প্রসঙ্গ চিন

শংকর 

বর্তমানের চিনকে দেখে গদগদ ভাব সিপিএমের নেতাদের পক্ষে নতুন ব্যাপার কিছু নয় এর আগেও বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য থেকে শুরু করে বিভিন্ন পার্টিনেতারা যাঁরা নিয়মিত বা অনিয়মিত চিনে যেতেন তাঁরা গদগদ হয়ে ফিরতেন তারপর প্রবন্ধ লিখতেন পার্টিকে চিনের পথে এগিয়ে যাবার পরামর্শ দিতেন স্বপ্ন দেখতেন তাঁরাও যেখানে যেখানে তাঁদের ক্ষমতা আছে সেখানে তাঁরা চিনের নীতিতেই মানুষের মন পাকাপাকিভাবে দখল করে চিনের মতই দীর্ঘমেয়াদী একদলীয় একটা শাসন কায়েম করতে পারবেন, যা হবে একইসাথে মার্কসবাদ এবং নয়াউদারবাদের নয়া বৃন্দাবন

সম্প্রতি পার্টির নতুন সাধারণ সম্পাদক এম.এ বেবি তাঁর প্রতিনিধিদল নিয়ে চিনে গেছিলেন যথারীতি একেবারে আপ্লুত হয়ে ফিরে এসেছেন তারপর তাঁদের পার্টি প্রেসে প্রবন্ধ লিখেছেনমার্ক্সবাদী পথ’-এ সেই প্রবন্ধ তথা রিপোর্টটি ছাপা হয়েছে একেবারে সূত্র মেনেই সেখানে কমরেড বেবি চিনের উন্নয়ন নিয়ে আত্মহারা হয়ে বিভিন্ন কথা লিখেছেন লেখাটি পড়তে গিয়ে প্রথমেই মনে হল, ভারতের কমিউনিষ্টরা এত সরল কীভাবে হন? এত দ্রুত, এত সস্তায় তাঁরা আপ্লুত হয়ে পড়েন কীভাবে? এটা কি ভারতীয় ভক্তিবাদের একটা সুদৃঢ় প্রভাব থেকেই হয়, নাকি অন্য কিছু?

যেমন ধরুন, লেখাটির একটি লাইন হল,

আমাদের প্রতিনিধিদের সুযোগ হয়েছিল দারিদ্র দূরীকরণ কর্মসূচি কী, তা সরাসরি বুঝে নেওয়ার”। 

মার্ক্সবাদীদের কাছে এটা অজানা নয় যে, দারিদ্র একটি তুলনামূলক ধারণা যা অবধারিতভাবে ধনীর বিপরীতে বোঝা যায় দরিদ্র আছে মানেই ধনী আছে ১৯৪৯ সালে যে দেশ কমিউনিষ্ট পার্টির নেতৃত্বে বিপ্লব করেছে, শ্রমিক-কৃষক একনায়কত্ব কায়েম করেছে সে দেশে ৭৬ বছর পরেও কেন গরীব বড়লোকের ভেদাভেদ আছে, তার কী জবাব কমিউনিষ্টরা দেবে? আমরা যে সমস্ত দেশে এখনও বিপ্লব করতে পারিনি কিন্তু জনগণকে তার জন্যে প্রস্তুত হবার কথা বলি সেখানে আমরা তো সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা এভাবেই ব্যাখ্যা করি যে এই ধরণের ব্যবস্থায় ধনী গরীব ভেদাভেদ থাকে না তাহলে কমিউনিষ্ট পার্টির শাসন প্রতিষ্ঠিত হবার এতদিন পরেও চিনে কেন এই ফারাক রয়ে গেল তার কী জবাব আমরা মানুষের কাছে দেব? সিপিএমের নেতৃত্বের মনে কি এই প্রশ্ন উদিত হল না?

বর্তমান প্রজন্মের কমিউনিষ্টদের কাছে চিনের বিপ্লবের ইতিহাস ঝাপসা তদুপরি মার্কসবাদ লেনিনবাদের চিরায়ত সাহিত্যপাঠ প্রায় উঠে যাওয়ার কারণে চিনের বর্তমান ঝাঁ চকচকে বহিরঙ্গে মজে যাওয়ার একটা সম্ভাবনা খুবই প্রবলভাবে বিদ্যমান সিপিআইএমের নেতৃত্ব প্রায়ই এই সুযোগটা নেন চিনের ইতিহাস নিয়ে তাঁরা পারতপক্ষে কোনো আলোচনায় ঢোকেন না চিনের রাস্তা, হাইওয়ে, বাঁধ, কিছু মাথা ঘোরা অর্থনৈতিক পরিসংখ্যান দিয়েই তাঁরা বর্তমান চিনের গুণকীর্তন করতে ব্যস্ত থাকেন এতে করে সহজে নাকি সমাজতন্ত্রের মহিমা ব্যাখ্যা করা যায় আর একটি উদ্দেশ্যও তাতে সাধিত হয় সিপিআইএম পার্টির নয়াউদারবাদের কাছে আত্মসমর্পণ করা বামপন্থী লাইনের মহিমাও তাতে করে প্রচার করা যায় কিন্তু একটু বুদ্ধিমান পাঠক বা অনুসন্ধিৎসু মনই এই ছলনা যে বুঝে ফেলে তা তাঁরা বুঝতে চান না বর্তমান প্রবন্ধে আমরা চিনের বর্তমান অবস্থা নিয়ে কিছু আলোচনা করব এবং সেই সূত্রে চিনের বিপ্লবের ইতিহাস ও মার্কসবাদ লেনিনবাদের মৌলিক কিছু বক্তব্যকেও ফিরে দেখব

সমাজতন্ত্রে উত্তরণ

মার্কসবাদ অনুসারে পুঁজিবাদ থেকে সমাজতন্ত্রে উত্তরণের জন্যে একটি পর্যায় অবশ্যম্ভাবী এই সময়টিকে বলা হয় শ্রমিকশ্রেণির একনায়কত্বের পর্যায় এই পর্যায়ে শ্রেণি-বিভাজন থাকে, শ্রেণি-সংগ্রাম থাকে, পুঁজিবাদ পুনঃপ্রতিষ্ঠার বিপদও থাকে এই পর্বটি শুরু হয় শ্রমিকশ্রেণির ক্ষমতালাভের পর, অর্থাৎ, রাজনৈতিক বিপ্লব শুরু হবার পর এই পর্বে বিপ্লব আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে বিস্তৃত হতে থাকে যতই এই সমাজতান্ত্রিক আর্থ-সামাজিক বিপ্লব এগোতে থাকে ততই রাষ্ট্র শুকিয়ে মরতে থাকে তাই এই পর্বে রাষ্ট্র আর সত্যিকারের অর্থে রাষ্ট্র থাকে না, তা আধা-রাষ্ট্রে পরিণয় হয় এখনও পর্যন্ত এই মার্কসবাদী তত্ত্বকে কোনো কমিউনিষ্টই অগ্রাহ্য করেন নি বা সংশোধনের কথা প্রকাশ্যে বলেন নি নতুন কোনো তত্ত্বও আসেনি কিন্তু তা সত্ত্বেও যখনই কোথাও সংশোধনবাদীরা ক্ষমতায় এসেছে তখনই কার্যক্ষেত্রে এই তত্ত্বের পরিবর্তন করা হয়েছে চিনেও তার ব্যতিক্রম হয়নি

চিনে ১৯৪৯ সালে সফল রাজনৈতিক বিপ্লবের পর এই উত্তরণের পর্বটি শুরু হয় চিন যেহেতু পুঁজিবাদী সমাজ থেকেও বেশ কিছুটা পিছিয়ে থেকে নয়া-গণতান্ত্রিক বিপ্লব ঘটিয়েছিল তাই এই উত্তরণ পর্ব যে পুঁজিতান্ত্রিক দেশগুলির তুলনায় কিছুটা দীর্ঘ ও জটিল হবে তা জানাই ছিল বিপ্লবের পর প্রথম কয়েক বছর ব্যাপকভাবে আমূল ভূমিসংস্কারের ওপর জোর দেওয়া হয় এর ফলে অল্প কয়েক বছরের মধ্যেই চিনের সকল কৃষকদের হাতে জমি আসে সকল নাগরিকের অন্ন, বস্ত্র, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও বাসস্থানের অধিকারকে পূর্ণ প্রয়োগ করা হয় অশিক্ষা, অনাহার, অনিশ্চয়তা কাটতে থাকে দ্রুত চিন বিপুল গতিতে সামনে এগিয়ে চলতে থাকে জমিদার, পুঁজিপতি, শোষক প্রভৃতি পরগাছা শ্রেণিগুলিকে উচ্ছেদ করা হয় স্বাভাবিকভাবেই এই পর্বটিও রাজনৈতিকভাবে অস্থির এবং ঝঞ্জাবিক্ষুব্ধ সময় হিসাবেই চিত্রিত হবে তাতে আশ্চর্যের কিছু নেই

১৯৫৮-৫৯ সাল থেকে চিনের উত্তরণকালীন পর্ব তার প্রথম পর্ব সমাপ্ত করে দ্বিতীয় পর্বে প্রবেশ করে প্রথম পর্বটি ছিল নয়া-গণতান্ত্রিক চিন গড়ার পর্ব দ্বিতীয় পর্বে শুরু হল সরাসরি সমাজতন্ত্রের জন্যে সংগ্রাম এই পর্ব আরও অনেক বেশি জটিল ও বিক্ষুব্ধ আগের পর্বের অনেক বন্ধু এই পর্বে শত্রুতে রূপান্তরিত হয়েছে জনগণের যে অংশগুলি আগের পর্বে উৎপাদনের উপকরণের ব্যক্তিমালিকানা বজায় রাখতে পেরেছিল, ফলে ছিল কমিউনিষ্ট পার্টির সাথেই, সেই অংশগুলিও এই পর্বে এসে আর ব্যক্তিমালিকানা রাখতে পারছিল না ফলে কমিউনিষ্ট পার্টির শত্রুর সংখ্যা বাড়ছিল

অন্যদিকে চিনের শ্রমজীবি জনগণ এই প্রথমবার শাসক শ্রেণির জায়গায় নিজেদের তুলে ধরতে সমর্থ হল এই পর্বে শহরাঞ্চলে উৎপাদন ও বন্টনের সমস্ত কেন্দ্রগুলিকে সরকারের হাতে নিয়ে আসা হয় এই রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংস্থাগুলিকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে চিনের শহরাঞ্চলে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা

In urban China, the nationalization of industrial and commercial units in the mid-1950s helped establish the CCP-controlled state ownership over the means of production in the industrial sector (state owned enterprises or SOEs). State ownership over industrial units that took the subsequent form of industrial danwei (around one large SOEs grew the social and administrative unit of a danwei) was considered to have heralded full-fledged socialism in the urban areas. ()

সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব শুরু হতে চিনের শহরাঞ্চলে যে ডানই ব্যবস্থা গড়ে উঠল তা নিয়ে কমিউনিষ্টদের আলোচনা খুবই অপ্রতুল অথচ, এই ব্যবস্থার মধ্যে দিয়েই চিন সমাজতন্ত্র নির্মাণের দিকে এগোতে শুরু করে ডানইকে দেখা হত শহরাঞ্চলে এই নতুন ব্যবস্থার (শ্রমিক ক্ষমতা) একক হিসাবে ডানই ছিল একটি বৃহৎ কারখানা, বা স্কুল বা হাসপাতাল বা সরকারি অফিস ইত্যাদি, অর্থাৎ, যে কোনো বৃহৎ কর্মক্ষেত্রকে কেন্দ্র করে শ্রমিক, কর্মচারি, শ্রমজীবি মানুষদের যৌথতা এই যৌথতা শুধুমাত্র কর্মক্ষেত্রের কাজের ব্যাপারেই সিদ্ধান্ত নিত না, তা একই সঙ্গে ব্যাপক সামাজিক জীবনের সিদ্ধান্তও নিত এবং আনুষাঙ্গিক পরিষেবা ব্যবস্থা গড়ে তুলত এর মধ্যে ছিল বাসস্থান, খেলাধূলার মাঠ, ক্লাব, খেলার সামগ্রী ইত্যাদি তথা বাচ্চাদের দেখভাল করার যৌথ ও সামাজিক বন্দোবস্ত, ক্রেশ, শুকনো জিনিসপত্রাদি রাখার গোডাউন, চিকিৎসা কেন্দ্র, ইত্যাদি বহু কিছু এক একটি ডানই-এর অধীনে গুণমানসম্পন্ন জীবনধারণের উপযোগী সমস্ত যৌথ বন্দোবস্ত থাকত এই সবকিছুই চলত কোনো না কোনো কর্মক্ষেত্রকে কেন্দ্র করে সেই জন্যে চিনা ভাষায় ডানই কথাটার অর্থ হল কর্ম-একক (work-unit) লোকে যে কর্মস্থলে যুক্ত থাকত তাতে তার সারা জীবনের কাজের গ্যারান্টি প্রদান করা হত

এর সঙ্গে চিনের বিস্তীর্ণ গ্রামাঞ্চলে গড়ে উঠল কমিউন ব্যবস্থা প্রায় আশি শতাংশ মানুষ বাস করতেন গ্রামে সুতরাং, গ্রামাঞ্চলে সমাজতন্ত্র গড়া ছিল অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ গ্রামাঞ্চলের জটিল শ্রেণিবিন্যাসের কারণে সমাজতন্ত্র গড়ার কাজটিও ছিল অনেক বেশি জটিল বিপ্লবের পরের কয়েকটি বছরে ভূমিসংস্কারের কাজ সম্পূর্ণ হবার পর পাঁচের দশকের মাঝামাঝি থেকে শুরু হল যৌথকরণের কাজ প্রথম পর্বটি ছিল নয়া-গণতান্ত্রিক বিপ্লবের পর্যায় দ্বিতীয় পর্যায়টি ছিল সমাজতন্ত্র নির্মাণের সময় এই পর্বে চিনের গ্রামাঞ্চলের ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিগুলিকে যৌথকরণ করার জন্যে প্রবল প্রচার চালানো হয় চিনের কৃষকরাই ছিলেন বিপ্লবের প্রধান শক্তি ফলে এই প্রচার সাফল্য পেয়েছিল অতি দ্রুত কৃষিতে যৌথখামার ব্যবস্থা উল্কার মত ছড়িয়ে পড়েছিল গ্রামাঞ্চলের কমিউন ব্যবস্থা শুধুমাত্র জমির যৌথকরণেই সীমাবদ্ধ ছিল না উৎপাদনকে কেন্দ্র করে প্রথম ত্রিস্তরীয় কমিউন ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছিল উৎপাদক দল (production team), শিল্প ব্রিগেড (industrial brigade) এবং সবার উপরে কমিউন - এই নিয়ে ছিল সমগ্র কমিউন ব্যবস্থা গোটা কমিউনের পরিচালনা করত কমিউন অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ কমিটি (CAC)

শহরাঞ্চলের ডানই-এর মত গ্রামাঞ্চলের কমিউনও শুধুমাত্র উৎপাদনেই সীমাবদ্ধ থাকে নি তা স্বাস্থ্যব্যবস্থা, শিক্ষাব্যবস্থা, যৌথ রান্নাঘর এবং ক্যান্টিন থেকে শুরু করে জনজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে যৌথ সিদ্ধান্ত ও যৌথ পদক্ষেপকে নিশ্চিত করেছিল

“In the rural areas, the communes were broadly speaking all-encompassing economic, social and administrative units (engaged in both agricultural FCPs of agricultural teams and industrial FCPs of Commune and Brigade enterprises), schools (primary and secondary), hospitals and clinics, public canteens, construction work units, administrative offices, and so on.” ()

চিনের গ্রামাঞ্চলে কমিউন ব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল উৎপাদন, বন্টনের মত অর্থনৈতিক বিষয়গুলির ওপর কৃষক ও উৎপাদকদের যৌথ নিয়ন্ত্রণ কায়েমের মধ্যে দিয়ে অচিরেই তা শুধুমাত্র উৎপাদনই নয়, বরং, রাষ্ট্র ও সমাজের অংশ হয়ে উঠেছিল কমিউন ছিল সমাজতান্ত্রিক সমাজের একক

“Communes were also seen as the basic unit of China's socialist society in the countryside.” ()

একইসঙ্গে তা ছিল চিনের গ্রামাঞ্চলে সমাজতন্ত্রে উত্তরণকালীন রাষ্ট্রব্যবস্থা (যা সরলীকৃতভাবেসমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রবলে পরিচিত) -এর একক শুধু উৎপাদন বন্টনের মত অর্থনৈতিক বিষয়ই নয়, তা শাসনব্যবস্থা সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তও নিত শহরাঞ্চলের ডানই ব্যবস্থার মত চিনের গ্রামাঞ্চলে কমিউন ব্যবস্থা চিনের সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার পরিচয় হিসাবেই মান্যতা পেয়ে এসেছিল

“With expropriation of individual land into collective ownership of the people, the commune system, formed in 1958-59, came to be viewed as the most innovative and prominent marker of socialism during Maoist period." ()

পুঁজিবাদী সমাজে শ্রমিকশ্রেণি তথা প্রকৃত উৎপাদকরা শুধুমাত্র শোষিতই হয় না তারা অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রক্রিয়া থেকেই বিযুক্ত থাকে এই বিযুক্তিকরণের প্রক্রিয়াটি শুরুই হয় খোদ উৎপাদন থেকে উৎপাদনের উপকরণ থেকে বিযুক্তি, সিদ্ধান্ত থেকে বিযুক্তি ভয়াবহ হয়ে দেখা দেয় শ্রমিক শ্রেণির ক্ষেত্রে পাশাপাশি, কৃষিক্ষেত্র, পরিষেবা, বন্টন প্রভৃতি সকল ক্ষেত্রে বৃহৎ পুঁজির আগ্রাসন আজকে শুধুমাত্র শ্রমিককেই বিযুক্তিকরণের কবলে ফেলে না, সকল ক্ষুদ্র উৎপাদককেই ফেলে মার্কস বলেছিলেন,

The worker therefore only feels himself outside his work, and in his work feels outside himself; he is at home when he is not working, and is not at home when he is working." ()

এই অবস্থা সকল উৎপাদকের ক্ষেত্রেই দেখা যায় একেই অ্যালিয়েনেশন বা বিযুক্তি বলে চিহ্নিত করা হয় পুঁজিবাদী সমাজের এই মৌলিক বৈশিষ্ট্য চিনের উত্তরণকালীন সমাজে অবলুপ্ত হয়ে যায়

এর পাশাপাশি চিনে চালু হয়েছিল সারা জীবনের জন্য কাজের গ্যারান্টি যালোহার তৈরি ভাতের বাটি’ (Iron Rice Bowl) নামে পরিচিত ছিল আর ছিল ন্যায্য মজুরি ব্যবস্থা যাগরম ভাতের পাত্র’ (Hot Rice Pot) নামে পরিচিত ছিল ডানই, কমিউন, আয়রন রাইস বোল এবং হট রাইস পট - এই সব মিলিয়ে চিনের সমাজতন্ত্রে উত্তরণকালীন সমাজ ও রাষ্ট্র ছিল চিনের মেহনতী মানুষের নিজস্ব ব্যবস্থা যা মাওয়ের সময়কার বৈশিষ্ট্য হিসাবে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় এক নতুন যুগের সৃষ্টি করেছিল

চিনের পার্টিতে দুই লাইনের সংগ্রাম

অনেকেরই ধারণা যে, চিনের এই উত্তরণকালীন ব্যবস্থা সোভিয়েত রাশিয়ার মডেলকে অনুসরণ করে তৈরি হয়েছিল কিন্তু আদত ব্যাপারটা তা নয় চিনের পার্টি প্রথম থেকেই তার নিজস্ব পথের সন্ধান করেছে ব্যাপারটা শুরুই হয়েছিল চিন বিপ্লবের প্রাথমিক বছরগুলিতে সোভিয়েত নেতৃত্বাধীন তৃতীয় আন্তর্জাতিক চিনের বিপ্লবের জন্য রাশিয়ার শহর নির্ভর অভ্যুত্থানের পথের ওপর জোর দিয়েছিল মাও সে তুং প্রথমাবধি ছিলেন এই পথের বিরোধী তিনি রাশিয়ার পথের অন্ধ অনুকরণের বিরোধী ছিলেন মাওয়ের বক্তব্য ছিল চিনের বিপ্লবের পথ চিনের ইতিহাস থেকেই উৎসারিত হবে যা কমিউনিষ্ট পার্টিকে বুঝতে হবে এবং নির্ধারণ করতে হবে ১৯২৮ সালে চিনের পার্টি অনুসৃত লাইন বিপুল বিপর্যয়ের সম্মুখীন হবার পর পার্টিতে ধীরে ধীরে মাওয়ের লাইনের প্রভাব বাড়ে অবশেষে সুনই সম্মেলনে মাওয়ের নেতৃত্বের নির্ধারক বিজয়লাভ ঘটে এর পর থেকে চিন বরাবরই চিনের নিজস্ব স্বাধীন ভাবনাচিন্তায় দৃঢ় থেকেছে কমিউনিষ্ট আন্তর্জাতিক অথবা সোভিয়েত নেতৃত্বের কর্তৃত্বপরায়ন নির্দেশকে অগ্রাহ্য করেই সমাজতন্ত্রে উত্তরণের পথের প্রশ্নেও তার ব্যত্যয় হয় নি

১৯৫৬ সালটা বিশ্ব কমিউনিষ্ট আন্দোলনের ইতিহাসে একটা জলবিভাজিকা হিসাবেই বিবেচিত হবে সেই বছরই সোভিয়েত পার্টি এবং চিনের পার্টি উভয়েরই পার্টি কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয় ঐতিহাসিক বিচারে এই দুই কংগ্রেসই কমিউনিষ্ট আন্দোলনের ইতহাসে একটা মাইল ফলক ১৯৫৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হয় সোভিয়েত পার্টির কংগ্রেস এই কংগ্রেসে স্তালিনের বহু ভুলত্রুটির সমালোচনা করে রাশিয়ায় পরিবর্তনের সূচনা করেন ক্রুশ্চেভ শুধু তাই নয়, সমাজতন্ত্রে শান্তিপূর্ণ উত্তরণের দিকে এগোনোর সূচনাও হয় সোভিয়েত পার্টির এই বিংশতিতম পার্টি কংগ্রেসে ভবিষ্যতে এই পার্টি কংগ্রেসে গৃহীত নীতিমালাই হয়ে দাঁড়াবে সোভিয়েত চিন মহাবিতর্কের ভিত্তিপ্রস্তর বিশ্ব কমিউনিষ্ট আন্দোলন দ্বিধাবিভক্ত হয়ে যাবে সারা দুনিয়াতে দেশে দেশে উৎপত্তি হবে চিনপন্থী নতুন কমিউনিষ্ট ধারা, এম-এল ধারা এসবেরই সূচনা হয়েছিল সোভিয়েত পার্টির বিংশতিতম কংগ্রেসেই

কিন্তু আগ্রহের বিষয় হল এই যে, ১৯৫৬ সালে চিনের নেতারাও কিন্তু স্তালিনের নেতৃত্বের কড়া সমালোচক ছিলেন স্তালিনের সমালোচনা করে, প্রায় নিঃস্তালিনীকরণের মধ্য দিয়ে সোভিয়েত পার্টি যেখানে পৌঁছল তাতে চিনের পার্টির তীব্র আপত্তি ছিল ঠিকই, কিন্তু স্তালিনের বহু নীতি ও ধ্যানধারণার কট্টর বিরোধী ছিল চিনের পার্টির নেতৃত্বের একাংশ, বিশেষ করে মাও সে তুং তৎসত্ত্বেও তাঁরা নিঃস্তালিকরণের সমর্থক ছিলেন না, বরং একে এক অতি থেকে অন্য অতিতে গমন হিসাবেই দেখেছিলেন একসময়ে স্তালিনকে মাথায় তুলে দেবতা বানানো হয়েছিল, তারই ফলশ্রুতিতে এল উলটো গমন, যা স্তালিনকে মাটিতে টেনে নামানোর মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হল মাও স্তালিনের ৭০ ভাগ সঠিক আর ৩০ ভাগ ভুল —- এই নীতিতে আস্থাশীল ছিলেন ১৯৫৫-৫৬ সালের একটা বড় সময় জুড়ে মাও চিনে সমাজতন্ত্র গড়ার সঠিক পথের অনুসন্ধানে ব্যপৃত ছিলেন এর ফলস্বরূপ ১৯৫৬ সালের এপ্রিল মাসে তিনি প্রস্তুত করেন একটি দলিল, যার নাম দেন —- On the Ten Major Relationship, বাদশটি প্রধান সম্পর্ক প্রসঙ্গে এটি চিনে সমাজতন্ত্র গড়ার সঠিক লাইনের দার্শনিক ধরাতল হিসাবেই মাও সে তুং রচনা করেছিলেন

১৯৫৬ সালের ২৫-শে এপ্রিল পলিটব্যুরোর একটি বর্ধিত সভায় মাও এই পেপারটি পাঠ করেন এখানে দশটি বিপরীত উপাদানের সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে মাও মনে করতেন, রাশিয়ায় সমাজতন্ত্র নির্মাণের ক্ষেত্রে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হয়েছিল একবগ্গা নীতির কারণে যা বিভিন্ন বিপরীত উপাদানের মধ্যে ভারসাম্য বজার রাখতে অসমর্থ হয়েছিল শুধু রাশিয়াতেই নয়, এই সমস্যা থেকেই মানবজীবনের ও সমাজজীবনের অধিকাংশ সমস্যা উৎসারিত মাও লিখেছিলেন,

যেদিন থেকে পান কু স্বর্গ ও মর্ত্যকে বিচ্ছিন্ন করেছিল, আমরা উড়োজাহাজ বা গাড়ি তৈরি করতে সমর্থ হইনি আর এখন আমরা তা তৈরি করতে শুরু করেছি” ()

ভারি শিল্পের ওপর অত্যাধিক জোর দিতে গিয়ে মাঝারি ও হাল্কা শিল্পকে অবহেলা করার যে নীতি সোভিয়েত নিয়েছিল চিন যে সে সমস্যা থেকে মুক্ত তা মাও তার রিপোর্টে নির্দেশ করেছিলেন মাও লিখেছিলেন,

আমরা সোভিয়েত ইউনিয়ন ও অনেকগুলি পূর্ব ইউরোপীয় দেশের চেয়ে ভালোই কাজ করেছি প্রাক-অক্টোবর বিপ্লবের সর্বোচ্চ স্তরের কৃষি উৎপাদনে পৌঁছতে সোভিয়েতের ক্রমাগত ব্যর্থতা, কয়েকটি পূর্ব ইউরোপীয় দেশে ভারি ও হালকা শিল্পের সামঞ্জস্যহীনতাজাত মারাত্মক সমস্যা আমাদের দেশে নেই” ()

এই রিপোর্টে মাও স্তালিনের বেশ কতগুলি গুরুত্বপূর্ণ ভুল নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করেছিলেন রাশিয়ায় দ্রুত ভারি শিল্প গড়ার তাগিদে কৃষকদের কাছ থেকে উদ্বৃত্ত শোষণ এমন জায়গায় পৌঁছে গেছিল যে মাওকে মন্তব্য করতে হয়েছিল যে, সোভিয়েত কৃষককে ছিবড়ে করে ছেড়েছে তবে স্তালিন সম্পর্কে সর্বাপেক্ষা কঠোর মন্তব্য করেছিলেন মাও চিনের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে যাই হোক না কেন, ‘'দশটি প্রধান সম্পর্কবিষয়ক দলিলটির ওপর ভিত্তি করেই ১৯৫৬ সালের সেপ্টেম্বরে চিনের পার্টির অষ্টম কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়

কিন্তু এই কংগ্রেসেই সিদ্ধান্ত হয় যে, চিনের সমাজ মূলগতভাবে সমাজতন্ত্র নির্মাণ সম্পূর্ণ করেছে শ্রেণি সংগ্রাম আর চিনের সমাজের চালিকাশক্তি নয় চিনের সমাজের প্রধান দ্বন্দ্ব হল অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক দ্রুত উন্নতির জন্য জনগণের চাহিদা বনাম তার অপ্রতুল যোগান

“The Eighth National Congress concluded that as China basically finished the socialist transformation, the principal contradiction in the country now was no longer that between the working class and the bourgeoisie, but that between the needs of the people for rapid economic and cultural development and the reality that the economy and culture fell short of the people's need.” ()

বলাই বাহুল্য অষ্টম পার্টি কংগ্রেসের এই সিদ্ধান্ত সোভিয়েত পার্টি কংগ্রেসের সিদ্ধান্তকে অনুসরণ করেই এসেছিল সোভিয়েত পার্টি কংগ্রেস ঘোষণা করেছিল সোভিয়েতে শ্রেণিসংগ্রাম আর সমাজের চালিকাশক্তি নয় কারণ বৈরি শ্রেণির কোনো অস্তিত্ব সেখানে নেই সুতরাং, সোভিয়েত রাষ্ট্র হল সমগ্র জনগণের রাষ্ট্র সোভিয়েতের এই ব্যাখ্যার তীব্র বিরোধী ছিলেন মাও সে তুং এবং চিনের পার্টির একাংশ কিন্তু তাঁদের অগ্রাহ্য করেই চিনের পার্টি কংগ্রেসেও প্রায় অনুরূপ সিদ্ধান্ত হয় এখানে মজার ব্যাপার হল এই যে, সোভিয়েত পার্টির বিংশতি কংগ্রেস যদিও স্তালিনের বিরুদ্ধে বিরাট তোপ দেগেছিল, কিন্তু সোভিয়েত সমাজতন্ত্র স্থাপন করে ফেলেছে এবং সেখানে আর কোনো বৈরিতামূলক শ্রেণিদ্বন্দ্ব নেই - এই সিদ্ধান্ত এসেছিল স্তালিনেরএক দেশে সমাজতন্ত্র’-র তত্ত্বায়নকে অনুসরণ করেই এসবই স্তালিন বলেছিলেন সেই ১৯৩৬ সালেই বিংশতিতম কংগ্রেস এই তত্ত্বায়নকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিল তার যুক্তিসঙ্গত পরিণতিতে শান্তিপূর্ণ উত্তরণের তত্ত্বে এবং সমগ্র জনগণের রাষ্ট্রের ঘোষণায়

চিনের পার্টির অষ্টম কংগ্রেস ছিল ভারসাম্যের কংগ্রেস এখানে দক্ষিণপন্থী, মধ্যপন্থী এবং বামপন্থী অংশ সমানভাবেই জয়ী হয়েছিল কিন্তু কংগ্রেসের অল্প কয়েকমাসের মধ্যেই এমন কিছু ঘটনা ঘটতে শুরু করল যা মাও সমেত পার্টির মধ্যেকার বামপন্থী অংশের পাল্লা ভারী হয়ে উঠতে সাহায্য করেছিল চিনের পার্টির কংগ্রেস শেষ হবার দুই মাস যেতে না যেতেই পোলান্ড এবং হাঙ্গেরীতে সমাজতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে শ্রমিক এবং ছাত্রছাত্রীদের ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয় হাঙ্গেরীতে এই আন্দোলনের তীব্রতা ছিল অত্যন্ত বেশি বিক্ষোভকারীরা সরকারের প্রায় পতন ঘটিয়ে ফেলে কিন্তু সোভিয়েত সৈন্য ব্যাপক রক্তপাত ঘটিয়ে শেষ পর্যন্ত এই আন্দোলন দমন করে চিনের পার্টির পক্ষ থেকে লিউ শাও চি মস্কো আসেন এই বিষয় নিয়ে সমীক্ষার কাজে চিনে ফিরে গিয়ে তিনি পার্টিকে এই বিষয়ে একটি রিপোর্ট দেন যেখানে উল্লেখ করেন,

“...Poland and Hungary had copied the Soviet experience in socialist development by building heavy industry excessively at the expense of light industry and agriculture, thus plunging their people into misery. Their leaders followed the Soviet Union's example and enjoyed privileges, causing discontent among the people.” ()

অর্থাৎ,  পোলান্ড এবং হাঙ্গেরী সোভিয়েত মডেল অনুসরণ করে সমাজতন্ত্র নির্মাণ করছিল যেখানে ভারী শিল্পের দ্রুত বিকাশের জন্য হাল্কা ও মাঝারি শিল্পকে এবং কৃষিক্ষেত্রকে অবহেলা করা হয় এবং এর ফলে সাধারণ জনগণ দুর্দশায় পতিত হয় সেখানকার নেতারা সোভিয়েত ইউনিয়নের পদাঙ্ক অনুসরণ করে সুযোগসুবিধা ভোগ করতে শুরু করে যা জনগণের মধ্যে রোষের সৃষ্টি করেছিল

এর পরেই চিনের পার্টিতে মাও এবং অন্যান্য বামপন্থী নেতৃত্ব চিনের পার্টির দক্ষিণপন্থী বিচ্যুতির বিরুদ্ধে সরব হতে শুরু করেন মাও বলেন, সমাজতন্ত্র মানে সামাজিক দ্বন্দ্বের নিরসন হয়ে যাওয়া বোঝায় না সমাজতন্ত্রে দুই ধরণের দ্বন্দ্ব থাকে জনগণের মধ্যেকার দ্বন্দ্ব এবং জনগণ ও শত্রুর মধ্যেকার দ্বন্দ্ব (১০)

এই সময়েই মাও লেখেন তাঁর আর একটি বিখ্যাত রিপোর্ট —- How to Handle the Contradictions among the People, যা তিনি ১৯৫৭ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি সুপ্রীম স্টেট কনফারেন্সের বর্ধিত সভায় পাঠ করেন সেখানে এই রিপোর্টের ওপর যে আলোচনা হয় তার ভিত্তিতে পরিমার্জন ও পরিবর্ধন করে লেখাটি ঐ বছরের জুন মাসেপিপলস ডেইলি’ -তেজনগণের মধ্যেকার দ্বন্দ্ব ও তার সঠিক সমাধান” (On the Correct Handling of Contradictions among the People) নামে প্রকাশিত হয় এর পাশাপাশি মাও সে তুং জনগণ ও শত্রুর মধ্যেকার দ্বন্দ্ব নিয়েও আলোচনা শুরু করেন অষ্টম কংগ্রেস যেভাবে সমাজতান্ত্রিক সমাজে শ্রেণিবৈরিতার অবসানের গল্প শুনিয়েছিল তা কংগ্রেসের অল্প কিছুদিনের মধ্যেই বাতিল হয়ে যায় এবং উৎপাদন শক্তি ও উৎপাদন সম্পর্কের মধ্যেকার দ্বন্দ্বের কথা পুনরায় ফেরত আসে অর্থাৎ, উৎপাদন সম্পর্ককে তখনও পালটে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা ফের একবার চিনের পার্টিতে ফিরে আসে এর পরপরই শুরু হয়ে যায় পার্টির মধ্যেকার দক্ষিণপন্থীদের বিরুদ্ধে অভিযান যা চূড়ান্ত রূপ পায় তার ছয় বছরের মাথায় সাংস্কৃতিক বিপ্লবের মধ্যে দিয়ে, যার ধাক্কায় লিউ শাও চি থেকে শুরু করে দেঙ শিয়াও পিং প্রমুখ বিরাট পরিমাণ পার্টি নেতারা চিনের পার্টিতে ব্যাপকভাবে কোনঠাসা হয়ে পড়েন

কমিউন থেকে বাজার সমাজতন্ত্রে

১৯৭৬ সালে মাও সে তুং -এর মৃত্যুর পর চিনের পার্টিতে একদা অপসারিত দক্ষিণপন্থী নেতৃত্ব ফের ক্ষমতা দখল করতে সমর্থ হয় ১৯৭৮ সাল থেকে দেঙ শিয়াও পিং-এর নেতৃত্বে শুরু হয় সংস্কার প্রক্রিয়া, যার মুখ্য লক্ষই ছিল চিনে সমাজতন্ত্রের মধ্যেই ধীরে ধীরে পুঁজিবাদী অর্থনীতিকে পুনঃস্থাপিত করা প্রথমেই আঘাত আসে শহরাঞ্চলের ডানই এবং কৃষিক্ষেত্রের কমিউন ব্যবস্থার ওপর গ্রামাঞ্চলের কমিউন ব্যবস্থাকে ভেঙ্গে সেই জায়গায় পারিবারিক কৃষি ব্যবস্থা চালু করা হয় এই ব্যবস্থা Household Responsibility System বা HRS নামে পরিচিত এর ফলে জমির ওপর কৃষকের যৌথ ভোগদখলের অধিকার (land use right) ভেঙ্গে যায় এবং সেই জায়গায় পারিবারিক অধিকার প্রথার (household right) জন্ম হয় মূল্য নির্ধারণের মাধ্যম হিসাবে বাজারের প্রত্যাবর্তন ঘটে শ্রমের বাজারও তৈরি হয় গ্রামাঞ্চলে কমিউন ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ার সাথে সাথে শ্রমের অতিরিক্ত যোগান বাড়ে

“The combined effects of these reforms not only transformed the agricultural class structure but also played an important role in inducing a concomitant process of commodification of labour power and proletarization of workforce that would give birth to the employer/ exploiter - employee/ exploited capitalist relation, first in rural sector then in urban industrial sector.” (১১)

শ্রমিকশ্রেণির ক্ষমতা দখলের মধ্যে দিয়ে যে উত্তরণকালীন সমাজের সৃষ্টি হয় সেখানে রাষ্ট্র সকল নাগরিকের খাদ্য, বস্ত্র, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বাসস্থান প্রভৃতি মৌলিক প্রয়োজনীয় বিষয়গুলির দায়িত্ব নেয় তা আর ব্যক্তিগত অন্বেষণের বিষয় থাকে না যার ফলে এই ধরণের সমাজে দারিদ্র্য দ্রুত লোপ পেতে থাকে অন্যদিকে যারা শোষক হিসাবে পূর্বতন সমাজে প্রতিষ্ঠিত থেকেছে তাদের হাত থেকে উৎপাদনের উপকরণ কেড়ে নিয়ে প্রলেতারিয় একনায়কত্ব বড়লোক শ্রেণির বিনাশ ঘটায় এই পর্বে যারা আগে কাজ না করেই (শোষণ করে) বিপুল সম্পত্তির মালিকানা পেত তারা অবলুপ্ত হয় ফলে কাজ ব্যাপারটা একদিকে অধিকার অন্যদিকে কর্তব্য হয়ে দাঁড়ায়

চিনের গ্রামাঞ্চলে কমিউন ব্যবস্থা শুধুমাত্র কৃষির যৌথতাই প্রতিষ্ঠা করেনি, একই সাথে তা গ্রামের শ্রমজীবি মানুষকে কাজের অধিকার দিয়েছিল যা একই সঙ্গে ছিল অধিকার এবং কর্তব্য উভয়ই কিন্তু কমিউন ভেঙ্গে পড়তে একদিকে যেমন কৃষির যৌথতা ভেঙ্গে গেল, জমির অধিকার যৌথতা থেকে পারিবারিক হয়ে দাঁড়াতে লাগল, তেমনই গ্রামীন শ্রমিকদের একটা বিপুল পরিমাণ নিশ্চিত কাজ হারাতে লাগল কমিউনের জায়গায় এখন এসে গেল নতুন প্রতিষ্ঠান যার নাম হল Township and Village Enterprises, যার অধিকাংশই ধীরে ধীরে ব্যক্তি মালিকানায় রূপান্তরিত হচ্ছিল আনুষ্ঠানিকভাবে এই TVE সংস্থাগুলি ছিল মিশ্র চরিত্রের - না সরকারি,  না বেসরকারি, ফলে এগুলি সরকারি নিয়ম কানুন মেনে চলতে বাধ্য ছিল না, বা সরকারের বেঁধে দেওয়া দাম মেনে মূল্য নির্ধারণ করত না আবার অন্যদিকে বেসরকারি না হওয়ার কারণে ব্যক্তি-মালিকানা ফিরিয়ে আনা হচ্ছে বলে অভিযোগও তোলা যেত না এগুলি ছিল রাষ্ট্রীয় ও যৌথ মালিকানা থেকে বেসরকারি মালিকানায় যাবার অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা যা দেং শিয়াও পিং নেতৃত্বের সুচতুর বুদ্ধিজাত ছিল নয়ের দশকের মাঝামাঝি পুরোদস্তুর বেসরকারি ব্যক্তি-মালিকানা শুরু হয়ে যেতে TVEs গুলি মিলিয়ে যেতে শুরু করে আটের দশকে যে ব্যক্তি মালিকানাধীন সংস্থাগুলি গড়ে উঠছিল তারাও নিজেদের TVEs হিসাবে নথিভুক্তকরণ (registration) করত এই ছদ্মবেশী সংস্থাগুলিকে বলা হত red hat TVEs, অর্থাৎ মাথায় লাল টুপী পরা ব্যক্তি-মালিক এসবের ফলে স্বাভাবিকভাবেই শ্রমের দাম পড়তে শুরু করল, উদ্বৃত্ত শ্রমিক তৈরি হতে শুরু করল

“With labourers no longer required to perform compulsory work in a commune, the excess stock of rural labour power formed a pool of low wage labour force who could now be either employed in newly established Township and Villsges Enterptises (TVEs) in the rural areas (whose institutional antecedent were state feudal Commune and Brigade Enterprises in Maoist China) or else migrate as suppliers of low wage labour to the cities under the reformed Hukou arrangement.” (১২)

আজকে চিনের দারিদ্রের সেই ছিল শুরু ১৯৪৯-র বিপ্লব অল্প কয়েক বছরের মধ্যেই বড়লোকদের বড়লোকি কেড়ে নিয়েছিল অন্যদিকে দীর্ঘদিনের বঞ্চিত, নিরন্ন জনতাকে কমিউন, ডানই, ‘লোহার তৈরি ভাতের বাটিআরগরম ভাতের পাত্রব্যবস্থা দারিদ্র থেকে মুক্তি দিয়েছিল কিন্তু ১৯৭৮ থেকে শুরু হওয়া সংস্কার, যার মূলমন্ত্র ছিল ‘'বড়লোক হও”, তা আবার দেশের আমিরী-গরিবী তৈরি করতে শুরু করল একদিকে ব্যক্তি-মালিকরা আত্মপ্রকাশ করল এবং ক্রমশ স্ফীত হতে শুরু করল, বিদেশী বিনিয়োগের ঢল নামল, অন্যদিকে নিম্ন আয়ের শ্রমিক, পরিযায়ী শ্রমিক তৈরি হওয়া শুরু হল দারিদ্র দূরীকরণের ছদ্মপ্রেমী কর্মসূচি আবার রাজনীতির বিষয় হয়ে উঠতে লাগল

আটের দশক থেকেই শহরাঞ্চলের ডানই ব্যবস্থার ওপর আক্রমণ আসতে থাকে যা পূর্ণাঙ্গ হয়ে ওঠে নয়ের দশকে দেঙ শিয়াও পিং -এর দেখানো পথেই পার্টির সর্বোচ্চ নেতা জিয়াং জেমিন ১৯৯৬ সালে রাষ্ট্রায়াত্ত সংস্থাগুলির ব্যাপক বেসরকারিকরণ করতে শুরু করেন বড় বড় কিছু সংস্থাকে সরকারি মালিকানায় রেখে দিয়ে বাকী সংস্থাগুলিকে ব্যক্তি-মালিকানাধীন উদ্যোগে ছেড়ে দেওয়া হয় এই নীতি “grasping the large and letting the small go” নামে পরিচিত ছিল শ্রমিকশ্রেণির কাছে এর ফল ছিল মারাত্মক কাজের নিশ্চয়তা যা আগেই ডানই ব্যবস্থার মাধ্যমে নিশ্চিত ছিল তা গেল মজুরীও কমতে শুরু করল হু হু  করে

“The policy of ‘grasping the large and letting the small go’ (Bramall, 2009) and consequent wave of industrial reform through privatization, bankruptcy, mergers and acquisitions of SOEs broke the back of the state feudal danwei system in urban China by late 1990s. A portion of the urban labour force became redundant and a still larger portion of the labour force saw their previously secured employment status become precarious, more so when they had to compete with the migrating rural labour force for employment, wage and benefits.” (১৩)

আমরা আজকে ভারতে বেসরকারিকরণের বিরুদ্ধে গলা ফাটাই সমস্ত ঘরানার বামপন্থীরাই পূর্বেকার কংগ্রেস সরকার এবং বিশেষ করে বর্তমানের নরেন্দ্র মোদি সরকারের বেসরকারিকরণ নিয়ে সরব কিন্তু চিনের তথাকথিত কমিউনিষ্ট সরকার পৃথিবীর ইতিহাসে বৃহত্তম বেসরকারিকরণ ঘটিয়েছিল মাত্র দশ বছরে, ১৯৯৫-২০০৫ সময়পর্বে, একথা আজকের চিন নিয়ে উচ্ছ্বসিত ব্যক্তিরা চেপে যান প্রায় এক লক্ষ সরকারি কোম্পানীকে বেসরকারি ব্যক্তিমালিকানায় দিয়ে দেওয়া হয় যার অর্থমূল্য ছিল চিনের মুদ্রায় ১১.৪ ট্রিলিয়ন য়ুআন (রেনমিনবি) (১৪)

ব্যক্তিপুঁজি যাতে অবাধে কাজ করতে পারে তার জন্য সমস্ত রকম প্রয়াস নিয়েছে চিনের কমিউনিষ্ট পার্টি স্টক এক্সচেঞ্জ ফিরিয়ে আনা, স্পেশাল ইকোনমিক জোন (SEZ) তৈরি করা, বিদেশী পুঁজির অনুপ্রবেশের দ্বার খুলে দেওয়া - এসবই চিনের পার্টির ‘'মহান সংস্কারযার ফলে যে ব্যবস্থা সেখানে তৈরি হয়েছে তাকে তাঁরা নাম দিয়েছেন মার্কেট সোশ্যালিজম বাবাজার সমাজতন্ত্র’, মতান্তরেবাজারী সমাজতন্ত্র’! চিনের নেতারা এই ব্যবস্থাকে বর্ণনা করেছেন ‘'নিম্ন স্তরের সমাজতন্ত্রবলে যা তাঁদের আরও একটি সুচতুর আবিষ্কার প্রকৃত প্রস্তাবে এটি হল উচ্চ স্তরের পুঁজিবাদ, তবে রাষ্ট্র পোষিত, নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত মার্ক্সবাদ -লেনিনবাদের নামাবলী গায়ে জড়ানো এই রাষ্ট্রীয় আমলাতান্ত্রিক পুঁজিবাদই হল বর্তমান চিন, সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ হল যার আন্তরাষ্ট্রীয় চেহারা

উপসংহার

আমরা ফেরত আসিমার্কসবাদী পথ”-এ প্রকাশিত কমরেড এম এ বেবিরচিনের অগ্রগতির লক্ষ্যে শক্তিশালী করা হচ্ছে সেদেশের পার্টিকেশীর্ষক রিপোর্টটিতে, যেখানে কমরেড বেবি চিনের বিপুল অগ্রগতি নিয়ে প্রভূত উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন ‘'অগ্রগতি’, ‘'উন্নয়ন’’ এই যে কথাগুলোকে বুর্জোয়া ধাপ্পাবাজদের দেখাদেখি কমিউনিষ্টরাও নির্বিচারে ব্যবহার করতে শিখে গেছেন, এই একবিংশ শতকে দাঁড়িয়ে সেই কথাগুলোকে আমাদের অবশ্যই ফিরে দেখতে হবে, পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে ঝাঁ চকচকে রাস্তা, বড় বাঁধ, চালকবিহীন গাড়ি এসবই কি অগ্রগতির প্রতীক? পৃথিবীতে মানুষের সমস্ত অগ্রগতি শেষ বিচারে মানুষ এবং তার বাস্তুতন্ত্রেরই জন্যে —- একথা বিস্মৃত হতে পারে বুর্জোয়ারা কিন্তু কমিউনিষ্টরাও যখন তা বিস্মৃত হয়, বুর্জোয়া সভ্যতার আপাত চাকচিক্যে যখন তাঁদেরও চোখ ধাঁধিয়ে যায় তখন বুঝতে হবে গোড়ায় গলদ আছে যে পরিমাণে চিনে ব্যক্তিমালিকানা এবং রাষ্ট্রীয় পুঁজিবাদের ফাঁস চেপে বসল গত চার দশকে তাতে করে শ্রমিকশ্রেণির জীবন ভয়াবহ সমস্যায় জর্জরিত হতে শুরু করল তা আমরা আগেই বলেছি অধিকাংশ কাজই চুক্তিভিত্তিক, এবং শ্রমের দাম কমে যাবার ফলে শ্রমিকরা বেকায়দায় অসংগঠিত শিল্পশ্রমিকের ভয়ঙ্কর বাড়বাড়ন্ত তো আছেই, এমনকি যাঁরা সংগঠিত শিল্পে কাজ করেন তাঁদের কাজের সময়ও আজ এমন জায়গায় পৌঁছে গেছে যা আজকে ভারতের ফ্যাসিবাদী সরকারও চালু করতে পারে নি কুখ্যাত৯৯৬ সংস্কৃতির কথা অনেকেই জানেন যার অর্থ হল সপ্তাহে ছয় দিন সকাল ন'টা থেকে রাত ন'টা পর্যন্ত কাজ করার প্রথা যা আজকের চিনে ব্যাপকভাবে লাগু হয়েছে এর ফলে উদ্বৃত্ত সম্পদের বিপুল উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে যার মালিকানা যাচ্ছে পুঁজিপতি এবং আমলাতন্ত্রের হাতে এই বিপুল উদ্বৃত্তের ওপর দাঁড়িয়েই চিনের জাঁকজমক যার দিকে আশ্চর্য হয়ে তাকিয়ে দেখা ছাড়া শ্রমিকশ্রেণির আর কিছু করার নেই কমরেড বেবির নেতৃত্বে সিপিআইএম-এর প্রতিনিধিদল গিয়েও হাঁ করে এই জাঁকজমকই দেখে এলেন এসে যে রিপোর্ট লিখলেন তাতে জলস্তর বাড়িয়ে বাঁধের ওপর দিয়ে জাহাজ পারাপার করা, সুবিস্তৃত হাইওয়ে এসবের কথাই শুধু আসল, মানুষ এবং প্রকৃতির কথা আশ্চর্যজনকভাবে অদৃশ্য থাকল! এর সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে গত শতকের তিনের দশকের প্রারম্ভে রাশিয়া থেকে ফিরে রবীন্দ্রনাথের চিঠির কথা যার কথা সিপিআইএম নেতাদের মুখে মাঝেমাঝেই শোনা যায় বটে, কিন্তু তা যে তাঁদের বোধগম্যতার বাইরেই থেকে গেছে সে সন্দেহও আরও তীব্র হয়ে ওঠে রবীন্দ্রনাথ অনেক কথাই লিখেছিলেন লিখেছিলেন সেই সময়কার রাশিয়াতে জাঁকজকম, ধনের কুৎসিত প্রদর্শন ছিল না কোথাও ছিল মানুষ, শ্রমজীবি জনতা

এখানে এসে সব চেয়ে যেটা আমার চোখে ভালো লেগেছে সে হচ্ছে, এই ধনগরিমার ইতরতার সম্পূর্ণ তিরোভাব কেবলমাত্র এই কারণেই এ দেশে জনসাধারণের আত্মমর্যাদা এক মুহুর্তে অবারিত হয়েছে চাষাভূষো সকলেই আজ অসম্মানের বোঝা ঝেড়ে ফেলে মাথা তুলে দাঁড়াতে পেরেছে, এইটে দেখে আমি যেমন বিস্মিত হয়েছি তেমনি আনন্দিত হয়েছি” (১৫)

রবীন্দ্রনাথ যা দেখেছিলেন কমিউনিষ্ট নেতারা তা দেখলেন না রাস্তাঘাট, বাঁধ, চালকবিহীন গাড়ি দেখে ফিরে আসলেন সেদিনের দ্রষ্টা যেমন আজ নেই তেমনই দ্রষ্টব্যও একই জায়গায় নেই কেউ বলতেই পারেন, সমাজতন্ত্র কি একশ বছর ধরে একই জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকবে? নিশ্চয়ই নয় কিন্তু উদ্বৃত্ত কার হাত থেকে কার হাতে যাচ্ছে সে প্রশ্ন তো অবশ্যই মার্কসবাদীদের করতে হবে যে জাঁকজমক দেখে আসলেন কমরেডরা তা কি চিনের শ্রমিকদের জীবনেও আছে? তার কোনো উল্লেখ তো তাঁরা করলেন না! এদিকে বিশ্বব্যাঙ্কের রিপোর্ট বলছে চিনের আয় বৈষম্য ভারতের থেকেও অনেক বেশি হ্যাঁ, ঠিকই পড়ছেন এই ফ্যাসিবাদী ভারতে, মোদানি (মোদি + আদানি) দের ভারতের আয় বৈষম্যের অনেক বেশি বৈষম্য এতদিন ধরে সমাজতন্ত্রে স্থিত থাকা চিনে গিনি কো-এফিশিয়েন্ট যা আয়বৈষম্যের সূচক হিসাবে ব্যবহৃত হয় তাতে ভারতের সূচক ২৫.৫ আর চিনের সূচক ৩৭. (গিনি কো-এফিশিয়েন্ট শূন্য এবং একশ-র মধ্যেকার একটি সংখ্যা যেখানে ধরে নেওয়া হয় শূন্য হল চরম সাম্য আর একশ হল চরম অসাম্য)

চিনের ইতিহাস ১৯৪৯-র বিপ্লবের পর সত্যিকারের অগ্রগতি দেখেছিল আর ১৯৭৮-পরবর্তী পালাবদল এবং আনুষাঙ্গিক সংস্কার প্রক্রিয়া দেখছে এক বিরাট উলটো যাত্রা পৃথিবীর ইতিহাসে এই বিরাট পশ্চাৎগতির তুলনা পাওয়া সম্ভব নয় 

তথ্যসূত্র ও সহায়ক পাঠ

) The Rise and Fall of State Feudalism in China / Anjan Chakraborty and Sayonee Majumdar. প্রখ্যাত মার্কস গবেষক প্রফেসর অঞ্জন চক্রবর্তী দীর্ঘদিন চিন নিয়ে গবেষণা করছেন রেজনিক উল্ফের অনুসারী এই গবেষকের মতে ১৯৪৯-র বিপ্লবের পর চিনে সমাজতন্ত্রে উত্তরণমুখী সমাজের পরিবর্তে রাষ্ট্রীয় সামন্ততন্ত্রের প্রতিষ্ঠা হয় যা ১৯৭৮ সালে রাষ্ট্রীয় পুঁজিবাদের পথিকদের দ্বারা ধ্বংস হয় মাও জমানার চিন সম্পর্কে প্রফেসর চক্রবর্তীর মূল্যায়ন নিয়ে আমরা একমত নই কিন্তু দেঙ জমানার সঠিক চিত্রায়ণ করেছেন তিনি রাষ্ট্রীয় সামন্ততন্ত্রের ভ্রমাত্মক বিশ্লেষণকে অগ্রাহ্য করে তাকে উত্তরণকালীন সমাজ হিসাবে পড়লে তাঁর চিন সম্পর্কে গবেষণাগুলি মূল্যবান বলে বিবেচিত হতে পারে প্রফেসর মজুমদার চিন বিশেষজ্ঞ তাঁদের সাম্প্রতিক পেপার থেকে উদ্ধৃত

)

)

)

) Karl Marx / Economic and Philosophic Manuscript of 1844

) মাও সে তুং / দশটি প্রধান সম্পর্ক প্রসঙ্গে

)

) 100 Years of The Communist Party of China / Institute of Party History and Literature of the Central Committee of the Communist Party of China / 2021 

)  

১০)

১১) প্রফেসর অঞ্জন চক্রবর্তী ও প্রফেসর সায়নী মজুমদার

১২)

১৩)

১৪)

১৫) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর / রাশিয়ার চিঠি

শংকর সিপিআই(এমএল)-রেড স্টারের পলিটব্যুরো সদস্য।

[লেখকের মতামত ব্যক্তিগত। রাজনৈতিক কর্ষণের জন্য প্রকাশিত।] 

Comments

Popular posts from this blog

বর্তমান সময়ে বাম ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা

Polemics on 'Fractured Freedom': C Sekhar responds to Kobad Ghandy's views

আম্বেদকরের চোখে - কেন ব্রাহ্মণ্যবাদ শাকাহারী পথ গ্রহণ করল? গো ভক্ষণ নিষিদ্ধকরণের সাথে অস্পৃশ্যতার কি সম্পর্ক রয়েছে?