প্যালেস্টাইনকে আক্রমণ করার এবারের অজুহাত কি?
ইতিহাসের পাতা একটু ওল্টালে দেখা যায় প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অটোম্যান সাম্রাজ্যের পতনের পর প্যালেস্টাইনকে ব্রিটেন অধিকার করে এবং বেলফোর্ট ডিক্ল্যারেশন মোতাবেক ইহুদিদের প্যালেস্টাইনে নিজেদের ধর্মরাষ্ট্র তৈরির অধিকার দেওয়া হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষকালে দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত পাকিস্তান ভাগ করা ব্রিটেন, একই ছকে প্যালেস্টাইনকে ইহুদি প্রধান ইজরায়েল (অখন্ড দেশের ৫৫%) এবং মুসলিম প্রধান প্যালেস্টাইন (অখন্ড দেশের ৪৬%) -এইভাবে ভাগ করে চিরবিবদমান এক সংঘর্ষের পরিস্থিতি তৈরি করে ভেগে পড়ে।
কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সখ্যতা বানিয়ে একই টেবিলে সাম্রাজ্যবাদের মদিরা পান করে আগ্ৰাসনের নেশায় মত্ত ইজরায়েল ১৯৪৮ সালে প্যালেস্টাইন আক্রমণ করে এবং মোট ৭৮% জায়গা দখল করে নেয়।
জেরুজালেম, যা ঐতিহাসিকভাবে প্যালেস্টাইনের রাজধানী বলেই ধরা হত, তিনটি অ্যাব্রাহ্যামিক ধর্মের তীর্থস্থান। ইউনাইটেড নেশন্স প্রশাসনিকভাবে প্যালেস্টাইন ভাগের পর জেরুজালেমের উপর প্যালেস্টাইনের অধিকারকে স্বীকৃতি দেয়।
১৯৬৭ সালে মিশর, জর্ডান, সিরিয়ার সাথে ছয়দিনের যুদ্ধশেষে ইজরায়েল ইস্ট জেরুজালেম, ওল্ড সিটি সহ আরও বেশ অনেকটা জায়গা দখলীকৃত করে। ফলত প্যালেস্টাইন কার্যত ঘাসের উপর ছোট্ট শিশির বিন্দু গোছের একটি দেশে পরিণত হয়।
এই ইস্ট জেরুজালেমেই রয়েছে মুসলিমদের পবিত্র আল আকসা মসজিদ। বর্তমান যুদ্ধের প্রেক্ষাপট এই মসজিদকে ঘিরেই। ইস্ট জেরুজালেমের আরবী অধ্যুষিত শেখ জারা অঞ্চল থেকে ইজরায়েলের সুপ্রিম কোর্ট মুসলিমদের তাড়িয়ে দেওয়ার কৌশলগত অবস্থান গ্ৰহণ করে সেই অঞ্চলে ইজরায়েলি সেনা সন্ত্রাসের পরিস্থিতি তৈরি করে এবং পবিত্র রমজান মাসে আল আকসা মসজিদে প্রার্থনারত মুসলিমদের উপর ছররা গুলি চালানো হয়, যার ফলে বহু মানুষ আহত হন। যুদ্ধের সলতেতে এইভাবেই আগুন লাগানোর কাজ সম্পন্ন করে ইজরায়েল।
প্যালেস্টাইনের গাজা অঞ্চলটি হামাস নামক একটি গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সশস্ত্র সংগঠন দ্বারা পরিচালিত। মার্কিনীরা এটিকে সন্ত্রাসবাদী সংগঠন বললেও ব্রিটেন নিজের পূর্বের দুষ্কর্মের ফলে পুরোপুরি তা মানতে নারাজ। হামাস দলটির মূল লক্ষ্য হল ইজরায়েলের হাত থেকে প্যালেস্টাইনকে পুনরুদ্ধার করা। মুসলিমদের উপর অত্যাচারের প্রতিবাদে হামাস বাহিনী ইজরায়েলের রাজধানী তেল আভিভের উপর ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ শুরু করে। ইজরায়েলও গাজাতে পালটা এয়ার স্ট্রাইক করে। এই হানাহানিতে ইজরায়েলের ১২ জন নিহত হলেও গাজাতে প্রায় ২১১ জন নিহত হন। সর্বোপরি গাজায় থাকা আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থার অফিসও ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়া হয়। হামাস কোনো বৈপ্লবিক সংগঠন নয়, উগ্ৰ ধর্মীয় সংগঠন, তাই ইজরায়েলের মতো প্রবল সামরিক শক্তিধর দেশকে প্রতিহত করা তাদের তরফ থেকে বাতুলতা ছাড়া আর কিছুই নয়।
আন্তর্জাতিক স্তরে সমগ্ৰবিশ্বকে একত্রিত হয়ে ইজরায়েলের এই আগ্ৰাসনকামী মানসিকতার দৃপ্ত কন্ঠে প্রতিবাদ করা দরকার। দরকার খেটে খাওয়া মানুষের বিশ্বব্যাপী আন্দোলন। শোষিত ও নিপীড়িতদের উত্তরণের পথই প্যালেস্টাইনের মুক্তির একমাত্র পথ।
শুরুতে যা বলেছিলাম, সাম্রাজ্যবাদী ভাইরাসে বিশ্বের শোষিত দেশগুলোর ফুসফুস সংক্রমিত, খেটে খাওয়া মানুষের রাজনীতিই হলো একমাত্র শ্বাসবায়ু... প্রতুলতা বাড়াতে হবে...
ধন্যবাদ লেখিকাকে।এই বিষয়টি নিয়ে আর একটু ডিটেল লিখলে খুব সমৃদ্ধ হব।খুব অজানা বিষয় আমার কাছে।
ReplyDeleteধন্যবাদ লেখিকাকে।এই বিষয়টি নিয়ে আর একটু ডিটেল লিখলে খুব সমৃদ্ধ হব।খুব অজানা বিষয় আমার কাছে।
ReplyDelete