কেউ গা করে না

বিমল কান্তি দাশ গুপ্ত

মার্চ মাসে রাজ্যে মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হয়েছে। পরীক্ষায় পরীক্ষার্থীদের একটা ক্ষুদ্র অংশ কিছু অসাধু উপায়ের সাহায্য নেয়। এই পদ্ধতির সাধারণ নাম টুকলি। টুকলি আর পরীক্ষা সমবয়সী। 

টুকলি হরেক রকমের। যেমন নিজের দেহে কিছু নথি গোপনে বহন করা। পাশের ছাত্রের খাতা দেখে নকল করা। অথবা তাকে প্রশ্ন করে বিরক্ত করা। বাইরে থেকে নকল সরবরাহ করা। সমাজের আর সকল বিষয়ের মতো এখানেও বদল ঘটেছে। টুকলি আধুনিক হয়েছে। 

বাইরে মাইক লাগিয়ে হল থেকে পাচার হওয়া প্রশ্নের উত্তর ঘোষণা করা। প্রশ্ন ফাঁস হয়ে যাওয়া। ঘন ঘন টয়লেট যাওয়া। সেখানে যোগাযোগের মাধ্যমে নিজের সমস্যার সমাধান খোঁজা। কারও ফেলে যাওয়া চোথার মধ্যে নিজের প্রয়োজনে লাগতে পারে এমন চোথার সন্ধান করা। চোথা হল উত্তর লেখা ছোট কাগজের টুকরো। 

এ-ও এখন অতীত। এখন টুকলি হয় মোবাইল ফোন বা আরও নানা রকমের ইলেকট্রনিক ডিভাইসের মাধ্যমে। এই টুকলি শুধু যে স্কুল কলেজের পরীক্ষার্থীদের মাঝে সীমাবদ্ধ তা নয়। চাকুরি প্রার্থীদের সাধারণ পরীক্ষাতেও এর বহুল প্রচলন। 

এর প্রতিরোধের প্রথম ব্যবস্থা, পরীক্ষার হলে গার্ড বা নজরদারির মোতায়েন। বিদ্যালয় স্তরে শিক্ষকরাই এই কাজ করেন। সাধারণ পরীক্ষার বেলায় বাইরে থেকে নজরদার নিয়োগ করা হয়। এর জন্য বাড়তি খরচ বরাদ্দ করা থাকে। নজরদারের পারিশ্রমিক হিসেবে তা ব্যয় করা হয়। এ এক বিপুল আয়োজন। পরীক্ষার প্রশ্ন করা থেকে ফল প্রকাশ পর্যন্ত যে কোনো স্তরে দুষ্কর্ম ঘটার সম্ভাবনা। কর্তৃপক্ষের এ এক বিষম দায়। 

আসি এবার হাল কথায়, এবারের পরীক্ষায় টুকলি রোধের উপায় হিসেবে কর্তৃপক্ষ যে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন,- পরীক্ষার হলে মোবাইল ব্যবহার করা চলবে না। ইলেকট্রনিক ঘড়ি ব্যবহার নিষিদ্ধ। শুধু পরীক্ষার্থী নয় সংশ্লিষ্ট নির্দিষ্ট কয়েকজন বাদে সকলের জন্য এই ব্যবস্থা। এতেও নিরাপদ বোধ করছেন না নিজেদের। তাই গোটা এলাকায় নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নেট পরিষেবা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। আয়োজন দেখলে সহজে অনুমান করা যায় কী পরিমাণ দুষ্টু ছাত্র উৎপাদন করে চলেছে রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থা। 

এবার অন্য কথা। নেট তো শুধুমাত্র পরীক্ষায় টুকলি করতে ব্যবহার হয় না। পৃথিবীটারই তো আধুনিক নাম নেটদুনিয়া। তা হলে অফিস আদালত থানা পুলিস হাসপাতাল ব্যাংক এমনই নিত্য জরুরি যে সব পরিষেবা নেট নির্ভর সেগুলো অচল করে দেবার অর্থ কী হতে পারে। যারা পরীক্ষার সঙ্গে যুক্ত ন’ন তাদের জন্য এই দুর্ভোগ কেন। উন্নত প্রযুক্তির যুগে হলের ভিতরেই উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে দুষ্কর্ম অনায়াসেই সনাক্ত করা যেতে পারে। এত ঢাক ঢোল পেটাতে হয় না। ছাত্র শিক্ষক অভিভাবক ইস্তক বিদ্যাবিভাগের কর্মী সকলকে এমন ভাবে অপমান অশ্রদ্ধা করবার স্পর্ধাই তো প্রমাণ করে সমাজটা দুর্বৃত্তদের দখলে চলে গেছে। সব জানা। সবাই জানেন। কেবল কেউ গা করেন না। 

Picture Courtesy: Times of India



Comments

Popular posts from this blog

ফ্যাসিবাদের উত্থানের যুগে সুবিধাবাদের রমরমা

ঘটনার বিবরণ নয়, উপলব্ধি জরুরী; প্রসঙ্গ আর.জি.কর

কর্পোরেট হাঙরদের হাত থেকে লাদাখকে বাঁচাও!