জন স্বাস্থ্য আন্দোলনে ট্রোজান ঘোড়া
ডাঃ ভাস্কর চক্রবর্তী
ট্রয়ের ঘোড়ার গল্প মনে আছে তো? কথিত যে গ্রীস এবং ট্রয়ের মধ্যে যুদ্ধে, দশ বছর দুর্গ ঘিরে রাখার পরেও ট্রয়ের দুর্গ জয় করতে পারেনি গ্রীসের বাহিনী। পরের কৌশল হিসেবে তারা ভান করে যে তারা যুদ্ধ ক্ষেত্র থেকে বিফল মনোরথ হয়ে, জাহাজ নিয়ে চলে যাচ্ছে। ট্রয়ের দুর্গের বাইরে, সমুদ্রতটে তারা রেখে গেছিল এক বিরাটাকার কাঠের ঘোড়া, যার মধ্যে লুকিয়ে ছিল বাছা বাছা কিছু গ্রীক যোদ্ধা। গ্রীকেরা চলে গিয়েছে ভেবে, ট্রয়ের নাগরিকেরা দুর্গের দরজা খোলে, কাঠের ঘোড়াটাকে দেখতে পায় এবং সেটাকে দুর্গের ভেতরে নিয়ে আসে। রাতের অন্ধকারে, ঘোড়ার মধ্যে থেকে গ্রীক যোদ্ধারা বেরিয়ে এসে দুর্গের দরজা খুলে দেয়। অন্যদিকে, ভান করে চলে যাওয়া বাকি গ্রীক যোদ্ধারা জাহাজ নিয়ে ফিরে আসে। এসে খোলা দরজা দিয়ে দুর্গের ভেতরে ঢোকে এবং ট্রয় নগরী ধ্বংস করে।
আজকের যুগে ট্রোজান বলতে বোঝায় আন্তর্জালে ঘুরে বেড়ানো এক ধরনের ভাইরাসকে। যাকে দেখতে একেবারেই আন্তর্জালের কোনও পেজ এর মতো, হয়ত কোনও গোটা ওয়েবসাইটের মতো, বা এ্যপের মতো। কিন্তু তার মধ্যে ঢুকলে, সে তার জাল বিস্তার করতে শুরু করবে আপনার কম্পিউটার, ফোন বা ওয়েবসাইটের মধ্যে। এবং আপনার তথ্য, আপনার সফটওয়্যার, সব নষ্ট এবং চুরি, দুইই করতে পারে। অর্থাৎ নেহাত, ভালোমানুষ বা বন্ধুর ভানে সে আপনার অপূরনীয় ক্ষতি করে দেবে।
এই ভান এর বিষয়ে আজকের যুগে আমাদের খুবই সতর্ক থাকা প্রয়োজন। আজকের দিনে আমাদের যোগাযোগ অনেকটাই আন্তর্জাল নির্ভর হয়ে উঠেছে, দূরভাষ নির্ভর হয়ে উঠেছে। মুখোমুখি যত কম দেখা হচ্ছে, ব্যক্তি মানুষকে জানা বোঝার সুযোগ তত কম হয়ে উঠছে। মাঝে যে প্রযুক্তির পর্দা থেকে যাচ্ছে, তাতে এই ভান এর সুযোগ অনেকটাই বেড়ে গেছে।
আন্তর্জাল ভিত্তিক সামাজিক মাধ্যম বহু ভানের বিপ্লবী, ভানের দরদী, এবং ভানের বোদ্ধাদের জন্ম দিয়েছে। ছটাক পরিমাণ কোনও কাজ করে সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করে সেটার গুরুত্ব বহুগুন বাড়িয়ে তোলা হচ্ছে। বিভিন্ন সামাজিক সমস্যার প্রতি দরদী হয়ে দেখা দিয়ে, আমাদের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার মেকী গণতন্ত্রের বিরোধিতা করার নামে, স্বৈরতান্ত্রিক শক্তি মিশে যাচ্ছে এবং থাকছে মানুষের মধ্যে, গন আন্দোলনের মধ্যে। মানুষকে বিভ্রান্ত করার প্রতিটা সুযোগ ব্যবহার করছে। এটা পদ্ধতি হিসেবে বেশ প্রাচীন। জন বিরোধী কোনও পদক্ষেপ নিলে, রাষ্ট্র এমন কিছু ব্যবস্থা করে রাখে যাতে জনমানুষ এক হয়ে আন্দোলনে সামিল হতে না পারে। রাজতন্ত্রের সময় থেকেই এ ব্যবস্থা রয়েছে। কৌটিল্যের কূটনীতিতেই রয়েছে এর বিবরণ।
সামাজিক মাধ্যমে প্রচার গোয়েবলসীয় ঢঙে করাটাও সহজ। গোয়েবলসকে মনে আছে তো? হিটলারের প্রচার মন্ত্রী ছিলেন। তো তার প্রচার এর কায়দা ছিল, একটি কথা বহু ভাবে, বহু বার এবং বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ ভানের মানুষদের কাছ থেকে এবং বিশেষ জ্ঞানের ভানে প্রচারিত করা, যাতে ডাহা মিথ্যা কথাও সত্য বলে মনে হয়। আজকের দিনে, সামাজিক মাধ্যমে, এটা করা আরো সহজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর উদাহরণ আমরা দেখেছি আমাদের দেশের একটি উগ্রজাতীয়তাবাদী, হিন্দুত্ববাদী, স্বৈরতান্ত্রিক সংগঠনের তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের (আই টি সেল) কার্য্য কলাপের মাধ্যমে।
এই যে প্রযুক্তির প্রতি নির্ভরতা, একে কিছু নিয়ন্ত্রণ করে আমরা চলতে পারি, কিন্তু একে বর্জন করা যাবে না, আজকের দুনিয়ায়। সতর্কতার প্রয়োজনীয়তা তাই আজ আরো বেশী। কিন্তু কি বিশেষ সতর্কতার কথা বলতে চাইছি? কাকেই বা ট্রোজান ঘোড়া বলে চিহ্নিত করছি?
কোভিড এর
অতিমারী যে কর্পোরেট পুঁজির,
সাম্রাজ্যবাদীদের একটি নির্মান, সেটা আজ স্পষ্ট হয়ে গেছে। স্পষ্ট
হয়ে গেছে, কারণ
গত এক দশকের এ সংক্রান্ত ইতিহাস সামনে চলে এসেছে, কারণ এটাও যে সাম্রাজ্যবাদীদের মুখপাত্র
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম এর ডিরেক্টর ক্লস শোয়াব বই প্রকাশ করে ঘোষণা করেছেন যে এই অতিমারী
পরিস্থিতি, চতুর্থ
শিল্প বিপ্লব ঘটাতে এক বিরাট ভূমিকা নিয়ে চলেছে। কর্পোরেট তাত্ত্বিকদের মুখপাত্র হিসেবে
তিনি এটা বেশ গর্বের সঙ্গেই ঘোষণা করেছেন।
সাম্রাজ্যবাদীরা যখন আর একটা শিল্প বিপ্লব ঘটাতে চলেছে, বা ঘটিয়ে চলেছে, সেটা যে বৃহৎ সাম্রাজ্যবাদী পুঁজির (অর্থাৎ বৃহৎ, একচেটিয়া, কর্পোরেট পুঁজির) অতি মুনাফার জন্য ঘটিয়ে চলেছে, তাতো বলাই বাহুল্য। তাতে যে মাঝারী পুঁজি, দেশীয় কো অপারেটিভ পুঁজি, ক্ষতিগ্রস্ত হবে, ক্ষুদ্র পুঁজি ও কৃষক ও শ্রমজীবী মানুষেরা যে অস্তিত্বের সংকটে পড়বে, সে তো ইতিহাসের শিক্ষা। এবং এরই ফলে যে একচেটিয়া, বৃহৎ, কর্পোরেট পুঁজি এবং তাদের দ্বারা পরিচালিত রাষ্ট্র, জনমানুষের রোষের মুখে পড়বে, সেকথাও তারা আঁচ করে নিয়েছিল বহু আগেই। কিন্তু শুধু আঁচ করে নিয়ে তো তারা বসে থাকবে না, মানুষের রোষের মুখে যাতে তারা না পড়ে, বা পড়লেও যাতে উদ্ধার পায়, তার পরিকল্পনা যে তারা করে রাখবে, একথা বলাই বাহুল্য।
একথা কর্পোরেট তাত্ত্বিকদের পক্ষে বোঝা খুবই সহজ যে তারা যে বিশ্বজোড়া বিশাল পরিকল্পনা নিয়েছে, গোটা মানবজাতি যার ফলে সংকটে পড়বে এবং বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার মধ্যে পড়বে, সেই পরিকল্পনা গোপন রাখা তাদের পক্ষে সম্ভব হবে না। এত বিশাল এক পরিকল্পনা গোপন রাখা সম্ভব হয়না। এই পরিকল্পনা ফাঁস হয়ে গেলে, ফাঁস যারা করে দেবে তাদের ষড়যন্ত্র তাত্ত্বিক বলার এবং সেই বদনাম দিয়ে তাদের হাস্যাস্পদ করে তোলার রাস্তা তারা করে রেখেছিল তাই আগে থেকেই। যাতে এক দিকে কর্পোরেট প্রচার মাধ্যমের কোভিড অতিমারীর আতংকের নির্মান আর একইসাথে, এই নির্মান পরিকল্পনা ফাঁস করে দেওয়া মানুষজনকে ষড়যন্ত্র তাত্ত্বিক বলে প্রচার, এই দুইয়ের যাঁতাকলে পড়ে, জনমানুষ সত্যটা থেকে দুরেই থেকে যান।
কর্পোরেট তাত্ত্বিকেরা এটাও তাদের অভিজ্ঞতা থেকে জানে যে, যে শিবির থেকে জনমানুষকে সঙ্গে নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে আওয়াজ উঠবে, স্বভাবগত ভাবেই সেটা হোলো বামপন্থীদের শিবির। আর এই সুযোগে পৃথিবী ব্যাপী বামপন্থীরা যদি ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলতে পারে তাহলে, আবার পৃথিবী জুড়ে গন জাগরণের ঢেউ উঠে যেতে পারে, সাম্রাজ্যবাদীরা, একচেটিয়া বৃহৎ পুঁজিবাদীরা যাকে ভয় করে চলে।
এই সম্ভাবনা এড়াতে তাই দুই ধরনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। এক, বামপন্থীদের কাছে বিজ্ঞানের দোহাই পেড়ে, বিজ্ঞানের অগ্রগতির দোহাই পেড়ে এটা বোঝানো যে কত অবিশ্বাস্য দ্রুতগতিতে আজকের বিজ্ঞান কোভিডের জিন ভিত্তিক পরীক্ষা, এবং তার টিকা তৈরী করে ফেলতে পারে এবং করেছে। আর দুই, কোভিডের অতিমারীর আতংকের নির্মানের কিছু কিছু তথ্য ওষুধ কর্পোরেট এর সাম্রাজ্য নিজেরাই বের করে দিয়েছিল বিশেষ কিছু ব্যক্তি, বিশেষ কিছু সংগঠনের মাধ্যমে। সেই সব ব্যক্তি এবং সংগঠন শুধু যে বামপন্থীদের বিরোধী তাই নয়, তারা স্বভাবগত ভাবেই বিজ্ঞানের বিরোধী অবস্থান নেয়, প্রযুক্তিমাত্রকেই বর্জনীয় বলে প্রচার করে এবং সামাজিক অবস্থান হিসেবে জনগণের মধ্যে বিভাজনকে মদত দেয়, রাষ্ট্রের জনবিরোধী অবস্থানকে সরাসরি বা বকলমে স্বীকৃতি দেয়, এবং বিভিন্ন স্বৈরতান্ত্রিক শক্তির অবস্থানকে সরাসরি বা ঘুরিয়ে সমর্থন করে। এই সব তথ্য, এবং অতিমারীর আতংকের নির্মানের কিছু তত্ত্ব, এই সব ব্যক্তি এবং সংগঠনের মাধ্যমে আসার ফলে, বামপন্থীদের মধ্যে দ্বিধা এবং সংশয় তৈরী করতে তারা সফল হয়, ভুল বোঝাতে সক্ষম হয়। ভুল বোঝানোতে এতটাই তারা সফল হয়েছিল যে এক বড় অংশের বামপন্থীরা এখনো বিশ্বাস করে যে কোভিড অতিমারীর আতংকের নির্মানের পরিকল্পনা বলে কিছু নেই, এগুলো পৃথিবী ব্যাপী দক্ষিণপন্থী, স্বৈরতান্ত্রিক শক্তির ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব।
এই বিশ্বাসে ইন্ধন দেওয়ার জন্য পৃথিবী ব্যাপী আরও একটা তৃতীয় পরিকল্পনার সুচারু ভাবে রূপায়ন হয়ে চলেছে। কর্পোরেট প্রচার মাধ্যমে, কর্পোরেট নিয়ন্ত্রিত সামাজিক মাধ্যমে এক অর্ধ সত্য প্রচার হয়ে চলেছে, যা পুরো মিথ্যার থেকেও ভয়ঙ্কর। সেই সব মাধ্যমে প্রচার হচ্ছে যে হ্যাঁ, কর্পোরেট পুঁজি জনগণের ওপর এই সুবিশাল পরিকল্পনা করেছে, কিন্তু এই পরিকল্পনার মূলে রয়েছে পৃথিবী ব্যাপী 'এলিট বামপন্থীরা'যার নেতৃত্বে রয়েছে চীন এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এই প্রচার বেশ হাস্যরসের উদ্রেক করতে পারে, হাল্কা চালে। কিন্তু এর বিপদটা বেশ বড়। এই প্রচারের সঙ্গে যদি এক করে দেখানো যায়, যারা কোভিড অতিমারীর আতংকের নির্মানের বিষয়ে প্রচার করছেন তাদের, তাহলে তাদের আসল কথাগুলো এই বক্তব্যের সাথে একই পঙক্তিতে ফেলে, যুক্তিগ্রাহ্য নয় বলে উড়িয়ে দেওয়াটাও বেশ সহজ কাজ।
আমাদের দেশে এমন কোন ব্যক্তি এবং সংগঠন আছে যারা একচেটিয়া, বৃহৎ, কর্পোরেট পুঁজির বন্ধু শক্তি ? তালিকা তৈরী করার চেয়ে এদের কিছু গুন, কিছু লক্ষণ, কিছু বৈশিষ্ট্য ইত্যাদি বুঝে নেওয়া ভালো যার ভিত্তিতে এমন ব্যক্তি ও সংগঠনকে চিহ্নিত করা সম্ভব। বৃহৎ, একচেটিয়া পুঁজির বন্ধু শক্তি সব সময়েই স্বৈরতান্ত্রিক শক্তি বা তার বন্ধু হয়ে থাকে। গনতান্ত্রিক হতে গেলে তাকে একচেটিয়াপনার ধারনার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে। এবং এই বিশেষ ক্ষেত্রে সেই শক্তি, সেই সংগঠন, বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির মাধ্যমে মানবসভ্যতার অগ্রগতির ধারনাটারই বিরোধী অবস্থান নেবে। ওপরে বর্ণিত পৃথিবী ব্যাপী দুই নম্বর পরিকল্পনার অংশ হিসেবে।
কোভিড অতিমারীর রাষ্ট্রীয় এবং কর্পোরেট ভাষ্যের বিরুদ্ধে পথে ঘাটে আন্দোলনে আছে, কখনও পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হচ্ছে, আর টি আই করছে, এবং সব ধরনের সভা সমিতিতে নিজেদের উপস্থিতি রাখছে, এমন একটা সংগঠনকে দেখলে, বা এমন কিছু যুবককে দেখলে আপনি কি প্রশংসা না করে পারবেন? যদি আপনিও কোভিড অতিমারীর রাষ্ট্রীয় এবং কর্পোরেট ভাষ্যের বিরুদ্ধে থাকেন? পারবেন না।
কিন্তু এই প্রশংসনীয় উপস্থিতির সঙ্গে সঙ্গে যদি দেখেন যে এনারা টিকা মাত্রেরই বিরোধীতা করছেন, কোভিড টিকার বিরোধিতা করছেন শুধুমাত্র এর মধ্যে বিশেষ কোনও পশুর রক্ত আছে এই দাবী করে, কোভিড টিকার বিরোধীতা করে আবার এর কিছু অবৈজ্ঞানিক চিকিৎসা পদ্ধতির নিদান দিচ্ছেন, কোভিড অতিমারীকে একদিকে অস্বীকার করছেন আবার অন্যদিকে দাবী করছেন কোভিড অতিমারীর ন্যাচুরোপ্যাথিক চিকিৎসা, আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান বা স্বাস্থ্য পরিষেবা ব্যবস্থা গড়ে ওঠাটাকেই অমানবিক বলে দেগে দিচ্ছেন, চিকিৎসা ব্যবস্থা যে রাষ্ট্রের দ্বায়িত্ব হওয়া উচিত তার উল্টোদিকে প্রচার নিয়ে গিয়ে বলছেন যে চিকিৎসা হোলো ব্যক্তিগত দ্বায়িত্ব, অর্থাৎ চিকিৎসা ক্ষেত্র থেকে রাষ্ট্র যে হাত উঠিয়ে নিচ্ছে এবং বৃহৎ পুঁজির চিকিৎসা ব্যবসার ক্ষেত্র তৈরী করে দিচ্ছে তাকে সমর্থন দেওয়া, যদি আপনি দেখেন যে গোমূত্র দিয়ে প্রায় সব রোগের চিকিৎসার নিদান দেওয়া হচ্ছে, তখন আপনার কি আর এই সংগঠনকে বা এই যুবকেদের দেখলে প্রশংসনীয় মনে হবে? আপনি যদি বিজ্ঞানকে ভিত্তি করে জন স্বাস্থ্য আন্দোলনে থাকতে চান, বিজ্ঞানকে জনমানুষের প্রয়োজনে ব্যবহার করতে চান, তাহলে তো এদের আর আপনার প্রশংসনীয় মনে হবে না। ঠিক এই কারণেই জনস্বাস্থ্য আন্দোলনের সঙ্গে একই সাথে যারা কোভিড অতিমারীর রাষ্ট্রীয় ও কর্পোরেটিয় ভাষ্যের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত তারা কোন ভাষ্য থেকে এর বিরোধীতা করছেন, জনস্বাস্থ্য কর্মীদের জেনে রাখতে হবে সেটাও। বিজ্ঞানকে জনমানুষের প্রয়োজনে লাগাতে চাইলে, তার ভিত্তিতে আন্দোলন করতে চাইলে, এদের কখনোই জনস্বাস্থ্য আন্দোলনের সংগঠনে স্থান দেওয়া যেতে পারেনা। বড়জোর একই দাবীতে আন্দোলন হলে একসাথে আন্দোলন হতে পারে। সেটাও নির্ভর করবে দাবী এবং আন্দোলনের ধরনের ওপর।
কিন্তু এরা জনস্বাস্থ্য আন্দোলনে ঢুকতে চায় কেন? নিজেদের সংগঠন থাকা সত্ত্বেও? এই প্রশ্নেই আমি আপনাকে ফিরে যেতে বলবো যে পরিকল্পনাগুলোর কথা আমরা আলোচনা করেছিলাম সেই বিষয়ে। জনস্বাস্থ্য আন্দোলনকে যদি দেখানো যায় অপবিজ্ঞানের আঁতুড় ঘর, আপনার সংগঠনের মধ্যে ঢুকে যদি কব্জা করে নেওয়া যায় সেটাকে, এবং সেখান থেকে ছড়ানো যায় অপবিজ্ঞানের নানা তত্ত্ব, তাহলে জন মননে আপনি হেয় হবেন, বিশ্বাসযোগ্যতা হারাবেন, এবং আপনার আন্দোলনের সাথে মানুষ আর থাকবে না। আপনার আন্দোলন, সংগঠন সবই জলাঞ্জলি দিতে হবে। এমনটা করার উদ্দেশ্য কাদের থাকতে পারে? কোভিড অতিমারীর রাষ্ট্রীয় ও কর্পোরেটিয় ভাষ্যের পক্ষের গুপ্ত যোদ্ধাদের। ট্রোজান ঘোড়ার যোদ্ধাদের মতই। বন্ধু বেশে যারা আপনার আন্দোলন ছেয়ে ফেলবে, এবং আপনাকে উপহাসের পাত্রে পরিণত করবে।
এই রকম যে সংগঠনকে বা যেসব মানুষজনকে আমরা আমাদের আশেপাশে দেখতে পাবো, তাদের ব্যক্তিগত এবং সাংগঠনিক ইতিহাস জানার চেষ্টা করাটাও আমাদের ভবিষ্যতের কর্মপন্থার জন্য জরুরী। এমন যেন না হয় যে, যে একচেটিয়া বৃহৎ, কর্পোরেটিয় পুঁজির বিরুদ্ধে আমরা লড়তে নেমেছি, তাদের যে রাজনৈতিক রূপ, যাকে এক কথায় ফ্যাসিবাদ বলে অভিহিত করা যায়, সেই ফ্যাসিবাদী কোনও সংগঠনের সদস্য বা সমর্থকদের জনস্বাস্থ্য আন্দোলনে ঢুকতে দিয়ে ভবিষ্যতে নিজেদের সর্বনাশের পথ খুলে দিলাম।
Comments
Post a Comment