কিউবান বিপ্লবকে চোখের মণির মত রক্ষা করতে হবে !!!

অনন্যা দেব


দীর্ঘদিন যাবত কিউবার বিপ্লবী সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার উদ্দেশ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার তাবেদার দেশগুলোর পক্ষ থেকে কিউবার বিরুদ্ধে মানবাধিকার খন্ডনের ভুয়ো অভিযোগ তুলে ধরা হচ্ছে। সাম্প্রতিককালে লাসা অর্থাৎ ল্যাটিন আমেরিকান স্টাডিস অ্যাসোসিয়েশন একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়েছে যে কিউবার ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইজরায়েলের অর্থনৈতিক এবং বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা বজায় রাখার বিরোধী তারা কিন্তু একই সাথে কিউবার বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগের পক্ষে তারা সোচ্চার হচ্ছে! লাসার এই বক্তব্যের বিরুদ্ধে সমগ্র উত্তর এবং দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের প্রায় ২০০জন বুদ্ধিজীবী পাল্টা বিবৃতি জারি করে লাসার এই বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন ল্যাটিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশ, কিউবা এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডার বিভিন্ন বুদ্ধিজীবীরা। তাঁদের মতে, ইজরায়েল এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিউবার বিরুদ্ধে যে অর্থনৈতিক এবং বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা জারি করে রেখেছে তার মূল উদ্দেশ্যই হল কিউবার মতন একটি স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্রের সরকারের পতন ঘটানো যেটা তীব্রভাবে অগণতান্ত্রিক এবং সাম্রাজ্যবাদী। দ্বিতীয়ত, তাঁরা এটাও মনে করেন যে বুদ্ধিজীবীদের কর্মক্ষেত্রে মানবাধিকার লঙ্ঘনের মিথ্যা অভিযোগ তোলা হচ্ছে, তার কোনো সঠিক তথ্য না থাকা সত্ত্বেও যা লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর মধ্যেকার সুসম্পর্ক এবং বিভিন্ন তথ্যগত ও গবেষণাগত আদান-প্রদানগুলির বিঘ্ন ঘটাতে পারে। এই বিষয়ে চিন্তা প্রকাশ করেই এই চিঠি পাঠানো হয়েছে লাসার সেক্রেটারিয়েটকে। একইসাথে, "ডিফেন্স অফ হিউম্যানিটিজ নেটওয়ার্ক ফর ইন্টেলেকচুয়ালস, আর্টিস্টস অ্যান্ড সোশ্যাল মুভমেন্ট" নামের সংগঠনের আর্জেন্টিনীয় শাখার পক্ষ থেকেও লাসার এই স্টেটমেন্টের তীব্র সমালোচনা করা হয়েছে [1]।

এই প্রেক্ষিতে কিউবান কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্র 'গ্রানমা' পত্রিকায় ফার্নান্দো বেন আবাদ ডমিনগুয়েজ মানবাধিকার সম্পর্কে একটি প্রবন্ধ লিখেছেন। তাঁর মতে 'ডিক্লারেশন অফ হিউম্যান রাইটস' অর্থাৎ মানবাধিকারের একটি সাধারণ ঘোষণাপত্রের নামে বুর্জোয়া দেশগুলো আসলে সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক অধিকার খর্ব করার পদ্ধতিগুলিকে ঘুরপথে আরো শক্তিশালী করে তুলছে। তিনি প্রথমেই বলেছেন যে কোনো নির্দিষ্ট জায়গায় যদি তীব্র বেকারত্ব থাকে, যদি তীব্র ক্ষুধার তাড়না থাকে এবং যদি শিক্ষার আলো সঠিক মাত্রায় না পৌঁছে গিয়ে থাকে, সেখানে মানবাধিকার সংক্রান্ত কোনো ঘোষণা আসলে কতগুলো ফাঁকা বুলির মতো যেগুলি পড়লে হয়তো মনে হতে পারে যে খুব ভালো উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতিতে তার কোনো কার্যকারিতা নেই কারন যে জনগণ সামাজিক ন্যায়বিচার পায়নি, তাদের কাছে মানবাধিকারের প্রশ্ন অনেকটা গুজবের মতন। তাঁর মতে, যদি মানবাধিকারের প্রশ্ন ওঠেই, তাহলে কোন নির্দিষ্ট জায়গায় তা কার্যকর হবে, তা নিয়েও বলা উচিৎ কিন্তু সেই মানবাধিকার ঘোষণা যদি কতগুলো ফাঁকা বুলি হয়ে থাকে, তাহলে সেই নির্দিষ্ট জায়গার কোনো সীমানা থাকেনা যেখানে তা কার্যকরী হতে পারে। ফলে সেটা খাতায় কলমে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে থাকে কারণ মানবাধিকার বাস্তবায়নের এই জায়গাটা কোনো ভৌগলিক সীমারেখা নয়। এটা আসলে একটি ইতিহাস; বলা ভালো শ্রেণী সংগ্রামের ইতিহাস। যে শ্রেণী সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে ইতিহাস যত এগিয়েছে, তত মানবাধিকার বাস্তবায়নের জায়গাটার একটি নির্দিষ্ট  সীমারেখা তৈরি হয়েছে; যে সীমারেখার মধ্যে নির্দিষ্ট সংখ্যক কিছু মানুষ একই ধরনের মনস্তাত্ত্বিক অবস্থান গ্রহণ করেছে বা একইধারার জীবন ধারণ করে থাকে ইত্যাদি। প্রসঙ্গত, যখনই কোনো নির্দিষ্ট বুর্জোয়া সরকার কোনো এলাকার শ্রমিক ও কৃষকের উপরে তাদের জনবিরোধী নীতিগুলি চাপিয়ে দিতে থাকে এবং রাষ্ট্রীয় নিপীড়ণ বাড়তে থাকে, সেই সময় তাদেরই ভাড়াটে বাহিনীর তরফ থেকে মানবাধিকারের প্রশ্ন তুলে ধরা হয় অর্থাৎ যতটা অত্যাচার বা আক্রমণ হচ্ছে সেই মানুষগুলোর উপরে, সেইগুলি যাতে কিছুটা কম করা হয়। এই "কিছুটা কম-এর প্রশ্নে মানবাধিকার ঢোকে। এই মানবাধিকারের প্রশ্নটাকে বর্তমান সময়ে আনাটা শত্রুপক্ষকে দুর্বল করে দেওয়ার একটা বুর্জোয়া প্রয়াস বলা যেতে পারে কারণ যখনই এই নিপীড়িত জনগণ কোনো একটা নির্দিষ্ট বৈপ্লবিক অবস্থান নেওয়ার চেষ্টা করবে বা সমাজবদলের কথা বলবে এবং যখনই শাসকবর্গের সাথে তার একটা সম্মুখ সমরে যুদ্ধ করার পরিস্থিতি আসবে, সেই সময় মানবাধিকারের নামে তাদের আন্দোলনের সেই তীব্রতাকে ভোঁতা করে দেওয়া যাবে। অর্থাৎ মানবাধিকার বিভিন্ন সময় শুধু ফাঁকা বুলি হিসেবে উঠে আসে না বরং এই মানবাধিকারের প্রশ্নটা তুলে আনা হয় এমন একটা পর্যায় বা পরিস্থিতিতে, যেখানে শোষক রাষ্ট্রের নিজস্ব আমলাতন্ত্র এই মানবাধিকারের ঘোষণাগুলিকে কাজে লাগিয়ে নিজের অত্যাচারগুলিকে একটু কম-বেশি বাড়িয়ে কমিয়ে সামগ্রিকভাবে শোষণ পদ্ধতি চালিয়ে যেতে পারে। ফলে আজকের দিনে দাঁড়িয়ে যদি মানবাধিকারের ঘোষণাকে বিপ্লবী রূপান্তরের মধ্যে দিয়ে নিয়ে যেতে হয় যাতে মানবতার প্রশ্নটা বারংবার তার মধ্যে উঠে আসবে, তাহলে যে দুটি বৈশিষ্ট্যের অবশ্য প্রয়োজন তা হল সামাজিক ন্যায়বিচারের প্রশ্নটাকে সবার সামনে নিয়ে আসা এবং একইসাথে সমাজে যে উৎপাদনের উপায় এবং বিচ্ছিন্ন উৎপাদন সম্পর্কগুলি রয়েছে, সেগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই সংগঠিত করার প্রক্রিয়া চালু করা; নতুবা কিছুই হবে না [2]।

নিম্নলিখিত কুখ্যাত কালাকানুনগুলির মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিউবার ওপর তার অর্থনৈতিক এবং বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা জারি করে রেখেছে:-

Trading with the Enemy Act (1917) 

Foreign Assistance Act (1961)

Treasury Department Foreign Assets Control Regulations (1993-2020)

Export Administration Act (1979)

Export Administration Regulations (1979)

Cuban Democracy Act or Torricelli Act (1992)

Cuban Liberty and Democratic Solidarity or Helms-Burton Act (1996)

Section 211 of  Supplemental and Emergency Appropriations Act (2020)

Trade Sanctions Reform and Export Enhancement Act (2000)

গত ২৩শে জুন কিউবার বিপ্লবী সরকার রাষ্ট্রপুঞ্জে একটি দাবী সনদ পেশ করেছেন, যেখানে তাঁরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক এবং বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার দাবী জানিয়েছেন। সেই দাবী সনদে তাঁরা সুস্পষ্টভাবে তথ্য দিয়েছেন যে, উপরিউক্ত নিষেধাজ্ঞাগুলির ফলে কিভাবে সাধারণ জনগণ ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। প্রথমত, কোনো ব্যক্তি বা কোনো কোম্পানি যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইন ব্যবস্থার অধীন হয়, তাহলে তারা কিউবার সাথে কোন রকম সাংস্কৃতিক, বাণিজ্যিক এবং আমদানি-রপ্তানিগত সম্পর্কে জড়িত থাকতে পারবে না। এর ফলে কিউবায় থাকা বিভিন্ন পরিষেবা সেক্টরগুলো তীব্রভাবে সংকটগ্রস্থ হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন কোম্পানি, যাদের শেয়ারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন সংস্থাগুলির বৃহৎ বিনিয়োগ রয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেই কোম্পানিগুলিকে কিউবার সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক রাখা থেকে বাধাদান করছে। একই সাথে লক্ষণীয় যে, কিউবার নিজস্ব কোম্পানিগুলিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার তাবেদার দেশগুলো থেকে বাণিজ্য করার ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে এবং এই কিউবান কোম্পানিগুলোর নিজস্ব অধিকার সংরক্ষণের আন্তর্জাতিক আইনগুলিকে উল্লঙ্ঘন করে, তাদের অধিকারগুলিকে খর্ব করতে চাইছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। কিউবার সাধারণ মানুষের উপর এর প্রভাব পড়ছে ভয়ানকভাবে। প্রথমত, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ব্যাপক পরিমাণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কারণ বিভিন্ন ওষুধ তৈরিতে যে কাঁচামাল দরকার, যেগুলো বিভিন্ন দেশ বা কোম্পানিগুলো থেকে কিউবার পাওয়ার কথা, সেগুলি তারা এই নিষেধাজ্ঞার জন্য পাচ্ছেনা। এর ফলে, প্রায় ৩৮ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে কিউবায়। বাণিজ্য ক্ষেত্রে অর্থাৎ আমদানি রপ্তানির ক্ষেত্রেও প্রায় ৩৩ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে কিউবার। একই সাথে, যখন সাধারণ মানুষের এই মহামারীর সংকটের সময় বিভিন্ন ওষুধ এবং পুষ্টিকর খাবারের প্রয়োজন, তারা সেগুলি দোকান থেকে পাচ্ছে না কারণ মার্কিন নিষেধাজ্ঞার জন্য সেগুলি দেশে নিয়ে আসা যাচ্ছেনা। যে অত্যাবশ্যকীয় পণ্যগুলি বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করতে হয়, সে পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে অতিরিক্ত হারে কারন মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ফলে আন্তর্জাতিক পরিবহন ব্যবস্থা কিউবার ক্ষেত্রে বিকল করে রাখার ফলে অন্য অনেক দেশ মারফত বারংবার হাত ঘুরে ওই পণ্যগুলিকে কিউবায় আনতে হচ্ছে। বিভিন্ন জাহাজ, নৌকা কিংবা এরোপ্লেন মারফত অন্যান্য দেশের সাথে কিউবার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার জন্যও এগিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। যে কারনে আইবিসি এয়ারওয়েজ বা স্কাইওয়ে এণ্টারপ্রাইজেসের মত সংস্থা কিউবার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে রেখেছে। একইসাথে লক্ষণীয়, কিউবার ইন্টারনেট ব্যবস্থা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মার্কিন আগ্রাসনের কারণে। কিউবার সাথে জুমের মতো প্ল্যাটফর্মগুলি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার জন্য দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের ক্ষেত্রগুলিতে বা বিভিন্ন দেশের নির্দিষ্ট সংস্থা দ্বারা পরিচালিত অনলাইন ক্লাসগুলিতে কিউবার সাধারণ মানুষ অংশগ্রহণ করতে পারছে না। এছাড়াও, বিভিন্ন গবেষণাগারের ব্যবহার্য জিনিসপত্র যে কোম্পানিগুলো তৈরি করে, যেমন সাইটিভা, সার্টোরিয়াস, মার্ক, তাদের সাথে ২০২০-র শুরু থেকেই কিউবার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে [3]।

এই সংকটময় পরিস্থিতিতে যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইজরায়েলের বাণিজ্যিক এবং অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার ফলে কিউবার অর্থনীতি প্রচন্ডভাবে ধুঁকছে, তখন কিউবার কমিউনিস্ট পার্টির সেক্রেটারী মিগুয়েল ডায়েজ ক্যানাল ঘোষণা করেছেন যে তাঁরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে তিনটে বিষয়ে কোনোভাবেই সমঝোতা করতে রাজি নন। সেগুলি হল, এক - সার্বভৌমত্ব, দুই - স্বায়ত্তশাসন, তিন -  স্বাধীনতা [4]।

রাষ্ট্রপুঞ্জে কিউবার দাবীদাওয়ার উপর ভোটাভুটিতে দেখা যায় যে ১৮৪টি দেশ কিউবার দাবীর পক্ষে কথা বলেছে; একমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইজরায়েল বিপক্ষে ভোট দিয়েছে; কলম্বিয়া, ব্রাজিল এবং ইউক্রেন ভোট দেওয়া থেকে বিরত থেকেছে [5]।

কিউবার কমিউনিস্ট পার্টির তরফে গ্রানমা পত্রিকায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে একটি বক্তব্য রাখা হয়েছে সাম্প্রতিককালে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিউবার বিপ্লবী সরকারের বিরুদ্ধে দুটি অভিযোগ আনছে। এক, কিউবান সরকার জাতিবিদ্বেষী, কালো চামড়ার প্রতি এবং অন্যান্য পিছিয়ে পড়া আদিবাসী মানুষদের প্রতি; দুই, কিউবাতে সাংস্কৃতিক কর্মীদের নতুন কিছু সৃষ্টি করার স্বাধীনতা নেই‌। এই দুটি অপবাদের বিরুদ্ধে কিউবার সরকারের বক্তব্য হল, তাঁরা 'ইউনিয়ন অফ কিউবান রাইটার্স অ্যান্ড আর্টিস্ট' সংগঠনের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পার্টি এবং সাধারণ জনগণের মধ্যে আলাপচারিতার জন্য সেমিনারের ব্যবস্থা করেছেন যার মধ্যে দিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই জাতিবিদ্বেষের প্রশ্নটাকে নিয়ে লড়াই করা হচ্ছে। কিউবা মনে করে যে তাঁদের দেশে জাতি প্রশ্নে জনগণের মধ্যে নঞর্থক মনোভাব কিছুক্ষেত্রে অবশ্যই রয়েছে এবং ঐতিহাসিকভাবেই বিভিন্ন আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক কারণে সেগুলি তৈরি হয়েছে কিন্তু একইসাথে কিউবা এও মনে করে যে আলাপচারিতা এবং সরকারি প্রকল্পগুলির মধ্যে দিয়ে এই বিভিন্ন ধারার মানুষের সংযোগ সাধন হলে এই ধরনের সমস্যা থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া সম্ভব। কিউবা আরো মনে করে, জাতিবিদ্বেষের যে তত্ত্ব তুলে আনা হচ্ছে তা কোনোভাবেই ইউরোপ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পৃথিবীর অন্যান্য দেশগুলির তীব্র ঘৃণাসূচক জাতিবিদ্বেষের সঙ্গে তুলনীয় নয় কারন কিউবান সমাজে বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে মাত্র সূক্ষ্মভাবে এগুলো লক্ষ্য করা যায়। কিউবার সরকার এই প্রশ্নও রেখেছেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার তাবেদার ইউরোপীয় দেশগুলি যারা নিজেরাই ঘৃণ্য জাতিবিদ্বেষের চূড়ামণি হিসেবে বসে আছে তারা কি করে কিউবানদের বিরুদ্ধে এত বড় প্রশ্ন তুলতে পারে কারণ ঐতিহাসিকভাবেই কিউবার বিপ্লব হওয়ার পর মূহূর্তেই লক্ষ্য করা গেছে যে কিউবার বিপ্লবী সরকার সমগ্র দেশজুড়ে নিখরচায় স্বাস্থ্য ব্যবস্থা চালু করেছে; দেশের বিভিন্ন প্রান্তের শিক্ষার্থীদের আর্থিক সাহায্য করে এসেছে এবং সামগ্রিকভাবে সারা দেশের যুবসমাজকে কারিগরী শিক্ষায় শিক্ষিত করে নিজের দেশে এবং পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে তাদের কর্মসংস্থানের নিরন্তর চেষ্টা করে যাচ্ছে। হোসে মার্তি বিশ্বের যে অংশটাকে 'দরিদ্র মানুষের জায়গা' বলে চিহ্নিত করেছিলেন, সেই অংশের মধ্যেই কিউবা পড়ে। তারপরেও কিউবা যে ধরনের স্বাস্থ্য পরিকাঠামো তৈরি করতে পেরেছে জনগণের জন্য তা অনেক উন্নত দেশগুলির বিভিন্ন সূচকের থেকে আজও এগিয়ে রয়েছে। একই সাথে বিভিন্ন কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত এবং বিশেষ করে চিকিৎসা বিজ্ঞানের সঙ্গে জড়িত কর্মীদেরকে কিউবা আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে পাঠিয়েছে। যে দেশগুলি দীর্ঘদিন ধরেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার তাবেদার ইউরোপীয় দেশগুলোর জাতিবিদ্বেষের শিকার; অর্থনৈতিক লুণ্ঠন এবং সামাজিক নিপীড়ন সাম্রাজ্যবাদী ও ঔপনিবেশিক শক্তিগুলি দীর্ঘদিন ধরে চাপিয়ে এসেছে তাদের উপর। কিউবার মানুষরা এই পিছিয়ে পড়া দেশগুলিকে এতটাই সাহায্য করে এসেছে যে একসময় দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রপতি নেলসন ম্যান্ডেলা বলেছিলেন, 'আফ্রিকা চিরদিন কিউবার জনগণের কাছে ঋণী থাকবে'। দ্বিতীয় প্রশ্ন আসে সাংস্কৃতিক কর্মীদের নতুন কিছু সৃষ্টির স্বাধীনতার ক্ষেত্রে। এই বিষয়ে কিউবার সরকার ঘোষণা করেছে যে ফিদেল কাস্ত্রো বলেছিলেন, 'সংস্কৃতি ছাড়া স্বাধীনতা সম্ভব নয়'। কিউবার সরকার এই কথাটাই মেনে চলে। একই সাথে তাঁরা এও মনে করিয়ে দেন যে, ফিদেল কাস্ত্রো তাঁর দেশের বিপ্লবী ছাত্র সংগঠনের একটি সভায় দাঁড়িয়ে এই বক্তব্য রেখেছিলেন যে কিউবার বিপ্লব সারা পৃথিবীতে এমন একটি বিপ্লব যা সারা পৃথিবীর বিভিন্ন বিপ্লব বা সাধারণ বুর্জোয়া সরকারগুলির থেকে সবচেয়ে বেশি মানবিক এবং সবচেয়ে বেশি স্বচ্ছ। এই বিপ্লবের মধ্য দিয়ে সংশ্লিষ্ট দেশের সর্ববৃহৎ অংশের মানুষের অধিকার সুনিশ্চিত হয়েছে। একই সাথে কিউবার বিপ্লবের মাধ্যমে যেটা সম্ভব হয়েছে সেটা হল, তথাকথিত মধ্যবিত্ত এবং উচ্চবিত্ত পরিবারের মধ্যে সংস্কৃতিচর্চার যে সীমাবদ্ধতা বুর্জোয়া দেশে দেখা যায় সেই চিন্তাধারাকে ভেঙে ফেলতে শ্রমিক-কৃষক বা বিভিন্ন সেক্টরে যুক্ত অন্যান্য প্রফেশান এবং তার বাইরে অন্ধকারে থাকা পিছিয়ে পড়া জাতিবর্গকে সংস্কৃতিচর্চা কেন্দ্রে নিয়ে আসার সরকারি প্রকল্প কিউবা দীর্ঘদিন ধরেই চালিয়েছেন। এই বর্গের মানুষরা যাতে সরাসরি সংস্কৃতির বিষয়ে পড়াশোনা চালাতে পারে তার পরিস্থিতিও তৈরি করেছেন। একই সাথে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক নিদর্শনের সংরক্ষণের কথা কিউবা বারংবার ভেবেছে। যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেন্সরশিপের কথা বলে তখন কিউবার সরকার তাদের মনে করিয়ে দিতে চায় যে সারা পৃথিবী জুড়ে যে নয়াউদারনৈতিক বাজার অর্থনীতির সৃষ্টি হয়েছে, সেই বাজার অর্থনীতি কিভাবে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মীদের সৃষ্টিগুলিকে সেন্সরশিপের আওতায় এনে জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়ার পথকে বাধাপ্রাপ্ত করার চেষ্টা করে চলেছে।  এই মহামারীর সময় বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মী যারা নিজেদের সৃষ্টিকে জনগণের সামনে তুলে ধরে জীবিকা নির্বাহ করে, তাদের করুণ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বিভিন্ন দেশে। নিজের দেশের সাংস্কৃতিক কর্মীদের যাতে সেই সমস্যায় পড়তে না হয়, এই বিষয়ে কিউবার সরকার নিজেদের জাতীয় বাজেটে তুলে ধরেছে। একই সাথে বুর্জোয়া সমাজে সাংস্কৃতিক সৃষ্টিগুলি সবই আসলে বাজারে বেচার পণ্য মাত্র; সেটা জনগণের কৃষ্টি বা তাদের সামাজিক উত্তরণের  কোনো উপায় নয়। এই সাংস্কৃতিক পণ্য উৎপাদনের নঞর্থক ভর কেন্দ্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে কিউবার সরকার এ বিষয়ে কোনও কথা শুনতে চাননা, এটা তাঁরা দ্ব্যর্থহীনভাবে জানিয়েছেন [6]।

কিউবার সেন্ট্রাল ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট ইয়ামিলি বেলাসাইরেস জানিয়েছেন যে ২০০৫ সাল থেকে আজ অবধি সারা পৃথিবীতে প্রায় ৩৫টি আন্তর্জাতিক ব্যাংকে কিউবার মার্কিন ডলারের ডিপোজিটগুলি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গাজোয়ারি করে বন্ধ করে রেখেছে। এছাড়াও সেই ব্যাংকিং সংস্থাগুলির উপর ফাইন করা হয়েছে বারংবার। বর্তমান অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার জন্য নিজের দেশের ব্যাংক ব্যবস্থাকে বাঁচাতে কিউবা নিজেদের দেশীয় ব্যাঙ্কগুলিতে আর কোন মার্কিন ডলার জমা নেবে না। তারা এটাও ঘোষণা করেছে যে নিজের দেশের সাধারণ মানুষ বা কোনো ব্যবসায়ীর যদি সাময়িকভাবে মার্কিন ডলার গচ্ছিত করার প্রয়োজন হয়, সেক্ষেত্রে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সেই লেনদেনগুলি কিউবার সরকার অবশ্যই অনুমোদন দেবে [7]। 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই চরম অর্থনৈতিক এবং বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞার মাঝে দেখা যাচ্ছে যে ইউনাইটেড নেশনস ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম অর্থাৎ রাষ্ট্রপুঞ্জ-এর একটি নির্দিষ্ট সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, কিউবার প্রায় ২৯টি পৌরসভার হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট-এর স্তর খুবই উচ্চ মানের [8]। অর্থ সংকটের মাঝেই কিউবা দুটি বিস্ময়কর ভ্যাকসিন আবিষ্কার করেছে - সোবেরানা-০২ এবং আবদালা। ইন্টারফেরন আলফা-২বি এবং বায়োমডিউলিনা-টি নামের দুটি কোভিড রোগের ওষুধ বের করেছে। এই তীব্র অর্থনৈতিক সংকটের মাঝেও কিউবা তার জনমুখী পলিসিগুলি গ্রহন করার চেষ্টা করে চলেছে। এটা একদিকে যেমন সেলামযোগ্য, অন্যদিকে এই পরিস্থিতিতে নিজের দেশের ডাক্তার এবং অন্যান্য বিভিন্ন প্রফেশনালদেরকে ভেনেজুয়েলা, ইটালি, ইরান, ইউরোপের অন্যান্য দেশ ইত্যাদি জায়গাতে পাঠিয়ে সেখানকার পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টায় রত হয়েছে। কোভিড আক্রান্ত যাত্রীদের নিয়ে সমুদ্রে ধুঁকতে থাকা একটি গ্রেট ব্রিটেনের জাহাজ, যাকে কোনো দেশ আশ্রয় দিচ্ছিল না, তাকে হাভানা আশ্রয় দিয়ে সেই সমস্ত রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে। এই ধরনের মানবিক সমাজ ব্যবস্থা এবং বিপ্লবী সরকারের পক্ষে 'ডিলিজেন্ট পত্রিকা' সওয়াল করে এসছে এবং ভবিষ্যতেও করতে থাকবে। তাছাড়া, 'ডিলিজেন্ট' তীব্রভাবে মার্কিন অর্থনৈতিক এবং বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞার সমালোচনা করছে কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই করোনার সময় সবচেয়ে বেশি কুটিল এবং আত্মকেন্দ্রিক অবস্থান নিয়ে চলেছে। মহামারির মাঝেও তারা অর্থনীতির চোরাপথে নিজেদের আর্থিক সমৃদ্ধি তৈরি করেছে যা 'ওয়ালস্ট্রিট' জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।

এই তীব্র অর্থ সংকটের মাঝেও কিউবা মহামারীর বিরুদ্ধে তাদের যুদ্ধে প্রায় ৩০০কোটি টাকা খরচ করেছে। কিউবান পেসোর আন্তর্জাতিক বাজারে দাম না পড়তে দেওয়ার জন্য নিরন্তর লড়াই করে চলেছে। প্রায় ১৫লক্ষ জনগণের চাকরির ব্যবস্থা করেছে তারা। ২০১৯ সাল অব্দি যে জিডিপি ১১% ছিল তা কমে এসেছে ৬%-এ। জিডিপি যাতে এর থেকেও আর নিম্নমুখী না হতে পারে তার প্রচেষ্টা হিসেবে পর্যটন ব্যবস্থার উন্নতি, নিকেল এবং টেলিযোগাযোগ পরিষেবার রপ্তানি বৃদ্ধির ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে [9]।

অর্থ সংকটের পরিস্থিতিতে ওয়াশিংটনের মদতে ইউএসপন্থী বেশকিছু সংগঠন গত রবিবার কিউবার বিভিন্ন জায়গায় (যেমন স্যান অ্যান্টোনিও আর্টেমিসা অঞ্চল) স্বাধীনতার দাবীতে এবং কিউবার সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়ে আন্দোলনে নেমেছে। তাদের মূল বক্তব্য হল, খাবার এবং ওষুধের জোগান সকলের কাছে সঠিকভাবে পৌঁছাচ্ছে না। এগুলোই তাদের আন্দোলনে প্রকাশ্যে ভিত্তি। যদিও তাদের প্রধান দাবী হল কিউবার বিপ্লবী সরকারের পতন। অন্যদিকে, কমিউনিস্ট পার্টির নেতা মিগুয়েল ডায়েজ ক্যানেলের আহ্বানে সাড়া দিয়ে কিউবান জনগণ বিপ্লবকে রক্ষা করতে রাস্তায় নেমেছে। কোথাও কোথাও প্রতিবিপ্লবীরা ইঁট বৃষ্টি করে তাদের আহত করার চেষ্টা করলেও জনগণের মিছিলকে থামানো যায়নি। বেলাস্কোয়াইন অঞ্চল এবং মিউজিয়াম অফ দা রেভোলিউশান চত্বরে বিপ্লবীরা বিশাল মিছিল সংগঠিত করে স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং স্বায়ত্তশাসনের পক্ষে স্লোগান দিয়ে মুখরিত করেছে রাজপথ।

কিউবা মহামারীতে ধুঁকতে থাকা সারা পৃথিবীর সাধারণ মানুষকে আশার আলো দেখিয়েছে কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি সার্বভৌম, স্বাধীন রাষ্ট্রের পতনের জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। এখন এটাই আমাদের দেখার যে কিউবার সমাজতান্ত্রিক নির্মাণের ভীত কতটা শক্ত। সেখানকার সাধারণ মানুষকেই এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে যে তারা নিজের দেশের সমাজতন্ত্রকে রক্ষা করতে কতটা সক্ষম কারণ ১৯৯১ নাগাদ সোভিয়েত যুক্তরাষ্ট্রের পতনের পর তীব্র অর্থ সংকটের সময় কিউবা ছেড়ে বহু লোক শরণার্থী হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পালিয়েছিল কিন্তু সেটা ছিল শরীরের কোনো জায়গায় একটু কেটে গেলে দু তিন ফোঁটা রক্ত বেরোনোর মতন। তাতে যেমন সামগ্রিকভাবে সারা শরীরের রক্ত সঞ্চালনের উপর বিশেষ প্রভাব পড়েনা যদি সঠিক সময়ে শুশ্রূষা করা হয়, কিউবার এই অর্থ সংকটের পরিস্থিতিও ঠিক তেমনি; কিউবার সরকার যথেষ্ট পরিমাণ চেষ্টা চালাচ্ছে নিজেদের সংকট থেকে মুক্ত করার জন্য। এই সময় আন্তর্জাতিকভাবে কিউবার এই লড়াইয়ের প্রতি পূর্ণভাবে সমর্থন ও সহযোগিতা তৈরি করা প্রচন্ডভাবে দরকার।

সূত্রঃ 

1. http://en.granma.cu/mundo/2021-06-10/cuba-cannot-be-evaluated-with-a-different-yardstick

2. http://en.granma.cu/mundo/2021-06-17/geo-semiotics-of-human-rights

3. http://en.granma.cu/mundo/2021-06-23/the-blockade-is-a-virus-too-eliminate-it

4. http://en.granma.cu/cuba/2021-06-11/sovereignty-self-determination-and-independence-are-not-on-the-table

5. http://en.granma.cu/mundo/2021-06-23/the-world-reacts-to-cubas-demand-184-nations-against-the-us-blockade

6. http://en.granma.cu/cuba/2021-06-22/the-truth-and-example-of-cuba-will-prevail

7. http://en.granma.cu/cuba/2021-06-11/cuba-temporarily-suspends-cash-bank-deposits-in-us-dollars

8. http://en.granma.cu/cuba/2021-06-17/human-development-key-at-local-level

9. http://en.granma.cu/cuba/2021-06-17/cuba-has-not-renounced-economic-growth-of-approximately-6

Picture Courtesy: http://en.granma.cu/mundo/2021-06-01/an-end-to-the-blockade-demanded-in-all-languages

Comments

Post a Comment

Popular posts from this blog

ফ্যাসিবাদের উত্থানের যুগে সুবিধাবাদের রমরমা

কমিউনিস্ট পার্টি ও তেলেঙ্গানা আন্দোলনের মহিলা কর্মীরা : কমঃ শর্মিষ্ঠা চৌধুরীর কলমে

কেন্দ্র সরকারের ‘জাতীয় শিক্ষা নীতি’ – একটি শিক্ষা বিরোধী ইস্তেহার