লার্নিং অ্যাপে কর্মী ছাঁটাই

ডেস্ক রিপোর্টঃ মৌলী গুহ রায় 

প্রাইভেট কোচিংয়ের বৃহত সংস্করণের প্রাথমিক রূপরেখাকে সরকারি অনুমোদন এবং সংবাদমাধ্যমের প্রচারের মাঝে 'টিউটোপিয়া' লার্নিং অ্যাপটি আত্মপ্রকাশ করে। এই প্রতিষ্ঠানের সূচনা লগ্নে বিভিন্ন সঙ্গীত শিল্পী এবং চিত্র পরিচালকদেরও সমর্থন মেলে। সব কিছুই অতীত কালে বলছি কারণ এই অ্যাপে আভ্যন্তরীণ পরিকাঠামোগত সমস্যা, শিক্ষার্থী সংখ্যা কমে যাওয়া এবং অস্থায়ী কর্মীদের দিয়ে কাজ করানোর প্রবণতা সামগ্রিকভাবে তার শিক্ষাদানের ক্ষমতাকে ব্যাহত করছে। স্কুলের বিভিন্ন শ্রেণী অনুযায়ী ৩৫০০-৬০০০ টাকায় এই অ্যাপের পরিষেবা পাওয়া শুরু হয়। 

এই সংস্থার ডিরেক্টর হলেন সুব্রত রায় এবং প্রতিষ্ঠাতা হলেন অনুরাগ চিড়িমার। এই সংস্থা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অর্থ সাহায্য করেছে একটি রিয়েল এস্টেটের কারবারের সাথে যুক্ত সংস্থা (টি.এস. গ্রুপ অর্থাৎ প্রদীপ চোপড়া সংস্থা)। এর বাইরে একটি বেসরকারি স্কুল গ্রুপের (নারায়না গ্রুপ অফ স্কুলস) অষ্টম শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষা প্রদানের ক্ষেত্রে যে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি পশ্চিমবঙ্গে প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, তাদের হাইটেক অ্যানিমেশনের প্রয়োজন মেটানোর দায়িত্ব নেয় এই অ্যাপের সাথে যুক্ত সুব্রত রায়ের নিজস্ব সংস্থা। কিন্তু এই স্কুল গ্রুপ প্রকৃতপক্ষে অন্ধ্রপ্রদেশের প্রাক্তন চন্দ্রবাবু নাইডু সরকারের নগরোন্নয়ন মন্ত্রী পঙ্গরু নারায়নার সম্পত্তি, ২০১৮ সালে যার অফিসে ই.ডি হানা দেয়। এইরকম একটা পরিস্থিতে দাঁড়িয়ে অর্থ সংকটের মধ্যে থেকেও এই গ্রুপ শেষ পর্যন্ত তার প্রদেয় অর্থ দিলেও এই লার্নিং অ্যাপ নাকি নিজেদের ব্যবসাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সমর্থ হচ্ছে না।  

বোর্ড পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক সংস্থার এক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত উচ্চ পদস্থ কর্তার ছবিও এই অ্যাপের প্রচারে একদা কাজে লাগানো হয়েছিল। বর্তমানে অর্থনৈতিক সংকট থেকে বেরিয়ে আসার জন্য এই অ্যাপ কর্মী ছাঁটাই করতে শুরু করেছে। ১১০জন শিক্ষককে নিয়ে তারা এই অ্যাপ শুরু করলেও মাত্র ৩৫ জনকে নাকি রেখে দেওয়া হয়। তারপর সেই সংখ্যা নাকি মাত্র ১০জনে কমে আসে, যাদের মধ্যে মাত্র ৫জন স্থায়ী! এই ৫জন স্থায়ী কর্মী ২০,০০০ টাকা এবং অন্যান্য বিভিন্ন স্ল্যাবে মাসিক বেতন পেয়ে থাকেন। আর অন্যান্য যে সহকারী টিম ছিল, তার মধ্যে DTP টিমের ১৫ জনের মধ্যে ১২ জনকেই ছাঁটাই করে দেওয়া হয়েছে। তাঁরা মাসে মাত্র ১০-১২০০০ টাকা পেতেন। এক মাসে তাদের দিয়ে অধিক পরিশ্রম করিয়ে সমস্ত কাজ শেষ করিয়ে পরের মাসে ছাঁটাই করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এই সংস্থার বিরুদ্ধে। শিক্ষকদের অ্যাপের সেইলস-এর কাজ করার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে আর এই নির্দেশ না মানলে ছাঁটাইয়ের বদলে রেজিগনেশান দেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে কর্তৃপক্ষ। 

এই অ্যাপ যে লাইভ ক্লাসের ব্যবস্থা করেছিল তাও ধাক্কা খেয়েছে এবং স্টুডেন্ট সাপোর্ট সিস্টেমের অধীন পড়ুয়াদের প্রশ্ন করার এবং উত্তর জানার যে প্রক্রিয়া ছিল তাও সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয়েছে। আগামীদিনে লাইভ ক্লাসের সুযোগ পেতে গেলে মাসিক মাইনের বাইরে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার স্ল্যাব তৈরি করা হচ্ছে। ফলে আগামীদিনে সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা কতটা এই অ্যাপের সুযোগ সুবিধা পাবে তা প্রশ্নের মুখে। এই অ্যাপ ১ লক্ষ শিক্ষার্থীর মধ্যে নিজেদের ব্যবসা বিস্তৃত করার স্বপ্ন দেখলেও মাত্র ২০,০০০ সাবস্ক্রাইবারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে হচ্ছে তাদের। এই হল বেসরকারি 'টিউটোরিং আফিম'। দুটো বিষয় বুঝে নেওয়া দরকারঃ প্রথমত, সরকারী শিক্ষা ব্যবস্থার কোনো বিকল্প নেই, সরকারী শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার  প্রক্রিয়াকে রুখতে হবে এবং দ্বিতীয়ত, যে সমস্ত বেসরকারি পরিসরেও শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মীবৃন্দ রয়েছেন তাদের স্থায়ী চাকরি দেওয়ার পক্ষেও লড়াই করতে হবে।

(তথ্য সংস্থার কর্মীর থেকে প্রাপ্ত; নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক)  

Image Creation: wepik.com

Updated: 02.01.2024

Comments

Popular posts from this blog

ঘটনার বিবরণ নয়, উপলব্ধি জরুরী; প্রসঙ্গ আর.জি.কর

বর্তমান সময়ে বাম ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা

আম্বেদকরের চোখে - কেন ব্রাহ্মণ্যবাদ শাকাহারী পথ গ্রহণ করল? গো ভক্ষণ নিষিদ্ধকরণের সাথে অস্পৃশ্যতার কি সম্পর্ক রয়েছে?