প্রসঙ্গ প্যালেস্টাইন

রুমেলা দেব

ভারতবর্ষ যখন আলোর উৎসবে-এ মাতোয়ারা সেই সময় মধ্যপ্রাচ্যের আকাশ জুড়ে মারণস্ত্রের রোশনাই। প্যালেস্টাইনের গাজা স্ট্রিপ জুড়ে পড়শি রাষ্ট্র ইজরায়েলের এয়ারস্ট্রাইক, ড্রোন ও শহরের সমস্ত বর্ডার সিল করে শাণিত আক্রমণ। ধ্বংস হওয়া স্কুল, বিল্ডিং, হাসপাতালে শায়িত রক্তাক্ত নিরীহ শিশু সহ মানুষের আর্তনাদে বিশ্ব মুখরিত।

আল আক্সা মসজিদে ইজরায়েলী বাহিনীর আক্রমণের প্রতিবাদে হামাস নামক প্যালেস্টাইনের সশস্ত্র স্বঘোষিত স্বাধীনতাকামী কট্টরপন্থী সাম্প্রদায়িক বাহিনীর ইজরায়েলে প্রবেশ করে হামলা থেকে অপহরণ এবং নিরীহ মানুষের জখম হবার ভিডিও বিপুল ভাইরাল হয়। মধ্যপ্রাচ্যে পুনয়ায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের সম্ভাবনার ভয়াবহতা সৃষ্টি হয়। এই আক্রমণের প্রতিক্রিয়াতেই ইজরায়েলের পাল্টা আক্রমণ। হামাসের আক্রমণ নিন্দনীয় কিন্তু বছরের পর বছর ধরে ফিলিস্তিনিদের অত্যাচার করে আসা ইজরায়েলের আক্রমণ কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। অবিলম্বে ইজরায়েলকে এই গণহত্যা থামাতে হবে। 

এই সময় দাঁড়িয়ে প্রতিটি মুহূর্তে গাজা ও ওয়েষ্ট ব্যাংক প্রায় ধ্বংসের মুখে। শিশু থেকে বৃদ্ধ সকলেই খাদ্য, বস্ত্র, পানীয় জল, ঔষুধ, চিকিৎসা, স্বাস্থ্য সহ সমস্তরকম মানবাধিকার থেকে নির্মমভাবে বঞ্চিত। বিশ্ব মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রচলিত বধ্যভূমি হয়ে দাঁড়িয়েছে প্যালেস্টাইন, সুদান, সোমালিয়া, ইয়েমেন, কঙ্গো সহ মধ্যপ্রাচ্য-আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ। ২০১৪-র পর থেকে এগুলো সবথেকে বর্বর সহিংস‌ সংঘাতে পরিণত হয়েছে। 

জেরুজালেম সংকট এবং এর পিছনে প্রথম সারির দেশের বিশ্বনেতাদের ঘৃণ্য ভূমিকা নিয়ে দৃষ্টিপাত করা যাক। ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট যাচাই করলে আমরা দেখবো খ্রিষ্টপূর্ব ১৫ শতাব্দীতে পাহাড়, সমুদ্র ও সমতল দ্বারা বেষ্টিত গাজা উপত্যকাকে অগ্রগামী সভ্যতার অংশ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। অঞ্চলটি ৪০০০ বছর ধরে অটোমান সাম্রাজ্য, মিশরীয় রাজবংশ এবং ঔপনিবেশিক শক্তির দ্বারা ভোগ, দখল, শাসন, ধ্বংস ও পুনরায় পুনরুজ্জীবিত হয়। ১৯৯৭ সালে অটোমান সাম্রাজ্যের পতনের পর এটি ব্রিটিশ শাসনের অধীনে আসে। ১৯২০ থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত এটি ব্রিটিশ ম্যান্ডেটের অংশ থাকে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর প্রতিষ্ঠিত 'লীগ অফ নেশনস' এর অনুমোদন দেয়। এরপর ১৯৪৭ সালে ইউএন সাধারণ পরিষদে প্যালেস্টাইনকে দ্বিখন্ডিত ভূখণ্ড করার প্রস্তাব পাস হয়। এই প্রক্রিয়াতেই প্যালেস্টাইনের ব্রিটিশ ম্যান্ডেটের অবসান ঘটে এবং ইজরায়েল রাষ্ট্রের জন্ম হয়। এরপরই যুদ্ধ শুরু হয়ে যায় ১৯৪৮ সালে যা আরব-ইজরায়েল যুদ্ধ নামে পরিচিত। এর ফলে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি শরণার্থী হয়ে প্রতিবেশী বিভিন্ন দেশে বসতি স্থাপন করে। যুদ্ধবিরতি স্বাক্ষরের পর গাজা উপত্যকা মিশরের ও ওয়েস্ট ব্যাংক জর্ডনের দখলে চলে যায় এবং তাদের দ্বারা শাসিত হতে থাকে। ১৯৬৭ সালে ইজরায়েলের সাথে মিশর, জর্ডান ও সিরিয়ার মধ্যে ছয় দিনের যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে ইজয়ারেলি বাহিনী জয় লাভ করলে তারা গাজা উপত্যকা, ওয়েস্ট ব্যাংক এবং পূর্ব জেরুজালেম দখল করে নেয়। এরপর থেকেই ফিলিস্তিনিদের ভূখণ্ডের স্বায়ত্তশাসন ও দখল নিয়ে একের পর এক সহিংস সংঘর্ষ শুরু হয় যা আজও অব্যাহত রয়েছে। ইজরায়েলী দখলদারির বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের প্রথম ইন্তিফাদা শুরু হয় ১৯৮৭ সালে। ১৯৯৩ সালে ঐতিহাসিকভাবে ইজরায়েল ও প্যালেস্টাইনের মধ্যে মার্কিন মদতপুষ্ট শান্তি চুক্তি (টু স্টেট সলিউশন) স্বাক্ষর হয় এবং বোঝাপড়ার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত হয় যে ইজরায়েল প্যালেস্টাইনের মধ্যে থাকা সৈন্য প্রত্যাহার করবে এবং Palestine National authority বা Palestine Liberation Organization দুই ভূখণ্ড সলিউশন অর্থাৎ ইজরায়েল রাষ্ট্রের বৈধতা স্বীকার করে নেবে। পরবর্তীতে ২০০৬ সালের ভোটে হামাস নিরঙ্কুশ ক্ষমতায় আসার পর গাজার দখল নিলে ইজরায়েল ও মিশর গাজা উপত্যকার উপর স্থল, আকাশ ও সমুদ্রে অবরোধ আরোপ করে। জাতিসংঘ সহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা এর তীব্র নিন্দা জানায়। ইজরায়েল ২০০৭ সাল থেকে গাজার উপর অবরোধ অব্যাহত রেখেছে। এর ফলে ফিলিস্তিনি নাগরিকদের ওপর চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে, তাদের সামাজিক জীবনযাত্রা পুরোপুরি নিষেধাজ্ঞার বেড়াজালে আবদ্ধ হয়েছে। ইজরায়েলের এক মানবাধিকার গোষ্ঠীর মতে গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনিদের ঢোকা ও বের হওয়ার মতো স্বাধীন জীবনযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ইজরায়েল। মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইট ওয়াচ গাজার অবস্থা বিশ্বের বৃহত্তম একটি উন্মুক্ত কারাগারের সাথে তুলনা করেছে। ইজরায়েলের উগ্র মতাবলম্বী প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য, হামাসের হাত থেকে ইজরায়েলি নাগরিকদের রক্ষা করার জন্য তারা গাজার সীমানা নিয়ন্ত্রণ করছে।

সমান্তরালে প্রায় সমগ্র ইউরোপ থেকে বিতাড়িত ইহুদী জাতির দলে দলে প্যালেস্টাইনে প্রবেশের ইতিহাসটাও দেখা জরুরী। বর্তমান সময়ে জেরুজালেমকে তারা নিজেদের ধর্মের পীঠস্থান হিসেবে বিবেচিত করেছে। বিশ্বের বহু দেশ প্যালেস্টাইনকে দেশ হিসেবে মানলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, ব্রিটেন এবং ইজরায়েল এর অস্তিত্ব অস্বীকার করে। ১৯২০ থেকে ১৯৪০-এর দশকের মধ্যে ইউরোপ থেকে দলে দলে ইহুদিরা প্যালেস্টাইনে যেতে শুরু করে। ইউরোপে ইহুদী নিপীড়ন এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ভয়ংকর ইহুদী নিধন যজ্ঞের পর সেখান থেকে পালিয়ে এরা এক নতুন মাতৃভূমি তৈরির আকাঙ্খা রাখে। উনিশ শতকের মধ্যভাগে যখন জায়োনিজমের জন্ম হয় তখন এটিই ছিল ইহুদি সংস্কৃতি প্রকাশের একমাত্র পথ। মধ্য ও পূর্ব ইউরোপে ইহুদিদের মাঝে দুটি বিষয়কে কেন্দ্র করে জন্ম হয়েছিল এই মতবাদ। প্রথমত, তারা এমন একটি সমাজে বাস করত যেখানে তাদের সমান নাগরিক অধিকার ছিল না, সেই সমাজ তাদেরকে নিজের অংশ বানিয়ে নিতে আগ্রহী ছিল না। দ্বিতীয়ত, ইউরোপের ক্রমশ উদীয়মান ও সম্প্রসারণশীল জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে অনুপ্রাণিত হয়ে ইহুদিরা নিজেদের জাতি গঠনে উদ্বুদ্ধ হয়। ১৮ শতকের কার্যকলাপকে জায়োনিষ্টরা বলে জিউইস ইনলাইটমেন্ট মুভমেন্ট। ৭০ খ্রিস্টাব্দে রোম কর্তৃক বহিষ্কৃত ইহুদীরা নিজেদের আদি ভূমিতে ফেরত যাওয়া এবং প্যালেস্টাইন দখলের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। তাদের ভাষায় এই পুনর্বাসনের প্রক্রিয়া হবে এগ্রিকালচারাল কলোনি প্রতিষ্ঠা। কারণ ইউরোপের অনেক দেশে ইহুদিদের জমির মালিক হওয়া নিষিদ্ধ ছিল। প্যালেস্টাইন দখল করে শুধু স্বাধীন দেশের নাগরিক নয়, কৃষিভিত্তিক জাতি গঠন করার স্বপ্ন দেখত তারা। ১৮৮১ সালে রাশিয়ার নৃশংস প্রোগ্রামের পরেই জুডাইজমের ধারণা আরো জনপ্রিয়তা লাভ করে। তাদের ভেতর "দ্য লাভার্স অফ জায়ন" নামে নতুন রাজনৈতিক আন্দোলন দানা বাঁধে। ১৮৮২ সালে কয়েক’শ ইহুদী যুবককে প্যালেস্টাইনে পাঠানো হয় এবং তাদের প্রথম কলোনি প্রতিষ্ঠা করা হয়। এইভাবে ইহুদীদের ইতিহাস সূচনা হয় প্যালেস্টাইনে।

অটোমান সাম্রাজ্যের অধীনে থাকাকালীন প্যালেস্টাইনের মোট জনসংখ্যার ৯৭ শতাংশই ছিল ইসলাম ও খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী, মাত্র ৩ শতাংশ ছিল ইহুদি। ১৯০৫ থেকে ১৯১৪ সাল পর্যন্ত প্যালেস্টাইনে ইহুদিদের সংখ্যা ক্রমশ বাড়তে বাড়তে কয়েক হাজারে পৌঁছায়। পরবর্তী ৩০ বছরে ব্রিটেনের প্ররোচনায় প্রায় ৬ লক্ষ ইউরোপীয় ইহুদী প্যালেস্টাইনে প্রবেশ করে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অটোমান সাম্রাজ্যের পতনের ফলে আরবের বেশিরভাগ অংশ সহ প্যালেস্টাইন চলে যায় ইউরোপীয়ান সাম্রাজ্যবাদের দখলে। ১৯১৭ সালে প্যালেস্টাইন ভূখণ্ডে একটি ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ঘোষণা করা হয়। ইতিহাসে এটি বেলফোর ঘোষণা হিসেবে পরিচিত। এই ঘোষণার পর ব্যাপক সংখ্যক ইহুদি ইউরোপ থেকে দলে দলে প্যালেস্টাইনে এসে বসবাস করা শুরু করে। ১৯১৮ সালে ব্রিটেনের সহযোগিতায় একটি গোপন বাহিনী ইহুদীদের সাহায্যার্থে তৈরি হয়ে পরবর্তীতে রেজিমেন্টেড সশস্ত্র বাহিনীতে রূপান্তরিত হয়। ফিলিস্তিনি জনগণকে উচ্ছেদ করে তাদের ক্ষেত-খামার, বাড়ি-ঘর দখল করাই ছিল এদের প্রধান লক্ষ্য। বলা বাহুল্য, বর্তমানে ইজরায়েলি সেনাবাহিনী এদেরই পরিবর্তিত সংস্করণ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৪৮ সালে জাতি সংঘের সাধারণ সভায় প্যালেস্টাইনকে দ্বিখন্ডিত করার প্রস্তাব পাস হওয়ার পর মোট জনসংখ্যার এক চতুর্থাংশ হয়েও ইহুদিরা পায় ভূমির ৫৭ শতাংশ আর ফিলিস্তিনিরা নিজেদের মাতৃভূমির মাত্র ৪৩ শতাংশ পায়। চক্রান্ত করে প্রস্তাবিত ইহুদী রাষ্ট্রটির উত্তর পশ্চিম সীমানা অনির্ধারিত রাখা হয় যাতে ভবিষ্যতে ইহুদীরা সীমানাটি আরও বাড়াতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চাপে জাতি সংঘের একটি অযৌক্তিক প্রস্তাব পাস হওয়ার ফলে ইজরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হলেও অপরদিকে প্যালেস্টাইনে জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার সহ স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা থেমে যায়। এই সিদ্ধান্তের পর থেকে ধীরে ধীরে প্যালেস্টাইনে ইজরায়েলি দখলদারি এবং তাদের সেনা দ্বারা অত্যাচার সমস্ত সীমা ছাড়িয়ে যায় যা আধুনিক পৃথিবীর সব থেকে কলঙ্কজনক এবং ঘৃণ্য অধ্যায় হিসাবে রচিত হচ্ছে। উল্লেখযোগ্যভাবে জাতিসংঘের এই প্রস্তাব গ্রহণের মাত্র ১০০ দিনের মাথায় গণহত্যার মাধ্যমে ১৭ হাজার ফিলিস্তিনি নাগরিক নিহত হন। ১৯৪৮ সালের ১২ই মে ইজরায়েলের স্বাধীনতা ঘোষিত হলে তার দশ মিনিটের মাথায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইজরায়েলকে পূর্ণ রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃতি দেয়। এই সময়ে আরব-ইজরায়েল যুদ্ধের পর প্যালেস্টাইনের বেশিরভাগ গ্রাম জনশূন্য করে দেয় ইজরায়েলি বাহিনী। এরপর গাজা উপত্যকা ও ওয়েস্ট ব্যাংক মিশর ও জর্ডন ভাগাভাগি করে নেয়। ১৯৫৬, ১৯৬৭, ১৯৭৩ সালে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয় ইজরায়েল ও প্যালেস্টাইনের মধ্যে। অসংখ্য শিশু কিশোর নিরীহ মানুষ যুদ্ধের বলি হয়। ইজরায়েলের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে অবশেষে ১৯৮৭ সালে প্রথম গণঅভ্যুত্থান শুরু হলে তা ১৯৯৩ পর্যন্ত কার্যকর থাকে। পিএলও নেতা ইয়াসির আরাফাত ১৯৮৮ সালের ১৫ই নভেম্বর প্যালেস্টাইনের স্বাধীনতা ঘোষণা করে। পুনরায় ইজরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ২০০০ থেকে ২০০৮ সাল অবধি প্যালেস্টাইনে প্রতিরোধ জারি থাকে। ২০০৬ সালের পর থেকে প্যালেস্টাইনের রাজনীতিতে নতুন মোড় আসে। ইজরায়েলি আগ্রাসন থেকে নিজেদের ভূখণ্ডকে প্রতিরোধ করতে প্যালেস্টাইনের একাংশ কট্টরপন্থী হয়ে উঠে সশস্ত্র সাম্প্রদায়িক সংগঠন হামাস-এর পক্ষে আসে এবং আরেক দল ফাতাহ নামক অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দলের পক্ষে চলে যায়।

প্যালেস্টাইন ভূখণ্ডে জোর করে ইজরায়েল রাষ্ট্র ঘোষনার পর থেকেই স্বাধীন দেশের দাবিতে ফিলিস্তিনিদের রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম চলছে। হামাসের নিন্দনীয় উগ্রপন্থী কাজকর্মের দোহাই দিয়ে ইজরায়েল নিজেদের ঐতিহাসিক অপরাধ ঢেকে রেখে সেনা লেলিয়ে গাজার ছোট ছোট শিশুদেরকে মূলত লক্ষ্য করে চরম অত্যাচার এবং গণহত্যা চালাচ্ছে। জাতি সংঘ তা দেখে সম্পূর্ণ নীরব। তারা কেবল ভোটাভুটি চালাচ্ছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ প্যালেস্টাইনকে স্বীকৃতি দিলেও মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের পাঠানো অত্যাধুনিক অস্ত্র দ্বারা শাণিত ইজরায়েলের হাত থেকে প্যালেস্টাইনকে রক্ষা করতে তারা ব্যর্থ। ইতিমধ্যে প্যালেস্টাইনের ভূখণ্ড দখল হতে হতে ১২%-এ এসে দাঁড়িয়েছে। গাজায় দ্রারিদ্রতা বেড়ে ৬৪%-এ দাঁড়িয়েছে। সেখানকার শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে তাদের “শিক্ষাবর্ষ চালানোর মতো শিক্ষার্থী জীবিত নেই, স্কুল কলেজ ইউনিভার্সিটি বন্ধ করে দেওয়া হল”। এমনকি গাজার হাসপাতালেও ইজরায়েলের বেনজামিন নেতানয়াহু সরকার বোমা ছুঁড়েছে। গাজা কেবল রক্তাক্ত দগ্ধ শিশুদের লাশের মিছিল এবং ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। এই পৃথিবীর তাবড় তাবড় বিশ্ব নেতারা কথা দিয়েছিল পৃথিবীতে শিশুদের সমস্ত মানবাধিকার সুনিশ্চিত করবে তারা। অথচ ওদিকে প্রথম বিশ্বের পশ্চিমা দেশের অস্ত্র সহযোগিতায় দিন দিন প্রধান মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী অপ্রতিরোধ্য রাষ্ট্র হয়ে উঠছে ইজরায়েল। এ যেন এক অন্য বিশ্ব, যাদের সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান কাজ প্যালেস্টাইনের সার্বভৌমত্ব নষ্ট করা, তাদের সমগ্র জাতিকে পদতলে পিষ্ট করে দেওয়া। অবিকল হিটলারের পথে হাঁটা এই ইজরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতি দেশে দেশে প্রত্যেক কোনায় প্রতিবাদ ও বিরুদ্ধ গর্জন হচ্ছে। প্রতিবাদে মুখরিত জনতা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে নাৎসিদের ইহুদি হলোকস্টের আয়নায় তাকালে প্যালেস্টাইনের গণহত্যার প্রতিচ্ছবি দেখা যায়‌। ইউরোপের প্রত্যেক দেশে বড় বড় মিছিল বেরিয়েছে ট্রেড ইউনিয়ন ও নাগরিক সমাজের নেতৃত্বে। কিউবা এবং গ্রিস সম্পূর্ণভাবে প্যালেস্টাইনের সার্বভৌমত্ব এবং স্বাধীনতার সমর্থন করেছে এবং তীব্র নিন্দা করেছে ইজরায়েলের বর্বরোচিত কাজকর্মের।

অবশেষে নিজের দেশ ভারতবর্ষের কথায় আসলে দেখা যাবে যে ভারতের প্যালেস্টাইনের পক্ষে নেওয়া ঐতিহাসিক অবস্থান থেকে সরে এসে এখানকার অতি দক্ষিণপন্থী সরকার দেশের অভ্যন্তরে ইজরায়েলের ফিলিস্তিনি মুসলিম গণহত্যাকে পরোক্ষে সমর্থন করছে। বিভিন্ন সাধুসন্তরা সোশ্যাল মিডিয়ায় প্যালেস্টাইনের বিপক্ষে নিজেদের প্রকাশ্য অবস্থান জানাচ্ছে এবং ভারতের জনগণকে তারা আহ্বান করছে আরব নিধন যুদ্ধে হাজির হওয়ার জন্য।

বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তের মুক্তিকামী মানুষ প্যালেস্টাইনের স্বাধীনতার স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রাখার শপথে লড়াই জারি রেখেছেন। কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য-এর কথায়:

“এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি,

নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার”।

From the river to the sea
Palestine will be free.


Picture Courtesy: 

Comments

Popular posts from this blog

ফ্যাসিবাদের উত্থানের যুগে সুবিধাবাদের রমরমা

ঘটনার বিবরণ নয়, উপলব্ধি জরুরী; প্রসঙ্গ আর.জি.কর

কর্পোরেট হাঙরদের হাত থেকে লাদাখকে বাঁচাও!