লকডাউনকে কাজে লাগিয়ে ধনীরা কিভাবে আরও ধনী হচ্ছে?

রূপক গায়েন 



করোনা প্যান্ডেমিকের ভয়াবহতার অজুহাতে লকডাউন চাপিয়ে দেওয়ার অযৌক্তিকতা নিয়ে নানা  আলোচনার মাঝে লকডাউনের ফলে খেটে খাওয়া মানুষের উপর অর্থনৈতিক সংকটের যে খাঁড়ার ঘা নেমে এসেছে এবং কর্পোরেটদের উত্তরোত্তর সম্পত্তি বৃদ্ধি - সে সম্পর্কেও বিস্তারিত আলোচনা আশু প্রয়োজন। সারা বিশ্বে লকডাউন ভারতে সবথেকে কঠোর রূপে পালিত হয়েছে এবং একই সাথে লকডাউনে ভারত সরকারের ব্যয়ও বিশ্বের মধ্যে সর্বনিম্ন!!! উজবুক প্রশাসকের আকস্মিক নোটিশে লকডাউনের ফলে পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফেরার সেই করুণ মিছিলের দগদগে স্মৃতি এখনও বয়ে চলেছি আমরা। যাই হোক, আসল কথায় আসা যাক। বিশ্বব্যাপী এই আর্থিক সংকটের বাজারেও সমগ্ৰ বিশ্বের পুঁজিপতিদের তাদের সম্পত্তি বৃদ্ধির বহর নিজস্ব গতিতেই বজায় থেকেছে। অনলাইন শপিং সংস্থা আমাজনের প্রধান জেফ বেজোসের সম্পত্তি ৩৬.২ বিলিয়ন ডলার বৃদ্ধি পেয়েছে, ফেসবুক কর্ণধার মার্ক জুকারবার্গের সম্পত্তিও বেড়েছে ৩০ বিলিয়ন ডলার, জুম কর্ণধার এরিক ইয়ুয়ানের সম্পত্তি বেড়েছে ২.৫৮ বিলিয়ন ডলার, এছাড়াও টেসলার এলোন মাস্ক, গুগলের সেরগেই ব্রিন ও ল্যারি পেজ, মাইক্রোসফটের স্টিভ বামার, প্রত্যেকেই নিজেদের সম্পত্তি কমবেশি ১৫ বিলিয়ন ডলার বাড়িয়েছে। ওয়ালমার্টও বিশাল লাভের মুখ দেখেছে। আর আমাদের দেশের পুঁজিপতিদের সম্পত্তি কি বাড়েনি তবে? - অবশ্যই বেড়েছে... দেশের এই বেহাল পরিস্থিতিতেও রিল্যায়ান্স ইন্ড্রাস্ট্রি লিমিটেডের মালিক মুকেশ আম্বানি বিশ্বের ধনীতম ব্যাক্তিদের তালিকায় অষ্টম স্থান লাভ করে যা তার পূর্বের  Ranking-এর থেকে এক স্থান উপরে। পৃথিবীর বড় ভ্যাক্সিন প্রস্তুতকারক সংস্থাদের অন্যতম সিরাম ইন্সটিটিউটের (সাইরাস পুনাওয়ালার) সম্পত্তি  এক ধাক্কায় ২৫% বৃদ্ধি পেয়েছে, এই করোনা মহামারীর মাঝেই। 

কিভাবে বাড়ছে এই সম্পত্তি? 

যে স্টক মার্কেটে অস্থিরতার ফলে আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক মন্দা ২০১৯-এর শেষ থেকেই দেখা দিচ্ছিল, যাকে অবশ্য পরবর্তীকালে কোভিডের কারণে উদ্বুদ্ধ অর্থনৈতিক সংকট বলে দেগে দেওয়া হচ্ছিল, সেই স্টক মার্কেটের সাহায্যেই ধনকুবের বিনিয়োগকারীরা বিভিন্ন বড় ওষুধের কোম্পানি এবং হসপিটাল স্টক বেচাকেনা মারফৎ নিজেদের বিত্ত বাড়িয়েছে গত লকডাউন চলাকালীন। রিল্যায়ান্স নিজে ফেসবুক, সিলভার লেক, ভিস্টা ইক্যুইটি, মুবাডালা প্রভৃতি আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের থেকে ফান্ড তুলে নিজেদের প্রতিপত্তি বাড়িয়েছে। লকডাউনের সময়ে জনগণের অতিরিক্ত ইন্টারনেট নির্ভরশীলতার সুযোগে জিও, জুম, ফেসবুক, আমাজন, গুগল, এমনকি ওয়ালমার্টের মত অনলাইন রিটেইলরদের মত পরিষেবামূলক সংস্থাগুলি নিজেদের আর্থিক প্রতিপত্তির বাউন্সব্যাক ঘটিয়েছে। অন্যদিকে, আমাদের দেশের সরকার লকডাউন পরিস্থিতিতে  পুঁজিপতিদের মোটা মোটা সব ঋণ মকুব করে দিয়েছে কেন্দ্র সরকার কিন্তু সাধারণ মানুষের উপর থেকে পরোক্ষ করের বোঝা কিন্তু এতটুকু কমানো হয়নি। আবার, প্যান্ডেমিকের দোহাই দিয়ে কর্পোরেটরা শ্রম আইন এবং সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশকে তোয়াক্কা না করে বিভিন্ন কর্মক্ষেত্র থেকে ভুরি ভুরি মানুষকে ছাঁটাই করে নিজেদের লাভের হার অক্ষুণ্ণ রেখেছে। তাই লকডাউনে সাধারণ মানুষদের গচ্ছিত অর্থ ৩৫% কমলেও কর্পোরেটে সম্পদ ৩৭% বেড়েছে!!! রাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ মদত ছাড়া এ জিনিস কখনই সম্ভব নয়। আমাদের প্রধানমন্ত্রীর সফেদ গালপাট্টার বৃদ্ধি, কর্পোরেটের প্রতিপত্তির বৃদ্ধিরই দ্যোতক। উনি সাধারণ মানুষের মিত্রোঁওওওও নন একেবারেই, কাদের মিত্র তা বলাই বাহুল্য। আবার আরেকটা লকডাউন কার স্বার্থে? 

Picture Courtesy: India Today 

Comments

Popular posts from this blog

ফ্যাসিবাদের উত্থানের যুগে সুবিধাবাদের রমরমা

ঘটনার বিবরণ নয়, উপলব্ধি জরুরী; প্রসঙ্গ আর.জি.কর

কর্পোরেট হাঙরদের হাত থেকে লাদাখকে বাঁচাও!