ফরোয়ার্ড ব্লকের পতাকা পরিবর্তনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ – সাক্ষাৎকারে আলি ইমরান রামজ ভিক্টর

সাম্প্রতিক ফরোয়ার্ড ব্লকের পতাকা থেকে কাস্তে-হাতুড়ি চিহ্ন সরানো নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। দলের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে সাসপেন্ড হয়েছেন কমঃ আলি ইমরান রামজ ভিক্টর। তিনি সারা ভারত ফরোয়ার্ড ব্লক-এর তরফে পশ্চিমবঙ্গে ২০০৯ থেকে ২০১১ গোয়ালপোখড় এবং ২০১১ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত চাকুলিয়া বিধান সভা কেন্দ্রের বিধায়ক ছিলেন। বর্তমানে তাঁর নেতৃত্বে তৈরি হয়েছে আজাদ হিন্দ মঞ্চ। নীচে রইল ডিলিজেন্ট পত্রিকার কাছে কমঃ ভিক্টর-এর দেওয়া সাক্ষাৎকারের লিখিত রূপ। 

ফরোয়ার্ড ব্লকের পতাকা থেকে কাস্তে-হাতুড়ি সরানোর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ – সাক্ষাৎকারে প্রাক্তন বিধায়ক আলি ইমরান রামজ ভিক্টর 


১. ফরোয়ার্ড ব্লকের পতাকা থেকে কাস্তে-হাতুড়ি চিহ্ন সরিয়ে দেওয়া হল কেন? 

ফরোয়ার্ড ব্লকের পতাকা থেকে কাস্তে-হাতুড়ি চিহ্ন সরাবার যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, এটা পার্টি সংবিধানের বিরুদ্ধ। পার্টিতে যে গণতন্ত্র নেই, তা পার্টির পতাকা পরিবর্তনের সিদ্ধান্তের মধ্যে দিয়ে প্রমাণ হয়েছে। ১৯৫২ সালে নির্বাচন কমিশন ফরোয়ার্ড ব্লকের যে পতাকাকে রেজিস্টার করেছিল তাতে লাল রঙের ব্যাকগ্রাউন্ডে কাস্তে হাতুড়ি সমেত জাম্পিং টাইগার ছিল। আজকে যে পতাকা পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হল, তাতে পার্টি নেতৃত্ব নীচু তলাকে আলোচনা করার কোনও সুযোগই দিল না। কোনও জেলা জানত না, এই নিয়ে জেলা স্তরে কোনও আলোচনাও হয়নি। পতাকা পরিবর্তন করার ক্ষেত্রে সকল দলীয় কর্মীদের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে কোনও আপত্তির জায়গা ছিল না। কিন্তু ফরোয়ার্ড ব্লকের এই পতাকা নিয়েই সকলে এতদিন লড়াই করেছেন, অনেকে বিধায়ক, সাংসদ, রাজ্য সভার সদস্য, পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য হয়েছেন… এই পতাকা তলেই ফরোয়ার্ড ব্লকের তৎকালীন নেতৃত্ব দিয়েছেন কমঃ অশোক ঘোষ, কমঃ চিত্ত বসু, কমঃ হেমন্ত বসু। তাঁদের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা ফরোয়ার্ড ব্লকের আন্দোলন কর্মসূচী পালন করতে গিয়ে হাজার হাজার কর্মী শহীদ হয়েছেন। সেই সকল শহীদদের পরিবারের কাছে আমরা আজ কি বলব? যে পতাকা নিয়ে তাঁরা শহীদ হয়েছেন, যে নীতি আদর্শকে সামনে রেখে লড়াই করেছেন, যাদের নেতৃত্বে লড়াই করেছেন, তাঁরা সবাই ভুল? আজকে বর্তমান নেতারা তাঁদেরকে ভুল প্রমাণ করতে চাইছে। ফরোয়ার্ড ব্লকের পতাকার ইতিহাস আছে। এই পতাকা ১৯৪৭ সালে জব্বলপুরে পার্টির প্রথম সম্মেলনের মধ্যে দিয়ে গৃহীত হয়েছিল, অর্থাৎ লাল রঙের হবে, জাম্পিং টাইগার এবং কাস্তে হাতুড়ি থাকবে। এর উদ্দেশ্য ছিল শ্রেণী সংগ্রামের দ্যোতনা দেওয়া। শ্রমিক ক্ষেত মজুরের পরিচায়ক হিসেবে কাস্তে হাতুড়ি চিহ্ন রাখা হয়েছিল। ফরোয়ার্ড ব্লকের মতাদর্শ হল মার্কসবাদ, বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র এবং শ্রেণী সংগ্রাম। কিন্তু বর্তমান নেতারা দলের সেই শ্রেণী সংগ্রামের পরিচয়কে মুছে দিতে চাইছে। আমরা এর বিরোধিতা করছি। ২০১৬ সাল পর্যন্ত কমঃ অশোক ঘোষ জীবিত থাকাকালীন আমাদের বর্তমান অল ইন্ডিয়া জেনারেল সেক্রেটারি কমঃ দেবব্রত বিশ্বাস এবং বর্তমান রাজ্য সম্পাদক নরেন চ্যাটার্জী ফরোয়ার্ড ব্লকের পতাকা পরিবর্তনের কোনও আলোচনা করেননি। কোনও সভা, সম্মেলন বা কাউন্সিলে কোনও আলোচনা তাঁরা করেননি। কমঃ অশোক ঘোষ জীবিত থাকাকালীন জননেতা কমঃ কমল গুহ এবং মুর্শিদাবাদের কমঃ জয়ন্ত রায় যিনি ফরোয়ার্ড ব্লকের তরফে রাজ্য সভার সদস্য ছিলেন, তাঁরা একবার পতাকা থেকে কাস্তে হাতুড়ি সরানোর প্রস্তাব দিয়েছিলেন। সালটা সম্ভবত ১৯৯৭। সেই সময়ে বর্তমান অল ইন্ডিয়া জেনারেল সেক্রেটারি কমঃ দেবব্রত বিশ্বাস এবং বর্তমান রাজ্য সম্পাদক কমঃ নরেন চ্যাটার্জী এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছিলেন। এনারাই তখন বলেছিলেন যে এই চিহ্ন আমাদের বামপন্থী এবং শ্রেণী সংগ্রামের মতাদর্শের পরিচায়ক। তাহলে কমঃ অশোক ঘোষকে খুশী করার জন্যই কি কেবল তাঁরা এই অবস্থান নিয়েছিলেন? সেদিন যদি তাঁরা ঠিক কাজ করে থাকেন, তাহলে আজকে ভুল করছেন… নইলে, যদি আজ ঠিক কাজ করে থাকেন, তাহলে বিগতদিনে তাঁরা ভুল করেছেন। এনারা নিজেদের ইচ্ছে মতন ঠিক করবেন, ভুল করবেন, যাদের নীতি আদর্শ মেনে ফরোয়ার্ড ব্লকের কর্মীরা শহীদ হয়েছেন, তাঁদের ভুল প্রমাণ করবেন, আর ফরোয়ার্ড ব্লকের ইতিহাস মুছে দিয়ে নতুন ইতিহাস লিখতে যাবেন, এটা মেনে নেওয়া যায় না। 

২. আপনাদের প্রতিবাদ কি পার্টির সংখ্যাগরিষ্ঠের অবস্থানকে দর্শায়? 

সংখ্যাগরিষ্ঠতা আমাদের দিকে আছে। ১২টা জেলা আমাদের সমর্থনে আছে। যেদিন পতাকা পরিবর্তন নিয়ে রাজ্য কাউন্সিলের মিটিং হয়, সেই মিটিং-এ প্রতিবাদ হয়। রাজ্য সম্পাদক তাঁর বক্তব্য আরম্ভ করতে গিয়ে বলে বসেন যে যারা পক্ষে আছে কেবল তারাই বক্তব্য রাখবে, বাকিদের বলার প্রয়োজন নেই। তিনি এই কথা বলার পরে সেই মিটিং-এ বিরোধ হয়। আমাদের মত রাখার অধিকার না থাকলে পার্টিতে গণতন্ত্র কোথায়? – এই কথা বলে কাউন্সিল মিটিং থেকে প্রায় ৪০% সদস্য বেরিয়ে আসেন। বাকিদের নিয়ে নেতৃত্ব ভোট করেন। ভোটাভুটির সময়ে পতাকা পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত যারা নিয়েছেন, তাঁরা সংখ্যালঘু হয়ে যান। সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য পূর্বতন পতাকা বহাল রাখার পক্ষে ভোট দেন। যারা বেরিয়ে গেলেন তাঁদের সাথে আলোচনা না করে আর যে সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ বিরুদ্ধে ভোট দিলেন তাঁদের মতকে গুরুত্ব না দিয়ে ওনারা রাজ্য কাউন্সিলে পতাকা পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত পাশ করিয়ে সেন্ট্রাল কাউন্সিলে যান। সেখানেও পতাকা পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত পাশ করিয়ে নেন। এই কারণেই আমাদের বিরোধিতা। পার্টির সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ আমাদের দিকে রয়েছে। ২রা জুলাই কমঃ অশোক ঘোষের জন্মদিনে আমরা কলকাতা জেলায় মিছিল বের করেছিলাম। কলকাতা জেলার সমর্থন না থাকলে জনসমাগম হত না। বাঁকুড়া জেলার কর্মীরাও উপস্থিত হলেন সেই মিছিলে। হাওড়া, উত্তর ২৪ পরগণা, নদীয়াও যোগ দিল আমাদের সাথে। কলকাতার পার্শ্ববর্তী জেলাগুলো থেকে কর্মীরা এসেছিলেন। জেলার নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। সাম্প্রতিক বীরভূমে ৫০জন জেলা কমিটির নেতৃত্ব, যাদের মধ্যে রাজ্য কমিটি, জেলা সম্পাদকমন্ডলী, লোকাল সেক্রেটারিয়েট সদস্য রয়েছেন, তাঁরা একসাথে কমঃ কামাল হাসানের নেতৃত্বে পার্টির সমস্ত পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন।      

৩. সুভাষবাদ এবং বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের মধ্যে পার্থক্য কি?

আমাদের অল ইন্ডিয়া জেনারেল সেক্রেটারি দেবব্রত বিশ্বাস ২০২২ সাল থেকে সুভাষবাদ শব্দটা ব্যবহার করছেন। এর আগে এই শব্দটা কেউ ব্যবহার করত না। সুভাষবাদ নিয়ে আমাদের পার্টিতে কোনদিনই আলোচনা হয়নি। ১৯৩৯ সালে নেতাজী যখন ফরোয়ার্ড ব্লক তৈরি করেছিলেন, তার ২ বছরের মধ্যে ওনাকে তৎকালীন রাজনীতির পরিস্থিতি অনুযায়ী দেশ ছেড়ে চলে যেতে হয়। উনি পার্টির মতাদর্শ ব্যাখ্যা না করেই দেশান্তরী হন। ওনার বিভিন্ন লেখা, বিভিন্ন মহর্ষিদের সাথে ওনার আলোচনা থেকে এটা বোঝা যায় যে উনি মার্ক্সবাদী চিন্তাধারার মানুষ ছিলেন। তিনি শ্রেণী সংগ্রামে বিশ্বাস করতেন। তিনি নিজেই বলেছিলেন যে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র গড়ে তোলা দরকার। ১৯৪২ সালে যখন ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনের ডাক দেওয়া হল, তখন ব্রিটিশ সরকার ভারতবর্ষে ফরোয়ার্ড ব্লক পার্টিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে দেয়। নিষিদ্ধ হওয়ার সময়ে ফরোয়ার্ড ব্লকের বেশিরভাগ নেতারা ছিলেন জেল বন্দী। যারা বাইরে ছিলেন তাঁরা আন্ডারগ্রাউন্ড ছিলেন; কোনও প্রকাশ্য মিটিং মিছিল করতে পারছিলেন না। ১৯৪৬ সালে ব্যান তুলে নেওয়া হয়। ১৯৪৭ সালে প্রথম পার্টি সম্মেলন হয় মধ্য প্রদেশের জব্বলপুরে। এই সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন কমঃ অশোক ঘোষ এবং কমঃ অনীল দত্ত। ওনাদের চিঠি মারফৎ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন কমঃ হেমন্ত বসু। সেখানে ফরোয়ার্ড ব্লকের মতাদর্শ স্থির হয় – মার্ক্সবাদ, শ্রেণী সংগ্রাম এবং বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র। ১৯৪৭ সালে বিহারের আড়া জেলাতে কাউন্সিল মিটিং ডাকা হয়। সেই মিটিং-এ এই সিদ্ধান্ত পাশ করা হয়। সেখানেই এটা স্থির হয় যে আমাদের পতাকা কেমন হবে – লাল রঙ, জাম্পিং টাইগার এবং শ্রেণী সংগ্রামের পরিচায়ক হিসেবে কাস্তে হাতুড়ি চিহ্ন। ১৯৪৭-৫২ সাল পর্যন্ত এই পতাকা নিয়েই ফরোয়ার্ড ব্লকের নেতৃত্ব কমঃ অশোক ঘোষ, কমঃ অনীল দত্ত, কমঃ চিত্ত বসু, কমঃ হেমন্ত বসুরা কাজ করলেন। ১৯৫২ সালে প্রথম সাধারণ নির্বাচনের সময়ে নির্বাচন কমিশনের কাছে ফরোয়ার্ড ব্লক এই পতাকায় রেজিস্টার্ড হয়। সেই নির্বাচনে এই চিহ্নতেই ফরোয়ার্ড ব্লক সারা দেশে যেখানে যেখানে সম্ভব লড়াই করল। এরপর পশ্চিমবঙ্গে ফরোয়ার্ড ব্লককে রাজ্য দল হিসেবে নির্বাচন কমিশন স্বীকৃতি দেওয়ার সময়ে এই পতাকাতেই রেজিস্টার করা হয়। আর নির্বাচনী সিম্বল স্থির হয় সিংহ। আজ যদি এই পতাকাই পরিবর্তন করে দেওয়া হয়, পার্টির মতাদর্শ থেকে সরে যাওয়া হয়, সিম্বল পরিবর্তন হওয়া মানে নির্বাচন কমিশনের কাছে আমাদের যে রেজিস্ট্রেশান আছে সেটাই আর কার্যকর থাকল না; আমাদের তো দলের পরিচয়ই শেষ হয়ে গেল… 

আর একটা কথা উল্লেখ করি। বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের কথা নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুই বলে গেছেন। এবং মার্ক্সবাদী মনোভাবকে সামনে রেখে শ্রেণী সংগ্রামের মধ্যে দিয়েই আমাদের বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। কিন্তু সুভাষবাদের কথা যারা বলছেন, তারা আসলে বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের মানুষকে ললিপপ দিতে চাইছেন যেহেতু নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুকে সাধারণ মানুষ শ্রদ্ধা করেন। এই নতুন নাম দিয়ে আসলে সাধারণ মানুষের আবেগকে কাজে লাগানো হচ্ছে। কিন্তু এর মাধ্যমে নেতারা আসলে যা বলছেন তা শ্রেণী সংগ্রামের বিরুদ্ধে। বর্তমানে নেতৃত্ব হেগেলের আদর্শকে সমর্থন করছেন। তাঁরা ব্যবসায়ী আর চাষির সমস্যা সমাধানের পথ এক করে দেখাতে চাইছেন।

৪. পার্টির তরফে ফেসবুক পেজ থেকে আপনাকে এবং আরও কিছু সদস্যকে সম্ভাব্য বহিষ্কারের বিবৃতি জারী করা হয়েছে। এ বিষয়ে আপনি কি বলবেন?

আমরা ফরোয়ার্ড ব্লক পার্টির বিরুদ্ধে কেউ নই। আমরা এই পার্টিতেই কাজ করতে চাই। পার্টিতে যে গণতন্ত্র নেই, তার জ্বলন্ত উদাহরণ হচ্ছে যে সাস্পেনশন নোটিশ ফেসবুকে দেওয়া হচ্ছে। আমি রাজ্য সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য এবং ফরোয়ার্ড ব্লকের সেন্ট্রাল কমিটিরও সদস্য। আমাকে সাসপেন্ড করার আগে শো-কজ করা উচিৎ ছিল। কোনও শো-কজ লেটার আমি পাইনি। সাস্পেনশন লেটারও আমি পাইনি। সাস্পেনশন লেটার ফেসবুকে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমার সাস্পেনশনের খবর সাংবাদিকদের থেকে পেয়েছি। যে পদ্ধতিতে সাস্পেনশন লেটার ফেসবুকে ঘুরছে, তা পার্টির সংবিধানের বিরুদ্ধ। নরেন চ্যাটার্জী ফেসবুকের নেতা। বাস্তবের মাটিতে দাঁড়িয়ে রাজনীতি করার মানসিকতা ওনার নেই। সোশ্যাল মিডিয়ার উপর নির্ভর করে কিছু বক্তব্য রেখে উনি নিজেকে জননেতা ভাবছেন। ওনার জনগণের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ নেই। পার্টির জেলা নেতৃত্বের সাথে উনি কোনও আলোচনা করেন না। উনি পার্টির সম্পাদকমন্ডলীর সাথে বসে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করেন না। কোনও থানার অধীনে ঘটনা ঘটলে যখন এফআইআর করা হয়, পুলিশ তখন কিছু আসামীর নাম উল্লেখ করে ‘এবং অন্যান্যরা’ শব্দবন্ধনী ব্যবহার করে। এই অন্যান্যদেরকে আইডেন্টিফাই করা হয় না। এতে পুলিশের হাতে ক্ষমতা চলে আসে যে সে যাকে মনে করবে তাকে ঢুকিয়ে দেবে! একইভাবে নরেন চ্যাটার্জী ফেসবুকে যে চিঠি ছেড়েছেন তাতে তিনি লিখেছেন ‘ভিক্টর সহ পাঁচজনকে’। ওই পাঁচজন কারা? তাঁদের তো নাম আছে; কোন জেলায় কাজ করেন তার উল্লেখ তো থাকার কথা। কিন্তু এসব উল্লেখ না করে উনি এটা বোঝানোর চেষ্টা করছেন যে ভিক্টরের সাথে যারা আছেন, তাঁদের মধ্যে যে কোনও পাঁচজনকে সাসপেন্ড করা হতে পারে। এটা স্বৈরাচারী মনোভাবের পরিচায়ক। আমি স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করছি, তাই আমার দলের মধ্যেকার স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে নীরব থাকলে তা আমাদের মতাদর্শের সাথেই বিশ্বাসঘাতকতা হবে। আমি নীতিগতভাবে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে, একনায়কতন্ত্রের বিরুদ্ধে। আমাদের রাজ্য সম্পাদক নিজেকে কোম্পানির সি.ই.ও মনে করছেন আর আমরা হলাম ওনার এমপ্লয়ি। উনি ভুলে গেছেন যে নেতাজীর আদর্শে যারা বিশ্বাস করেন তাঁরাই ফরোয়ার্ড ব্লক দল করেন। কিন্তু উনি পার্টিকে ব্যাক্তিগত সম্পত্তি ভেবে পার্টির সম্পত্তিগুলো বিক্রি করছেন। আমরা এর জ্বলন্ত উদাহরণ পেলাম কোচবিহার জেলায়। কমঃ কমল গুহ-র তৈরি পার্টি সংগঠন। সেখানে আমাদের পার্টি অফিস বিক্রি করার প্রস্তাব এলে জেলা সদস্যরা আপত্তি করলেন। তখন সেই পার্টি অফিস ভাড়া দিয়ে দেওয়া হল। ৭২,০০০ টাকা ভাড়া। ৩৮ লক্ষ টাকা সেলামী নেওয়া হয়। সেই সেলামী তুলতে রাজ্য সম্পাদক নিজে সেখানে উপস্থিত হলেন কিন্তু জেলা নেতৃত্ব জানতেই পারল না কত টাকা সেলামী নেওয়া হয়েছে। এই দুর্নীতি নিয়ে প্রশ্ন করলে উনি কোনও উত্তর দেন না। বাঁকুড়ায় পার্টি ট্রাস্টে উনি নিজের নাম লিখিয়ে নিলেন। রাজ্য সম্পাদক নিজে কেন একটা জেলা ট্রাস্টে ঢুকবেন? কারণ ওখানকার সম্পত্তিও ওনাকে বিক্রি করতে হবে। ওখানকার নেতা কমঃ অনাথ মন্ডল যখন পার্টির সম্পত্তি নিয়ে ছিনিমিনি খেলার বিরুদ্ধে আপত্তি করলেন, তখন রাতারাতি বাঁকুড়া জেলা কমিটিকে তিনি ডিজোল্ভ করে দিলেন। জেলা সম্পাদক অনাথ মণ্ডল জানলেনই না যে কেন তাঁকে সম্পাদক পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হল এবং কেন জেলা কমিটি ভেঙে দেওয়া হল! কলকাতা জেলা কমিটির ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। আমরা যারা পার্টিকে লেভি দিই তারা বারে বারে ওনাকে প্রশ্ন করেছি। আমি প্রশ্ন করেছি যে পার্টিতে কত টাকা লেভি উঠছে, পার্টির কাজকর্ম চালাতে কত টাকা খরচ হচ্ছে, কত টাকা বাঁচছে, যাতে পার্টির হোলটাইমারদের মধ্যে যাদের বয়স হয়ে গেছে তাঁদের হাতে কিছু বার্তি সাহায্য তুলে দিতে পারি। উনি বলেছেন যে উনি চুরি করে পার্টি চালান না তাই কোনও হিসাব দেবেন না। এই হল দলের অবস্থা…               

৫. আগামীদিনে খেটে খাওয়া মানুষের লড়াইয়ের পরিসরে আপনাদের আজাদ হিন্দ মঞ্চের আন্দোলনগত পরিকল্পনা কি?

এখন জেলায় জেলায় আমাদের কমিটিগুলো তৈরি হচ্ছে। আগামী দুর্গাপুজোর পর আমরা বিভিন্ন আন্দোলন কর্মসূচী গ্রহণ করব। সরকার যে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বেসরকারিকরণ করে দিচ্ছে এর বিরুদ্ধে আমরা লড়াই করব। সব ক্ষমতা জনগণের হাতে দিতে হবে। কৃষকদের জন্য এমএসপি আইন প্রণয়ন করতে হবে। স্বাধীনতার আগে ১৯৩১ সালে শেষ কাস্ট সেনসাস হয়েছিল। এখন যে গণনা হচ্ছে, তা ব্যাক্তি সংখ্যার গণনা, জাতিগত গণনা নয়। এই জাতিগত গণনা করলেই বোঝা যাবে বিজেপি যে ব্রাহ্মণ্যবাদের কথা বলছে সেই ব্রাহ্মণদের ব্যাক্তি সংখ্যা কত। নিপীড়িত জাতি, বর্ণ ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে যে রাজনীতি করা হচ্ছে, এই জাতিগত গণনা সম্পন্ন হলে সাধারণ মানুষের সামনে আসল সত্য উন্মোচিত হবে।       

..................

Comments

Popular posts from this blog

ফ্যাসিবাদের উত্থানের যুগে সুবিধাবাদের রমরমা

কমিউনিস্ট পার্টি ও তেলেঙ্গানা আন্দোলনের মহিলা কর্মীরা : কমঃ শর্মিষ্ঠা চৌধুরীর কলমে

কেন্দ্র সরকারের ‘জাতীয় শিক্ষা নীতি’ – একটি শিক্ষা বিরোধী ইস্তেহার