২০২১-এর দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষা প্রসঙ্গে একজন পরীক্ষার্থীর মতামত
মেঘরাজ সেন, উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী, নৈহাটি মহেন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়
"করোনা প্রাক্কালে আমাদের কেন্দ্রীয় সরকার প্রতিনিয়ত বলছে যে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা যাতে না নেওয়া হয়। কিন্তু কেন??? ইলেকশান যদি হতে পারে তাহলে কেন আমাদের পরীক্ষা হবে না?? আর যদি না হয় তাহলে আমাদের নম্বরটা কিভাবে দেওয়া হবে?? এমন তো নয় যে একাদশ শ্রেণীর নম্বরের ভিত্তিতে উচ্চ মাধ্যমিকের নম্বর দেওয়া হবে। কারণ, একাদশ শ্রেণিতে আমরা অর্ধেক বিষয়ে পরীক্ষাই দিইনি। তাহলে আমার প্রশ্ন, কীসের ভিত্তিতে আমাদের নম্বর দেওয়া হবে??? দ্বিতীয়ত, স্কুল-কলেজ কেন খোলা হচ্ছে না??? সব কিছু খোলা আছে কিন্তুু স্কুল-কলেজ কেন খোলা হচ্ছে না??? প্রায় ১ বছর ধরে স্কুল-কলেজ খোলা নেই। স্মার্টফোনের মাধ্যমে স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীরা অনলাইন ক্লাস করছে। যাদের স্মার্টফোন নেই বা ইন্টারনেটের টাকা দেওয়ার সামর্থ নেই, তাদের কি হবে??? অনেকে খেতে পাচ্ছে না, কারোর কাজ নেই, কেউ কিছু পয়সার জন্য কাজও করছে। এর মধ্যেও স্কুল-কলেজের কর্তৃপক্ষ মাইনে চাইছে। কিন্তুু কেন??? না আমরা স্কুল/কলেজ যাচ্ছি, না আমরা লাইব্রেরি ব্যবহার করতে পারছি। কিন্তু তাও স্কুল-কলেজের কর্তৃপক্ষ Paytm/Google Pay-র মাধ্যমে মাইনে ক্লিয়ার করার কথা বলা হচ্ছে। কেন আমরা মাইনে দেব??? আমরা অনেকেই জানি যে এ রাজ্যে এখনো অনেক মেধাবী ছাত্রছাত্রী আছে যাদের মোবাইল না থাকায় তারা একদিনও ক্লাস করতে পারেনি। সুন্দরবনের ছেলেমেয়েরা, বালিভাড়ার ছেলেমেয়েরা, বকখালি, ধনেখালি, মুর্শিদাবাদের ছেলেমেয়েরা পড়বে না?? গতকাল রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে। ২০২১-এর মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা নেওয়া উচিত না অনুচিত কিংবা পরীক্ষা না হলে বিকল্প মূল্যায়ন পদ্ধতি কী হতে পারে, সেই বিষয়ে ই-মেইল মারফত শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মতামত চাওয়া হয়েছে। এই বিষয়ে আমরা সকল ছাত্রছাত্রীরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সমস্ত সুচিন্তিত মতামত ই-মেইল মারফত পেতে হলে মাত্র একদিন সময় মোটেই যথেষ্ট নয়। এই সময়সীমা অত্যন্ত ৩ থেকে ৪ দিন বাড়ানো হোক। তাছাড়া ছাত্রছাত্রী, অভিভাবকদের পাশাপাশি শিক্ষাবিদ, গবেষক, মনোবিদ, সমাজকর্মী সহ সকল ছাত্র সংগঠনের মতামত গৃহীত হোক।"
ডিলিজেন্ট-এর পক্ষ থেকে কিছু কথা:
১. গত এক বছরে কোনো ক্লাস টেস্ট জাতীয় কিছুই না হওয়ায়, ICSE কিংবা CBSE বোর্ডের মত ক্লাস টেস্ট ভিত্তিক মূল্যায়ন রাজ্য বোর্ড বা কাউন্সিলের পক্ষে করা সম্ভব নয়। এই মূল্যায়নও ত্রুটিপূর্ণ। কারুর ক্লাস টেস্টে আশানুরূপ ফল না হলে বোর্ডের মার্কশিটেও তার প্রভাব পড়বে। এ সবের মধ্যে দিয়ে কেন্দ্রের নয়া শিক্ষা নীতির অনুরূপ রাজ্যভিত্তিক শিক্ষা বোর্ড বা কাউন্সিলের পরীক্ষার মাহাত্ম্যকে পরিকল্পনামাফিক খর্ব করা হচ্ছে।
২. রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে এরকম অনেক বিদ্যালয়ই আছে যেখানে পরিকাঠামোর অভাবে অনলাইন ক্লাস করানো সম্ভব হচ্ছে না। তাছাড়া অনেক দিন-আনি-দিন-খাই পরিবারের ছাত্রছাত্রীরা স্মার্টফোন কিংবা ইন্টারনেটের অর্থ জোগানের অভাবে অনলাইন ক্লাস থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
৩. গতবার মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিক স্থগিত হলেও NEET-এর মত প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষাগুলি অনুষ্ঠিত হয়েছিল। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার ব্যবসায়িক এবং শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণগত গুরুত্বের কারণেই কি করোনা ভাইরাস এই পরীক্ষার্থীদের উপর চড়াও হচ্ছে না?
৪. গতবছর বহু ছাত্রছাত্রী পরীক্ষাবিহীন মূল্যায়ন পদ্ধতির দরুণ মধ্য মেধার অংশীদার হয়ে কলেজে ভর্তি হতে পারছিল না। সরকারী অর্থসাহায্য প্রাপ্ত কলেজগুলির সীমিত আসন সংখ্যার দরুণ সরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তাই উচ্চ শিক্ষা প্রাপ্তির ব্যাকডোর উপায় হয়ে ওঠে শাসক দলের নেতা কর্মীদের তোলাবাজির কাছে মাথা নত করা। এভাবে বিপুল সংখ্যক মধ্যবিত্ত পড়ুয়াদের প্রাইভেট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির দিক ঠেলে দেওয়া হয়।
৫. পরবর্তীকালে কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে ২০২০-২১-এর মার্কশিটগুলোর কোনো সামাজিক মূল্য থাকবে? নাকি রাজ্যের বেকারত্বের সূচকে নতুন পালক যোগ হবে...
৬. রাজ্যের স্নাতকোত্তর শিক্ষা প্রাপকদের ক্ষেত্রে ২০২০-এর ব্যাচ এখনো ভর্তি হতে না পারায় এবার ২০২০-২১ অর্থাৎ দুটি শিক্ষা বর্ষের পড়ুয়াদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মাত্র একটি শিক্ষা বর্ষের সীমিত সংখ্যক আসনের জন্য অসুস্থ প্রতিযোগীতায় নামতে হবে!
৭. রেস্তোরাঁ, শপিং মল ইত্যাদি গেলে করোনা ছড়ায় না, শুধু স্কুল কলেজে পড়ুয়ারা গেলেই করোনা ছড়ায়?
৮. গতবছর দেশজুড়ে আনলক প্রক্রিয়া শুরু হলে কেরল সরকার দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষা নিয়েছিল। লকডাউন বিধি শিথিল করলেও পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাহলে পরীক্ষা নিতে গড়িমসি করছে কেন?
ভেবে দেখুন...
Khub bipojjonk poristhiti r sristi korechhen Rajyo ebong Kendriyo Sarkar ,ubhoyei ,ebong er probhab samajer opor kkhotikor !!
ReplyDelete