মুঘল যুগের উর্দু সাহিত্যের ইতিহাস

রিঙ্কি মন্ডল                             

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্তর্ভুক্ত দেশগুলির মধ্যেকার ভাষা ও সাহিত্যের ইতিহাসের ক্ষেত্রে উর্দু সাহিত্য একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে আছে। প্রায় সাতশো বছরের বেশি প্রচলিত উর্দু সাহিত্য এই উপমহাদেশে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহ্যবাহী সাহিত্যিক পরম্পরার অধিকারী। মধ্যযুগের রহস্যবাদী কবি আমির খসরু থেকে শুরু করে বিশ শতকের প্রগতিশীল কবি সাহির লুধিয়ানভি পর্যন্ত, এক বিশাল সংখ্যক কবি ও সাহিত্যিক এই ভাষায় সাহিত্য রচনা করেছেন।

ইন্দো ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠীর কথ্য ভাষার ঐতিহ্যটি রক্ষিত হয়েছিল প্রাকৃত শাখায়, যার মূলত চারটি ভাগ ছিল। তার মধ্যে অন্যতম শূরসেন মথুরা অঞ্চলের প্রাকৃত ভাষা অর্থাৎ সৌরশেণীর প্রাকৃতের অব্যবহিত পরের স্তরের অর্থাৎ যাকে অনেক ভাষাবিদ সৌরশেণীর অপভ্রংশ বলে থাকেন। সেই ধারা থেকে উৎপত্তি হয়েছিল দিল্লি এবং তৎপার্শ্ববর্তী অঞ্চলের স্থানীয় উপভাষা ‘খাড়িবলী’-র।  সুলতান  মোহাম্মদ ঘোড়ি দ্বাদশ শতকের শেষ পর্বে ভারত আক্রমণ করে স্থায়ী শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে তার কর্মচারী ও সেনাবাহিনীর মধ্যে প্রচলিত মূলত ফার্সি ভাষার সঙ্গে খাড়িবলী-র মিশ্রন ঘটে। যার সঙ্গে মিশে যায় কিছুটা পরিমানে আরবি এবং তুর্কি। এর ফলে যে ভাষাটির জন্ম হয় ‘লস্কর-ই-জাবান-ই-উর্দু-এ-হিদভী’ অর্থাৎ হিন্দ বা ভারতে অবস্থানকারী উর্দু অর্থাৎ ভারতে থাকা লস্কর বা সেনাবাহিনীর ভাষা।

মূলত কথ্য ভাষা হিসাবেই পরবর্তী প্রায় চার শতাব্দী উর্দু তার অস্তিত্ব বজায় রেখেছিল। যদিও সাহিত্য যে একেবারেই সৃষ্টি হয়নি তা নয়। সুলতানি যুগের বিখ্যাত উর্দু সাহিত্যের কবি ছিলেন আমির খসরু। যদিও হিদভী ভাষার কবিদের কয়েক জনের নাম আমির খসরুর আগে থেকেই শোনা যায়, তবুও খসরুকেই উর্দু সাহিত্যের প্রথম কবি হিসাবে ধরা হয়। খসরুর বিখ্যাত একটি গজলকে উর্দু সাহিত্যের প্রথম কবিতা হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে; এটি হলো: 

“জিহাল এ মিসকিন মাকুন তাঘাফুল দুরায়ে নয়না বানায়ে বতিয়া

কি তাব-এ-তাব-এ-হিজ্ৰা নাদারম আয় জাঁ

না লেহো কাহে লাগায়ে ছাতিয়া”। 

এই যুগে খসরুর লেখা আরকেটি কবিতা জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল আর সেটি হল: 

ছাপ তিলক সব ছিন্ লে রে মোসে নয়না মিলাইকে”। 

উর্দু সাহিত্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল মৌখিক সাহিত্য। মৌখিক সাহিত্যের দুটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল ‘দাস্তান-গো’ ও ‘কিস্সা-গো’।

সুলতানি যুগ ছিল উর্দু সাহিত্যের সূত্রপাতের যুগ। লোকেদের মুখের ভাষা হিসাবেই উর্দুর প্রচলন ছিল এবং মনে রাখতে হবে, চরিত্রগতভাবে এটি ছিল সম্পূর্ণভাবে ধর্মনিরপেক্ষ । 

মুঘল যুগের প্রথমদিকে সাহিত্যগত দিক থেকে উর্দু খুব বেশি জনপ্রিয়তা লাভ করেনি। তখনও পর্যন্ত ফার্সি ভাষার প্রাধান্যই মোঘল সাহিত্যে বিশেষ স্থান অধিকার করে ছিল।  উর্দু ছিল প্রধানত লোকমুখে প্রচলিত একটি ভাষা। যদিও সেই সময় ফৈজীর বন্ধু নূরীর দু-একটি কবিতায় উর্দুর প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। পরবর্তীকালে এই কবিতাগুলির মাধ্যমে উর্দু এক বিশেষ স্থান অধিকার করে। সম্রাট শাহজাহান ও ঔরঙ্গজেবের চিঠিতে ব্যবহৃত ফার্সি ভাষা ছিল উর্দুর কাছাকাছি।

সপ্তদশ শতকের শেষের দিকে গোলকুন্ডার কুতুবশাহী রাজবংশের পঞ্চম সুলতান কুলি-কুতুব-শাহ হায়দ্রাবাদে উর্দু ভাষায় কবিতা লেখা শুরু করেন। তিনি ছিলেন প্রথম উর্দু কবি যিনি ‘সাহেব-ই-দেওয়ান’ হওয়ার গৌরব অর্জন করেছিলেন।  তার হাত ধরেই উর্দু কবিতা প্ৰচলিত ধারায় একটি নতুন সংবেদনশীলতার কৃতিত্ব অর্জন করে। পরবর্তীকালে দিল্লী ও লখনৌ অঞ্চলেও উর্দু ভাষা ও সাহিত্যের প্রভাব ব্যাপক পরিমাণে লক্ষ্য করা যায়।

এই সময়কার সাহিত্য ও কবিতাগুলিতে ফার্সি ও আরবী শব্দ ব্যবহারের পাশাপাশি দেশীয় শব্দ ব্যবহারেরও প্ৰচলন লক্ষ্য করা যায়। এই সময় দেশীয় শব্দকে কোনোভাবেই অবজ্ঞা করা হতো না। দেশীয় ভাষা হিসেবে সংস্কৃত ভাষার প্রাধান্য বেশি ছিল, যা কুলি কুতুব শাহ এবং গালিবের কবিতাতে বিশেষভাবে লক্ষ্য করা যায়।

উর্দু ভাষায় মূলত কাব্য রচনাই ছিল প্রধান ধারা। বিভিন্ন কাব্যিকদের লেখা এই সময় খুব খ্যাতি অর্জন করে। তবে কিছু গদ্যেরও এই ভাষায় রচনা হয়ে থাকে।

উর্দু কবিতা রচনাতে বিভিন্ন ধরনের ফার্সি ছন্দ ও শৈলীর ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। যথা: গজল, মাসনাবি, দিওয়ান, নাদ, নজম ইত্যাদি। এই শৈলীগুলি ব্যবহারের মাধ্যমে কবিরা তাদের কবিতায় ছন্দ ফুটিয়ে তুলত।

উর্দু কবিতা বা সাহিত্যগুলিতে মূলত কিছু স্থানীয় অঞ্চলের ধাঁচ লক্ষ্য করা যায়। যথা: শিমলী অর্থাৎ উত্তর অঞ্চলের দিল্লি ও লখনৌ। গুজরাট দখনী অর্থাৎ দক্ষিণ অঞ্চলের হায়দ্রাবাদ। এই ঘরানাগুলিতে উর্দু বিভক্ত থাকলেও এই প্রত্যেক অঞ্চলের ব্যাকরণগত দিক দিয়ে উর্দুর বিশেষ কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। যেমন, দিল্লির কথ্য উর্দু জটিল এবং লেখ্য উর্দু ছিল সরল। লখনৌ অঞ্চলে এর বিপরীত দিকটি লক্ষ্য করা যায়। গুজরাটের ক্ষেত্রে উর্দু ভাষার সংযোগ অব্যয়ের ব্যবহার কম ছিল। অপরদিকে হায়দ্রাবাদে এক্ষেত্রে শব্দের ভিন্নতা ও বহুবচনে পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়।

উর্দু ভাষাকে আরো বেশি জনপ্রিয় করে তোলার জন্য কিছু বিশেষ কবিদের অবদান ছিল অনস্বীকার্য। তারা তাদের কবিতার মধ্যে দিয়ে যেভাবে মনেরভাব প্রকাশ করেছেন এবং তখনকার দিনের সামাজিক এবং রাজনৈতিক চিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন সে ক্ষেত্রে উর্দু ভাষা এক বিশেষ স্থান অধিকার করেছে। নিম্নে কবিদের বিষয়বস্তু বিস্তারিত আলোচনা করা হল।

উর্দু ভাষার প্রথম এবং জনপ্রিয় কবি ছিলেন ‘মোহাম্মদ কুলি-কুতুব-শাহ’। তিনি ১৫৬৫ সালের ৪ঠা এপ্রিল জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন গোলকুন্ডার কুতুব শাহী রাজবংশের পঞ্চম সুলতান। সপ্তদশ শতকের শেষের দিকে তিনি হায়দ্রাবাদে উর্দু ভাষায় কবিতা লেখা শুরু করেন। উর্দু ভাষার প্রথম কবি হিসাবে তিনি ফার্সি ‘দেওয়ান’ রীতিতে তার রচনাগুলি সৃষ্টি করেছিলেন এবং তার কবিতাগুলিতে ‘গজল-ই-মুঘালসাল’ সম্পর্কিত একটি বিষয় লক্ষ্য করা যায়। তাছাড়া তিনি আরবী, ফার্সি এবং তেলেগু ভাষারও পন্ডিত ছিলেন। উর্দু ভাষার প্রথম কবি হিসাবে তিনি ‘সাহেব-ই-দেওয়ান’ হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। তার লেখা একটি কবিতা হল: 

“সাকি আজ পিয়ালা আনন্দ কা পিলা মুজ 

ওয়া ইয়াকুত অধরাঁ কি মস্তি দিলা মুজ”।

উর্দু কবিতার প্রচলিত ধারার একটি নতুন সংবেদনশীলতা প্রবর্তনের ক্ষেত্রে তার অবদান ছিল অনস্বীকার্য।

উর্দু ভাষার আরেকজন ধ্রুপদী কবি হলেন “ওয়ালী মোহাম্মাদ ওয়ালী”। অনেক পন্ডিত তাকে উর্দু কবিতার জনক বলে মনে করেন। তিনি ১৬৬৭ সালে ঔরঙ্গবাদে জন্মগ্রহণ করেন। ওয়ালী ছিলেন  প্রতিষ্ঠীত কবি যিনি ‘উর্দু ভাষায় গজল’ রচনা করেন। তার রচনা করা একটি কবিতা হল: 

“দেখনা হার সুভহ তেরা রুকসার কা 

হ্যায় মুতালা মতল এ আনবর কা”। 

শুধুমাত্র উর্দু কবিতা নয়, গজল রচনাতেও তার অবদান অনস্বীকার্য।  তার মাধ্যমে উর্দু ভাষা এক বিশেষ জনপ্রিয়তা অর্জন করে।

‘মির্জা মোহাম্মদ রফি সৌদা’ ছিলেন দিল্লির একজন উর্দু কবি। তিনি ১৭১৩ সালে শাহাজাহানবাদে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি তার গজল এবং উর্দু কাসিদাদের জন্য পরিচিত। প্রথমদিকে তিনি ফার্সি ভাষায় রচনা করেছিলেন, কিন্তু তার গুরু হাসান-ই-আরজুর পরামর্শে উর্দুতে লেখা শুরু করেন। পরবর্তীকালে ১৮৭২ সালে মেজর হেনরি কোর্ট, ক্যাপ্টেন বেঙ্গল ক্যাভালরি তার কাজ অনুবাদ করেন। তার লেখা একটি কবিতা হল: 

“জো গুজরি মুজ পে মত উসসে কহো হুয়া সো হুয়া 

বলা কাসান এ মোহব্বত জো হুয়া সো হুয়া”।

‘খাজা মীর দরদ’ ছিলেন দিল্লি ঘরানার কবি। তিনি ছিলেন সুফি সাধক নাসকবন্দী মুজাদ্দাদীর ধর্মীয় ধারা। তিনি আনুমানিক ১৭২০-২১ সাল নাগাদ দিল্লির মুঘল সাম্রাজ্যে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি নফসি ও লাফজি ধারায় কবিতা রচনা করেন। তার রচিত একটি কবিতা হল:

“জগ মে আকর ইধর উধর দেখা 

তু হি আয়া নজর জিধর দেখা”।

উর্দু ভাষার আর একজন কবি হলেন ‘মীর মুহম্মদ তাকী’। তিনি মীর তাকী মীর নামেও পরিচিত। ১৭২৩ সালে মুঘল যুগের আগ্রায় তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন অষ্টাদশ শতকের মুঘল ভারতের এমন এক কবি যিনি তার কবিতার মাধ্যমে উর্দু ভাষাকে নতুন এক আকৃতি প্রদান করেছিলেন। তিনি ছিলেন দিল্লি ঘরানার উর্দু প্রধান কবিদের মধ্যে একজন। তাকে উর্দু গজল এবং প্রায়শই উর্দু ভাষার অন্যতম সেরা কবি হিসেবে স্মরণ করা হয়। তার লেখা একটি কবিতা হল:   

“পাত্তা পাত্তা বুটা বুটা 

হাল হামারা জানে হ্যায়

জানে না জানে গুল হি না জানে

বাগতো সারা জানে হ্যায়”।

শেষ মুঘল সম্রাট ‘বাহাদুর শাহ জাফর' বা দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ ছিলেন একজন বিখ্যাত উর্দু কবি। তিনি ২৪শে অক্টোবর ১৭৭৫ সালে শাহাজাহানবাদে মুঘল সাম্রাজ্যে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বেশকিছু উর্দু গজল লিখেছিলেন। তিনি একজন বিশিষ্ট ক্যালিগ্রাফারও ছিলেন। মোঘল সম্রাট হিসাবে তিনি বিশেষ খ্যাতি অর্জন না করলেও তার উর্দু সাহিত্য এবং গজল বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছিল। তার লেখা একটি কবিতা হল:

“নহি ইস্ক মে ইসকো তো রঞ্জ হমে,

কি করার ও শাকেব জরা ন রহা

গম এ ইস্ক তো আপনা রফিক রহা,

কোঈ অর বলা সে রহা না রহা”।

‘শেখ মুহাম্মদ ইব্রাহিম জাউক’ ছিলেন একজন উর্দু কবি ও ধর্ম পন্ডিত। ১৭৯০ সালে দিল্লিতে তিনি জন্মগ্রহণ করেন।জাউক ছিলেন গালিবের একজন বিশেষ সমসাময়িক কবি। জাউকের কবিতাগুলিতে সমালোচনামূলক মূল্যবোধগুলি মূলত শব্দ, বাক্যাংশ এবং বাগধারার ভিত্তিতে কবিতাগুলিকে বিচার করায় সীমাবদ্ধ ছিল। তার কবিতা বিখ্যাত হওয়ার কারন সেই কবিতাগুলির মধ্যে রয়েছে ইউলজি। অত্যন্ত কঠিন কবিতা রচনা তার দক্ষতার প্রতিফলিত দিক। তার গজলের কিছু সাহিত্যগত দিক এবং ধর্মীয় ও নৈতিক বিষয় লক্ষ্য করা যায়। তার লেখা একটি কবিতা হল: 

“শেখ মাদরাসে কি ওহ বিগড়ে হুয়ে হ্যায় মুল্লা

উসকো মায়খানে লে জাও তো সুধর জায়েঙ্গে”।

‘মির্জা আসাদুল্লাহ বেগ খান' বা মির্জা গালিব ছিলেন একজন ভারতীয় কবি। তিনি ২৭শে ডিসেম্বর ১৭৯৭ সালে কালা মহল, আকবরাবাদ, মুঘল সাম্রাজ্যে জন্মগ্রহণ করেন।গালিব মাত্র এগারো বছর বয়সে কবিতা লেখা শুরু করেন। গালিবের প্রথম ভাষা ছিল উর্দু। বলা হয় যে, উর্দু ভাষা গালিবের সৃষ্টি করা। তিনি উর্দু ভাষাকে এক নতুন ধাঁচ প্রদান করেছিলেন। তাকে উর্দু ভাষার জনক হিসাবে ধরা হয়। যদিও তিনি প্রথম উর্দু ভাষার কবিতা রচনা করেননি। উর্দু ছাড়াও গালিব আরবি ও ফার্সি ভাষায় কবিতা রচনা করেছিলেন। কিন্ত তার খ্যাতি উর্দুতে। ধ্রুপদী গজলের প্রথা মেনে গালিবের বেশিরভাগ পদেই প্রিয়জনের পরিচয় ও লিঙ্গ অনির্দিষ্ট। মির্জা গালিবের লেখা চিঠিগুলো সহজ ও জনপ্রিয় উর্দুকে ভিত্তি দিয়েছে। তার লেখা একটি কবিতা হল:

“হাজারো খোয়াইশে ঐসী

কে হর খোয়াইশ পে দম নিকলে

বহত নিকলে হ্যায় মেরে অরমা

লেকিন ফিরভী কম নিকলে”।

“মোমিন খান মোমিন” মুঘল যুগের এক বিখ্যাত উর্দু কবি যিনি তার উর্দু গজলের জন্য বিশেষভাবে বিখ্যাত ছিলেন।তিনি ছিলেন গালিব এবং জাউকের একজন কম পরিচিত সমসাময়িক। ১৮০০ সালে দিল্লির মুঘল সাম্রাজ্যে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। অল্প বয়স থেকেই তিনি পারিবারিক পেশা হিসেবে হাকিমের প্রশিক্ষণ নেন এবং নিজে একজন হাকিম হয়ে ওঠেন। যদিও তার ঝোক ছিল কবিতার প্রতি এবং শীঘ্রই তিনি একজন দক্ষ কবি হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। তার লেখা একটি কবিতা হল: 

“আসর উসকো জরা নহী হোতা

তুম মেরে পাস হোতে হো গোয়া

কোই দুসরা নহী হোতা”।

“নবাব মির্জা খান দাঘ দেহেলভী” ছিলেন একজন কবি, তবে তিনি তার উর্দু গজলের জন্য বিশেষ পরিচিত ছিলেন। তিনি উর্দু কবিতার পুরানো দিল্লি ঘরানার অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।২৫শে মে ১৮৩১ সালে দিল্লির মুঘল সাম্রাজ্যে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি দশ বছর বয়স থেকেই কবিতা আবৃত্তি করা শুরু করেন। তিনি তার কবিতায় কখনোই পশ্চিমী প্রভাব পড়তে দেননি। তিনি ফার্সি শব্দের ব্যবহার কমিয়ে সহজ ও শুদ্ধ উর্দুতে রোমান্টিক এবং আবেগপূর্ণ কবিতা এবং গজল লিখেছেন। তিনি উর্দু বাগধারা এবং এর ব্যবহারের উপর জোর দেন। তিনি তার কবিতার জন্য বিশেষ জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। তিনি দবীর-উল-দাওলা, ফসিও-উল-মুলক, নবাব নিজাম জং বাহাদুর, সিপাহ সালার, ইয়ার-ই-ওয়াফাদার, মুকবির-উস-সুলতান, বুলবুল-ই-হিন্দুস্তান, জাহান ওস্তাদ, নাজিম ইয়ার জং ইত্যাদি উপাধি লাভ করেন। দাঘকে তার সময়ের সেরা রোমান্টিক কবিদের মধ্যে একজন হিসাবে অনেকেই মনে করেন। তার লেখা একটি কবিতা হল:

  “আপকা এতবার কৌন করে

রোজ কা ইন্তিজার কৌন করে”।

উর্দু ভাষা রাজ ভাষার সন্মান পেয়েছিল মুঘল সাম্রাজ্যের একেবারে শেষ পর্যায়ে। কিন্তু সেই সময় মুঘল সাম্রাজ্যের অবস্থা ছিল সব থেকে শোচনীয়। তাছাড়া পাশ্চাত্য দেশগুলি একের পর এক উপনিবেশ স্থাপন করার সম্পূর্ণ ঘটনাটাই সমগ্র সাহিত্যের উপর প্রভাব ফেলে যায়, ফলে দুঃখবাদী কবিতা সাহিত্যের সর্বোচ্চ পর্যায়ে উপনীত হয়েছিল উর্দু সাহিত্যে।

উনিশ শতকের উর্দু সাহিত্য এই কারণে একাধারে রোমান্টিক এবং অপরদিকে সমস্যাবহুল হয়ে উঠতে থাকে, যা দুঃখবাদী সাহিত্যের চিহ্ন। বস্তুতপক্ষে গোটা উর্দু সাহিত্যই এই কারণেই দুঃখবাদকে শ্রেষ্ঠ কবিতার নিদর্শন বলে মনে করে; যদিও লখনৌ এবং হায়দ্রাবাদী ঘরানায় মিলনাত্মক কবিতার উদাহরণও দেখা যায়। তবে তার নিদর্শন অত্যন্ত সামান্য।

Picture Courtesy: thehansindia.com

Comments

Popular posts from this blog

বর্তমান সময়ে বাম ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা

Polemics on 'Fractured Freedom': C Sekhar responds to Kobad Ghandy's views

আম্বেদকরের চোখে - কেন ব্রাহ্মণ্যবাদ শাকাহারী পথ গ্রহণ করল? গো ভক্ষণ নিষিদ্ধকরণের সাথে অস্পৃশ্যতার কি সম্পর্ক রয়েছে?