লাটের কাছে আর ২০শে জুন, ১৯৪৭-এ অবিভক্ত বাংলার তথাকথিত লোকসভা অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান বিধানসভায় মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলের সাংসদরা বাংলা ভাগের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছিল এবং কংগ্রেসের বাংলা ভাগের পক্ষে রায় দেখার পরই তারা দিল্লীর সংবিধান না মানার সিদ্ধান্ত নেয়।

মোদী বিজেপি-র উপর থেকে গোবলয়ের ট্যাগ ঘোচাতে হিন্দু মহাসভা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে শ্যামাপ্রসাদের অবদানের কথা তুলে ধরলেও বর্তমান বিজেপির আদর্শ ট্যাঙ্ক আরএসএস-এর মারাঠাকেন্দ্রীকতার প্রসঙ্গ ইচ্ছা করেই এড়িয়ে গেছে।

৭. তৃণমূল ও সংযুক্ত মোর্চার বিরোধিতাঃ  

তৃণমূলের দুর্নীতি এবং ভাইপোতন্ত্রের বিরুদ্ধে সব বক্তারাই সরব হয়েছে যদিও ইয়েদ্দুরাপ্পা কিংবা শিবরাজ সিং চৌহান সরকারের দুর্নীতি এবং অমিত শাহ পুত্র জয় শাহ-র ব্যবসায়িক সুবিধা পাওয়ার প্রসঙ্গ স্বাভাবিকভাবেই সকলকে এড়িয়ে যেতে হয়েছে।

লকেট চ্যাটার্জী সংযুক্ত মোর্চার মমতার মদত পাওয়ার প্রসঙ্গ টেনে এনেছে। শমীক ভট্টাচার্য্য আত্মনিয়ন্ত্রণের নামে কমিউনিস্টদের পাকিস্তান প্রস্তাব সমর্থন করার কথা তুলে আব্বাস সিদ্দিকীর ‘ভাগিদারী’-র রাজনীতির বিরোধিতা করেছে।

মোদী নিজের ভাষণে বাম-কংগ্রেস জোটকে কটাক্ষ করেছে।

৮. কোন কোন হেবিওয়েট তৃণমূলী দলবদলুরা মঞ্চ আলো করে রইল?  

সারদা কান্ডের মুকুল রায়, বেসরকারিকরণ বিশেষজ্ঞ দীনেশ ত্রিবেদী, হকার উচ্ছেদকারী সব্যসাচী চক্রবর্তী, ব্যারাকপুরের মাফিয়া অর্জুন সিং, কাঠ মাফিয়া এবং বন্য প্রাণী পাচার বিশেষজ্ঞ রাজীব ব্যানার্জী...

৯. কর্মসংস্থান ও শিল্প প্রসঙ্গঃ   

তথাগত রায়, লকেট, শমীক এবং মোদী সিঙ্গুর নন্দীগ্রাম আন্দোলনকে একযোগে বিরোধিতা করে। তাদের বক্তব্যের সুর ছিল অনেকটা এইরকম যে তৃণমূলের জমি অধিগ্রহণ বিরোধী আন্দোলন এবং বামফ্রন্টের তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারার অক্ষমতা এই রাজ্যকে ‘বিনিয়োগ বান্ধব’ তকমা থেকে বঞ্চিত করেছে। অর্থাৎ জমি হারানো কৃষকদের অধিকার এবং ক্ষতিপূরণের প্রশ্নে যে বিজেপি কর্পোরেট স্বার্থকেই তোষণ করবে তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। অশোকনগরে ওএনজিসি এবং আলিপুরদুয়ারে ইস্ট-ওয়েস্ট করিডোর সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে বিজেপির জমি হারানোদের প্রতি অসহিষ্ণু মনোভাব তাদের ব্রিগেডের বক্তব্যের সাথে সাযুজ্যপূর্ণ। অন্যদিকে, বারংবার এ রাজ্যে কর্মসংস্থানের সংকোচনের প্রসঙ্গ টেনে বিজেপি নৃশংস শিল্পায়ন কেন্দ্রিক জমি অধিগ্রহণের পথে হাঁটারও ইঙ্গিত দিয়েছে। একদিকে, তৃণমূলের লাগামছাড়া নিয়োগ দুর্নীতির ফলে জনগণের অসন্তোষকে কাজে লাগিয়ে বিজেপি সারা দেশে এবং অন্যান্য গেরুয়া নিয়ন্ত্রিত রাজ্যে কর্মসংস্থানের করুণ অবস্থার কথা আড়াল করতে সক্ষম হচ্ছে আর অন্যদিকে, বামফ্রন্টের শ্রম নিবিড় শিল্পের বদলে পুঁজি নিবিড় শিল্পের নামে কর্মসংস্থানের ভুঁয়ো স্লোগানকে হাইজ্যাক করেই বিজেপি তার কর্পোরেট অ্যাজেন্ডাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর।

১০. মোদী মডেল...   

মোদীই ছিল আজকের ব্রিগেডে বিজেপির প্রধান রাজনৈতিক মুখ। তাই আজকের সকল নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি মোদী মডেলেরই অংশ।

লকেট সংখ্যালঘু ভোটে ভাঙন ধরাতে ‘তিন তালাক’ প্রসঙ্গ টেনে এনেছে যদিও সামগ্রিকভাবে মুসলমান সমাজের হিতার্থে কর্মসূচীর অনুপস্থিতি কিংবা মহিলাদের সামাজিক উন্নতির উত্তর প্রদেশ মডেল সম্পর্কে সে চুপই থেকেছে।

দেবশ্রী এ রাজ্যের শিক্ষিত বেকারদের ও মজুরদের কর্ণাটকে পাড়ি দেওয়ার প্রসঙ্গ টানলেও সেখানে তাদের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কাজ, সামান্য মজুরী, স্থায়ীকরণের অভাব এবং লকডাউনের সময়ে পরিযায়ী শ্রমিকদের দুর্দশার কথা স্বাভাবিকভাবেই বাদ পড়েছে।

শমীক ‘জিডিপি বৃদ্ধি, জন প্রতি আয় বৃদ্ধি’-র স্লোগান তুলেছে এবং মোদী তার জন্য বিনিয়োগ বাড়ানোর দাওয়াই টেনে আনলেও এটা আজ স্পষ্ট যে বিশ্বের প্রথম ৫০০টি কোম্পানি ১০ কোটি টাকা বিনিয়োগ পিছু ১০ জনকেও চাকরী দিয়ে পারছে না। ফলে ‘বিকাশকেন্দ্রিক’ রাজনীতির নামে মোদী আসলে কর্পোরেট তোষণের কথাই বলছে।

মোদী তার দীর্ঘ ভাষণে বাংলায় ২৫ বছর রাজত্ব করার নীল নকশা তুলে ধরেছে! ঝুপড়ীবাসীদের উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার কথা সে বললেও গুজরাটে ট্রাম্প আসার সময়ে সেখানকার বস্তিগুলির সামনে দেওয়াল তুলে নিজের অপদার্থতা ঢাকার নির্লজ্জ ছবি মানুষ এখনও ভোলেনি।

মোদী ইংরেজিতে শিক্ষা প্রদানের সুড়সুড়ি দিয়ে নিজেদের হিন্দী আগ্রাসনকে ঢাকতে চেয়েছে। অন্যদিকে, সকলের জন্য শিক্ষার কথা সে বললেও ‘জাতীয় শিক্ষা নীতি’-এর মাধ্যমে বিজেপির ধনীদের জন্য শিক্ষা এবং শিক্ষার কর্পরেটিকরণের উদ্দেশ্য সে নিজের বক্তব্যে লুকিয়েছে।

মোদী নারী দিবসের কথা টেনে নারী সুরক্ষার কথা বললেও বিজেপি সরকারের আমলে মহিলাদের কর্মসংস্থান হ্রাস এবং ধর্ষণের রিপোর্ট বাড়ার কথা এড়িয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে।

আর সবার শেষে কৃষক সুরক্ষার কথা মোদী বললেও তার কর্পোরেট বান্ধব কৃষি আইনগুলি কতটা কৃষক সুরক্ষায় তৎপর তা দিল্লীতে চলমান কৃষক আন্দোলনের প্রবহমানতা থেকেই স্পষ্ট।

 

 

Comments

Popular posts from this blog

ফ্যাসিবাদের উত্থানের যুগে সুবিধাবাদের রমরমা

কমিউনিস্ট পার্টি ও তেলেঙ্গানা আন্দোলনের মহিলা কর্মীরা : কমঃ শর্মিষ্ঠা চৌধুরীর কলমে

কেন্দ্র সরকারের ‘জাতীয় শিক্ষা নীতি’ – একটি শিক্ষা বিরোধী ইস্তেহার