রাজ্যের হবু পিএসি চেয়ারম্যানের কিসসা...

মৌ বাছার


সাম্প্রতিক সংবাদমাধ্যমে শোনা যাচ্ছে যে নতুন পিএসি চেয়ারম্যান হতে চলেছেন কৃষ্ণ কল্যাণী। পিএসি অর্থাৎ পাবলিক একাউন্টস কমিটির চেয়ারম্যান। আগে ছিলেন মুকুল রায় যিনি তৃণমূল থেকে বিজেপিতে গিয়েছিলেন, আবার তৃণমূলে ফিরে এসেছেন এবং দলত্যাগ আইন প্রয়োগ হওয়ার ঝামেলার কারণে তিনি সেখান থেকে সরেও দাঁড়িয়েছেন। এই কৃষ্ণ কল্যানী, যিনি এখন এই আসনে বসতে চলেছেন তারও ইতিহাস একই। তিনি তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যান এবং বিজেপির টিকিটে ভোটে দাঁড়িয়ে রায়গঞ্জ বিধানসভা থেকে বিধায়ক নির্বাচিত হন। কিন্তু যখন তিনি দেখেন যে সামগ্রিকভাবে তৃণমূল সরকার গঠন করতে সফল হয়েছে তখন আবার তিনি তৃণমূলে ফিরে আসেন। তার ওপরেও দলত্যাগ আইন প্রয়োগ করার চাপ বাড়াচ্ছে বিজেপি কিন্তু এর মাঝেই তাকে পিএসি চেয়ারম্যান করা হল। আজকের এই প্রবন্ধ এই চর্বিতচর্বণকে নতুন করে আবার লেখ্য রূপ দেওয়ার জন্য নয়, বরং এটা মনে করিয়ে দিতে যে এই কৃষ্ণ কল্যাণী আসলে কে? 

যে ব্যাক্তি পাবলিক একাউন্টস চেয়ারম্যান হয়ে বসলেন, সেই কৃষ্ণ কল্যাণী হচ্ছেন দক্ষিণ দিনাজপুরের কল্যাণী সলভেক্স রাইস ব্র্যান মিলের মালিকপক্ষের একজন। গতবছর অর্থাৎ ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে এই রাইস ব্র্যান মিলের শ্রমিক ইউনিয়নের সদস্যরা আন্দোলনে নামেন কারণ তাদেরই এক সংগঠককে কারখানা বহির্ভূত কারণে ছাঁটাই করে দেওয়া হয়। তাদের দীর্ঘদিন ধরে মজুরি চুক্তি রিনিউয়ালে দেরি করা হচ্ছিল এবং লেবার কমিশনের কাছে তারা এ সংক্রান্ত ডিসপিউট সম্পর্কে একটা চিঠি পাঠানোর পরে যখন ত্রিপাক্ষিক বৈঠক হয়, তখনও কোন ফয়সালা হয়নি। ফয়সালা না হওয়ায় টিইউসিআই-এর নেতৃত্বে শ্রমিকরা মিলের গেট অবরোধ করেন এবং সেই অবরোধ তোলার জন্য তৃণমূলের প্রায় আড়াইশো'জন গুন্ডা লেলিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র সহযোগে আন্দোলনরত শ্রমিকদের উপর হামলে পড়ার পরিস্থিতি তৈরি করে কৃষ্ণ কল্যানী। অনেক শ্রমিকরা গুরুতর আহত হন এবং এই পুরো সময়টা জুড়ে পুলিশ ছিল নীরব দর্শক। এইরকম একটা পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে তৃণমূলের সাহায্যে তিনি কারখানার শ্রমিক আন্দোলনকে দমন করেন এবং তারপরে বিজেপিতে চম্পট দেন। আবার যখন তিনি দেখেন যে তৃণমূল সরকার গঠন করছে, তখন আগের দলে ফিরে আসেন। 

এই সলভেক্স কারখানাতে ২০১৯ সালে শ্রমিক ইউনিয়নের সাথে মালিকপক্ষের বা কর্তৃপক্ষের একটা ১০% বেতন বৃদ্ধির কথা হলেও পরবর্তীকালে দেখা যায় যে বেতন বৃদ্ধি তো দূরের কথা, লকডাউন চলাকালীন শ্রমিকরা ন্যূনতম বেতনও পায়নি। পরবর্তী সময়ে এই দাবী সংক্রান্ত আন্দোলন চলাকালীন সেখানকার টিউসিআই-এর যে শ্রমিক ইউনিয়নের দপ্তর ছিল, সেই দপ্তরও ভাঙচুর করা হয় এবং গুন্ডারা সেখানেও ঝাঁপিয়ে পড়ে। তৃণমূলের শ্রমিক ইউনিয়নে শ্রমিকদের সকলকে যুক্ত হতে হবে, এরকম চাপও দেওয়া হয়েছিল। এইরকম একজন মানুষ যিনি গুন্ডা লেলিয়ে শ্রমিকদের ওপর অত্যাচার চালান নিজের মুনাফা অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য, তাকেই আবার পাবলিক অ্যাকাউন্টস-এর চেয়ারম্যান করা হল। যারা পাবলিক, তারাই বিচার করুন যে কে এই আসনে বসে তাদের শোভা বাড়ালেন...

সলভেক্স কারখানার পূর্বতন আন্দোলনের খবরের লিঙ্কhttps://thediligent2018.blogspot.com/2021/01/blog-post_6.html?m=1

Comments

Popular posts from this blog

বর্তমান সময়ে বাম ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা

Polemics on 'Fractured Freedom': C Sekhar responds to Kobad Ghandy's views

আম্বেদকরের চোখে - কেন ব্রাহ্মণ্যবাদ শাকাহারী পথ গ্রহণ করল? গো ভক্ষণ নিষিদ্ধকরণের সাথে অস্পৃশ্যতার কি সম্পর্ক রয়েছে?