করোনা, অন্য চোখে...
শ্যামল, বিজ্ঞানকর্মী
করোনা ভাইরাসের সংক্রমনকে হাতিয়ার করে সুনির্দিষ্টভাবে সতর্কতার বদলে আতঙ্ক ছড়ানো শুরু হয়েছিল। কর্পোরেট হাউসদের পরিকল্পনা মতো আজও সতর্কতার নামে আতঙ্কের প্রচার চলছে। বিজ্ঞাপন এমন এক কৌশল যার মাধ্যমে মানুষকে পরিশ্রুত পানীয় জলকে মিনারেল ওয়াটার বলে গেলানো হয়। প্রচার এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে মানুষ মনে করছে যে এমন সংক্রমক রোগ আগে কখনো আসেনি। কিন্তু এই করোনা ভাইরাস রোগের আগেও অনেক সংক্রমক রোগ ছিল।
বিস্তারিতভাবে যাবার আগে ভাইরাস কী সেটা বলি। ভাইরাস একটি ল্যাটিন শব্দ, এর অর্থ হল বিষ। আদিকালে রোগ সৃষ্টিকারী যে কোন রোগ সৃষ্টিকারী বিষাক্ত পদার্থকে ভাইরাস বলা হত। বর্তমান কালে ভাইরাস বলতে এক প্রকার অতি ক্ষুদ্র আণুবীক্ষণিক অকোষীয় রোগ সৃষ্টিকারী বস্তুকে বোঝায়। উদ্ভিদ ও প্রাণীর বহু রোগ সৃষ্টির কারণ হল ভাইরাস। ভাইরাস কে জীবাণু না বলে 'বস্তু' বলা হয়। কারণ, ভাইরাসের দেহে কোন নিউক্লিয়াস ও সাইটোপ্লাজম নেই; কেবল প্রোটিন এবং নিউক্লিক এসিড দিয়ে দেহ গঠিত প্রোটিন তাই ভাইরাস অকোষীয়।
এবার এই কোভিড-১৯ ভাইরাস ও সার্স কোভ২ রোগ সম্পর্কে অল্প কিছু জেনে নেওয়া যাক। রোগটির নাম কোভিড-১৯। SARS-CoV-2 নামক একটি করোনা ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট। এই ধরণের করোনা ভাইরাস আগে কখনো দেখা যায় নি। তাই নভেল করোনা ভাইরাস বলা হয়। ২ মার্চ ২০২০তে সার্স-কোভি (SARS-CoV) ভাইরাসের সাথে ৭০% মিল থাকায় এর নামকরণ হয় সার্স-কোভি ২। ২০১৯ সালের শেষ দিনে চীনে প্রথম মৃত্যু ঘটে। Corona-র CO, Virus থেকে VI এবং Disease-এর D নিয়ে হয়েছে COVID-19। ২০১৯ সালে ভাইরাসটি প্রথম ধরা পড়ায় 19। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০২০ সালের ১১ মার্চ এই রোগটিকে প্যানডেমিক হিসেবে ঘোষণা করেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আরো জানায় যে এই রোগটি ১৮৯টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে।
আমাদের অবশ্যই Pandemic (প্যানডেমিক) ব্যাপারটা জেনে নিতেই হবে, যার বাংলা তর্জমা করে বলা হল অতিমারি। এই শব্দকে ঘিরেই মানুষকে নানাভাবে বিভ্রান্ত করা হয়েছে। যার উপকরণ হিসেবে এসেছে লকডাউন, মাস্ক, স্যানেটাইজার ও দূরত্ববিধি। এই সমস্ত কিছু আমাদের সামাজিক সম্পর্ককে পালটে দিয়েছে বা নষ্ট করে দিয়েছে। সৃষ্টি হয়েছে এক অস্বাভাবিক অবস্থা। এই অস্বাভাবিক অবস্থাকে মানিয়ে নেওয়ার জন্য এই অবস্থার নামকরণ করা হল ‘নিউ নর্মাল’ মানে নতুন স্বাভাবিক। মানে সমাজের সাথে শঠতা। যাইহোক মহামারি বা অতিমারি শব্দে মৃত্যুর কথা থাকলেও Epidemic – Pandemic এর শব্দের মধ্যে কিন্তু কোন মৃত্যুর ব্যাপার নেই। কোন সংক্রমন রোগের ক্ষেত্রে আমরা Epidemic – Pandemic এই দুটি শব্দ ব্যবহার করি? যদি এই দুটি শব্দের উৎসে যাই তবে দেখতে পাবো যে এই দুটি শব্দের সাথে মৃত্যু কেন, কোন রোগের যোগ নেই। শুনতে অবাক লাগলেও ব্যাপারটা সত্যি। Epidemic - Pandemic শব্দদুটি গ্রীক শব্দ। Epi ও Pan এই দুটি উপসর্গ Demic শব্দের সাথে যুক্ত হয়ে দুটি ভিন্ন অর্থের সৃষ্টি করেছে। এই শব্দ দুটি ভিন্ন বিশেষ ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু তার আগে জেনে নেওয়া যাক এর উৎস কোথায়? Epi-র অর্থ On, Upon, Near। এর ঠিক বাংলা অর্থ হয় না। তবুও বলা যেতে পারে উপর, উপরে ও কাছাকাছি। Pan-র অর্থ All, বাংলায় সমস্ত। Demic শব্দটিও এসেছে আরো একটি গ্রীক শব্দ Demos থেকে। যার অর্থ মানুষ, একটি জেলার মানুষ। এই শব্দ থেকেই এসেছে ইংরাজী শব্দ Democracy, মানে গণতন্ত্র। হিপোক্রেটিস খীস্ট্রপূর্ব ৪৩০-এ তাঁর সংক্রমন রোগ সংক্রান্ত গবেষণা সম্পর্কিত গ্রন্থের শিরোনামে ‘Epidemics’ শব্দটি ব্যবহার করেন। যদিও এর আগে হোমারের বিখ্যাত মহাকাব্য Odyssey তে এই Epidemic শব্দের ব্যবহার দেখতে পাই। কিন্তু হিপোক্রেটিস কেন তাঁর এই গ্রন্থের শিরোনামে হোমারের এই ‘Epidemics’ শব্দ ব্যবহার করেছিলেন জানা নেই। যদিও রোগ পরিস্থিতি বিশ্লষণের ক্ষেত্রে Epidemics নয়, তিনটে বিশেষ টার্মের উল্লেখ করেন, তা হলো Noses (নোসেস), Phtoros (ফটোরিস} ও Lomos (লোমোস)। তাই, Epidemic – Pandemic এর বাংলা প্রতিশব্দ মহাসংক্রমক বা অতিসংক্রমক হওয়াই শ্রেয়।
সংক্রমণ রোধে কোয়ারেন্টাইন ব্যবস্থা থাকলেও লকডাউন এই প্রথম। তারপর দূরত্ববিধির নয়া ফরমানও ভারী ভজকট। এরপর চিকিৎসার দিকে চোখ রাখি, তা অমানবিক। যেকোন রোগের চিকিৎসার দুটি ভাগ আছে। ১) ওষুধ / অপারেশন আর অন্যটি ২) নার্সিং বা শুশ্রুষা। এটাই সত্য যে, কোন অসুস্থ ব্যক্তি সুস্থ হয় ৩০% ওষুধের জন্য। আর বাকী ৭০% হয় নার্সিং বা শুশ্রুষাতে। কিন্তু অদ্ভুতভাবে এতকাল যে নার্সিং বা শুশ্রুষা দেখে এসেছিলাম তার খোল নলচ পালটে দেওয়া হল। করোনা আক্রান্ত অছ্যুৎ। তাকে ছোঁয়া যাবে না, কাছে যাওয়া যাবে না। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন কোন রোগ আসেনি। যার জন্য এইরকম বিধিনিষেধ হয়েছে। এমন একটা বাতাবরণ হয়েছে যে এই কোভিড-১৯ হলেই মৃত্যু। এই রোগে মৃত্যুর হার ১%-র কম। ডাক্তার আপনাকে দেখতা আসছে এক অদ্ভুতুড়ে পোশাক পরে। আপনি ডাক্তারের মুখ দেখতে পারছেন না। শুধুই কন্ঠস্বর শুনছেন। একই ব্যাপার নার্স বা চিকিৎসাকর্মীর ক্ষেত্রে। আক্রান্ত রোগী যেন অচ্ছুৎ। হাসপাতালে ভর্তি রোগীকে কেউ দেখতে যেতে পারবে না। প্রথম দিকে তো পরিবারের লোক রোগীর সাথে ফোনে কথাও বলতে পারতেন না। অদ্ভুত মানসিক চাপ সৃষ্টি করা হয়। এই সমস্ত ব্যাপারস্যাপার দেখে করোনা আক্রান্তর মনে হতো সে পৃথিবীর সবচেয়ে মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হয়েছে। শুধু রোগীর নয় রোগীর নিকটজনেরও মনে হত একই কথা। এই অবৈজ্ঞানিক শুশ্রুষার ফলেই মারা গেছেন বহুজন। আমরা হারিয়েছি আমাদের প্রিয় জনকে। আমরা আমাদের প্রিয়জনকে হারিয়েছি করোনায় নয়, এক চক্রান্তে। এছাড়াও এই রোগকে কেন্দ্র করে করোনা যোদ্ধা, করোনা জয়ী ইত্যাদি বিষয় এনে উদ্দেশ্যপ্রোনদিতভাবে এক সামাজিক ভীতির সৃষ্টি করা হয়। চিকিৎসার জন্য কোন গবেষণার উদ্যোগ না নিয়ে প্রথম থেকেই একমাত্র ভ্যাকসিন-ই এই রোগ থেকে মুক্তি দিতে পারে তাই প্রচার করা হতে লাগলো। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে মোট ২৫টি রোগকে ভ্যাকসিন দিয়ে প্রতিরোধ করা সম্ভব। কিন্তু সবক্ষেত্রে ১০০ শতাংশ সাফল্য এসেছে তা বলা যাবে না। বিশ্বে এই প্রথম কোন ভ্যাকসিন সমস্ত রকম পর্যায় বা পর্ব পার করে মাত্র সাত মাস সময়ের মধ্যে মানবদেহে প্রয়োগের মাত্রায় পৌঁছে গেল। যা অবিশ্বাস্য।
অন্যান্য সংক্রামক মারণ ব্যাধির মৃত্যুহার করোনার তুলনায় অনেক বেশি। সাধারণ ফ্লু (মৃত্যুহার ০.১%), স্প্যানিশ ফ্লু (মৃত্যুহার ২%), পোলিও (মৃত্যুহার ৩.৫%), ডেঙ্গু (মৃত্যুহার ৩.৫%), টিবি (মৃত্যুহার ১২.৩%), হেপাটাইটিস (মৃত্যুহার ১৩.৫%), হাম (মৃত্যুহার ১৫%), সার্স (মৃত্যুহার ১৫%), স্মল-পক্স (মৃত্যুহার ৩০%), মার্স (মৃত্যুহার ৩৪%) ও ইবোলা (মৃত্যুহার ৫০%)। কোভিড-১৯ (মৃত্যুহার ০.০৩২%)। তাহলে দেখাই যাচ্ছে কোভিড মানে করোনার মারণক্ষমতা খুবই কম। এই ভাইরাসকে নভেল করোনা ভাইরাস বলে অভিহিত করলেও কিন্তু আসলে তা নভেল বা নতুন নয়। এর আগে এই নব্য ভাইরাসের থেকে মারাত্মক ভাইরাস হিসেবে এসেছিল ২০০২ সালে সার্স আর ২০১২ সালে মার্স। যার মারণহার ছিল অনেক বেশী।
২০২০ সালের শুরু থেকে ১৫.০৭.২১ তারিখ পর্যন্ত ৫৬২ দিনে পৃথিবীতে মোট সংক্রমিতের সংখ্যা: ১৮,৯৭,০৫,৮৮৪ জন আর মৃত: ৪০,৮২,৭২৪। আর ভারতে সংক্রমিতের সংখ্যা ৩,১০,২৫,৮৭৫। আর মৃত্যু হয়েছে ৪,১২,৫৬৩ জনের। আমাদের পশ্চিমবঙ্গে সংক্রমিতের সংখ্যা ১৫,১৬,৪৮১। মৃত্যু হয়েছে ১৩,৪৮৪ জনের। এই মৃতের মধ্যে বেশিরভাগের কোমরবিডিটি ছিল। তাই, চিকিৎসা বিজ্ঞানের নিয়মে এদের মৃত্যুর কারণ যে করোনা সেটা নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব নয়। সংক্রমণ রোগের কারণে পৃথিবীতে প্রতিবছর প্রায় ১ কোটি ৭০ লক্ষেরও বেশি মানুষ মারা যাচ্ছেন। অর্থাৎ প্রতি মাসে প্রায় ১৪ লক্ষ ১৬ হাজারেরও বেশি মানুষ মারা যাচ্ছেন। পৃথকভাবে বিভিন্ন রোগের মৃত্যু হিসেব এখানে দেওয়ার কোন প্রয়োজন নেই। সারা পৃথিবীতে প্রতিদিন প্রায় ১ লাখ ৫৫ হাজার মারা যায়। আমাদের দেশে প্রায় ২৭ হাজার। যদি কোভিড ১৯ অতিমারী হয়, তাহলে প্রতি বছরে মৃত্যুহারের বৃদ্ধি ঘটতো, কিন্তু তা হয়নি। ২০০০ সালে প্রতি হাজারে ৮.৫১৮, ২০১৯ সালে প্রতি হাজারে ৭.২৭৩ ব্যক্তির মৃত্যু ঘটেছে। আর এই এপ্রিল মাস পর্যন্ত মৃত্যুর হার ৭.৩০৯। তাহলে বৃদ্ধি ৭.৩০৯ – ৭.২৭৩ = ০.০৩৬ প্রতি হাজারে। (সূত্রঃ https://www.macrotrends.net/countries/IND/india/death-rate)
তাহলে বিশ্ব জুড়ে এই রোগ নিয়ে এত কিছু কেন? এর প্রধান কারণ ২০০৮-০৯ সালের আগে থেকেই কর্পোরেট হাউস সঙ্কটের মধ্য দিয়ে চলছিল। ২০০৮-০৯-এ সে সঙ্কট ঘণীভূত হয়। এই সঙ্কট থেকে উদ্ধারের পথ খুঁজছিল। আমাদের প্রথমেই মানতে হবে যে পুঁজিপতিদের কাছে সারা বিশ্বে চিকিৎসা একটা বিরাট বড় বাজার। এই বাজার দখলের জন্য কর্পোরেটরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করে। এইবারও তাই করেছে। এইক্ষেত্রেও বিজ্ঞাপন প্রয়োজন। ভোগ্যপন্যর বিজ্ঞাপনের থেকে আলদা হবেই। বিগত দিনেও এই ধরণের চিত্র আমরা দেখেছি। ১৯৮১ সালেও HIV সহ বিভিন্ন মহামারীগুলিকে বিশ্বজুড়ে প্রচারের আলোয় এসেছিল। প্রত্যেক ক্ষেত্রেই মুখ্য ভূমিকায় দেখা গিয়েছে WHOকে। আর এইসব মহামারী ও রোগকে কেন্দ্র করে সারা বিশ্ব জুড়ে অনেক NGO গড়ে ওঠে। এদের মাধ্যমে এক বিশাল ব্যবসা করা হয়।
আমেরিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ এলার্জি এন্ড ইনফেকশাস ডিজিজ এর ডিরেক্টর ডঃ অ্যান্টনি ফাউসিই কোভিড-১৯কে মূল চরিত্র করে মহামারির চিত্রনাট্যর রচয়িতা। ১৩.১১.২০১৭ তারিখে ডঃ অ্যান্টনি ফাউসি ওয়াশিংটন ডিসির হোয়াইট হাউসে "মহামারীর প্রস্তুতি, কৌশল এবং প্রয়োগ" শিরোনামে এক ভিডিও প্রেজেন্টেশন দেন। সেখানে তিনি আগামীতে ফ্লু মহামারীর বিষয়ে আলোকপাত করেন এবং প্রতিরোধের জন্য ভ্যাকসিন প্রস্তুতির ওপর জোর দেন। কোভিড-১৯ এর ক্ষেত্রেও তাই উনি ২০১৭ সালে কীভাবে জানলেন আগামীতে ফ্লু মহামারীর আকার নেবে। একই ভাবে তার দোসর বিল গেটসেও ২০১৫ সালের ১৮ মার্চ, 'TED TALK' কনফারেন্সে বিশ্বের অন্যতম ধনী ব্যাবসায়ী বিল গেটস "The Next Outbreak" শিরোনামে এক ভিডিও প্রেজেন্টেশনে একই কথা বলেন। গেটস বলেন, তিনি বলেন যে "পরবর্তী কয়েক দশকে যদি কোনও কিছু 1 কোটিরও বেশি মানুষের মৃত্যু ঘটায়, তবে সেটা হবে উচ্চ সংক্রামক ভাইরাসের দ্বারা, যুদ্ধের দ্বারা নয়। আমরা পরমানবিক অস্ত্র-গুলির পিছনে অনেক বিনিয়োগ করেছি কিন্তু মহামারী বন্ধ করার জন্য কোনও সিস্টেমে আমরা খুব কমই বিনিয়োগ করেছি"। এই বক্তব্য থেকে ব্যবসায়িক ব্যাপারটা খুবই পরিষ্কার। এইবার মহামারীর জন্য বিনিয়োগ কর।
এবার করোনাকালের চিত্রটা একটু দেখা যাক। তাহলেই আগের লেখার কারণগুলো পরিষ্কার হয়ে উঠবে। বিশ্বের কুড়িটি দাতব্য সংস্থার অলাভজনক সংগঠন হচ্ছে অক্সফ্যাম যেগুলি পৃথিবী থেকে দারিদ্র্য দূরীকরণের কাজ করে। তাদের “পাওয়ার প্রফিট অ্যান্ড এন্ডেমিক” শীর্ষক প্রতিবেদন বলছে -“এই অতিমারিকে কাজে লাগিয়ে আমজনতার রক্ত শুষে নিচ্ছে বিশ্বের ধনকুবেররা।” অক্সফ্যাম সুইজারল্যান্ডের ডাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামে পেশ করা তাদের ‘দ্য ইনইকুয়ালিটি ভাইরাস’, বৈষম্যের ভাইরাস শীর্ষক রিপোর্টে জানিয়েছেন ধনী আর হতদরিদ্রের মধ্যে আয়ের বৈষম্য বেড়ে গিয়েছে। লকডাউনের সময় দেশের ধনীদের আয় বেড়েছে ৩৫%। রোজগার কমা বা বন্ধ হওয়ায় মাথায় হাত ৮৪ শতাংশের। এপ্রিলে মাসে প্রতি ঘণ্টায় চাকরি হারিয়েছেন ১ লাখ ৭০ হাজার মানুষ। ধনীদের যে পরিমাণ আয় বেড়েছে, তাতে দরিদ্রতম ১৩ কোটি ৮০ লাখ মানুষের প্রত্যেকের হাতে ৯৪,০৪৫ টাকা তুলে দেওয়া যেত। তাদের হিসেব বলছে, অতিমারীর সময় এক ঘণ্টায় মুকেশ আম্বানি যা রোজগার করেছেন, একজন অদক্ষ শ্রমিকের তা আয় করতে হলে লেগে যাবে ১০ হাজার বছর। এক সেকেন্ডে আম্বানির রোজগারের সমান আয় করতে লেগে যাবে তিনবছর। আগস্টেই আম্বানি বিশ্বের চতুর্থ ধনীতম ব্যক্তি হিসেব ঘোষিত হয়েছিলেন। অতিমারীর সময় আম্বানির আয় দিয়ে ৪০ কোটি অদক্ষ শ্রমিককে পাঁচমাস দারিদ্রসীমার উপরে নিয়ে যেতে পারত। লকডাউনের সময় গৌতম আদানি, কুমারমঙ্গলম বিড়লা, আজিম প্রেমজি, উদয় কোটাক, সুনীল মিত্তল, সাইরাস পুনেওয়ালা, শিব নাদারদের সম্পদ বেড়েছে বিপুল পরিমান। অক্সেফ্যামের রিপোর্ট বলছে, ২০ লাখ কোটির কেন্দ্রীয় আর্থিক সাহায্যের অভিঘাত হয়েছে জিডিপির মাত্রই ১ শতাংশ। দেশের ১১ জন ধনীর আয়ে ১০ বছর জাতীয় গ্রামীণ কর্মনিশ্চিত প্রকল্পের কাজ চালানো যেত। এই সময় শুধুমাত্র ফার্মা হাউসগুলোর ১২০০ কোটি মুনাফা বেড়েছে। ১০০টি শেয়ার কোম্পানীর শেয়ার বাজারে দর বৃদ্ধি ঘটেছে ৩ লক্ষ কোটি টাকা। ৩২ টি বহুজাতিক সংস্থার মুনাফা বেড়েছে ১০,৯০০ কোটি ডলার। এরফলে ৫০ কোটি মানুষ পড়েছে দারিদ্রের কবলে। GAFAM (গুগোল, অ্যাপেল, ফেসবুক, আমাজন, মাইক্রোসফট) ৪৬০০কোটি ডলারের বেশি মুনাফা করেছে এই সময়।
(বক্তার মত তাঁর একান্ত নিজস্ব)
Comments
Post a Comment