Fact Finding Report: ইস্ট ওয়েস্ট করিডোর প্রকল্পে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আলিপুরদুয়ারের কৃষক ও ব্যবসায়ীদের আন্দোলন

প্রেক্ষাপটঃ 

"ইস্ট ওয়েস্ট করিডোর প্রকল্পের অধীন ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের কাজে জমি অধিগ্রহণকে কেন্দ্র করে কেন্দ্রের বিজেপি এবং পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল সরকার জমিদাতাদের প্রতি প্রবঞ্চনার পরিকল্পনা রূপায়ণ করেছে। ২০০৪ সালে ন্যাশনাল হাইওয়েজ অথোরিটি অফ ইন্ডিয়া (এনএইচএআই)-র এ রাজ্যে ইস্ট ওয়েস্ট করিডোর তৈরীর জন্য আলিপুরদুয়ারের সলসলাবাড়ি থেকে ফালাকাটা পর্যন্ত প্রায় ৪১.৬৫ কিমি রাস্তা সম্প্রসারণের প্রস্তাব গৃহীত হয়। ফলে আলিপুরদুয়ারের ২ নং ব্লকের প্রকল্প সংলগ্ন ২৫০জন ব্যবসায়ী এবং ২নং ব্লকের চেনপাড়া, শোভাগঞ্জ, চাপড়ের পাড়, ভেলুক ডাবরি এবং সলসলাবাড়ি, এই পাঁচটি মৌজার প্রায় ৪০০জন কৃষক পরিবারের ক্ষেতি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হতে চলেছে। নিজেদের জমি হারানোর শঙ্কা থেকেই ব্যবসায়ীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে 'আলিপুরদুয়ার ২ নং ব্লক ব্যবসায়ী সংগ্ৰাম কমিটি' গঠন করে আন্দোলনে সামিল হন। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা 'আলিপুরদুয়ার ২ নং ব্লক কৃষি বাস্তু সংগ্ৰাম কমিটি' নামে একটি সংগঠন তৈরী করে দীর্ঘ পাঁচবছর ধরে আন্দোলনে রয়েছেন। সরকার কর্তৃক সার্বিক মূল্যায়ণের (সোশ্যাল অ্যাসেসমেন্ট) মাধ্যমে জমির দাম নির্ধারণ হচ্ছে না। বেশকিছু বছর জমি অধিগ্রহণ পর্ব স্থগিত থাকলেও ২০১৫ সাল থেকে আবার অশান্তির সূচনা। স্থানীয় প্রশাসন মাঝে মধ্যেই সন্ত্রাসের সৃষ্টি করে এবং মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে তাঁদের এই আন্দোলনে বাধা দিয়ে অধিকার আদায়ের পথে অন্তরায় হয়ে উঠছে। কেন্দ্র এবং রাজ্য যুযুধান দু'পক্ষের একে অপরের কাঁধে বন্দুক রেখে নিজেদের দায়ভার সুকৌশলে এড়িয়ে চলার চেষ্টা চলছে। কেন্দ্রীয় সংস্থা 'এনএইচএআই' প্রকল্প বন্ধ হয়ে যেতে পারে এই মর্মে রাজ্য সরকারকে চিঠি দিলেও তারা নিজেরা জমির ন্যায্য মূল্য দিতে নারাজ। অপরদিকে রাজ্য সরকার জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ায় ক্ষতিপূরণের প্রশ্নে এক প্রকার নিজেদের হাত-পা গুটিয়েই বসে আছে।" 

বিষদে পড়তে এই লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ 

http://thediligent2018.blogspot.com/2021/02/blog-post_6.html

Fact Finding সংস্থাঃ Centre for Social Activism (CSA)

সময়ঃ ২৪শে এপ্রিল, ২০২১

Fact Finding রিপোর্টঃ 

১. এলাকাঃ চাপড়ের পাড় ১ ও ২ নম্বর অঞ্চলের মাঝামাঝি (আলিপুরদুয়ার ২ নং ব্লকের অন্তর্গত); ক্ষতিগ্রস্থ স্থানীয়ঃ সমীর ঘোষ

অভিযোগঃ ২০২১ বিধান সভা নির্বাচন চলাকালীন এনএইচএআই-এর কর্তারা এসে উচ্ছেদের হুমকি দিয়েছে; 'রাইট তূ ফেয়ার কম্পেন্সেশান অ্যান্ড ট্রান্সপারেন্সি ইন ল্যান্ড অ্যাকুইজিশান, রিহ্যাবিলিটেশান অ্যান্ড সেটেলমেন্ট অ্যাক্ট, ২০১৩' অনুযায়ী অধিগৃহীত জমিতে গাছপালা বা অন্যান্য কৃষিজ সম্পদ থাকলে তার দাম দিতে হবে কিন্তু সমীর ঘোষকে আইনে উল্লিখিত দরের থেকে অনেক কম দাম দেওয়ার কথা বলছে হাইওয়ে সম্প্রসারণ কর্তৃপক্ষ... 

উপরেঃ সমীর ঘোষের জমি

নীচেঃ সমীর ঘোষের লাগোয়া জমি

(লাল তীরঃ বড় রাস্তা থেকে কতটা জমি অধিগৃহীত হবে তার সীমারেখা; হলুদ লাইনঃ অধিগৃহীত হতে চলা জমির দৈর্ঘ্য)   

সমীর ঘোষের সাথে হাইওয়ে কর্তৃপক্ষের দ্বিচারিতা সম্পর্কে বলছেন রাণা পাল

২. এলাকাঃ ভেলুক ডাবড়ি মৌজা; ক্ষতিগ্রস্থ স্থানীয়ঃ প্রশান্ত দেব

অভিযোগঃ আলিপুরদুয়ার ২ নং ব্লক কৃষি বাস্তু সংগ্ৰাম কমিটি-র সদস্য প্রশান্ত দেব বলেন যে তাঁরা আইনী লড়াই করলেও উকিলের সাথে হাইওয়ে কর্তৃপক্ষ যোগসাজশ করে কৃষকদের ওই এলাকায় ডেসিমেল প্রতি মাত্র ২০,০০০ টাকা করে দিয়েছে (বর্তমান বাজার মূল্যের ৫-১০%) যেখানে ওখানকার বর্তমান জমির দাম অনেক বেশি! 

প্রশান্ত দেবের বাড়িঃ চিহ্নিত অংশগুলো রাস্তা সম্প্রসারণের সময়ে ভাঙা হবে

প্রশান্ত দেবের বক্তব্য


প্রশান্ত দেব দেখালেন তাঁর বাড়ির কোন কোন অংশ ক্ষতিগ্রস্থ হতে চলেছে রাস্তা সম্প্রসারণের ফলে

৩. এলাকাঃ মহাকাল চৌপথি

মহাকাল চৌপথির যে দোকানগুলি রাস্তা সম্প্রসারণের ফলে ভাঙা পড়বে (দোকানদাররা ক্ষতিপূরণ পাননি কিন্তু পুলিশ ও হাইওয়ে কর্তৃপক্ষের হুমকি পেয়েছেন)

৪. এলাকাঃ ইস্ট ওয়েস্ট করিডোর প্রকল্পে ৩১ডি হাইওয়ে থেকে ভেলুক ডাবড়ির দিকে সলসলাবাড়ি মৌজার উপর দিয়ে রাস্তা সম্প্রসারণের পরিকল্পনা চলছে

অভিযোগঃ কৃষকরা ক্ষতিপূরণ পাননি (কিন্তু তীব্র আন্দোলনের ফলে বর্তমানে সম্প্রসারণের কাজ স্থগিত)

সলসলাবাড়ি মৌজার কৃষি জমি (লাল তীরঃ যেখান দিয়ে রাস্তা সম্প্রসারণের কাজ শুরু হওয়ার কথা)

রাস্তা সম্প্রসারণ সম্পর্কে বলছেন রাণা পাল

৫. চাপড়ের পাড় অঞ্চলে বড় রাস্তার ধারে এই ধরণের নোটিশ টাঙিয়ে সাধারণ মানুষকে বোকা বানাতে চাইছে জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণ কর্তৃপক্ষ। সম্প্রসারণের কাজ শুরু করার সুনির্দিষ্ট অর্ডার না থাকলেও বিনা ক্ষতিপূরণে মানুষকে বিভ্রান্ত করার এ এক অভিনব পথ! 

৪ লেনের রাস্তা তৈরির ভুঁয়ো নোটিশ 

৬. এলাকাঃ চাপড়ের পাড়, পাখাড়িতলা; ক্ষতিগ্রস্থ স্থানীয়ঃ চিত্তরঞ্জন দাস (স্থানীয় ট্রাক ড্রাইভার)

অভিযোগঃ ক্ষতিপূরণ ছাড়াই উচ্ছেদের হুমকি  


চিত্তরঞ্জন দাসের বাড়ি  


চিরতি দাস, চিত্তরঞ্জন দাসের স্ত্রী 


চিরতি দাসের বক্তব্য 

চিরতি দাসের বাড়ি সংলগ্ন রাস্তা সম্প্রসারণের কাজের নামে ক্ষতিপূরণ এবং ওনার অনুমতি ছাড়াই গাছ উপড়ে ফেলা শুরু    

৭. এলাকাঃ চাপড়ের পাড়; ক্ষতিগ্রস্থ স্থানীয়ঃ রোজেন রায় (বর্তমানে মৃত; বাড়ির দায়িত্বে ওনার স্ত্রী) 

অভিযোগঃ ক্ষতিপূরণ ছাড়াই উচ্ছেদের হুমকি  


 রোজেন রায়ের বাড়ি (পুরোটাই রাস্তা সম্প্রসারণের ফলে ভেঙে দেওয়া হবে)

৮. এলাকাঃ চাপড়ের পাড়; ক্ষতিগ্রস্থ স্থানীয়ঃ গঙ্গা মোহন্ত (পানের দোকান)

অভিযোগঃ ক্ষতিপূরণ ছাড়াই উচ্ছেদের হুমকি  

গঙ্গা মোহন্তর বাড়ি এবং পানের দোকান (পুরোটাই রাস্তা সম্প্রসারণের ফলে ভেঙে দেওয়া হবে)

৯. এলাকাঃ চেকোহাট 

অভিযোগঃ ক্ষতিপূরণ ছাড়াই উচ্ছেদের হুমকি

চেকোহাটের উচ্ছেদ ক্ষেত্র 

১০. এলাকাঃ চাপড়ের পাড়

অভিযোগঃ প্রভাবশালীদের মোটা অঙ্কের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হলেও সড়ক সংলগ্ন বস্তি, দোকান ও কৃষি জমির ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে না। 


বাঁ দিকঃ পাল অ্যান্ড কং ইট ভাঁটা (মাঝারি অঙ্কের ক্ষতিপূরণ পেয়েছে), ডান দিকঃ হনুমান রাইস মিল/ডুয়ারস রাইস মিল (১ কোটি টাকার ঊর্ধ্বে ক্ষতিপূরণ পেয়েছে)  

১১. ক্ষতিপূরণ ছাড়াই জমি অধিগ্রহণ রুখতে হাইওয়ে কর্তৃপক্ষের মাটি আনতে বাধা দিয়ে আন্দোলনকারীরা আপাতত সম্প্রসারণের কাজ স্থগিত রেখেছেন। 


 যে রাস্তা দিয়ে রাস্তা সম্প্রসারণের মাটি আনা হচ্ছিল

১২. এলাকাঃ চাপড়ের পাড়

অভিযোগঃ অল্প কিছু টাকা দিয়ে হাইওয়ে কর্তৃপক্ষের উচ্ছেদের পরিকল্পনা


উপরেঃ ডাঃ এস.পি. ঘোষের জমিতে বস্তি (অল্প কিছু টাকা দিয়ে উচ্ছেদ করার চেষ্টায় হাইওয়ে কর্তৃপক্ষ)
নীচেঃ এস.পি. ঘোষের বাড়ির সংলগ্ন জমিতে মাটি ফেলার কাজ শুরু হলেও আন্দোলনের চাপে বর্তমানে স্থগিত 

১৩. এলাকাঃ চাপড়ের পাড় 

অভিযোগঃ ক্ষতিপূরণ ছাড়াই উচ্ছেদের হুমকি

(চিহ্নিত) রাজ্য সরকারের বসানো জলের পাইপ পর্যন্ত (বড় রাস্তা থেকে) বেআইনি জমি অধিগ্রহণের প্রচেষ্টা চলছে 

১৪. এলাকাঃ চাপড়ের পাড়

অভিযোগঃ ক্ষতিপূরণ ছাড়াই উচ্ছেদের হুমকি


 যে সমস্ত দোকান-বাড়ি বিনা ক্ষতিপূরণে ভাঙতে চলেছে হাইওয়ে কর্তৃপক্ষ (লাল তীরঃ একটি স্থানীয় অফিস ভেঙে ফেলা হয়েছে) 

১৫. আন্দোলনকারীরা বিনা ক্ষতিপূরণ এবং পুনর্বাসনে জমি অধিগ্রহণ রুখতে বদ্ধপরিকর। তাঁরা রাস্তায় প্রতিরোধের সাথে সাথে আইনি পথেও লড়াই শুরু করেছেন। এরই মধ্যে চাপড়ের পাড়ের আরও ১২০ জন, ভেলুক ডাবড়ির ৫০ জন, মহাকাল চৌপথির ৭০ জন ব্যবসায়ী এবং আলিপুরদুয়ার ১ নং ব্লকের ১৫০০ ব্যবসায়ী এই আন্দোলনে যোগ দিয়েছে। 

 



 

 

 

 

 

 


Comments

Popular posts from this blog

ফ্যাসিবাদের উত্থানের যুগে সুবিধাবাদের রমরমা

কমিউনিস্ট পার্টি ও তেলেঙ্গানা আন্দোলনের মহিলা কর্মীরা : কমঃ শর্মিষ্ঠা চৌধুরীর কলমে

কেন্দ্র সরকারের ‘জাতীয় শিক্ষা নীতি’ – একটি শিক্ষা বিরোধী ইস্তেহার