নওদা বিধানসভা কেন্দ্রে কংগ্রেস-তৃণমূল-বিজেপির বিরুদ্ধে নির্দল বামপন্থী প্রার্থী কমঃ শমীক মন্ডলের সাক্ষাৎকার

মুর্শিদাবাদ জেলার অন্তর্গত নওদা বিধান সভা কেন্দ্রে একসময়ে আরএসপি-র সাংগঠনিক ব্যাপ্তি ছিল। সমগ্র জেলায় এবং এই কেন্দ্রেও রাজনৈতিক লড়াইয়ে দুই প্রতিপক্ষ মূলত বাম এবং কংগ্রেস। আরএসপি-র সংগঠন দুর্বল হয়ে পড়লেও ২০১৬ সালে তৃণমূলকে পরাস্ত করতে সারা রাজ্যে বাম-কংগ্রেস জোট কার্যকারী হলেও নওদা কেন্দ্রে আরএসপি-কে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে প্রার্থী দেওয়ার অনুমোদন দেওয়া হয়। সেই নির্বাচনে নওদা কেন্দ্রে তৃণমূল ছিল অপ্রাসঙ্গিক এবং মূল লড়াই হয় বাম ও কংগ্রেসের মধ্যে। ২০১৬ সালের পর থেকে তৃণমূল পুলিশ-প্রশাসন এবং গুন্ডাবাহিনীর সাহায্যে পঞ্চায়েত সমিতিগুলোকে গায়ের জোড়ে দখল করতে শুরু করে। এই পলিটিকাল ট্রান্সফর্মেশানের সময়ে অঞ্চলের কৃষি কর্মাধ্যক্ষ এবং কংগ্রেস নেতা মোশারেফ হুসেন তৃণমূলে যোগদান করে এবং এই ট্রান্সফর্মেশানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূল বিরোধীদের সারা জেলা জুড়ে মনোনয়ন জমা দিতে বাধা দিলেও নওদা কেন্দ্রে সিপিআই(এম) কর্মীরা স্ট্রাগল করে একটা মনোনয়ন পেশ করে কিন্তু নির্বাচনের দিন কোনও বুথ রক্ষা করতে তাঁরা অসফল হন। একজন বাম কর্মী শাহীন শেখ খুন হন কংগ্রেস থেকে আগত তৃণমূলের জেলা সভাধিপতি মোশারেফ হুসেনের উপস্থিতিতে তারই গুন্ডাবাহিনীর হাতে। সারা জেলা জুড়ে সকল পঞ্চায়েত সমিতি বিরোধী শূন্য করে তৃণমূল ব্যাপক সন্ত্রাসের পথে এগোতে থাকে। এই নেতৃত্ব মূলত শুভেন্দু অধিকারীর অনুগামী। শুভেন্দু তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিলেও তার মুর্শিদাবাদের মুসলমান কর্মীরা গেরুয়া ছত্রছায়া থেকে বঞ্চিত হয়ে তারই নির্দেশে কংগ্রেসে যোগদান করে/ফিরে আসে! মোশারেফ নিজেও কংগ্রেসে যোগ দেয়। তাই নওদা কেন্দ্রে সংযুক্ত মোর্চার অন্তর্গত কংগ্রেস মোশারেফকেই প্রার্থী ঘোষণা করতে চাইলে আঞ্চলিক সিপিআই(এম) নেতৃত্বের অন্তর্গত কমঃ শমীক মন্ডল এবং তাঁর সহকর্মীরা পার্টির রাজনৈতিক লাইন নিজেদের বিধানসভা কেন্দ্রে প্রয়োগ করার ক্ষেত্রে বিরোধ করেন। যে মোশারেফ হুসেনের হাতে বাম কর্মীরা কিছুদিন আগেও মার খেয়েছেন, খুন হয়েছেন, তাকে রাতারাতি উন্নয়নের কান্ডারী তকমা দিতে তাঁরা রাজি না হলে শমীক মন্ডল পার্টি থেকে বহিষ্কৃত হন। এই বিধানসভা কেন্দ্রের নওদা ব্লকের ৩১৭জন পার্টি সদস্যের মধ্যে ৩১৬ জন পার্টির রাজনৈতিক লাইন মেনে নিতে অসমর্থ হন কিন্তু বেলডাঙা ব্লকে পার্টি সদস্যদের একাংশ সিপিআই(এম)-এর রাজ্য কমিটির রাজনৈতিক অবস্থান মেনে নেন এবং আরেকাংশ নওদা ব্লকের কমরেডদের অবস্থানের পক্ষে দাঁড়ান। এই পরিস্থিতিতে তৃণমূলের স্বৈরাচার ও বিজেপির সাম্প্রদায়িক রাজনীতিকে রুখতে এবং সুবিধাবাদী দলবদলু কংগ্রেস প্রার্থীকে পরাস্ত করতে নওদা বিধানসভা কেন্দ্রে নির্দল প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন কমঃ শমীক মন্ডল। বামেদের রাজনৈতিক বক্তব্য এবং কৃষি বিল, এনআরসি-সিএএ ইত্যাদি বিষয়ক রাজনৈতিক বার্তা সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরতেই তাঁর এই পদক্ষেপ। তাঁর এই লড়াইয়ে পাশে দাঁড়িয়েছেন আঞ্চলিক পার্টি কর্মীদের বৃহদাংশ। 

কমঃ শমীক মন্ডল জানিয়েছেন যে তিনি সিপিআই(এম)-এর প্রতি তার রাজনৈতিক কর্মসূচীর কারণে এখনও অনুরক্ত। পার্টির পূর্বতন বিজেপি-কংগ্রেসের প্রতি সমদূরত্বের লাইন ঠিক বলে তিনি মনে করেন না কারণ দুটি পার্টির ক্লাস ক্যারেক্টার এক হলেও কর্পোরেট ফান্ডিং-এর ক্ষেত্রে এই মুহূর্তে সিংহভাগই সাম্প্রদায়িক আদর্শের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে পঙ্গু করতে সমর্থ গেরুয়া শিবিরে পৌঁছায়। তিনি ২০১৮-এর পার্টি কংগ্রেসের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেন যে কংগ্রেসের সাথে ইলেক্টোরাল অ্যাডজাস্টমেন্ট হতে পারে, পলিটিকাল অ্যালায়েন্স হতে পারে না; যদিও তিনি এও বলছেন যে বর্তমানে গঠিত সংযুক্ত মোর্চা ইলেক্টোরাল অ্যাডজাস্টমেন্টের বদলে পলিটিকাল অ্যালায়েন্সই। তিনি আশাবাদী যে আগামী পার্টি কংগ্রেসে হয়তো এর মীমাংসা হতে পারে। 

তিনি নিজের সিপিআই(এম)-এর প্রতি অনুরক্ততা না লুকিয়েই নির্বাচনে অবতীর্ণ হয়েছেন। এই নির্বাচনে বামেদের মূল কথাগুলো তুলে ধরতেই প্রেস কনফারেন্স এবং ইস্তেহার প্রকাশ করে তিনি এবং তাঁর সাথে সহমত পার্টি কর্মীরা এই লড়াইয়ে নেমেছেন।

নীচে রইল ডিলিজেন্ট পত্রিকার তরফে নওদা বিধান সভা কেন্দ্রের নির্দল বামপন্থী প্রার্থী কমঃ শমীক মন্ডলের সাক্ষাৎকারের বিস্তারিত লিখিত রূপঃ       

 


১. ডিলিজেন্ট পত্রিকাঃ আপনি নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় নওদা কেন্দ্রে এবার চতুর্মুখী লড়াই হতে চলেছে। বিজেপি, কংগ্রেস এবং তৃণমূলের বিরুদ্ধে আপনার অবস্থান সম্পর্কে বলুন।

শমীক মন্ডলঃ এই মুহূর্তের চতুর্মুখী লড়াইয়ে নওদায় বিজেপি বড় ফ্যাক্টর নয়। বিজেপি যতটুকু ভোট পাক, সে জেতার দৌড়ে নেই। ফলে এই কেন্দ্রে লড়াইটা মূলত ত্রিমুখী অর্থাৎ তৃণমূল, সংযুক্ত মোর্চা এবং আমাদের মধ্যে।   


২. ডিলিজেন্ট পত্রিকাঃ আপনি বাকি সমস্ত কেন্দ্রে কি সংযুক্ত মোর্চাকে সমর্থন করছেন?

শমীক মন্ডলঃ আমি এই মুহূর্তে অন্য কোনও কেন্দ্রে প্রচারে যেতে পারছি না। আপনারা জানেন যে আমি বর্তমানে পার্টি থেকে বহিষ্কৃত, সুতরাং আমাকে অন্য কোথাও নির্বাচনী ক্যাম্পেইনে কেউ ডাকছেও না। কিন্তু আমি অবশ্যই মানসিকভাবে আমাদের যারা বামপন্থী প্রার্থী আছে, যারা লড়াই করছে, তাদের সবাইকে আমি মরাল সাপোর্ট দিচ্ছি, আমার পরিচিতজনকে তাদের ভোটটা দেওয়ার জন্য বলছি; আমি কংগ্রেসের জন্য কোথাও বলিনি। (তার মানে, সিপিএম-এর পক্ষ থেকে যে প্রার্থীরা দাড়িয়েছেন আপনি তাদের পাশে আছেন?)  অবশ্যই। (কংগ্রেস এবং আইএসএফ যেখানে যেখানে প্রার্থী দিয়েছে, আপনি কি  মানসিকভাবে তাদেরও সমর্থন করছেন?) মানসিকভাবে যদি বলেন তাহলে যেখানে তৃণমূল এবং বিজেপির বিরুদ্ধে ভালো প্রার্থী সংযুক্ত মোর্চার আছে... "ভালো প্রার্থী" একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এই নির্বাচনে কারণ নির্বাচনের পরবর্তী সময়ে প্রার্থীদের মধ্যে আবার বেচা কেনা হবে, সুতরাং দলবদলু রঙ পাল্টানো যারা সব আছে, তাদেরকে আমি কোনোভাবেই সাপোর্ট করছি না। আর আইএসএফ আমাদের এখানে ক্যান্ডিডেট দেয়নি। (আইএসএফ যেখানে যেখানে ক্যান্ডিডেট দিয়েছে?) আইএসএফ সম্পর্কে আমার অবস্থান খুব পরিষ্কার। আইএসএফ প্রতিষ্ঠা যেভাবে হল তা নিয়ে অনেক কথা আছে তবে একটা পলিটিকাল পার্টির ফর্মেশান তো সবাই করতে পারে। যে কোনও লোক একটা পলিটিকাল পার্টির ফর্মেশান করতে পারে... তিনি একটা সময়ে ধর্মগুরু ছিলেন কিন্তু আমি মনে করি ইতিহাসে এরকম প্রচুর মানুষ আছেন যাদের ট্রান্সফর্মেশান হয়... সেটা সময়ের অপেক্ষা যে আব্বাস সিদ্দিকীরও ট্রান্সফর্মেশান হবে। উনি যে কথাগুলো এখন বলছেন সেগুলোকে আমি খুব একটা সাম্প্রদায়িক বলে মনে করছি না বরং উনি এখন রুটি-রুজি-স্বাধিকার-দলিতদের প্রশ্নকে ইনকর্পোরেট করেছেন। আমি তো কোনও বড় মাপের নেতা নই কিন্তু যেটুকু ওনার নির্বাচনী ক্যাম্পেইন দেখেছি তাতে তিনি কম্যুনাল লাইনের কোনও কথাবার্তা তাঁর ক্যাম্পেইনে বলছেন না। (কংগ্রেস এবং আইএসএফ যে প্রার্থী দিয়েছে তাদের সম্পর্কে আপনার মনোভাব কিরকম?) কংগ্রেসের তো অনেক লোকই আছেন, যেমন অধীরবাবু... একটা সময়ে আমাদের সঙ্গে তাঁর পলিটিকাল বিরোধিতা মুর্শিদাবাদ জেলার সবাই জানে আর কি। ২০১০ সালে আমরা থাকাকালীনই আমাদের পার্টি অফিস কংগ্রেসের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিল। সেই অতীত ইতিহাস আছে। কিন্তু আমরা একটা সময় অব্দি এইটা অন্তত জানতাম যে পশ্চিমবাংলার রাজনীতিতে অধীরবাবুদের মত কংগ্রেসের বহু নেতৃত্ব বিকিয়ে গিয়েছিল। অধীরবাবুরা এটা পারতেন, তৃণমূলের সাথে একটা বোঝাপড়া করে নিয়ে থেকে যেতে। সেই স্ট্রাগলটা উনি করেছেন। সেই জন্য একটা সময়ে যখন অধীরবাবুরা এখানকার প্রার্থী হয়েছিলেন এবং পার্টিরও কল ছিল মালদা দক্ষিণ এবং বহরমপুরে তৃণমূল কংগ্রেসকে পরাস্ত করতে অধীরবাবুদেরকে সাপোর্ট করার, আমরা তখন নির্দ্বিধায় সাপোর্ট করেছিলাম; অনেক যন্ত্রণা সত্ত্বেও। কংগ্রেসের হাতে তো একটা সময়ে আমাদের পার্টির বহু কর্মীরা শহীদ হয়েছিল, তা সত্ত্বেও পলিটিকাল কম্পালশনে তৃণমূলের যে অত্যাচারটা ২০১৬-র পর থেকে দেখেছিলাম, সেই অভিজ্ঞতার ভিত্তিতেই আমরা ২০১৯ সালে অধীরবাবুকে সাপোর্ট করেছিলাম। আমার কেন্দ্রেও আমি অধীরবাবুকে সাপোর্ট করেছিলাম কিন্তু অন্য জায়গার থেকে আমার কেন্দ্রে আমরা একটু ডিফারেন্ট ছিলাম। আমরা কোথাও এখনও অব্দি কংগ্রেসের সাথে যৌথ কোনও মঞ্চ, যৌথ কোনও মিছিল নওদায় কখনও করিনি। আমরা নিজেদের আইডেন্টিটি থেকেই, নিজেদের পতাকা নিয়েই কংগ্রেসকে সাপোর্ট করেছিলাম ২০১৯ সালে। (কংগ্রেস এবং আইএসএফ বাকি সমস্ত জায়গায় যে প্রার্থী দিয়েছে, তাদেরকে আপনি পজিটিভলি দেখছেন?) সব জায়গায় দেখছি না। কংগ্রেসের এরকম প্রার্থী দু'একটা জায়গায় আছে যারা তৃণমূল থেকে দল পাল্টে কংগ্রেসে এসেছে। এরা পলিটিকালি সুবিধাবাদী এবং আমার কেন্দ্রে ঠিক একই অবস্থা। এই যে লড়াইটা পশ্চিমবঙ্গে হচ্ছে এর ফলে একটা ত্রিশঙ্কু বিধানসভা হওয়ারই সম্ভাবনা রয়েছে। সেই ত্রিশঙ্কু বিধানসভা হওয়ার পর, আপনি যদি রিলায়ালেবেল ক্যান্ডিডেট জেতাতে না পারেন, সেখানে একটা সম্ভাবনা থেকেই যায় যে নির্বাচনের পর এরা আরেকবার দল পাল্টাবে। সেটা সমস্ত ভোটদাতাদের সঙ্গেই একটা প্রতারণা হবে। সেরকম ক্যান্ডিডেট কংগ্রেস কিছু করেছে। আর তাছাড়া মুর্শিদাবাদে আরও কিছু জায়গা আছে, মুর্শিদাবাদে জোটটা সম্পূর্ণ নয়। শমসেরগঞ্জ এমন একটি আসন। আমাদের জোটের যা বোঝাপড়া তাতে শমসেরগঞ্জ আসনটি বামেদের পাওয়ার কথা কিন্তু কংগ্রেস সেখানে নিজের প্রতীকেই প্রার্থী দাঁড় করিয়েছে। সুতরাং আমি ওই কেন্দ্রে কি করে কংগ্রেসকে সাপোর্ট করি? ওখানে আপনি সংযুক্ত মোর্চা বলতে কি পাবেন? এটা রয়েছে মুর্শিদাবাদের পলিটিক্সের অভ্যন্তরে। আমি এখানে (নওদায়) লড়ছি যদিও আমাদের পার্টি অনুমোদন করছে না কিন্তু শমসেরগঞ্জে কংগ্রেস আমাদের বিরুদ্ধে নিজের পার্টি প্রতীকেই লড়াই করছে।    


৩. 
ডিলিজেন্ট পত্রিকাঃ আপনি আপনার পার্টির নির্দেশ অমান্য করে ভোটে দাঁড়িয়েছেন। আঞ্চলিক পার্টি সদস্যরাও আপনার লড়াইয়ে অংশগ্রহণ করেছে। আপনি নির্বাচনে অবতীর্ণ হয়ে কি বার্তা দিতে চাইছেন? নওদা কেন্দ্রের সাধারণ মানুষের হয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে আপনার ইস্তেহারে কোন কোন বিষয় স্থান পেয়েছে?

শমীক মন্ডলঃ আমরা একটা পলিটিকাল ইস্তেহার বার করেছি যেখানে রাজ্য রাজনীতির প্রেক্ষাপটটাও আমাদের আনতে হয়েছে। তিনটে স্ট্যান্ড আমরা ডিক্লেয়ার করেছি। এক, আমরা তৃণমূল ও তার নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে। তৃণমূলকে হারাতে হবে। দুই, তৃণমূলের এই অপশাসনের সুযোগ নিয়ে সাম্প্রদায়িক বিজেপি আমাদের রাজ্যে প্রভাব বিস্তার করতে চাইছে। আমাদের নওদা কেন্দ্রেও তারা প্রভাব বিস্তার করতে চাইছে। তাই আমরা বলেছি যে আমাদের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মাঝে এই সাম্প্রদায়িক শক্তির বাড়বাড়ন্ত একটা খারাপ বার্তা দেয়। তাই তাদের প্রভাব যাতে না বাড়ে এটা আমাদের দ্বিতীয় উদ্দেশ্য। তিন, ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূল যে গণতন্ত্র ধ্বংস করেছিল, আমাদের বিধান সভার ক্ষেত্রে তার যারা নেতৃত্ব দিয়েছিল এবং এখনও তৃণমূলের ত্রিস্তর পঞ্চায়েতে যে লুঠতরাজটা চলছে, এখনও তারা সেইসব পদেই আসীন। অনেক তৃণমূলের প্রধান এখন কংগ্রেস হয়েছে আমাদের কেন্দ্রে এবং তৃণমূলের একদা সভাধিপতি যিনি আবার এই কেন্দ্রের প্রার্থী হয়েছেন, এইসব পলিটিকাল অপরচুনিস্টদের আমাদের পরাস্ত করতে হবে। এটাই আমাদের মূল বার্তা। এর পাশাপাশি নওদার কৃষি নিয়ে আমাদের কিছু কথা রয়েছে। সেচ, খাল বিল সংস্কারের কথা রয়েছে। আমাদের এখানকার প্রধান অর্থকরী ফসল হল পাট এবং পেঁয়াজ। সেই সমস্ত ফসলের দাম, এমএসপি, জেসিআই খোলা সংক্রান্ত প্রশ্ন আমরা রেখেছি। আমাদের এখানে কৃষি নির্ভর শিল্পের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। আমাদের এখানে আম এবং কলার ফলন হলেও এখনও অব্দি প্রক্রিয়াকরণ, মান্ডি বা কোল্ড স্টোরেজ এসব কিছুই হয়নি। এগুলো আমাদের ডিমান্ড। আগামীদিনে আমরা সরকার গঠনে ভূমিকা পালন করলে এই ডিমান্ডগুলোকে আমরা তুলে নিয়ে আসব, নইলে এই ইস্যুতেই আন্দোলন শুরু করব। বৃহৎ শিল্পের পরিস্থিতি না থাকলেও কৃষি নির্ভর ক্ষুদ্র শিল্পের সম্ভাবনা এখানে রয়েছে। নওদার স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলি নিয়ে আমাদের কিছু কথা রয়েছে। এখানে ৬টা উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে, যেগুলোর প্রায় সবই বন্ধ। এখানে একটা গ্রামীণ হসপিটাল আছে কিন্তু সেখানে মিনিমাম সিজার করার মত পরিকাঠামো নেই। সাধারণ চিকিৎসার জন্যও আমাদের বহরমপুর যেতে হয়। মুর্শিদাবাদে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবী আমাদের রয়েছে। রাজ্য সড়কগুলো এক্সটেন্ড করার দাবী আমাদের রয়েছে। আমাদের এখানে অনেকগুলো কানেক্টিং ব্রিজ রয়েছে। নদীয়ার সাথে সংযোগকারী একটা ব্রিজ তৈরির কাজ শুরু হয়েছিল। ২০১১ সালে সেটার কাজ বন্ধ হয়ে যায় জমির জটিলতায়...

আমাদের ইস্তেহারে আমরা নিজেদের রাজনৈতিক অবস্থান ও দাবীগুলি উল্লেখ করেছি। সেই ইস্তেহার নিয়েই আমরা মানুষের কাছে যাচ্ছি।

(বক্তার মত তাঁর একান্ত নিজস্ব)

Comments

Popular posts from this blog

ফ্যাসিবাদের উত্থানের যুগে সুবিধাবাদের রমরমা

পুঁজিবাদ আপনাকে নিঃসঙ্গ করে দিচ্ছে

রিপিট টেলিকাস্ট