ইরানে চলমান নারী-জীবন-স্বাধীনতার লড়াই
রূমেলা দেব
গোটা বিশ্ব ও মধ্যপ্রাচ্যের মধ্যে ইসলামিক মৌলবাদী শাসনের জন্য খ্যাত এবং বর্তমান বিশ্ব রাজনীতিতে অন্যতম আলোচিত একটি দেশ হল ইরান। বিগত কয়েক দশক ধরেই ইরানের জনগণ সেখানকার সরকারের বিরুদ্ধে তাদের ভেতরের সমস্ত রাগ, ক্ষোভ ইত্যাদি নিয়ে রাস্তায় নামছেন এবং সরকার বিরোধী গণআন্দোলন গড়ে তুলছেন, বিশেষত ইরানি মহিলাদের নেতৃত্বে। গত সেপ্টেম্বর থেকে ইরানের মহিলারা এবং তরুণ সমাজ রাজধানী তেহরান জুড়ে হিজাব বিরোধী তীব্র আন্দোলনে ফেটে পড়ছেন। ২২ বছরের এক কুর্দি নারীর জেল হেফাজতে মৃত্যুর প্রেক্ষাপটে ইরানের এই আন্দোলন সেখানকার ধর্মীয় রেজিমেন্টের ভীত নাড়িয়ে দিয়েছে।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর ইরানে মাশা আমিনী নামে এক কুর্দি মহিলাকে ইসলামিক পোশাক 'হিজাব' না পরার জন্য অর্থাৎ যে ধর্মীয়, অগণতান্ত্রিক আইন ইরান জুড়ে চলছে, সেটি না মানায় তাকে সশস্ত্র নীতি পুলিশ অত্যন্ত সহিংসতার সাথে আক্রমণ করে, হেফাজতে নিয়ে যায় ও তাকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়। শুধু তাই নয়, হাসপাতালে তিনদিন পর মৃত্যু হলে তার মৃত্যুকে হার্ট অ্যাটাক বলে সরকার দাবি করতে থাকে। মেয়েটির পরিবার-পরিজন, অভিভাবকরা অত্যন্ত সাহসের সাথে এই শক্তিশালী মতামত দেন যে তাদের কন্যা সম্পূর্ণভাবে সুস্থ ছিল এবং এই নীতি পুলিশদের মারেই তাদের মেয়ের মৃত্যু ঘটেছে। এই ঘটনা দেশের ভিতর সামাজিক এবং গণমাধ্যমে প্রকাশিত হবার পরেই রাজধানী সহ ৪০টিরও বেশি শহরে প্রবল বিক্ষোভে ফেটে পড়েন ইরানের তরুণ সমাজ। ইরানি মহিলারা তাদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন থেকে চাপানো সমস্ত ধর্মীয় নিয়ম নীতির বিরুদ্ধে নিজেদের ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকে। তারা মাশা আমিনীর ছবি নিয়ে মৌলবাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান, প্ল্যাকার্ড ইত্যাদিকে হাতিয়ার করে রাজপথ জুড়ে তীব্র প্রতিবাদ শুরু করে।
কুর্দিস্তানের স্বাধীনতার সময় উঠে আসা 'জিয়ান, জিন্দেগী, আজাদী' স্লোগান তোলে মহিলারা। তার সাথে সামরিক শাসন এবং স্বৈরাচারী খামানেই-র পদত্যাগেরও দাবি ওঠে। ধর্মীয় শাসনের মূল ভিত্তি ছিল সরকারি-বেসরকারি প্রত্যেক জায়গায় বাধ্যতামূলকভাবে হিজাব পড়তে হবে এবং এই মৌলবাদী ফতোয়ার বিরুদ্ধে তারা নিজেদের হিজাব পুড়িয়ে, চুল কেটে, সেই চুল দিয়ে মুক্তি পতাকা বানিয়ে গোটা বিশ্বের কাছে আন্দোলনের আবেদন পৌঁছে দিয়েছে। এমনই একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয় যেখানে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, একজন ইরানি মহিলা শোকে কাতর হয়ে নিজের চুল কেটে ফেলছে তার ৩৬ বছর বয়সী দাদার মৃতদেহের উপর, যে প্রতিবাদ করতে গিয়ে সশস্ত্র বাহিনীর চালানো গুলিতে নিহত হয়েছে। তার গোটা পরিবার তার কফিনের সামনে বসে ন্যায় বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে বিভিন্ন নারী সংগঠন, তারকা, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা ইরানের ধর্মীয় মৌলবাদ বিরোধী আন্দোলনের সাথে নিজেদের একাত্মতা প্রকাশ করেছেন। কেউ কেউ প্রকাশ্যে চুল কেটে বা চিত্রশিল্পের মাধ্যমে আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়েছেন।
কিন্তু এই আন্দোলনকারীদেরকে পরবর্তীতে দমন পীড়ন করার জন্য ইরানের নিজস্ব সামরিক বাহিনী বিভিন্ন রকম অস্ত্র, গ্যাস ইত্যাদি ব্যবহার শুরু করে। গণমাধ্যম থেকে জানা গেছে, এই আন্দোলনে অন্তত ৪১ জন নিহত হয়েছে এখনো অবধি। কিন্তু বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনদের মতে এই সংখ্যা প্রায় ৭৬। পরবর্তীতে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে জানা যায় যে এই সংখ্যা প্রায় ২০০ ছাড়িয়ে গেছে। এখন বিষয় হলো, চুল এবং হিজাব নিয়ে ইরানের যে ধর্মীয় আইন, তার মধ্যে কতখানি রাষ্ট্রের চাপানো ধর্মীয় মৌলবাদ এবং সত্যতা রয়েছে তা আমরা দেখব। ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠার পরে আয়াতোল্লাহ খোমেইনি মহিলাদের অধিকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন আইন প্রণয়ন করেছিলেন। সেখানে তারা মহিলাদের স্টেডিয়ামে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা, পুরুষের খেলা দেখায় নিষেধাজ্ঞা, বিভিন্ন সরকারি অফিসে চাকরীর নিষেধাজ্ঞা এবং বিভিন্ন শরীয়া আইনের সবথেকে র্যাডিকাল অংশগুলো মহিলাদের উপর চাপিয়েছে। কিন্তু ইরানের প্রাচীন ইতিহাস এবং সংস্কৃতি চর্চা করলেই পাওয়া যাবে যে চুল কেবল মহিলাদের সৌন্দর্য বা আবরণ হিসেবে নয় বরং চুল কাটা শোক, ক্ষোভ এবং অন্যায়ের প্রতিবাদ হিসেবে উল্লেখ করা আছে। ফারসি কবিরা চুল কাটাকে শোক এবং অন্যায়ের প্রতিবাদ হিসেবে দেখেছেন। অর্থাৎ 'আমি ক্ষীপ্ত তাই আমি আমার চুল কেটে ক্ষোভ প্রকাশ করছি'। এছাড়াও সীমা বাবে নামক বেলজিয়ামে বসবাসকারী একজন ইরানি কর্মী ২০১৮ সালে ইরানের কুখ্যাত নীতি পুলিশ দ্বারা প্রতিবাদের চিহ্ন হিসাবে প্রকাশ্যে তার হিজাব অপসারণ করার জন্য গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তিনি জানিয়েছেন যে ইরানিদের চুল কাটার ঐতিহাসিক অর্থ রয়েছে। মহিলারা যখন সরাসরি আত্মীয় হারান, কখনো ক্রোধ কখনো শোকে ফেটে পড়েন, তখন ক্রোধ বা শোকের চিহ্ন হিসেবে চুল কেটে ফেলার ঐতিহাসিক প্রচলন রয়েছে। অর্থাৎ যে ধর্মীয় বিদ্বেষমূলক, চরম পিতৃতান্ত্রিক আইন মহিলাদের বিরুদ্ধে চাপিয়ে তাদের শোষণ করার স্বরূপ এই হিজাব এবং চুল ঢেকে রাখার ফতোয়া, তা ইরানের গণতান্ত্রিক মহিলা সমাজ এবং ইরানের শহরাঞ্চল কেন্দ্রিক প্রগতিশীল মহিলা এবং ইসলামিক রেজিমেন্ট বিরোধী তরুন সমাজ ঘৃণা ভরে প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং তারা কোনভাবেই তাদের শরীরের ওপর চাপানো ধর্মীয় মৌলবাদের অসভ্য বর্বর নিয়মকানুন মানতে রাজি নয়। তারা মুক্তভাবে খোলা হাওয়ায় বাঁচতে চায়।
বিগত কয়েক দশক ধরে ইরানে প্রচুর সরকার বিরোধী ও ইসলামিক মৌলবাদ বিরোধী আন্দোলন হয়ে আসছে। ইরানের বর্তমান খামানেই সরকার প্রথম থেকেই দেশের প্রত্যেকটি সামাজিক মাধ্যম বন্ধ করে দেওয়া, ইরানের মহিলাদের স্বাধীনভাবে চলাফেরা নিষিদ্ধ করা প্রভৃতি নিয়ম-কানুন চাপিয়ে এই বিক্ষোভ আন্দোলনকে দমন করার চেষ্টা করছে। ২০১৮-১৯ সালে ইরান জুড়ে হিজাব বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে অন্যান্য আন্দোলন যেমন দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বিরুদ্ধে, মুদ্রাস্ফীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনেও মানুষ ফেটে পড়ছিল। কিন্তু তা কঠোরভাবে মৌলবাদী সরকার দমন করে। বিশ্বের কাছে এই আন্দোলনের খবরগুলি যাতে না পৌঁছায় তার জন্য সমস্ত রকম নিষেধাজ্ঞা খামানেই সরকার করেছে কিন্তু তাতেও তারা সফল হয়নি। অথচ সামাজিক মাধ্যমের যোগাযোগ বন্ধ করার পরেও ইরানে মহিলারা আন্দোলন এখনও অব্দি চালিয়ে যাচ্ছে। সামাজিক মাধ্যমে তাদের আন্দোলনের খবর পৌঁছে দেওয়ারও চেষ্টা চলছে অনবরত। আজকের ইরানী নারী নিজের দায়িত্বে, নিজের চেতনায় এই স্বাধীনতাকে গ্রহণ করার জন্য এবং মৌলবাদকে ইরান থেকে বর্জিত করার জন্য প্রস্তুত। অর্থাৎ চলমান বিশ্বের বর্তমান দশকে গত মাস থেকে ইরান জুড়ে স্বৈরাচারী মৌলবাদী সরকারের বিরুদ্ধে মহিলাদের নেতৃত্বে একটি গণআন্দোলনের সাক্ষী হতে পারলাম আমরা।
আমরা যদি ইরানের ইতিহাসের দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাব, ইরানে একটি রাজতন্ত্রীয় শাসনব্যবস্থা ছিল। কিন্তু তারা মধ্যপন্থী ছিল। ইরানে ১৯৫১ সালে একটি গণভোট হয় এবং সেখানে একজন ধর্মনিরপেক্ষ নেতা নির্বাচিত হন। এই মহম্মদ মোসাদ্দেঘ ইরানে সম্পদের পুর্ণবন্টন, সামাজিক নিরাপত্তা ইত্যাদিতে জোড় দিয়েছিলেন। ইরানের ইতিহাসে খোমেইনি শাসন আসার আগে ইরানি নারীরা যথেষ্ট স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতেন, স্কুল কলেজে যেতেন এবং দেখা গেছে ইরানের অর্ধেক নারীদের প্রচলিত পেশা ছিল ডাক্তারী। তৎকালীন ইরানের শাহ মার্কিন পোষ্য হিসাবে জনগণের চোখে অত্যন্ত ঘৃণিত হয়ে ওঠেন। এই শাহ বিরোধী ঘৃণাকে হাতিয়ার করে আয়াতোল্লাহ খোমেইনি জনগণকে ভুল বোঝান এবং ইরানে ইসলামিক বিপ্লব সংগঠিত করতে নেতৃত্ব দেন। বিভিন্ন মিথ্যা প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে তিনি ১৯৭৯ সালে এককভাবে ইরানের সর্বোচ্চ রাজনৈতিক ক্ষমতাশীল ব্যক্তি হিসেবে উঠে আসেন এবং শাসন ক্ষমতা দখল করেন। এরপরেই খোমেইনি দেশজুড়ে প্রকাশ্যে কমিউনিস্ট ও ধর্মনিরপেক্ষদের গণহত্যা শুরু করেন। তার সমস্ত বিরোধী শক্তিকে নিকেষ করেন। তখন থেকেই ইরানের মানুষ কিন্তু এই খোমেইনির শরীয়া শাসনকে মেনে নেননি। দেখা গেছে, দেশের সর্বমোট ১৫% মানুষ তার এই শাসনের পক্ষে ছিল। ফলে জনগণের সাথে খোমেইনির ধর্মীয় বর্বর শাসনের প্রথম থেকেই সংঘাত তৈরি হয়েছে। বিশেষত শহুরে তরুণ-তরুণীরা তার শরীয়া শাসনের প্রবল বিরোধী ছিল।
আয়াতোল্লাহ খোমেইনি ১৯৭৯ সালে ইসলামিক বিপ্লবের পর ক্ষমতায় এসেই বুঝেছিলেন যে ইরানকে সম্পূর্ণভাবে শরীয়া মৌলবাদী ইসলামিক আইন দ্বারা শাসন করতে গেলে তাদের সংগঠিত ধর্মীয় রেজিমেন্টে বা সামরিক বাহিনী প্রয়োজন। তাই তিনি পাঁচটির অধিক কঠোর ধর্মীয় সামরিক বাহিনী গঠন করেন। এই বাহিনীর মধ্যে অন্যতম হল ধর্মীয় নীতি পুলিশ বাহিনী (Law Enforcement Command of Islamic Republic of Iran)। এরা অতি সক্রিয় হিংস্র নীতি পুলিশ, সংখ্যায় ছয় লাখ। এদের কাজই হল মহিলাদের ব্যক্তি স্বাধীনতা হরণ করা এবং জনগণের বিক্ষোভকে দমন করা।
হিজাব বিরোধী আন্দোলন কেবল ২০১৮-১৯ সালে প্রথম নয়, ১৯৭৯ সালে খোমেইনি ক্ষমতা দখলের পরেই বাধ্যতামূলক হিজাব পরিধান ও সম্পূর্ণ শরীর ঢাকা পোশাক চাপিয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে ইরানের মহিলারা আন্তর্জাতিক শ্রমজীবী নারী দিবসের দিন সকলে রাজধানী তেহরান শহরে দাঁড়িয়ে প্রবল প্রতিবাদ জানান। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে যে, ইরানের নারীরা প্রথম থেকেই মৌলবাদের চোখে চোখ রেখে রাজনৈতিক গণআন্দোলন চালিয়ে গেছেন এবং স্বাধীনতার দাবি তুলেছেন।
এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে ইরানের অর্থনৈতিক অবস্থা সংকটের মুখে। তাদের জিডিপি ২০১২ সালের তুলনায় ৭০% হ্রাস পেয়েছে। মুদ্রাস্ফীতির হার প্রায় ৫০% বেশি, যার ফলে ইরানের সাধারণ মানুষ সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষুব্ধ হয়ে রাস্তায় নেমেছে। উল্লেখ্য, বিগত দশকগুলোতে যতবারই ইরানে সরকার বিরোধী বিক্ষোভ হয়েছে, ততবারই তা সহিংসতার সাথে দমন করা হয়েছে। বিরোধীদের সরকার নিশ্চিহ্ন করার মতো সমস্ত পদক্ষেপ নিয়েছে। ২০১৯ সালের নভেম্বরে ইরানে একটি রক্তক্ষয়ী গণবিক্ষোভ হয়েছিল। সেখানকার নিরাপত্তা বাহিনী একটি নিষ্ঠুর অভিযান চালিয়ে ১৫০০ লোককে হত্যা করেছিল বলে দাবি রয়টার্স-এর। এটি অন্যতম নারকীয় গণহত্যা যা সামরিক বাহিনী দ্বারা খামানেই সরকার ঘটিয়েছিল।
বর্তমানের আন্দোলনের হিসাব অনুযায়ী অক্টোবর মাস পর্যন্ত ইরানের অন্তত ৫৮৯ জনের বেশি বিক্ষোভকারী আহত এবং ১৫০০-এর বেশি নাগরিককে গ্ৰেফতার করা হয়েছে। সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, এই আন্দোলন কিন্তু শুধুমাত্র যুব সমাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। বিদ্যালয়ের ছাত্র সমাজের মধ্যেও ভীষণভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। সামাজিক মাধ্যমে দেখা গেছে, ছাত্রীরা স্কুলের ভিতর তাদের হিজাব খুলে খোমেইনির ছবির দিকে ঘৃণার সংকেত দিচ্ছে। তারা 'জিয়ান, জিন্দেগি, আজাদী' স্লোগানে একাত্ম হয়েছে।
ইরান জুড়ে হিজাব বিরোধী ও মাশা আমিনীর হত্যার বিরুদ্ধে আন্দোলনকে খামানেই বলেছেন সম্পূর্ণভাবে মার্কিনী শক্তি এবং ইজরাইলের প্রোপাগান্ডা, তাদের উস্কানি ও অর্থ সাহায্যের ফলাফল। তিনি দাবি করেছেন যে বিদেশি শক্তির এই আন্দোলন শুরু করেছে। অর্থাৎ গণতান্ত্রিক আন্দোলন রুখতে যেভাবে তরুণ ও প্রতিবাদী মহিলাদের উপর অস্ত্র দ্বারা হামলা নামিয়ে আনা হচ্ছে তা পশ্চিমী শক্তিকে রোখার একটি পদক্ষেপ!!!
কিন্তু এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আছে। জো বাইডেন সহ মার্কিনী তাবড় তাবড় রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও তারকারা ইরানের আন্দোলনের পাশে দাঁড়িয়ে নারী স্বাধীনতার পক্ষে বিশ্বের দরবারে অবস্থান নিলেও সাম্রাজ্যবাদের দ্বারা স্বাধীনতার বিভীষিকা কতখানি ভয়ঙ্কর, তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো তা বারে বারে প্রত্যক্ষ করেছে। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে মধ্যপ্রাচ্যের সমাজ ও তৈল অর্থনীতিকে নিয়ে ভাববার মতন রাজনৈতিক বিষয় এই যে, বর্তমান পশ্চিমী সিআইয়ের এজেন্টরা খামানেইকে উৎখাত এবং ইরানকে সম্পূর্ণ দখল করার জন্য উদগ্রীব। অর্থাৎ মধ্যপ্রাচ্যের সমস্ত খনিজ তেলের উৎসকে দখল করে তারা বিশ্ব বাজারে পুঁজির একচেটিয়া মুনাফা লাভ করবে এবং তাদের নির্ধারিত অর্থনৈতিক পলিসি দ্বারা বাজার নিয়ন্ত্রিত হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কুটনৈতিক ভাষায় এটিই ধর্মীয় মৌলবাদকে উৎখাত করে ইরানে গণতন্ত্র ফিরিয়ে দেওয়া! ...যেভাবে চিরকাল হোয়াইট হাউস তাদের পরিচালিত এজেন্টদের পদে বসিয়ে খনিজ তেল সহ খনিজ সম্পদ নিজ দেশে লুটে নিয়ে গেছে। মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশকে গৃহযুদ্ধ ও দুর্ভিক্ষের মুখে ঠেলে দিয়েছে সাম্রাজ্যবাদী ইউ.এস.এ। বিগত দশকগুলোতে ইরানে মার্কিন শক্তি বিভিন্নভাবে অভ্যন্তরীন স্থিতিশীলতা নষ্টের প্রচেষ্টা সহ তাদের মধ্যে যে ব্যবসা-বাণিজ্যের আদান-প্রদান ছিল তা বিচ্ছিন্ন করে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। আর ইরান নিজের স্বতন্ত্রতা রক্ষা করার জন্য রাশিয়া, সিরিয়া, ভারত ও চীনের সাহায্য নিয়ে আমদানি-রপ্তানির সম্পর্ক গড়ে তুলেছে।
হিজাব বিরোধী আন্দোলনের মুখ, ইরানের বিখ্যাত পত্রকার এবং নারীবাদী কর্মী মাসিহ মার্কিন রাষ্ট্রপতি বাইডেনের উদ্দেশ্যে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন - 'মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা কোনো পশ্চিমী দেশকে এখানে স্বাধীনতা দিতে হবে না, ইরানী মহিলারা তাদের স্বাধীনতাকে নিজেরাই আদায় করে নিতে পারবে'। তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন, 'সাম্প্রতিক মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট মহিলাদের গর্ভপাতের অধিকারকে হরণ করেছে এবং তাদের শ্বেতাঙ্গ পুলিশ প্রকাশ্যে রাস্তায় জর্জ ফ্লয়েডকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে, যার প্রতিবাদে গোটা বিশ্ব একত্রিত হয়েছিল। গণতান্ত্রিক দেশ ও স্বাধীন পৃথিবী কোথায় আছে?'
ইরানের আন্দোলনকে পশ্চিমী বিশ্বের অদ্ভুত রকমের একচেটিয়া সমর্থন এবং তাদের ধর্মীয় রেজিমেন্ট বিরোধী যে পর্দাখানা আছে, তা থেকে আমাদের আশাবাদী হবার কারন নেই। বিগত দিনগুলোতে পৃথিবী দেখেছে, বারাক ওবামা থাকাকালীন মধ্যপ্রাচ্যে কিভাবে বোমা ফেলা হয়েছিল। ইরাক, ইরান, সিরিয়ায় পাশাপাশি অস্হিরতা, গৃহযুদ্ধকে উস্কেছে তারা।
সাম্যবাদী মানবাধিকারের সমর্থক প্রত্যেক বিশ্ববাসীকে যেমন মৌলবাদী রেজিমেন্টের বিরুদ্ধে অবশ্যই লড়তে হবে, তেমন সম্মিলিত ন্যাটো শক্তির গণতন্ত্রের নামে যে শোষণ, শাসন ও একচেটিয়া অস্ত্র দ্বারা সাম্রাজ্যবাদের স্বপ্ন, তাকেও উপড়ে ফেলতে হবে।
জিয়ান, জিন্দেগী, আজাদীর লড়াই দীর্ঘজীবী হোক!!!
Comments
Post a Comment