কাল
বিমল কান্তি দাশ গুপ্ত
কাল অনন্ত। তার দুই ভাগ। ইহকাল আর পরকাল। সব মিলে তিন কালের ধারণা। মানুষের জন্য আছে দুটো কাল। ইহকাল আর পরকাল।
যতদিন মানুষ অরণ্যচারি, জীবন তার ইহকালের সীমানাতে বদ্ধ। জন্ম আর মৃত্যুর সীমানাতেই আটকে থাকা। কিন্তু আটকে থাকা তো জীবনের স্বাভাবিক নিয়ম হতে পারে না। আর সে কারণে মানুষের ব্যবহারিক জীবনের ধারার বদলের সঙ্গে বদল ঘটতে থাকে কালের ধারণাতেও। আর আপাত সেই স্থির ধারণা বিশ্বাসের রূপ নিয়ে সামাজিক মানুষের মনে থিতু হয়ে বসত করছে আদি কাল থেকে। শ্রম আর ধারণার কে আগে আর কে পরে বিবাদে না গিয়েও আটক হয়ে আছে পরকালের ধারণা। যে ধারণা রূপ বদল করে বিশ্বাসের রূপ ধরে শক্ত পোক্ত হয়ে বাস করছে মানুষের মনের জগতে। জীবনের প্রবহমানতাকে আপাত স্বীকার না করেই।
এই ধারণার আদি ধরা আছে সেই কালে, যখন মানুষ তার সংগঠিত পরিবারের প্রাকৃতিক জীবন থেকে সামাজিক জীবনে প্রবেশ করল। সমাজের মানুষের মাঝে কর্মের বিভাজন ঘটল। যার বিকাশ ঘটল অবশেষে শ্রেণি বিভাজনের আকারে। ভাগ্যবান আর বঞ্চিতের বেশ ধরে। যার উৎস নির্দেশ করা হল যার-যার সামাজিক কর্মফলের নিরিখে। সামাজিক কর্মের অবমূল্যায়ন ঘটিয়ে ব্যক্তি মানুষের দায় বলে সেটাকে মান্যতা দেওয়া হল। এবং সমাজের বিধিতে স্থান করে দেওয়া হল।
বঞ্চনার দুই জাতক। দাসত্ব আর দ্রোহ। বঞ্চিতের দুই সত্বা। দাস অথবা বিদ্রোহী। উভয়ের জন্য প্রতিষেধক নির্দিষ্টহল পরকাল। আর রচিত হল সে কালের সুখ আর দুঃখ যন্ত্রণার কল্পচিত্র। আর কাহিনি। সেখানে আছে স্বর্গ। উর্বশী আর অপ্সরাদের নৃত্যগীতে মুখরিত ইন্দ্রসভা। বিকল্পে অনন্ত কালের নরক যন্ত্রণা। ঈশ্বরের রাজত্ব অথবা দ্য হেল। কিংবা হুরিপরীর বেহেস্ত নয় তো অনন্ত যন্ত্রণাময় দোজখ। তাই একালে যা পাওয়া হল না পরকালে সেই সুখের স্বপ্ন দিয়ে ইহকালের যাবতীয় অবিচার আর ব্যভিচার আর বঞ্চনাকে সত্য বলে মেনে নেবার ব্যবস্থা পাকা হল। এ হল শ্রেণি বিভাজিত সমাজের এক দিকের চিত্র। যার অন্যদিকে আছে বিক্ষোভ আর বিদ্রোহ। আর আছে দুঃসাহসের ইহকালের কাহিনি। যে কালের দাবি মানুষের সকল ঐশ্বর্যের প্রতি মানুষের ইহকালের অধিকার।
Image Courtesy: Craiyon AI
Comments
Post a Comment