আর.জি.কর মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কালপঞ্জি
ডেস্ক রিপোর্টঃ সুরজিত মণ্ডল
গত ৪ঠা অক্টোবর থেকে আর.জি.কর মেডিক্যাল কলেজের
ডাক্তারী শিক্ষার্থীরা অনশন করছে প্রিন্সিপাল ডাঃ সন্দীপ ঘোষের পদত্যাগের দাবীতে। অনশন
এখনও চলছে।
গত ৯ই আগস্ট ছাত্রছাত্রীরা প্রিন্সিপালের
সাথে দেখা করতে যায় বিভিন্ন ছাত্রছাত্রীদের সমস্যা নিয়ে কিন্তু তার সাথে দেখা করা যায়নি।
কোনও শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথেও এগোনো যায়নি। কলেজ কাউন্সিল/কর্তৃপক্ষ প্রথমদিকে তাদের
দাবীতে কোনও আমল দেয়নি। যে ঘটনাটি ঘটে - রোহন কুণ্ডু, অভীক সেন ও আশিস পান্ডে, এরা
তিনজন মিলে কলেজে একটি তৃণমূল ছাত্র পরিষদের ইউনিট খুলে ফেলে কলেজের সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের
সাথে কোনও কথা না বলে। তারাই ছাত্র কাউন্সিলের দায়িত্ব অগণতান্ত্রিকভাবে গ্রহণ করার
চেষ্টা করে। এখান থেকেই প্রাথমিকভাবে ঝামেলার সূত্রপাত। এরপর, ছাত্রছাত্রীরা যে দাবীগুলি
তোলে, তার মধ্যে একটি হল, মহিলা শিক্ষার্থীরা যে লেডিস হোস্টেলে থাকত, ৯ই আগস্ট-এর
কিছুদিন আগে একটি অর্ডার বের করে তাদেরকে কিছু না জানিয়ে বা তাদের কোন মতামত না নিয়ে
অন্য একটি জায়গায় তাদের জিনিসপত্রগুলো স্থানান্তরিত করে দেওয়া হয়। ফলে ছাত্রছাত্রীদের
যখন অনলাইন ক্লাস সমাপ্ত হয়ে অফলাইন ক্লাস শুরু হওয়ার সময় আসে এবং তারা মেডিক্যাল কলেজে
ফেরে, তখন এই অব্যবস্থা তাদের চোখে পড়ে। যেখানে তাদের স্থানান্তরিত করা হয় সেই জায়গাটি
অত্যন্ত নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর। ফলে তাদের পুরনো জায়গায় স্থানান্তরিত করার জন্য ছাত্রছাত্রীরা
দাবি তোলে। এর বাইরে যে অন্যান্য দাবীগুলি রয়েছে, তার মধ্যে একটি হল যে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের
একটি স্টুডেন্ট কাউন্সিল কলেজ কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে তৈরি করতে দিতে হবে এবং তাতে কলেজ
কর্তৃপক্ষ রাজিও হয়। কিন্তু রাজি হলেও কলেজ কর্তৃপক্ষ কোনও কার্যকরী পদক্ষেপ নেননি।
ছাত্রছাত্রীরা আরও দাবী তোলে, অবিলম্বে হোস্টেল কমিটি তৈরি করতে হবে এবং কলেজ কর্তৃপক্ষ
ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ গাইড লাইন সংক্রান্ত বাধার কথা তুলে ধরে। কিন্তু ছাত্রছাত্রীদের
মতে এমন কোনও গাইডলাইনগত বাধা আদতে নেই। দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রছাত্রীদের কলেজ ক্যাম্পাসে
বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাফেরাতে বাধাদান করা হচ্ছে এবং বিভিন্ন মহিলা শিক্ষার্থীদের সাথে
কিছু দুষ্কৃতিদের অভব্য আচরণের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হলে কলেজ কর্তৃপক্ষ এবং প্রিন্সিপাল
মহিলা শিক্ষার্থীদেরই বরং রাত্রি ১০টার পর কলেজ ক্যাম্পাসে হাঁটা চলার উপর বিশেষ বিধিনিষেধ
আনে (রাত্রে ডিউটি থাকলেও, ক্যাম্পাসে অবাধ হাঁটাচলার অধিকার নেই!)। শিক্ষার্থীদের
আরও দাবী কোভিড ওয়ার্ডে কাজ করতে থাকা জুনিয়ার ডাক্তারদের জন্য আলাদা করে একটি আইসোলেশন
হোম রাখা হোক কারণ উপসর্গ বিহীন জুনিয়ার ডাক্তারদের যদি সাধারণ রোগীদের ওয়ার্ডেও ঘোরাফেরা
করতে দেওয়া হয় তাহলে একদিকে আরও সংক্রমণ ছড়াবে এবং সেই সমস্ত ডাক্তারদের পরিবারের বয়স্ক
সদস্যদেরকেও বিপদের মুখে ঠেলে দেওয়া হবে। এর বাইরে, প্রত্যেক ছাত্রপিছু ৯ স্কোয়ার
মিটার এরিয়া বরাদ্দ করা এবং তাদের আলাদা ফার্নিচারের ব্যবস্থা করার দাবীও তোলা হয়েছে,
যেটা আর.জি.কর মেডিক্যাল কলেজে আজ অব্দি নেই!
এই অনশন থামানোর জন্য কলেজের প্রিন্সিপাল
কলেজে পুলিশ ঢুকিয়ে ঝামেলা করে। কলেজ কর্তৃপক্ষ আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীদের বাড়িতে ফোন
করে তাদের বাবা-মাকে হুমকি পর্যন্ত দিতে থাকে। এর প্রেক্ষিতে ছাত্রছাত্রীরা প্রিন্সিপালের
পদত্যাগের দাবি তুললে ১০ই অক্টোবর প্রিন্সিপাল নিজের ঘর থেকে বেরিয়ে এসে তার পদত্যাগের
দাবীতে লাগানো পোস্টারগুলি অনশনরত ছাত্রছাত্রীদের দিকে ছুঁড়ে মারে! এরপর ১৪ই অক্টোবর
সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা আর.জি.কর মেডিক্যাল কলেজের সামনের ব্রিজের উপর দাঁড়িয়ে মানব
বন্ধন করে প্রতিবাদ করতে থাকলে বেশকিছু তৃণমূলপন্থী দুষ্কৃতি এসে তাদের মারধর শুরু
করে; পুলিশ এসে দুষ্কৃতিদের পক্ষে দাঁড়ায়। পরবর্তীতে ফেসবুকে খুঁজে জানা যায় সেই
দুষ্কৃতিরা প্রত্যেকেই তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে যুক্ত। এরপর ১৫ই অক্টোবর কলেজ কাউন্সিলের
পক্ষে একটা মিটিং হয়, যেখানে বলা হয় যে হাউস কাউন্সিলের স্টাফ সিলেকশন-এর ব্যাপারটা
তারা গুরুত্ব দিয়ে দেখবে, ছাত্রছাত্রীদের উপরে কোনও খারাপ আচরণ করা হবে না এবং ছাত্রছাত্রীদের
বাড়িতে যে নালিশ জানিয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে সেই অভিযোগগুলি সব ফিরিয়ে নেওয়া হচ্ছে;
তাই ছাত্রছাত্রীরা তাদের অনশন তুলে নিক। কিন্তু ছাত্রছাত্রীরা বক্তব্য রাখেন যে তাদের
উপর তৃণমূলের দুষ্কৃতিরা রাস্তায় যে মারধর করেছে তার কোন সদুত্তর তারা এখনও পায়নি
এবং প্রিন্সিপালও দুঃখপ্রকাশ করেনি নিজের অভব্য আচরণের জন্য; ফলে তারা প্রিন্সিপালের
পদত্যাগের দাবীতে অনড় এবং তারা অনশন চালিয়ে যাবে। এই মর্মে এখনও আন্দোলন চলছে। ১৮ই
অক্টোবর ‘জয়েন্ট প্লাটফর্ম অফ ডক্টরস্’-এর পক্ষ থেকে বিভিন্ন বিশিষ্ট ডাক্তারা এসে
আন্দোলনের পাশে দাঁড়িয়ে একটি কনভেনশন করেন। তারই মাঝে ২০শে অক্টোবর আনন্দবাজার পত্রিকায়
একটি খবর প্রকাশ করে বলা হয় যে কলেজ কর্তৃপক্ষ ‘বয়েজ কমনরুম’-কে একটি বিশেষ কোভিড
ওয়ার্ড হিসেবে ব্যবহার করছে যার জন্য ৫ লক্ষ ১৪ হাজার টাকা স্বাস্থ্য দফতর থেকে বরাদ্দ
হয়েছে কিন্তু আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীরা জানায় যে এটা সম্পূৰ্ণ একটা মিথ্যা খবর এবং এই
ধরনের কোনও আইশোলেশন ওয়ার্ড আজও পর্যন্ত তৈরি করা হয়নি।
২৫শে অক্টোবর একটি গণকনভেনশন আয়োজিত হয় কলেজ
প্রাঙ্গণে এবং প্রিন্সিপালের পদত্যাগের দাবীতেই আওয়াজ উঠেছে। আজ আমরণ অনশনের ২৭তম
দিন…
Photo courtesy: https://www.facebook.com/SURGKMC/
I stand with the students !
ReplyDelete