হবু শিক্ষকদের নিয়োগ আন্দোলনের বর্তমান পরিস্থিতি ও রাজ্য সরকারের অবস্থান

কাজী মহম্মদ আবুল হাসিব


ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ টিচার্স এডুকেশানের নিয়ম অনুযায়ী প্রাথমিক স্তরে ছাত্র শিক্ষক অনুপাত ৩৫:১ হিসেবে রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষকের শূন্যপদ প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার। ২০১৪ ও ২০১৭ মিলিয়ে এই মুহূর্তে টেট পাশ করা প্রশিক্ষিত প্রার্থী ২৪-২৫ হাজার। অথচ এতদিন পর যখন নতুন করে নিয়োগের বিজ্ঞাপন দেওয়া হল তখন সেখানে শূন্যপদ মাত্র ১১ হাজার। আবার কত বছর পরে নতুন নিয়োগ হবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। এরই বিরুদ্ধে ২০১৪ সালের পাশ করা প্রার্থীরা গত ১৭ই অক্টোবর থেকে করুণাময়ীতে আমরণ অনশন শুরু করেন। তাদের দাবী, আগে ২০১৪ সালের সমস্ত প্রার্থীদের নিয়োগ করতে হবে অর্থাৎ এই নিয়োগের ইন্টারভিউতে শুধুমাত্র ২০১৪ সালের পাশ করা ক্যান্ডিডেটরাই যেন ডাক পায়। তাদের এই দাবী অন্যায্য মনে হলেও আমাদের বুঝতে হবে কোন পরিস্থিতিতে তারা এইরকম দাবী করতে বাধ্য হচ্ছেন। যারা অনেশনে বসেছিলেন তারা পরীক্ষা দিয়েছেন ৮ বছর আগে, এর মাঝে দু'বার এই সরকার পুনঃনির্বাচিত হয়েছে। কিন্তু নিয়োগের ব্যাপারে এরা উদাসীন। ভোট এলে মুখ্যমন্ত্রী "ডবল ডবল নিয়োগ" হবে বলে গলা ফাটালেও ভোট মিটতেই তিনি সেসব ভুলে যান। তাঁর দলেরই একজন বরিষ্ঠ নেতা বলেন কর্মসংস্থানের থেকে উৎসব মোচ্ছব বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অপরদিকে ২০১৭ সালের পাশ করা ক্যান্ডিডেটদের অবস্থা আরও শোচনীয়। তাদের পরীক্ষায় হয় গত বছর জানুয়ারি মাসে। পাঁচ বছর তারা একবারও ইন্টারভিউতে ডাক পায়নি। ফলে বোঝাই যাচ্ছে ২০১৪ সালের পাশ করা ও ২০১৭ সালের পাশ করা ক্যান্ডিডেটদের মধ্যে স্বার্থের সংঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। আর এর জন্য দায়ী রাজ্য সরকার। যেখানে ১ লাখের ওপরে শূন্যপদ, সেখানে মাত্র ১৪ হাজার নিয়োগের বিজ্ঞাপন দিয়ে সরকার চাকরি প্রার্থীদের মধ্যে বিভেদ তৈরি করে আন্দোলন দুর্বল করতে চেয়েছে। আমাদের অবিলম্বে সমস্ত  শূন্যপদে নিয়োগের দাবী জানানো উচিৎ।

আটক তিন আন্দোলনকারী

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে বুঝে বিধাননগর পুলিশ ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মারফৎ করুণাময়ী অঞ্চলে ৯ই অক্টোবর থেকে ৮ই ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারী রেখে ২০শে অক্টোবর মধ্য রাতে পুলিশ লেলিয়ে আন্দোলনকারীদের টেনে হিঁচড়ে পুলিশ ভ্যানে তুলে, অবস্থান উঠিয়ে দিয়ে, ভোরবেলা শিয়ালদহে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু তিনজন নেতৃত্বকে বিধাননগর ইস্ট থানায় আটক রেখে, পরেরদিন কোর্টে তোলা হয়। 


পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের কর্মীদের অফিসে ঢুকতে দেওয়ার কুমীরের কান্না কাঁদিয়ে ২০শে অক্টোবরেই কোর্ট মারফৎ ১৪৪ ধারা জারীর অজুহাতে পুলিশ লেলিয়ে পুলিশ মন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী নিজের মুখ লোকানোর 'বৈধতা'র ব্যবস্থা করে রেখেছিলেন। তার প্রয়োগ ঘটল মধ্যরাতে। একই অজুহাতে আটক আন্দোলনকারীদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবীতে ২১শে অক্টোবর সমাবিষ্ট প্রতিবাদীদের আটক করতে থাকল বিধাননগর পুলিশ। সন্ধ্যায় তাদের ছেড়ে দেওয়া হল ঠিকই কিন্তু এ রাজ্যের জনমানসে এই স্লোগানের জন্ম নেওয়াকে আটকানো গেল না: 'এ সরকার থাকবে কতক্ষণ, এ সরকার যাবে বিসর্জন'!!!

Comments

Popular posts from this blog

ফ্যাসিবাদের উত্থানের যুগে সুবিধাবাদের রমরমা

কমিউনিস্ট পার্টি ও তেলেঙ্গানা আন্দোলনের মহিলা কর্মীরা : কমঃ শর্মিষ্ঠা চৌধুরীর কলমে

কেন্দ্র সরকারের ‘জাতীয় শিক্ষা নীতি’ – একটি শিক্ষা বিরোধী ইস্তেহার