লেনিন স্মৃতি

উইলিয়াম গ্যালাচার

[ফরেন ল্যাঙ্গুয়েজেস পাবলিশিং হাউস, ১৯৩৯-এর ‘উই হ্যাভ মেট লেনিন’ থেকে সংগৃহীত। উইলি গ্যালাচার ১৯৩৫-১৯৫০ সাল পর্যন্ত স্কটল্যান্ডে ওয়েস্ট ফাইফের কমিউনিস্ট এম.পি হিসাবে এবং রেড ক্লাইডসাইড আন্দোলনের কর্মী হিসাবে কাজ করেছিলেন।]  

মূল প্রবন্ধের লিঙ্ক: https://challenge-magazine.org/2023/08/12/reminiscences-of-lenin/

বঙ্গানুবাদ: ডিলিজেন্ট পত্রিকা 


১৯২০ সালে আমি গ্লাসগোর ক্লাইড ওয়ার্কার্স কমিটি (শপ স্টুয়ার্ডস মুভমেন্ট)-এর সাথে যুক্ত কমরেডদের দ্বারা কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিকের দ্বিতীয় কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার জন্য নিযুক্ত হয়েছিলাম। আমরা সেই সময় “বাম” সংকীর্ণতাবাদী ছিলাম এবং ব্রিটিশ সোশ্যালিস্ট পার্টি (বি.এস.পি) ও সোশ্যালিস্ট লেবার পার্টি (এস.এল.পি)-র মধ্যেকার কমিউনিস্ট পার্টি গঠনের আলোচনায় অংশ নিতে অস্বীকার করেছিলাম। স্কটল্যান্ডে একটি “বিশুদ্ধ” কমিউনিস্ট পার্টি শুরু করার ক্ষেত্রে আমাদের লক্ষ্য ছিল এমন একটি দল গঠন করা যেটি কোনো অবস্থাতেই লেবার পার্টি বা সংসদীয় কার্যকলাপকে স্পর্শ করবে না।

আমার কাছে পাসপোর্ট না থাকায় এবং পাসপোর্ট পাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকায় আমি নিউক্যাসলের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম, যেখানে এক সপ্তাহের প্রচেষ্টার পরে আমি একজন নরওয়েজিয়ান কমরেডের সহায়তায়, যিনি একজন ফায়ারম্যান ছিলেন, নিরাপদে একটি জাহাজে উঠে বার্গেনের জন্য রওনা দিতে সফল হয়েছিলাম। বার্গেন থেকে আমি ভোর্ডস, ভোর্ডস থেকে মুরমানস্ক এবং সেখান থেকে লেনিনগ্রাদ পর্যন্ত ভ্রমণ করেছিলাম।

আমি যখন লেনিনগ্রাদে পৌঁছেছিলাম, সেখানে যে কংগ্রেস শুরু হয়েছিল তার মস্কো অধিবেশন চলছিল যেখানে উদ্বোধনের পর তা স্থানান্তরিত হয়েছিল।

স্মলনিতে আমাকে একটি আরামদায়ক ঘরে রাখা হয়েছিল এবং কিছু কমরেড একজন দোভাষী খোঁজার চেষ্টা করছিল। আমি যখন লিখছিলাম তখন তাদের মধ্যে একজন এসে আমাকে “বামপন্থী কমিউনিজম, শিশুসুলভ বিশৃঙ্খলা” ধরিয়ে দিল, যেটা সবেমাত্র ইংরেজিতে ছাপা হয়েছিল। আমি বেশ আল্গাভাবে এটি পড়তে শুরু করি, কিন্তু যখন আমি ব্রিটেন বিষয়ক বিভাগে এসে পৌঁছাই তখন দেখি যে এটি আমার সম্পর্কে কি বলছে। আমি একটা ঝাঁকুনি দিয়ে উঠে বসলাম। আমি গ্লাসগো থেকে এই ধারণা নিয়ে এসেছিলাম যে লেবার পার্টির বিরুদ্ধে এবং পার্লামেন্টে অংশগ্রহণের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান এতটাই সুগঠিত, এতই অপ্রতিরোধ্য যে আমাকে কয়েকটি ভালোভাবে রিহার্সাল করা যুক্তি সাজাতে হবে এবং তাতেই বি.এস.পি. এবং এস.এল.পি কুপোকাত হবে। এটা বুঝতে পারা একটি সত্যিকারের ধাক্কা ছিল যে ইতিমধ্যে আমি কংগ্রেসের ধারে কাছে যাওয়ার আগেই আমি যে অভিনব যুক্তি সৌধ তৈরি করছিলাম তা সম্পূর্ণ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল। কিন্তু সেই সময়ে লেনিনের উত্থাপিত সমস্ত প্রশ্ন আমার কাছে স্পষ্ট ছিল না, যা পরবর্তীতে কংগ্রেসে আমার বক্তৃতায় ফুটে উঠেছিল।

আমি শনিবার মধ্যাহ্নে মস্কোতে পৌঁছেছিলাম, ঠিক সময়ে একটি হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল একটি “সাববটনিক”-এ (স্বেচ্ছা শ্রম কেন্দ্র) নিয়ে যাওয়ার জন্য। একটা ফাউন্ড্রিতে রাত আটটা পর্যন্ত পিগ-আয়রন স্তুপ করার কাজ পেলাম। রবিবার আমি একটি ফুটবল ম্যাচ খেলতে রাজি হয়েছিলাম এবং দেড় ঘন্টার জন্য পুরো মাঠে দৌড়েছিলাম। রাতে আমি লেফেব্রে নামে একজন তরুণ ফরাসি কমরেডের সাথে দেখা করি এবং একটি খুব আকর্ষণীয় আলাপচারিতা হয়। তিনি মুরমানস্ক এবং ভোর্ডসের মাঝামাঝি জায়গায় অন্য একজন সঙ্গী এবং তিন জেলে সহ হারিয়ে গিয়েছিলেন।

সোমবার, অন্যান্য প্রতিনিধিদের সাথে, আমি ক্রেমলিন এবং আন্তর্জাতিক কংগ্রেসে আমার প্রথম পরিচিতির পথে এগিয়ে যাই।

প্রধান হলে প্রতিনিধিদের দল দাঁড়িয়ে আড্ডা দিচ্ছিল এবং তর্ক করছিল।

আমরা পাশের কক্ষের মধ্যে দিয়ে গেলাম যেখানে প্রতিনিধিরা বসে বসে চা পান করছিল, প্রতিবেদন লিখছিল বা বক্তৃতার বক্তব্য তৈরি করছিল। আমায় বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তারপরে আমি একটি দলে ঢুকতে কেউ একজন বলল:

“ইনি কমরেড লেনিন”।

আমি আমার হাত বারিয়ে বললাম, “হ্যালো!” আর কিছু বলতে গিয়েও আটকে গেলাম।

আমি গ্লাসগো থেকে কমরেড গ্যালাচার পরিচয় পেয়ে তিনি একটু হেঁসে বললেন:

“আমাদের কংগ্রেসে আপনাকে পেয়ে আমরা খুব খুশি”।

আমি সেখানে আসতে পেরে আনন্দিত হওয়ার বিষয়ে কিছু বলেছিলাম এবং তারপরে আমরা অন্যান্য বিষয় নিয়ে কথা বলতে শুরু করি। আমি নিজেকে বলতে থাকলাম: “হে ভগবান, সর্বত্রই যুদ্ধ চলছে, অভ্যন্তরীণ সমস্যা এবং বাহ্যিক সমস্যা রয়েছে যা প্রায় অনতিক্রম্য বলে মনে হচ্ছে। তবুও এখানে একজন কমরেড অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসী যে বলশেভিকরা বিজয়ের মধ্য দিয়ে যেতে পারবে”। লেনিন কৌতুক করতেন এবং হাসতেন কমরেডদের সাথে এবং মাঝে মাঝে আমি কিছু বললে তিনি আমার দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকাতেন। আমি পরে আবিষ্কার করেছিলাম যে এটি আমার ইংরেজির ফলস্বরূপ। তার বুঝতে অসুবিধা হচ্ছিল।

আমি অবিলম্বে অনুভব করলাম যে আমি কোন “দূরের মহান” লোকের সাথে কথা বলছি না, যার কাছে পৌঁছানো দুর্গম, বরং লেনিনের সাথে কথা বলছি, সেই মহান পার্টি কমরেড যার প্রত্যেক সর্বহারা যোদ্ধার জন্য উষ্ণ হাঁসি এবং প্রফুল্ল শব্দ ছিল।

আমি যখন রাজনৈতিক রেজোলিউশন এবং ট্রেড ইউনিয়ন রেজোলিউশন নিয়ে আলোচনায় যাচ্ছিলাম, আমি খুব বাধাপ্রাপ্ত হই। আমার সেরা যুক্তিগুলো অনায়াসেই তাচ্ছিল্যের পাত্র হয়। আমার বিরোধীরা, আমি যখন কথা বলতে উঠি, তখন কখনোই কথার মাঝে কথা বলার সুযোগ ছাড়েনি। স্বাভাবিকভাবেই আমি তাদের প্রতি রেগে যেতাম এবং পরিস্থিতি কখনও কখনও খুব উত্তপ্ত হয়ে উঠত। আমার পায়ের নীচ থেকে মাটি সরে যাচ্ছে বলে আমি অনুভব করে মেজাজ হারালাম। কিন্তু লেনিন, আমি নিজ লাইনের নীতিগতভাবে একটি অসংলগ্ন সমালোচনা চালিয়ে যাওয়ার সময়, সহায়ক কিছু বলার সুযোগ নিতেন, এমন কিছু যা আমার ভুল ধারণাগুলি আমাকে যে কঠিন অবস্থায় নিয়ে আসছিল সেখান থেকে সরতে সাহায্য করেছিল।

রাজনৈতিক কমিশন খোলা অধিবেশনের মতোই চলছিল। আমি যখনই কথা বলতে উঠতাম তখনই এমন আপত্তিকরভাবে কথা বলতাম যে বাধা দেওয়া শুরু হত এবং তারপরে আমরা দু-তিনজন সাপে নেউলে হয়ে উঠতাম।

ওই বৈঠকে বেশ কয়েকবার লেনিন আমাকে ছোট ছোট নোট দিয়েছিলেন যেখানে কোন একটি পয়েন্ট ব্যাখ্যা করেছিলেন বা আমাকে দেখিয়েছিলেন যে আমি কোথায় ভুল করছিলাম।

মিটিং শেষ হলে আমি আমার নিজের নোটগুলো ছিঁড়ে ফেলতাম এবং সেগুলোর সাথে সাথে লেনিনের লেখাও ছিঁড়ে ফেলতাম। এটা এখন অবিশ্বাস্য মনে হয় যে আমি এমন একটি কাজ করতে পারি, কিন্তু আমি সেই সময়ে কখনই অত ভাবিনি। রাজনৈতিক কমিশনের শেষের দিকে, যখন আমি বি.এস.পি ও এস.এল.পি সম্পর্কে খুব আক্রমণাত্মক ছিলাম, তিনি আমাকে একটি নোট দিয়েছিলেন যা খুব সংক্ষিপ্তভাবে এই গোষ্ঠীগুলির সম্পর্কে ধারণা দিয়েছিল। রাতে আমি দু-একজন কমরেডের কাছে আত্মবিশ্বাসের সাথে বলেছিলাম যে লেনিন আমাকে বি.এস.পি ও এস.এল.পি সম্পর্কে একটি নোট দিয়েছেন যা আমি তাদের দেখালে তারা নিশ্চয়ই অবাক হয়ে যেত।

“সেটা কোথায় আছে?” তাদের একজন জিজ্ঞেস করল। “ও আমি ছিঁড়ে ফেলেছি”, আমি স্বাভাবিকভাবেই উত্তর দিলাম।

“তুমি কি করেছ? তুমি লেনিনের হাতে লেখা একটা নোট ছিঁড়ে ফেলেছো?”, সে হতভম্ব হয়েছিল।

“আমি বেশ কয়েকটা ছিঁড়েছি”, আমি বললাম, “কিন্তু সেগুলি তো ব্যক্তিগত পত্রালাপ ছিল এবং আমি মনে করিনি যে তিনি চাইবেন আমি সেগুলি রেখে দিই”।

এই লোকটি, যিনি পরে একজন আদর্শ বিদ্রোহী হয়েছিলেন, আমাকে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ করেছিলেন যে আমি ওরকম আবার পেলে তাকেই যেন দিই। দু'দিন পর, রাজনৈতিক কমিশনে, হাওয়া বওয়ার মাঝে আমি যখন কথা বলছিলাম, তখন কেউ একজন “শিশুসুলভ বিশৃঙ্খলা”-র প্রসঙ্গ টেনে আনলেন।

“হ্যাঁ”, আমি বললাম, “এটা পড়েছি, কিন্তু আমি কোন শিশু নই। আমাকে একজন হিসাবে বিবেচনা করা এবং আমার অনুপস্থিতিতে আমায় থাপ্পড় মারা ঠিকই আছে কিন্তু যখন আমি এখানে থাকব তখন আপনি দেখতে পাবেন যে আমি এই খেলার একজন পুরনো খেলোয়াড়”।

এই শেষোক্ত বাক্যাংশটি লেনিনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল এবং কিছু সময় পরে, যখন উইলি পল রাশিয়া সফর করেছিলেন, তখন লেনিন বেশ বিশ্বাসযোগ্য স্কচ উচ্চারণে তার কাছে এটির পুনরাবৃত্তি করেছিলেন। এই প্রচেষ্টার পর যখন আমি বসলাম তিনি আমাকে একটি নোট দিয়েছিলেন যাতে লেখা ছিল, “যখন আমি আমার ছোট্ট বইটি লিখেছিলাম, আমার আপনার সাথে দেখা হয়নি”। আমি সেই নোটটি পূর্বোক্ত বিদ্রোহীকে দিয়েছিলাম, যদিও বর্তমানে বড় আক্ষেপ রয়ে গেছে।

লেনিন তার নিজ রাজনৈতিক লাইনের মধ্য দিয়ে আমাদের চলার জন্য জোরদার লড়াই করলেও খোলা অধিবেশনে এবং রাজনৈতিক কমিশনে আমার এবং অন্যান্য কমরেডদের প্রতিটি অনুমেয় সহায়তা প্রদান করেছিলেন।

তারপর যখন আমি তাকে বাড়িতে দেখতে যাই তখন আমার সবচেয়ে বড় অভিজ্ঞতা হয়েছিল। আমি তার সামনে বসেছিলাম এবং আমরা একটি পার্টি গঠন এবং বিপ্লবী সংগ্রামের নেতৃত্বের ভূমিকা সম্পর্কে কথা বলেছিলাম। আমি আগে কখনো পার্টি নিয়ে খুব একটা ভাবিনি, কিন্তু কমিউনিস্ট পার্টি কি হওয়া উচিত তা আমি তখন থেকেই বুঝতে শুরু করি।

স্কটল্যান্ডে একটি পৃথক পার্টি প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে ছিলেন লেনিন। আমাকে কাজ করতে হবে, ব্রিটেনে নবগঠিত পার্টিতে যোগ দিতে হবে। আমি আপত্তি জানিয়েছিলাম, আমি এটার বা ওটার সাথে কাজ করতে পারব না।

“আপনি যদি বিপ্লবকে প্রথমে রাখেন”, তিনি বলেছিলেন, “আপনার তাহলে কোন অসুবিধা হবে না। বিপ্লবের জন্য আপনি সব ধরণের মানুষের সাথে কাজ করবেন, যে কোনও উপায়ে একটি আংশিক সাফল্যের জন্যেও। কিন্তু আপনি যদি তাদের মধ্যে না থেকে এবং বিপ্লবী অগ্রযাত্রার সময়ের জন্য লড়াই করার পরিবর্তে নিজেকে সবার থেকে দূরে সরিয়ে দিতে শুরু করেন, আপনি কোথাও গিয়ে পৌঁছবেন না। পার্টিতে প্রবেশ করুন, কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিকের লাইনের জন্য লড়াই করুন। আপনার পিছনে কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিকের শক্তি থাকবে”।

আমাদের সমস্ত আলোচনায় “বিপ্লব” ছিল জীবন্ত, স্পন্দিত।

আমার এরকম অভিজ্ঞতা আগে কখনও হয়নি। আমি ব্যক্তিগতভাবে লেনিনের কথা ভাবতে পারিনি। আমি বিপ্লব ছাড়া আর কিছুই ভাবতে পারিনি, বিপ্লবকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা এবং তার খরচ যাই হোক না কেন। তখন থেকেই আমার কাছে এটি লেনিনের মহান প্রতিভার অসামান্য দ্বৈততা বলে মনে হয়েছিল। তিনি কখনই নিজেকে নিয়ে ভাবেননি, তিনি ছিলেন বিপ্লবী সংগ্রামের জীবন্ত মূর্ত প্রতীক এবং তিনি যেখানেই গেছেন তার নিজের মহান প্রত্যয়ের অনুপ্রেরণা নিয়ে গেছেন।

কংগ্রেস চলাকালীন আমার আরেকজন খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু হয়েছিল, আর্টেম, যিনি পরের বছর দুর্ঘটনায় নিহত হন। আর্টেম, বেশী পরিচিত সের্গেইভ হিসেবে, পার্টির প্রথম দিনগুলিতে তাদের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে আমার সাথে অনেক কথা বলতেন। লেনিন যখন মেনশেভিকদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেন তখন তার বয়স ছিল মাত্র ১৯ বা ২০। তিনি ছিলেন লেনিন ও পার্টির প্রতি নিবেদিতপ্রাণ। আমাদের আলোচনার এক সময় তিনি আমাকে বললেন, “আমাদের আরেকজন মহান নেতা কমরেড স্ট্যালিন। প্রায়শই যখন পলিটব্যুরোর সামনে একটি ব্যতিক্রমী কঠিন সমস্যা উত্থাপিত হয়, তখন সমস্ত চোখ স্ট্যালিনের দিকে ঘুরে যায়। কয়েকটি সুনির্বাচিত বাক্যে তিনি তার সমাধান দেবেন এবং তা সর্বদা স্পষ্ট এবং সিদ্ধান্তমূলক”। এই প্রথম আমি স্ট্যালিনের নাম শুনলাম। আমি যখন গ্লাসগোতে ফিরে আসি এবং কংগ্রেস সম্পর্কে আমার ধারণার কথা জানিয়েছিলাম, তখনই প্রথম গ্লাসগোর কোনো কমরেড তার নাম শুনেছিলেন। ১৯২৩ সালে আমি আবার ফিরে না আসা পর্যন্ত স্টালিনের সাথে দেখা করার এবং সের্গেইভের অনুমান কতটা সঠিক ছিল তা প্রথম বোঝার সুযোগ পাইনি।

সিদ্ধান্ত হয়েছিল যে জন রিড এবং আমি বাকুতে ‘টয়লার্স অফ দা ইস্ট’ কংগ্রেসে যাব। তারপর হোটেলে মেসেজ এলো, লেনিন আমার সাথে দেখা করতে চান। আমি ক্রেমলিনে গেলাম। “আপনি কখন বাড়ি যেতে পারবেন?” তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন।

“আমি বাকু যাচ্ছি”, আমি উত্তর দিলাম।

তিনি হেঁসে নেতিবাচকভাবে মাথা নাড়লেন।

“ব্রিটেনে একটি বড় আন্দোলন গড়ে উঠছে”, তিনি বললেন। “আমাদের বিরুদ্ধে যে আক্রমণ করা হচ্ছে তা বন্ধ করতে অ্যাকশন কাউন্সিল গঠন করা হয়েছে। আপনার যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ফিরে যাওয়া উচিত। আপনি কি একমত?”

“আমি রাজি”, আমি উত্তর দিলাম।

“তাহলে কখন যেতে পারবেন?” তিনি জিজ্ঞাসা করলেন। “আগামীকালই, যদি আপনি চান”, আমি উত্তর দিলাম। তিনি আগের চেয়ে প্রশস্ত হাসলেন।

“আজ রাতে নয় কেন?”, তিনি বললেন। “আপনি ট্রেন ধরতে পারেন”।

“ঠিক আছে”, আমি বললাম, “আজ রাতেই যাচ্ছি, আমার কিছু প্যাক করার নেই”।

“ভাল”, তিনি উঠে দাঁড়িয়ে হাত বাড়িয়ে বললেন, “ফিরে যাওয়ার পথে খুব সাবধানে থাকবেন, এবং আপনি যখন ব্রিটেনে যাবেন তখন আমরা আপনাকে বিপ্লব এবং কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিকের একজন অনুগত যোদ্ধা হিসাবে দেখব”। আমরা খুব উষ্ণভাবে করমর্দন করলাম, তারপর আমি আমার পথে চলে গেলাম। এটাই আমার মহান কমরেড লেনিনের শেষ স্মৃতি।

Comments

Popular posts from this blog

ফ্যাসিবাদের উত্থানের যুগে সুবিধাবাদের রমরমা

কমিউনিস্ট পার্টি ও তেলেঙ্গানা আন্দোলনের মহিলা কর্মীরা : কমঃ শর্মিষ্ঠা চৌধুরীর কলমে

কেন্দ্র সরকারের ‘জাতীয় শিক্ষা নীতি’ – একটি শিক্ষা বিরোধী ইস্তেহার