রিপিট টেলিকাস্ট

ঋদ্ধিমান বসু

২১শে জানুয়ারি, ২০২৩


মাসখানেক ধরে আমাদের একটা রিপিট টেলিকাস্ট দেখানো হচ্ছে, বা বলা ভাল গেলানো হচ্ছে; আবার নাকি করোনা (কোভিড ১৯) ভয়ংকর রূপ নিয়ে ফিরে এসেছে, তাই সবার উচিত সাবধান হয়ে অযৌক্তিক সব বিধিনিষেধ পালন করা। প্রিন্ট এবং ভিসুয়াল মিডিয়ার মাধ্যমে এই বার্তা ক্রমাগত জনমানসের মাথায় ঢুকিয়ে দেবার চেষ্টা চলছে। তবে খুব একটা সফল হচ্ছেনা। তার কারণ বুঝতে হলে আমাদের বিগত ৩ বছরের দিকে ফিরে তাকাতে হবে। এখানে কিছু তথ্য থাকবে, আর কিছু অনুমান বা বিশ্লেষণ (নিজের এবং অন্যদের)।

২০১৯ এর শেষের দিকে আমরা মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পারলাম যে এক ভয়ংকর রোগ নাকি চীন দেশে আত্মপ্রকাশ করেছে, তার নাম দেওয়া হয়েছে কোভিড-১৯ (covid-19)। আরও শোনা গেল এটা নাকি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে।

ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন (হু) ২০২০ র জানুয়ারির শেষে একে অতিমারী (pandemic) বলে ঘোষণা করল। প্যান্ডেমিক শব্দটার সঙ্গে আমার তেমন পরিচিতি ছিল না, আমি বড়জোর epidemic (মহামারী) শুনেছিলাম। এটা একদম নতুন ব্যাপার হলেও (আমার জন্মাবধি এরকম কখনও দেখার সুযোগ হয়নি), আমি তেমন বিব্রত হইনি; এমনকি কোভিড ভারতে ঢুকে পড়েছে এটা জানার পরও। ভারতের মত একটা তৃতীয় বিশ্বের দেশে মানুষ নানান রোগ ভোগ দেখে অভ্যস্ত, সেই নিয়েই বাঁচে। তাই অধিকাংশই তেমন ভয় পাননি। হু এর পরামর্শ ছিল যে এই রোগ নির্ণয় করার জন্য RTPCR টেস্ট করতে হবে আর এর থেকে রক্ষা পাবার জন্য মাস্ক পরতে হবে, সোশাল ডিস্টানসিং করতে হবে। অল্পসংখ্যক লোকজনকে মাস্ক পরতে দেখা গেলেও, তেমন প্যানিক তৈরি হয়নি। তাই, যেন প্যানিক তৈরি করার উদ্দেশ্যেই ২৪ এ মার্চ রাত্রে প্রধানমন্ত্রী টিভিতে এসে সবাইকে বোঝালেন যে এই কোভিড-১৯ এক ভয়ংকর রোগ এবং এটা ছড়িয়ে পড়লে তা মারাত্মক আকার নেবে। তার সঙ্গে এও ঘোষণা করলেন, যে পরের দিন থেকে দেশে সম্পূর্ণ লকডাউন হবে। [১] এই ব্যাপারটাও কিরকম অবিশ্বাস্য ছিল, সব বন্ধ, কেউ বাড়ি থেকে বেরোবেনা, এমনটা কোনওদিন দেখিনি বা শুনিনি। সকালে একটা নির্দিষ্ট সময়ে দোকান বাজার খোলা থাকল। তাই সেখানে ভীড় বাড়ল বই কমল না। তবে, এই ওষুধে কাজ হল। প্যানিক উৎসব শুরু হল। প্রথমে, ২১ দিনের লকডাউন বললেও, তা বাড়তেই থাকল। মাসদুয়েক পরে অল্পস্বল্প বেরোনোর অনুমতি মিলল, তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গেল রাস্তাঘাট সুনসান। প্রিন্ট মিডিয়া, টেলিভিশন এমনভাবে মনকে আচ্ছন্ন করে রেখেছিল যে প্রথম প্রথম এই অত্যাচার স্বত্ত্বেও, মনে কোন প্রশ্ন জাগেনি। তার উপর সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেক এমন ব্যাক্তি যাদেরকে জ্ঞানীগুনী, অ্যান্টি এস্ট্যাব্লিশমেন্ট বলে জানতাম, তারাও দেখলাম এই ন্যারেটিভ কে সর্বান্তকরণে সমর্থন করছেন। অনেক শিক্ষিত মানুষকেই দেখলাম কোথাও একটু ভিড় দেখলে, সেই জনতা কত দায়িত্বহীন, ইত্যাদি নিয়ে ফেসবুকে খাপ পঞ্চায়েত বসাচ্ছেন। রাস্তায় কেউ মাস্ক না পরলে বা থুতনি তে নামালে, পুলিশ বাদেও (পুলিশ এগুলো করতে পারছিল ডিসাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যাক্ট লাগু করা হয়েছিল বলে) সাধারণ পথচারীরাও দায়িত্ব সহকারে তাদের ভৎসনা করতে লাগলেন। মগজ ধোলাই এর এটা শেষ ধাপ ছিল। আমার সৌভাগ্য ছিল যে, শুরু থেকেই আমি এর বিপরীত ভাষ্য শোনার সুযোগ পেয়েছি (এক ন্যাচারাল সাইন্স ও প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের নিবিড় যোগাযোগ নিয়ে গবেষণারত সংস্থার কল্যানে)। এই সুত্রেই শুনেছি যে, কোভিডের ব্যাপারে তিল কে তাল করা হচ্ছে, এইরকম সবাইকে ঘরে বন্ধ করে রেখে সংক্রমণ আটকানো যায়না। এসব শুনেও, তখন মানতে পারিনি। 

খটকাটা লাগতে শুরু করল, যখন অল্পসল্প বাইরে বেরোতে আরম্ভ করলাম। হয়ত এই বিধিনিষেধ এর বিরক্তি থেকেই এর যৌক্তিকতা নিয়ে মনে প্রশ্ন জাগল। তখন এই নিয়ে আরও অনুসন্ধান করার ইচ্ছে হল। মজার কথা হল, কেউ যখন সত্যি টা জানতে চায়, তখন তার সামনে বিভিন্ন রাস্তা খুলে যায়, যেগুলো আগে থাকলেও, দৃষ্টিগোচর হয়নি। সেই ব্রেনওয়াশ এর আখড়া সোশ্যাল মিডিয়াতেই এই ভিন্ন মতামতগুলো আবিষ্কার করতে শুরু করলাম। দেখলাম যে অনেক ডাক্তার, বিশেষজ্ঞ ও শুভবুদ্ধিসম্পন্ন বুদ্ধিজীবী (এঁরা বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে সংখ্যালঘু), এই পুরো ব্যাপারটাকে একটা চক্রান্ত বলছেন, এবং তার নানান দিক নিয়ে বিস্ফোরক তথ্য ও বিশ্লেষণ দিচ্ছেন। এছাড়া প্রথম সূত্র তো ছিলই; তার উপর বিভিন্ন আর্টিকল, বইপত্র ইত্যাদিও ঘাঁটতে শুরু করলাম, ব্যাপারগুলো আরও ভাল করে বোঝার জন্য। 

আরটিপিসিআর যে আদৌ কোন রোগ নির্ধারণের পক্ষে উপযুক্ত পরীক্ষা নয় [২], এবং সার্স কোভ - ২ যে একটা মাইল্ড ভাইরাস (সাধারণ ইনফ্লুয়েঞ্জা র চেয়েও লঘু), সেটা প্রথমে জানলাম। আরও জানলাম, যে মাস্ক এর ছিদ্র ভাইরাসের চেয়ে অনেক বড়, ড্রপলেট কিছুটা আটকাতে পারলেও, তাতে বিশেষ লাভ নেই, বরং ক্ষতি আছে। তার কারণটাও বুঝলাম। যে নিশ্বাস আমরা নাক দিয়ে ছাড়ছি, মাস্ক এর কারণে সেটা পুরো নির্গত হচ্ছেনা, তার অনেকটাই প্রশ্বাস হয়ে আমাদের শরীরে ফিরে আসছে। সেই নির্গত নিশ্বাসের মধ্যে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমান কতটা বেশি, এবং তা শরীরে ফের ঢুকলে কি হতে পারে, তা একটু অনুসন্ধান করলেই জানা যায়। [৩] আর সোশ্যাল ডিস্ট্যানসিং এর নামে মানুষকে কাছে আসতে না দিলে যে আদতে ক্ষতি, সেটাও বুঝলাম। স্যানিটাইজারের অত্যাধিক ব্যবহার বিপদজনক, এও জানলাম। চেতনা যত উন্নত হতে লাগল, আস্তে আস্তে, মাস্ক নাক থেকে থুতনিতে নামতে শুরু করল, লোকজনের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলার অভ্যাস, বাইরে থেকে ঘরে ফিরেই ঘড়ি, মোবাইল ইত্যাদি তে স্যানিটাইজার ঘষার অভ্যাস কাটতে লাগল। ২০২০-র শেষভাগে একদমই কেটে গেল। স্বভাবতই, যখন শুনলাম, যে এর জন্যে ভ্যাক্সিন আসতে চলেছে, মনে সন্দেহ দানা বাঁধল। ২০২১ এ বলা হল, কোভিডের দ্বিতীয় ওয়েভ আসছে, ডেল্টা নামের এক ভ্যারিয়ান্ট এর হাত ধরে। এই সময়ে একাধিক ভ্যাক্সিনও বাজারে চলে এল। প্রথমেই মানুষজন তেমন উৎসাহ দেখাননি। এর একটা বড় কারন হল, যেরকম সাংঘাতিক অতিমারী বলা হয়েছিল, তাতে তো শয়ে শয়ে লোকজন রাস্তায় মরে পড়ে থাকার কথা, তেমন তো কিছুই হয়নি।

ব্যাপারটা ঠিক জমছিল না। তাই নতুন খেলা শুরু হল। 

আরটিপিসিআর টেস্ট এর সাহাজ্যে কেস বাড়িয়ে (ফলস পসিটিভ) আবার একটা ভয়ের বাতাবরণ তৈরি করা হল। এর সঙ্গে যোগ হল শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা, যার কারণ বোধহয় এক বছর ধরে লাগাতার মাস্ক এর ব্যবহার। এই শ্বাসকষ্টের একমাত্র নিরাময় অক্সিজেন সিলিন্ডার থেকে অক্সিজেন দেওয়া, অক্সিজেন লেভেল ফল করলে খুব খারাপ; ইত্যাদি মাথায় ঢুকিয়ে দেওয়া হল। অক্সিজেন সিলিন্ডার এর ঘাটতি এমন ভাবে তৈরি করা হল, যাতে বাড়িতে কেউ অক্সিজেনের ব্যবস্থা না করতে পারে, তাকে অক্সিজেনের জন্য হাসপাতাল বা নার্সিং হোমেই ছুটতে হয়। সেখানে আরেক খেলা চলল। রেমডিসিভির বলে এক ড্রাগ যেটা ইবোলার (মূলত আফ্রিকায় হয়েছিল এটা) ওষুধ হিসেবে তৈরি করা হয়েছিল, যেটাকে পুরো ব্যবহার করা যায়নি তার পার্শপ্রতিক্রিয়া র জন্য (সেইজন্য অনেক স্টক জমে ছিল); সেটা হঠাৎ হু এর পরামর্শে কোভিডের ট্রিটমেন্ট প্রোটোকল এ ঢুকে গেল। সারা বিশ্ব সেটাকেই মেনে চলতে বাধ্য হল। এর ফলে, যা হবার, তাই হল। হাসপাতাল, নার্সিং হোমে ভর্তি হওয়া মানুষজন অধিকাংশই মৃত্যুবরন করতে লাগলেন। যেকোনো অন্য অসুখকে এই টেস্ট এর সাহাজ্যে কোভিড বলে দাগিয়ে দিয়ে, কেস বাড়ানো, তাঁরা মারা গেলে সেগুলোকে কোভিড মৃত্যু হিসেবে দেখানো, এসবও হয়েছিল। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হয়েছে সারাবিশ্বেই। এমনকি রেমডিসিভির এর নামই হয়ে গেলো Fauci’s Death Tonic (ফাউচি আমেরিকার স্বাস্থ্য উপদেষ্টা ছিলেন ওই সময়ে, সব সীর্ধান্তের পিছনেই ওনার যথেষ্ট অবদান আছে)। [৪] এছাড়া অকারণে ভেন্টিলেটর এ ঢুকিয়ে দেবার প্রবনতাও (নতুন নয়) সর্বনাশ ডেকে এনেছিল। আমাদের দেশে দূর্ভাগ্যবশত এই সব বিষয়ে অধিকাংশ লোকজনই অবগত হননি, তাই এই ডেথ টনিক নিয়ে সেই সময়ে কালোবাজারি ও হয়েছে। অথচ হু এরই অন্য এক সাইটে সব ড্রাগের রিপোর্টেড সাইড এফেক্ট এর লিস্ট পাওয়া যায়, সেখানে রেমডিসিভির দিয়ে সার্চ করলেই, তার ভয়ানক সব সাইড এফেক্ট দেখাবে। [৫] তাহলে সব জানা স্বত্ত্বেও এটা কি করে প্রোটোকল এ ঢুকলো, এই প্রশ্ন জাগাটাই স্বাভাবিক। এ সবের লাভ কি কি হল, সেটা অনুমান করা যায়। সেরকম দুটো বিশ্লেষণ রাখছি (এটা আমার একার ধারণা নয়, এই একই সীর্ধান্তে অনেকেই পৌঁছেছেন) - এক : রেমডিসিভির এর স্টক ক্লিয়ার হয়ে গেল, দুই : করোনা কে আরেকবার ভয়ংকর রোগ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা গেল ও ভ্যাক্সিনের চাহিদা তৈরি করা গেল। এবার দেখা গেল ভ্যাক্সিন নেবার জন্য লোকজন রাত থেকে লাইন দিচ্ছে। তবে প্রথম ডোস নেবার পর এই উন্মাদনা অনেকটাই কমে গেল, নানান কারণে। এবার আবার নতুন কথা শোনা গেল, দু ডোস ভ্যাক্সিন না নিলে ট্রেনে বাসে চড়তে দেওয়া হবেনা, স্কুল কলেজ কোথাও ঢুকতে দেওয়া হবেনা, চাকরিবাকরি চলে যাবে ইত্যাদি। এটা মূলত মিডিয়া ছড়ালো। কিন্তু আরটিআই এর মাধ্যমে অনেকেই জানতে পারলেন, যে গভর্নমেন্ট এর থেকে এরকম কোন অর্ডার আসেনি। তবে সেই গভর্নমেন্ট এর লোকজন ই নানান মিডিয়াতে ভ্যাক্সিনের এর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে এমন প্রচার করতে লাগলেন, যে এই সত্যি টা বোঝে কার সাধ্য। যাঁরা আগে কোভিডের চক্রান্ত নিয়ে বলেছিলেন, তাঁরাই এই নিয়েও মানুষকে সচেতন করতে লাগলেন। এই টিকাগুলো যে অন্যান্য টিকার মত নয়(Inactivated বা Live-Attenuated), বরং এমন এক নতুন টেকনোলজি দিয়ে তৈরি, (mRNA এবং Viral Vector) যা আগে কখনও মানুষের উপর প্রয়োগই হয়নি; [৬] তার উপর এত তাড়াতাড়ি টিকাকরনের উদ্দেশ্যে এগুলোর ট্রায়াল তখনো চলছিল; (এখনও শেষ হয়নি) এই ধরনের খুঁটিনাটি, তাঁরা তুলে ধরছিলেন। কিন্তু আবার বাধ সাধলেন বুদ্ধিজীবীরা। তাদের অনেকেই প্রোপাগাণ্ডায় ভেসে গেলেন, অনেকের হয়ত অন্য স্বার্থও ছিল। তাঁরা সব যায়গায় প্রচার করে বেড়াতে লাগলেন, যে এই ভ্যাক্সিন নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করা, কোভিডকে ষড়যন্ত্র বলা ইত্যাদি হল বিজ্ঞানবিরোধীতা, একমাত্র মেন্সট্রিম আখ্যানের সঙ্গে গলা মেলানোই হল বিজ্ঞানমনস্কতা। (এর শুরু ২০২০ তেই হয়েছে, তবে এই সময়টায় বেড়েছিল) এঁদের মধ্যে যারা যুক্তিবাদী তকমা আঁটা, তারা আবার বোঝানোর চেষ্টা করলেন, যে ভ্যাক্সিন এত তাড়াতাড়ি আসাটা মোটেই সন্দেহজনক নয়, এই কম্পিউটারের যুগে কি না হতে পারে। তবে কম্পিউটার এর মাধ্যমে সময়ের গতি কমিয়ে দেওয়া যায় কিনা, কিম্বা সময় যাত্রার (Time Travel) প্রযুক্তি আবিস্কার হয়েছে কিনা, যাতে এত তাড়াতাড়ি প্রাথমিক সেফটি ট্রায়াল শেষ করা যায়, সেটা বলার প্রয়োজন মনে করেননি। বেসুরে গাওয়া লোকজন কে কন্সপিরেসি থিয়োরিস্ট, অ্যান্টি ভ্যাক্সার; আর মেনস্ট্রিম ন্যারেটিভ মানলে বিজ্ঞানমনস্ক, এইটা অলিখিত ভাবে চালু হয়ে গেল। জন্ম হল বিজ্ঞান মৌলবাদের। সত্যিকারের বিজ্ঞানকে শুরু থেকেই চাপা দেওয়া হচ্ছিল, যে বিজ্ঞানী, চিকিৎসক,সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী রা সত্যিটা মানুষকে বলতে চেয়েছিলেন, তাদের কথা চেপে দেওয়া হচ্ছিল অফলাইন এবং অনলাইনে। সোশ্যাল মিডিয়াতেও মেনস্ট্রিম ন্যারেটিভ এর জয়জয়কার আর বিরুদ্ধ ভাষ্যর গলা টিপে ধরা লক্ষনীয়ভাবে দেখা গেছে। এই সুযোগে অনেক প্রথাগত ভাবে শিক্ষিত মানুষও নিজেদের বিজ্ঞানমনস্ক প্রমান করার লোভ ছাড়তে পারেননি; আগামাথা না জেনে-বুঝে শুধু মেনস্ট্রিম ন্যারেটিভ এ গলা মেলালেই প্রগতিশীল, এমন সুযোগ আর কতই বা জোটে। ফেসবুক বা হোয়াটসঅ্যাপ স্টোরিতে, ভ্যাক্সিন কিভাবে কাজ করে সেই নিয়ে অ্যানিমেশন চোখে পড়েছিল; এমন ভাব যেন, যারা বিরোধী মত পোষণ করেন, তাঁরা এটাও জানেননা। 

এইসব কোভিড ভ্যাক্সিনের ব্যাপারে আমাদের (আমার থেকে আমাদের হয়ে ওঠার কারণ, ইতিমধ্যেই অনেক সমমনস্ক মানুষজনের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছিল, অনেক আন্দোলনেরও সন্ধান পেয়েছিলাম) সন্দেহের প্রধান কারণ ছিল এগুলো একদম নতুন প্রযুক্তিতে তৈরি এবং সৎ ডাক্তার/বিশেষজ্ঞ/বুদ্ধিজীবিরা এর সম্ভাব্য মারাত্মক সব পার্শপ্রতিক্রিয়ার ব্যাপারে সচেতন করছিলেন। এই সব ভ্যাক্সিন এর ফ্যাক্টশিটেও এগুলোর সম্ভাব্য সাইড এফেক্ট এর কথা বলা ছিল, তবে বেশিরভাগই টিকা নেবার আগে সেগুলো পড়ে দেখেননি। এছাড়া কিছু অযৌক্তিক কথা হু, সিডিসি, দেশি ও বিদেশি মিডিয়া প্রচার করছিল। যেমন বলা হচ্ছিল যে ভ্যাক্সিন প্রদত্ত ইমিউনিটি নাকি ন্যাচারাল ইমিউনিটির চেয়েও বেশি। এটা যে সর্বৈব মিথ্যা, তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। ততদিনে আমরা জেনে গেছি, যে আমাদের শরীরের মধ্যে এক অন্তর্নিহিত শক্তি আছে, যা আমাদের ভাল রাখে, তারই একটা মুখ হচ্ছে স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। তাকে যদি ঠিকঠাক কাজ করতে দেওয়া হয়, তাহলে তার চেয়ে বেশি কার্যকরী কোন বাহ্যিক ওষুধই হতে পারেনা। এরকম মিথ্যাচার যদি একটা আন্তর্জাতিক সংগঠন করে, তাহলে তার উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহ জাগে বৈকি। আরও একটা শোনা যাচ্ছিল, এই হু এর সৌজন্যেই। কথাটা ছিল, "No one is safe till everyone is safe"। এর অর্থ, যতক্ষণ না সবাই কোভিড ভ্যাক্সিন নিচ্ছে, কেউই নাকি কোভিড থেকে সুরক্ষিত নয়। এটা অনেকটা ধাঁধার মত, যাকে ইংরেজিতে বলে logical paradox। তার কারন, একদিকে বলা হচ্ছিল এইসব কোভিড ভ্যাক্সিন খুব কার্যকরী, এটা একজন নিলে, তার মৃত্যু তো হবেই না, এমনকি তাকে কখনও হাসপাতালেও যেতে হবেনা; মানে মোট কথা ভ্যাক্সিন নিলে একজন সম্পূর্ণ সুরক্ষিত। (এই কথা থেকে ভবিষ্যতে অনেকটাই সরে আসতে বাধ্য হয়েছে সবাই) এই কথাকে যদি আমরা সত্যি বলে ধরে নিই, তাহলে একজন ভ্যাক্সিন নিলেই সেফ, অন্য কে ভ্যাক্সিন নিল কি নিলনা, তাতে তার কিছু এসে যাওয়া উচিত নয়। তাহলে সবাই ভ্যাক্সিন না নিলে কেউ সেফ নয়, এই কথাটা ভুল। আবার যদি এই কথাটা ঠিক হয়, তাহলে আবার, কেউ ভ্যাক্সিন নিলেই সুরক্ষিত, এই কথাটা ভুল। দুটো কখনোই একসঙ্গে সত্যি হতে পারেনা, অথচ একই লোকজন বা সংস্থা, দুটোই বলছিল। এরকম logical fallacy কেন তথাকথিত যুক্তিবাদীদের ভাবালো না, বলা মুশকিল। (মাস্ক পরার ক্ষেত্রেও একইরকম বলা হয়েছিল, সেটাও একই ভাবে অযৌক্তিক) এরকম বহু উদাহরণ আছে। উল্লিখিত হু এর সাইটেই বিভিন্ন ভ্যাক্সিন এর নাম দিয়ে সার্চ করলেই এই অবধি সেগুলোর যত পার্শপ্রতিক্রিয়া রিপোর্ট করা হয়েছে, সব দেখা যাবে। [৫]

এবার ট্রায়াল এর ব্যাপারে যেটুকু বুঝেছি, সেটা বলা দরকার। যেকোনো ওষুধের ট্রায়ালে ৪ টে ফেজ থাকে। [৭] সব দেশেই মোটের উপর এটাকেই অনুসরণ করা হয়। সব ভ্যাক্সিনগুলোই ট্রায়ালে ছিল, তাই সেগুলোকে ক্যান্ডিডেট ভ্যাক্সিন বলা উচিত। আমাদের দেশে যেটা সবচেয়ে বেশি দেওয়া হয়েছে, সেই কোভিশিল্ড এর দ্বিতীয় ফেজ এর ট্রায়াল চলতে চলতেই গণটিকাকরণ শুরু হয়ে গেল। লক্ষনীয় যে কোনো ওষুধেরই ফেজ ৩ (কোথাও কোথাও ফেজ ৪) ট্রায়াল শেষ হবার আগে সেটা বাজারে আসেনা, তাই এগুলোকে ইমার্জেন্সি অথোরাইজেশন বলে আনা হল। সেই ইমার্জেন্সি তৈরি করার জন্যই দ্বিতীয় ওয়েভ এর এত পরিকল্পিত ত্রাস বলে আমার ধারণা। যে ধরনের ট্রায়াল চলছিল, তার নাম Double Blind Placebo Controlled Trial। [৮] এই পদ্ধতিতে, ট্রায়ালে অংশগ্রহনকারীদের দুই ভাগে ভাগ করা হয়, একদল কে আসল ওষুধ দেওয়া হয়, আরেকদল কে দেওয়া হয় প্লাসিবো, অর্থাৎ নকল ওষুধ, যেটা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই স্যালাইন জল। কিন্তু এখানে অংশগ্রহণকারী এবং গবেষক কেউই জানবেননা কোনটা আসল আর কোনটা প্লাসিবো। যে স্বাস্থ্যকর্মী রা ওটা দিচ্ছেন, তারাই একমাত্র জানবেন। প্লাসিবো টাও আসল টিকার মতই ভায়ালে থাকবে, সাধারণভাবে দেখে তফাৎ বোঝা সম্ভব নয়। (কিছু তফাৎ তো থাকেই, তবে সেটা দেখতে জানতে হয়) এই ধরনের গবেষণায় আসল আর নকল ওষুধের তুল্যমূল্য বিচারে ওষুধের গুনমান (পরিসংখ্যান) নির্ণয় করা হয়। সব কোভিড ভ্যাক্সিনের ট্রায়াল এইভাবেই হয়ে চলেছে দেশে বিদেশে। [৯][১০]

এবার আবার অনুমানে আসব। ট্রায়ালে যেমন প্লাসিবো ছিল, গণটিকাকরণেও ছিল; অনেকের প্রথম ডোস ও দ্বিতীয় ডোস নেবার পর প্রতিক্রিয়ার তফাৎ শুনে এই ধারণা হয়েছে। অনেকে প্রথমবারেই প্লাসিবো পেয়েছেন, তবে বেশিরভাগ দ্বিতীয়বারে। এই প্লাসিবো, কে কখন পাবে, কতবার পাবে, আদৌ পাবে কিনা, সেটা পুরোপুরি ভাগ্যনির্ভর। (একমাত্র উচ্চস্থানে থাকা রাজনীতিবিদ বা সেলিব্রিটি ছাড়া) এবার ধরুন প্রথম ডোসেই একজন প্লাসিবো পেল, তার তো কোন পার্শপ্রতিক্রিয়াই হবে না, বরং প্লাসিবো তাকে কোভিডের বিরুদ্ধে ন্যাচারাল ইমিউনিটি তৈরি করতে সাহাজ্য করবে। কিন্তু মুশকিল হবে, যখন সে বলে বেড়াবে যে, দূর, এই ভ্যাক্সিন একদম সেফ, গুজবে কান দেবেন না। এরকম প্রচুর হয়েছে, বলে আমার ধারণা। কিন্তু যারা প্রথমেই আসল ডোজ পেয়েছেন, তারা কিছু পার্শপ্রতিক্রিয়া নিশ্চয়ই টের পেয়েছিলেন, হয়ত সেই কারণেই দ্বিতীয় ডোস নেবার সংখ্যা অনেক কম ছিল। 

এই করতে করতে ২০২১ এর প্রায় শেষ চলে এলো। এবার ওমিক্রন বলে এক নতুন ভ্যারিয়ান্ট এসেছে জানা গেল, এবং এই ভ্যারিয়েন্টই তৃতীয় ওয়েভ নিয়ে আসবে, বলা হল। মিডিয়ার ভয়ের প্রচারের থার্ড ওয়েভ শুরু হল। আর মেন্সট্রিমবাদী ইন্টেলেকচুয়ালদের সতর্কীকরণঃ এর শেষ ওয়েভ শুরু হল। বলা হয়েছিল, যে ওমিক্রন ডেলটার চেয়ে অনেক মাইল্ড, এতে ঝুঁকির তেমন কিছু নেই। (অনেকের মত আমারও মতে, আগেও সেরকম ঝুঁকি ছিল না) অনেক বিজ্ঞানী মত দিলেন যে এই ভ্যারিয়েন্ট ই প্রধান হয়ে যাবে, রোগটা এন্ডেমিক হয়ে যাবে। ওমিক্রন তাই প্রাকৃতিক ভ্যাক্সিন হিসেবে কাজ করবে। এই ধারণা আমাদেরও যুক্তিযুক্ত মনে হল, কারণ ইতিমধ্যে আমরা বিভিন্ন সুত্রে জেনে গেছি (Immunology ও Evolutionary Biology র বই থেকে মিলিয়েও নিয়েছি) যে, একটা ভাইরাস ছড়াতে চাইলে, তাকে তার মারণক্ষতা কমাতেই হবে (মিউটেশন এর মাধ্যমে), কারণ যাকে সে সংক্রামিত করছে, সে মারা গেলে ভাইরাস আর ছড়াতে পারবে না। (মৃত ব্যক্তির থেকে ভাইরাস ছড়ায় না, এবার চিন্তা করুন তাহলে দ্বিতীয় ওয়েভে হাসপাতালগুলোয় মৃতদেহ কেন পরিজনদের কাছে দেওয়া হয়নি?) সেই হোস্টকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে আরও ছড়ানোর জন্য, এটাই প্রকৃতির নিয়ম। তবে এর বিরুদ্ধে এবার অনেক মেন্সট্রিম বিশেষজ্ঞ নেমে পড়লেন, বলতে লাগলেন, যে এরকম ধারণা খুব ভুল ও বিপদজনক, যদিও এর স্বপক্ষে রিসার্চ পেপার ও বেরিয়ে গিয়েছিল এর মধ্যেই। একইভাবে, উল্লিখিত ইন্টেলেকচুয়ালেরাও বলতে শুরু করলেন যে মৃত্যু না হোক, প্রচুর লোকজন হাসপাতালে ভর্তি হলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর চাপ পড়বে, তাই সবার কঠোরভাবে বিধিনিষেধ পালন করা উচিত ইত্যাদি। তবে এত চেষ্টা ব্যর্থ হল, ওয়েভ সেরকম ভাবে কেউ টের পেলনা। এক ব্যবসায়ী থেকে জনস্বাস্থ্যবীদ হয়ে ওঠা সেলিব্রিটি (বিল গেটস), দুঃখ করে বললেন ওমিক্রন আমাদের আগে আর বেশিমাত্রায় সবাইকে ভ্যাক্সিনেট করে দিল, আমাদের সুযোগ হাতছাড়া হল। [১১]

এরপর কয়েকটা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটল। সুপ্রিম কোর্টে একটা মামলা চলছিল, ভ্যাক্সিন ম্যান্ডেট নিয়ে। (জেকব পুলিয়েল, অ্যাডভঃ প্রশান্ত ভূষন)। এর সওয়াল জবাব এর জেরে কেন্দ্রীয় সরকার জানুয়ারি মাসে কোর্টকে হলফনামা দিয়ে বলল যে তারা কখনোই কোভিড ভ্যাক্সিন কে ম্যান্ডেটরি করেনি (২০২১ এ তাদের কার্যকলাপ দেখলে, অবশ্য অন্যরকমই ধারণা হবার কথা)। এরপর মার্চ মাসে তারা ডিসাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যাক্ট এর অধিনে জারি করা সব বিধিনিষেধ তুলে নিল। অবশেষে ২ মে, ২০২২ এ সুপ্রিম কোর্ট এই মামলার রায় দিয়ে বলল কোভিড ভ্যাক্সিন নিতে কাউকে বাধ্য করা যাবে না। এও মনে করিয়ে দিল যে দেশের সংবিধান অনুযায়ী কাউকেই কোন রকমের ওষুধ নিতে বাধ্য করা যায়না, সবার নিজের পছন্দমত চিকিৎসাপদ্ধতি অবলম্বন করার অধিকার আছে। [১২] এছাড়া বিভিন্ন সময়ে অনেক হাইকোর্টেই অনেক উল্লেখযোগ্য মামলা হয়েছে, এখনও হচ্ছে, সেই সম্বন্ধে আর এখানে বলার সুযোগ নেই।

জানুয়ারিতে থার্ড ওয়েভ ফ্লপ করার পর, নিওকোভ বোলে এক নতুন করোনাভাইরাস আর কোভিডেরই বি এ ২ নামে এক ভ্যারিয়ান্ট নিয়ে ভয় দেখানোর চেষ্টা হয়েছিল। এর জন্যই হয়ত প্রথমবার সংখ্যাগুরু জনমানস, এই ভয় দেখানোর রাজনীতি বুঝতে শুরু করলেন। এরপরও হাল না ছেড়ে এক নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে এক গাণিতিক ভবিষ্যতবানী (statistical prediction) করা হল, যাতে বলা হল, যে জুনে নাকি চতুর্থ ঢেউ আছড়ে পড়বে। [১৩] এই গাণিতিক মডেল খুবই সন্দেহজনক, কারণ এইধরনের প্রেডিকশন এ ঋতুর হিসাব (seasonality) টা খুব গুরুত্বপূর্ণ। গত দু'বছরে যখন পরিস্কার বোঝা গেছে, যে কোভিড ওই জানুয়ারি থেকে এপ্রিল এর মধ্যেই থাকে, তাহলে হঠাৎ জুন মাসে কেন নিয়মের ব্যতিক্রম করে নতুন ঢেউ আসবে? মানুষ হয়ত এটা ভেবেই এই ব্যাপারটাকেও খুব একটা গায়ে মাখল না। সব সরকারই যে কোনও বৃহত্তর স্বার্থে (মানুষের মঙ্গলের স্বার্থ নয়) জনগনকে ভয়ে রাখতে চায়, সেই ধারণা আরও দৃঢ হল।

অবশেষে রিপিট টেলিকাস্ট এর কথায় আসি, বা বলা ভাল ব্যর্থ রিপিট টেলিকাস্ট।

এতকিছু পেরিয়ে (আরো অনেকিছুই আছে, যা বলা হলনা, তবে ইচ্ছে থাকলে পাঠকেরা নিজেরাই অনুসন্ধান করে জানতে পারবেন) আমরা ২০২২ এর ডিসেম্বর মাসে এলাম। তার আগে, নভেম্বরে কেন্দ্রীয় সরকার ফের সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা দিয়ে বলেছে, যে তারা নাকি সবাইকে এইসব কোভিড ভ্যাক্সিন এর পার্শপ্রতিক্রিয়া নিয়ে সচেতন করেছে (এ কথা কতটা সত্যি, সেটা পাঠকরাই বিচার করুন), তাই তারা এর সাইড এফেক্টের জন্য কাউকে ক্ষতিপূরণ দেবেন না। ডিসেম্বরের শেষের দিকে, হঠাৎ শোনা গেল, চীনে আবার কোভিড বাড়ছে, তাই সব দেশে আবার বাড়তে পারে। আবার সবরকম চেষ্টা শুরু হল ভয় ধরানোর (একমাত্র সেই বুদ্ধিজীবী ও যুক্তিবাদী রা আর ওই ঘাট মাড়ান নি, সেই তৃতীয় ঢেউ ফ্লপ হবার পর থেকেই)। তবে আর চিঁড়ে ভিজল না। আগের দুটো ভাঁওতাবাজিতে যে ধারণা তৈরি হয়েছিল, সেটা এবার বদ্ধমূল হয়ে গেল। ষড়যন্ত্রকারীদের রিপিট টেলিকাস্ট হলো তবে জনগনের হল না, বরঞ্চ, তারা চেতনার দিকে আরও কিছুটা অগ্রসর হলেন।

এটাই আশার কথা, যে মানুষ জাগছে। এই জাগার অনেকগুলো স্তর আছে। প্রথম স্তর হলো খটকা লাগা, মিথ্যাচারগুলো ধরতে পারা। তারপর আস্তে আস্তে এই বোধ আসা যে কোন মেন্সট্রিম রাজনৈতিক দল বা মিডিয়াই বিশ্বাসযোগ্য নয়, সবাই একই অদৃশ্য নির্দেশে চলে। এইভাবেই, অনেক বিচ্ছিন্ন ঘটনা যে আসলে এক বৃহৎ (কিন্তু নিকৃষ্ট - নতুন বিশ্বব্যবস্থা - এজেণ্ডা ২০৩০) [১৪] পরিকল্পনার অংশ (যেমন ডিমনিটাইজেসন) সেগুলো নিয়ে দুয়ে দুয়ে চার করা যাবে। এরপর, প্রশ্ন জাগবে যে এই নির্দেশ কারা দিচ্ছে। প্রথমেই ফাউচি, বিল গেটস, টেড্রোস ইত্যাদির কথা মনে হবে, আরেকটু ভাল করে বুঝতে শুরু করলে ক্লাউস শোয়াব এর নাম উঠে আসবে। চেতনা আরও একটু উন্নত হলে, এদেরও পিছনে কারা কলকাঠি নাড়ে, সেগুলো বোঝা যাবে। সারা বিশ্বে, নিখুঁত পরিকল্পনামাফিক যে এইরকম কিছু করা যেতে পারে, সেটা আর ততটা অবিশ্বাস্য লাগবে না। [১৫] এর উপরেও স্তর আছে হয়ত, (সব বুঝে গেছি এমন দাবি কখনোই করব না, তবে বোঝার জন্য মনের জানালা খোলা রেখেছি) তবে এই সব কটা স্তরও যে সবাই অতিক্রম করতে পারবে, তা নয়, পারলেও সবাই একসঙ্গে পারবেনা। এক এক জনের এক এক রকম সময় লাগবে। এই প্যান্ডেমিক (অনেকের মতে প্ল্যান্ডেমিক বা স্ক্যামডেমিক) এর কারণে অনেকের নানান প্রকার ক্ষতি হয়েছে, তারা প্রিয়জনদের হারিয়েছেন, অর্থনৈতিক, ব্যবসায়িক, মানসিক, জীবিকাগত ইত্যাদি দিক দিয়ে বিপর্যস্ত হয়েছেন। এতদিনে অনেকে ঘুরে দাঁড়াচ্ছেন, নতুন আশায় বুক বাঁধছেন। সেইজন্যই, সবার এই ব্যাপারগুলো বোঝার চেষ্টা করা উচিত, সচেতন হওয়া উচিত, যাতে এর পুনরাবৃত্তি আর না ঘটে, যাতে সেটা আটকানো যায়। এর জন্য unlearning এবং relearning দরকার, আগের অনেক ধ্যানধারণা, পক্ষপাত বর্জন করা দরকার (সিধুজ্যাঠার ভাষায় মনের জানালা খোলা রাখা দরকার)। একবার যদি সেই চেতনার স্তরে উন্নিত হওয়া যায়, তাহলে আর কোনকিছুকেই আগের মত করে দেখা যাবে না, ইংরেজির পরিভাষায় যাকে বলে paradigm shift, সেটাই হবে। 

এই চেতনা আসে মানুষের প্রকৃতিদত্ত intuition বা অন্তর্দৃষ্টি থেকে (এটা ওই অন্তর্নিহিত শক্তিরই আরেক মুখ)। এটা একটা অনুভূতি, যার সঙ্গে প্রথাগত শিক্ষা এমনকি আই কিউ এর ও কোন সম্পর্ক নেই (এই নিয়ে ভবিষ্যতে লেখার ইচ্ছে রইল)। এটা ভিতর থেকে আসা দরকার, কারো মতামত শুনে প্রভাবিত হয়ে কিছু বুঝেছি মনে হলে, সেটাও একধরনের ব্রেনওয়াশই হবে, চেতনা নয়। মতামত শুনে যদি নিজের ইন্টিউশান (পক্ষপাত নয় কিন্তু) সেটাকে ঠিক বলে, তবেই সেটা চৈতন্য। এই চৈতন্য নিজস্ব ভাবনাচিন্তা থেকে আরো সমৃদ্ধ হতে পারে। এই মুহূর্তে যা দেখা যাচ্ছে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মানুষের চেতনার উন্মেষ ঘটছে, সারা বিশ্ব জুড়ে। এই নবজাগরণের ধারা অব্যাহত থাকলে, আমার বিশ্বাস, আমাদের ভবিষ্যৎ খুবই উজ্জ্বল। 


তথ্যসূত্রঃ

১। https://en.wikipedia.org/wiki/COVID-19_lockdown_in_India

২। https://brownstone.org/articles/pcr-tests-and-the-rise-of-disease-panic/

৩। Stanford Study Results: Facemasks are Ineffective in Blocking Transmission of COVID and Actually Can Cause Health Deterioration and Premature Death | WSAU News/Talk 550 AM

৪। How The NIH And Hospitals Used Remdesivir To Quickly Kill Covid Patients - Brightwork Research & Analysis

৫। https://vigiaccess.org/

৬। https://www.hhs.gov/immunization/basics/types/index.html

4 Phases of Clinical Research Studies | UCB

https://www.winchesterhospital.org/health-library/article?id=21849

Characterization and Durability of COVID-19 Vaccine Induced Immune Responses in Healthcare/Frontline Workers

১০https://pubmed.ncbi.nlm.nih.gov/33059771/

১১। Bill Gates Gives Omicron More Credit Than Vaccines in Battling COVI

১২। Nobody Can Be Forced To Get Vaccinated; Vaccine Mandates Not Proportionate : Supreme Court

১৩। IIT Kanpur researchers predict fourth wave of Covid-19 in India from June 2022 - The Hindu BusinessLine

১৪। Welcome To 2030: I Own Nothing, Have No Privacy And Life Has Never Been Better

১৫। https://brownstone.org/articles/technocracy-and-totalitarianism/

Photo Courtesy: Deccan Herald

বক্তার মতামত তার একান্ত নিজস্ব।

[ডিলিজেন্টের ২০২৩-এর তৃতীয় সংখ্যায় প্রথম প্রকাশিত।]







Comments

Popular posts from this blog

ফ্যাসিবাদের উত্থানের যুগে সুবিধাবাদের রমরমা

ঘটনার বিবরণ নয়, উপলব্ধি জরুরী; প্রসঙ্গ আর.জি.কর

কর্পোরেট হাঙরদের হাত থেকে লাদাখকে বাঁচাও!