ফিলিস্তিনিদের মুক্তি ও কমিউনিস্ট কর্তব্য প্রসঙ্গে ওয়াদি হালাবি

ওয়াদি হালাবির জন্ম প্যালেস্টাইনে। ১৯৪৮ সালে জন্মস্থান ইয়াফার ৯৫% জনসংখ্যা ‘জাতিগতভাবে নির্মূল’ হওয়ার পরিস্থিতিতে তাঁর পরিবার গাজায় চলে আসে। সমসাময়িক গাজাকে তিনি 'ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য সাম্রাজ্যবাদীদের দ্বারা পরিচালিত একটি ডিটেনশান ক্যাম্প' হিসেনে চিহ্নিত করেছেন। তাঁর পরিবার মিশরে চলে এলেও ১৯৫৬ সালে সুয়েজ যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে তাঁদের সেখান থেকে জোর করে বের করে দেওয়া হয়। ১৯৫৮ সালে তাঁরা লেবাননে আসেন এবং তারপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। তাঁর বাবা-মা পরে মধ্য প্রাচ্যে ফিরে এসেছিলেন। 

ওয়াদি সিপিইউএসএ (কমিউনিস্ট পার্টি অফ দ্য ইউনাইটেড স্টেটস অফ অ্যামেরিকা)-র একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। তাঁর মতে 'মানবতার পথ দেখাতে কমিউনিস্ট আন্দোলনের ব্যর্থতার পরিস্থিতিতে, মৌলবাদ পুঁজিবাদী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে পাতি-বুর্জোয়াদের প্রতিরোধের প্রতিনিধিত্ব করে। এই শ্রেণী প্রকৃত সমাধান খুঁজে পায় না, এরা প্রতিক্রিয়াশীল, শ্রমিক বিরোধী, পিতৃতান্ত্রিক এবং সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদের প্রচারক। কিন্তু এরা ক্ষয়িষ্ণু পুঁজিবাদের ক্রমবর্ধমান ধ্বংসলীলার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। আসল সমস্যা হল মার্কসবাদ এবং তা অনুশীলনে দুর্বলতা, বিশ্ব কমিউনিস্ট আন্দোলনের ত্রুটি - যা শেষ পর্যন্ত সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের নির্ণায়ক কারণ ছিল, ১৯৭৬ সালের প্রকৃত 'বেইরুট কমিউন'-এর পরাজয়ের নির্ণায়ক কারণ ছিল, ১৯৭৯ সালে ইরানে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের পরাজয় (ইরানের শ্রমিকরা কারখানা, তৈল শোধনাগার দখল ও সোভিয়েত গঠন করে ফেলেছিল!) এবং অন্যান্য গুরুতর পরাজয়ের কারণ ছিল। ১৯৪৫ সালে সোভিয়েত নেতারা লেনিন এবং কমিন্টার্নের ঐতিহাসিক অবস্থান উল্টে দেন এবং ইজরায়েলি রাষ্ট্র গঠনে সাম্রাজ্যবাদকে সমর্থন করেন। (ইউরোপে ইহুদি, সিন্টি এবং রোমাদের (দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত) বিরুদ্ধে পুঁজিবাদের অপরাধের আলোকে, ইহুদিদের জন্য এবং ইউরোপে রোমাদের জন্য আশ্রয়স্থল গঠন ছিল মার্কসবাদীদের যুক্তি)। কিন্তু ইজরায়েলি রাষ্ট্র তৈরির অর্থ ছিল কমিউনিস্টরা লাঙল যার তার থেকে জমি কেড়ে নেওয়া সমর্থন করছিল। অর্থাৎ হাতুড়ি থেকে কাস্তেকে আলাদা করতে গিয়ে হাতুড়িটাই ভেঙে ফেলছিল। বেশ গুরুতর ভুল, এখনও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সংশোধন করা হয়নি। এর ফলে প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। হামাস এই প্রতিক্রিয়ারই একটি প্রকাশ...'। 

বর্তমান কঠিন পরিস্থিতিতে বিপ্লবী আশাবাদের বস্তুগত ভিত্তি তিনি খুঁজে পেয়েছেন শ্রমিক আন্দোলনের ঐতিহাসিক প্রাপ্তিগুলির মধ্যে এবং মার্কসবাদে। রাশিয়ান বিপ্লবের বিজয় থেকে উদ্ভূত বিশ্ব কমিউনিস্ট আন্দোলন কিংবা কিউবায় বিকশিত ইকোলজিক্যাল কৃষি তাঁর প্রেরণা। এবং এই আশাবাদকে পুঁজিবাদ থেকে সমাজতন্ত্রে উত্তরণের লড়াইয়ে ব্যবহার করার পক্ষপাতী তিনি। তাঁর মতে, এর জন্য প্রয়োজন পূর্বতন ভুলভ্রান্তিগুলো (যেমন দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পরবর্তীতে কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিক উঠিয়ে দেওয়া) শুধরে নেওয়া, শ্রমিক শ্রেণীর ক্ষমতা গ্রহণ এবং দুটি গুরুত্বপূর্ণ গণতান্ত্রিক কাজ, নিপীড়িত জাতিদের মুক্তি ও ভূমি সংস্কার-এর বাস্তবায়ন।   

[ডিলিজেন্ট পত্রিকার সাথে তাঁর ইমেইল-এ আলোচনার নির্যাস এই প্রবন্ধের ভিত্তি। মতামত ব্যক্তিগত]  


Comments

Popular posts from this blog

বর্তমান সময়ে বাম ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা

আম্বেদকরের চোখে - কেন ব্রাহ্মণ্যবাদ শাকাহারী পথ গ্রহণ করল? গো ভক্ষণ নিষিদ্ধকরণের সাথে অস্পৃশ্যতার কি সম্পর্ক রয়েছে?

Polemics on 'Fractured Freedom': C Sekhar responds to Kobad Ghandy's views