AUKUS-QUAD: ভারতের ভবিষ্যৎ কি?

রূপক গায়েন 


১৮ই অক্টোবর ইজরায়েলে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউ.এ.ই (ইউনাইটেড অ্যারাব এমিরেটস), ভারত এবং ইজরায়েল- এই চারটি দেশের বিদেশমন্ত্রীর বৈঠকে ''কোয়াড টু - ফর ওয়েস্ট এশিয়া'' নামে একটি জোট তৈরি হয়। একটা দুটো ক্যানোপি দেওয়া ইস্যুকে বাদ রাখলে দেখা যাবে মূলত সামরিক জোট গঠন করাই এই কোয়াড তৈরীর মূল লক্ষ্য। লক্ষণীয়, ভারত ও ইজরায়েলে উগ্ৰ জাতীয়তাবাদের চাষ চলছে এবং মার্কিন তোষামুদে ইউ.এ.ই এই জোটের অংশ। জোট তৈরী হয়েছে এক বৃহৎ স্বার্থে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পরস্পর বিরোধী অবস্থান এবং সেটিকে কেন্দ্র করে যে মার্কিন-চীন সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধের বাতাবরণ তৈরী হয়েছে, সেই পরিপ্রেক্ষিতেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার ঘুঁটি সাজাচ্ছে। ফলস্বরূপ এই জোট। এইরকমই আরেকটি জোট তৈরী  হয়েছে সেপ্টেম্বরেই, AUKUS - অষ্ট্রেলিয়া, ইউ.কে. এবং অবশ্যই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। প্রশান্ত ও অ্যান্টার্ক্টিক মহাসাগরীয় অঞ্চলে নিজেদের দাদাগিরি ফলানোর জন্য এবং ওই অঞ্চলে মার্কিন আগ্ৰাসনের বিরোধিতায় পয়লা নম্বরে থাকা চীনের বিরুদ্ধে জোট গড়ে তোলাই  AUKUS-এর উদ্দেশ্য। এই সামরিক জোটের ফলে অষ্ট্রেলিয়া, ইউ.কে. এবং ইউ.এস.-এর মধ্যে পারমাণবিক তথ্য আদান প্রদান হবে এবং অষ্ট্রেলিয়াকে আটটি সাবমেরিন দেওয়া হবে, ফলে এই  জোটের মূল লক্ষ্য যে যুদ্ধভিত্তিক সেটা পরিষ্কার। এর ফলে একই সাথে বিশ্বব্যাপী পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের অঙ্গিকার লঙ্ঘিত হওয়ার পাশাপাশি ২০১৬তে হওয়া চুক্তি অনুযায়ী অষ্ট্রেলিয়ার ফ্রান্সকে দেওয়া ৬৬ বিলিয়ান মার্কিন ডলার মূল্যের ১২টি সাবমেরিনের বরাত এই জোট পরবর্তী পর্যায়ে খারিজ হয়েছে। ফলস্বরূপ, বিভিন্ন দেশের সঙ্গে অষ্ট্রেলিয়ার বাণিজ্যিক সম্পর্কের যে অবনতি হবে তা অভিপ্রেত। এ তো গেল অষ্ট্রেলিয়ার কথা, এবার আসি জোটের ফলে ভারতের কোনে আঙুল দরজায় চিপায় ঢুকে যাওয়ার পরিস্থিতি নিয়ে। কোয়াড তৈরি হওয়ার ফলে ভারত-ইরান সম্পর্কের অবনতি অবধারিত কারণ কোয়াড-এ রয়েছে ইজরায়েল যাদের সাথে ইরানের সম্পর্ক যথেষ্ট খারাপ। অর্থাৎ ভারতের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক একদিকে ক্ষুণ্ণ হতে চলেছে এবং অন্যদিকে মার্কিন তাবেদারিতে চীন বিরোধিতার আস্ফালনের সুযোগ পাবে গেরুয়া শিবির। অন্য জোট AUKUS তৈরি হয়েছে প্রশান্ত ও অ্যান্টার্ক্টিক মহাসাগর উপকূলবর্তী অঞ্চলে মার্কিন দাদাগিরি দেখানোর জন্য; এর প্রভাব বলয়ে ভারতীয় উপমহাদেশও পড়ে; অর্থাৎ একদিকে কোয়াড নামক সামরিক জোট গঠন যুদ্ধ পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিকভাবে ধুঁকতে থাকা ভারতকে মার্কিনীদের সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে বাধ্য করবে আবার মার্কিনীদের নিজস্ব পৃথক সামরিক জোট ভারতেরই সার্বভৌমত্ব হরণ করে নেওয়ার সম্ভাবনা রাখে। এই ধরনের জোট ভারতের জন্য সর্বগ্ৰাসী কারন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই বিড়াল তপস্বী।

Comments

  1. Bharat o kom biraltapaswi noy ,,Markin dadar chhoto bhai je !!

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

ফ্যাসিবাদের উত্থানের যুগে সুবিধাবাদের রমরমা

কমিউনিস্ট পার্টি ও তেলেঙ্গানা আন্দোলনের মহিলা কর্মীরা : কমঃ শর্মিষ্ঠা চৌধুরীর কলমে

কেন্দ্র সরকারের ‘জাতীয় শিক্ষা নীতি’ – একটি শিক্ষা বিরোধী ইস্তেহার